চুণ্ডী (বৌদ্ধধর্ম)
চুণ্ডী | |
---|---|
![]() ঝোলানো লেখ্যপটে অষ্টাদশভূজা চুণ্ডী, চীন, মিং রাজবংশ (১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) | |
সংস্কৃত | স-লি-আ-ব: চুন্ডী চুণ্ডী চুন্ডা চুন্ডবজ্রী সপ্তকোটিবুদ্ধমাতৃ |
চীনা | 準提菩薩 (প্রথাগত) 准提菩萨 (সরলীকৃত) (ফিনিন: Zhǔntí Púsà) 準提佛母 (Zhǔntí Fómǔ) 七俱胝佛母 (Qījùzhī Fómǔ) |
জাপানী | 准胝観音 準胝観音 準提観音 (Jundei / Juntei Kannon) 准胝仏母 (Juntei / Jundei Butsumo) 七倶胝仏母 (Shichikutei Butsumo) |
কোরীয় | 준제보살 (স-রো: Junje Bosal) |
থাই | พระจุนทีโพธิสัตว์ |
তিব্বতী | སྐུལ་བྱེད་མ উইলি: skul byed ma |
ভিয়েতনামী | Chuẩn Đề Bồ tát Phật Mẫu Chuẩn Đề |
তথ্য | |
ঐতিহ্য | মহাযান, বজ্রযান |
চুণ্ডী (সংস্কৃত, আধ্বব: [t͜ɕʊndiː]; চীনা: 準提; ফিনিন: Zhǔntí; জাপানি: Juntei; তিব্বতি: ལྷ་མོ་སྐུལ་བྱེད་མ།, ওয়াইলি: lha mo skul byed ma) বা চুণ্ডা (আধ্বব: [t͜ɕʊndaː]; Ch: 羅馬化) হলেন এক ভারতীয় বৌদ্ধ দেবী। ইনি পূর্ব এশীয় বৌদ্ধধর্মেও জনপ্রিয়। চীনা বৌদ্ধধর্মে জনপ্রিয় "চুণ্ডী ধারণী" নামে এক গুহ্যাচারের সঙ্গে তিনি যুক্ত। এই গুহ্যাচারে একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা (হস্ত ভঙ্গিমা) ও গোলাকার আয়নার সাহায্যে ধর্মানুশীলন করা হয়।[১][২] বৌদ্ধদের বিশ্বাস, চুণ্ডী অশুভ কর্মের শুদ্ধিকরণ, সুরক্ষা প্রদান এবং যে আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে সহজে বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত হওয়া যায়, তা প্রতিপালন করেন।[৩]
দেবী চুণ্ডী চুণ্ডবজ্রী, সপ্তকোটি-বুদ্ধ-ভগবতী ("সাত কোটির মহিমান্বিত বুদ্ধ", 七俱胝佛母), চীনা ভাষায় "ঝুনতি বুদ্ধজননী" (準提佛母, Zhǔntí Fómǔ) এবং সপ্তকোটিবুদ্ধমাতৃ ("সপ্তকোটি বুদ্ধের জননী", অবশ্য 佛母-এর এই সংস্কৃত পুনর্নির্মাণটি অনুমানমূলক) ইত্যাদি অন্যান্য নাম ও উপাধি দ্বারাও পরিচিত। [১][২]
চুণ্ডীর সঙ্গে প্রজ্ঞাপারমিতা নামে আর-এক বৌদ্ধ দেবীর মূর্তি ও প্রতীকের উপাদানগুলির কিছু সাদৃশ্য দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দুই দেবীর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।[৪][৫]
তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে এই দেবী ল্হামো চুন্ড, চুন্ডে বা চুন্ডি নামে পরিচিত (তিব্বতি ভাষায় ল্হামো শব্দের অর্থ দেবী)।[৬][৭]
ভারতে
[সম্পাদনা]
নাম
[সম্পাদনা]শিক্ষাসমুচ্চয়, চুন্ডধারিণীসূত্র, সাধনমালা, নিষ্পন্নযোগাবলী, মঞ্জুশ্রীমূলকল্প ও গুহ্যসমাজ তন্ত্র ইত্যাদি অসংখ্যা ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে চুণ্ডী এবং এই নামের অন্যান্য রূপান্তর চুন্ডা, চুন্ড্রা, চন্দ্রা, চণ্ডা ও চুণ্ড্রা দ্বারা এক ভারতীয় মহাযান বৌদ্ধ দেবীকে বোঝানো হয়েছে।[৪][৮] এডওয়ার্ড কোনজ মনে করেন যে, এই দেবীর তিব্বতি নামটি সংস্কৃত ভাষার চুন্ডী, চণ্ডী (দেবী দুর্গার অপর নাম), চুন্ড, চুন্ডি বা চুণ্টি শব্দগুলি থেকে উৎসারিত।[৪] বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের মতে সঠিক সংস্কৃত নামটি হল চুণ্ডা।[৮]
চুণ্ডীর জনপ্রিয় মন্ত্রটি হল "ওঁ চলে চুলে চুণ্ডে স্বাহা"। তাই অনুমান করা হয় যে, দেবীর আসল নামটি ছিল চুণ্ডা। কারণ্ডব্যূহসূত্র গ্রন্থের তিব্বতি পাঠের একটি অনুবাদের সূত্র ধরে পিটার অ্যালান রবার্ট মনে করেন যে, "চলে", "চুলে" ও "চুণ্ডে" হল দেবীর নামের তিন রূপান্তর যথাক্রমে "চলা", "চুলা" ও "চুণ্ডা"র সম্বোধনের রূপ। আর "চুণ্ডি" হল "চুণ্ডী" শব্দের সম্বোধনের রূপ।[৯]
এই নামগুলির অর্থ সব ক্ষেত্রে স্পষ্ট নয়। চুন্ডী নামটি কোনো নিম্নবর্ণীয় নারী, পতিতা বা অন্য নিম্নবর্ণীয় নারীর পেশাগত অবস্থানের (পতিতালয়ের পরিচালিকা/কারবারি) দ্যোতক।[১][২][১০] রবার্ট গিমেলো ও প্রিন্সটন ডিকশনারি অফ বুদ্ধিজম-এর দাবি অনুযায়ী, এই দেবী সম্ভবত এক স্থানীয় যক্ষিণী হিসেবে প্রথম উদ্ভূত হয়েছিলেন, যিনি আনুমানিক অষ্টম শতকে ভারতীয় বৌদ্ধধর্মে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।[১][২]
দ্য প্র্যাকটিক্যাল সংস্কৃত-ইংলিশ ডিকশনারি অনুযায়ী, সংস্কৃতে চুণ্ডা শব্দটির অপর অর্থ ছোটো কুয়ো বা জলাধার।[১১]
সংস্কৃত ভাষায় চন্দ্রা শব্দটির অর্থ চাঁদ এবং এই দেবীর গাত্রবর্ণ চাঁদের ন্যায় বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[৪]
জাপানি বৌদ্ধধর্মে এই দেবীর নাম শুন্ধি (শুদ্ধতা), সুন্দা (উজ্জ্বল ও সুন্দর), চুণটি (কুয়ো) বা চুণ্ডী (ক্ষুদ্রতর হওয়া)।[৪] ওদা তোকুনো (織田得能) এই নামটি ব্যাখ্যা করেছেন "শুদ্ধতা, মন ও প্রকৃতির শুদ্ধতার মহিমাকীর্তন" অর্থে, যা ধর্মকায়ের দ্যোতক।[১২] সি. এন. তায়ের মতে, ডিং ফুবাও সম্পাদিত ফো গুয়াং বুদ্ধিস্ট ডিকশনারি-তেও এই ব্যাখ্যা সমর্থন করা হয়েছে।[১২]
ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে
[সম্পাদনা]কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতাসূত্র গ্রন্থের একাদশ শতকের একটি পুথিতে ত্রিপুরা জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কুমিল্লা জেলা) "পট্টিকেরার চুণ্ডা মন্দিরের চুণ্ডা"র একটি অনুকৃতি চিত্র রক্ষিত আছে।[৪]
সাধনমালা গ্রন্থে চুণ্ডার সঙ্গে বৈরোচন বুদ্ধের সম্পর্ক প্রদর্শিত হয়েছে। নিষ্পন্নযোগাবলী গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চুণ্ডী শান্তিদেবের শিক্ষাসমুচ্চয় গ্রন্থে উল্লিখিত চুণ্ডাধারণী নামে এক ধারণীর মূর্তরূপ।[৮] মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে চুণ্ডীকে চন্দ্রা (সংস্কৃত ভাষায় যার অর্থ সাধারণভাবে চন্দ্র) নামে দেখা যায়।[১৩] অলংকৃত প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র পুথিতে এই দেবীর ছবি পাওয়া যায়।[১৩] চুণ্ডী ও চুণ্ডী ধারিণীর উল্লেখ পাওয়া যায় চুণ্ডীধারিণী সূত্র গ্রন্থেও। এই গ্রন্থটি সপ্তম শতকের শেষভাগ থেকে অষ্টম শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত তিনবার সংস্কৃত থেকে চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছিল ভারতীয় মরমিয়া ধর্মগুরু দিবাকর (৬৮৫ খ্রিস্টাব্দ), বজ্রবোধি (৭২৩ খ্রিস্টাব্দ) ও অমোঘবজ্র (অষ্টম শতক) কর্তৃক।[১৪]
এই দেবীর পূজা উত্তর ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে পাল সম্রাটদের শাসনকালে। এই সাম্রাজ্যে তিনি পাল রাজবংশের কুলদেবী হিসেবে গৃহীতা হয়েছিলেন।[১] তিব্বতি ইতিহাসবিদ তারানাথের মতে পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম গোপাল ছিলেন চুণ্ডার ভক্ত।[৪] এই দেবতার পূজা প্রচারিত হয় ভারতের অন্যান্য অঞ্চল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সমগ্র বৌদ্ধ জগতে এবং তিনি পূর্ব এশিয়াতেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।[১] অষ্টম শতকে এই দেবী-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ চীনা ভাষায় অনূদিত হয়।[১][২]
চুণ্ডী তথা চুণ্ডী ধারণীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ব বৌদ্ধ শাস্ত্রীয় সূত্র হল কারণ্ডব্যূহসূত্র। এটি বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর বিষয়ক এবং এই গ্রন্থেই জনপ্রিয় ওঁ মণিপদ্মে হূঁ মন্ত্রটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।[১৪] খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের শেষভাগ থেকে পঞ্চম শতকের প্রথমভাগের মধ্যবর্তী সময়ে গ্রন্থটি প্রথম রচিত হয়।[১৫] এই গ্রন্থের জন্যই সম্ভবত চুণ্ডী পরবর্তীকালে কুয়ানিন হিসেবে চিহ্নিত হন। কারণ্ডব্যূহসূত্র গ্রন্থে দেখা যায়, চুণ্ডীর মন্ত্র ওঁ মণিপদ্মে হূঁ উচ্চারণের পরেই উল্লিখিত হয়েছে এবং সাত কোটি বুদ্ধ আবির্ভূত হয়ে চুণ্ডী ধারণী মন্ত্র আবৃত্তি করছেন। এই সূত্রে দেখা যায়, সাতাত্তর কোটি তথাগত (বুদ্ধ) চুণ্ডী ধারণী আবৃত্তি করছেন এবং তার মাধ্যমে অবলোকিতেশ্বরের শরীরে এক সূক্ষ্ম রন্ধ্র সৃষ্টি হচ্ছে। এই রন্ধ্রপথে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশিত ও আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠছে।[২]
মূর্তিলক্ষণ
[সম্পাদনা]
সাধারণত চুণ্ডীকে বহুভূজা রূপেই বর্ণনা করা হয়ে থাকে।[১৬][১৭] পূর্ব এশিয়ায় চুণ্ডী অষ্টাদশভূজা রূপে বিশেষ জনপ্রিয়। এই রূপে দেবীর প্রতিটি হাত বৌদ্ধ দর্শনের উপায় অর্থাৎ সমীচীন সঙ্গতির প্রতীক। চুণ্ডীধারণী সূত্র মতে, বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত হতে যে আঠারোটি পুণ্যের প্রয়োজন হয় অষ্টাদশভূজা চুণ্ডীর আঠারোটি হাত সেই আঠারো প্রকার পুণ্যের প্রতীক। এছাড়া চতুর্ভূজা, ষড়ভূজা, ষোড়শভূজা ও ষড়বিংশভূজা চুণ্ডীরও উল্লেখ পাওয়া যায়।[১৬][১৭] চতুর্ভূজা চুণ্ডীর চারটি হাত বৌদ্ধ দর্শনের চারটি ব্রহ্মবিহারের (মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা) প্রতীক।[১৮]
সাধনমালা গ্রন্থে চতুর্ভূজা চুণ্ডীর বর্ণনাটি এইরকম:
চতুর্ভূজা ও সর্বালংকার-ভূষিতা এই দেবীর গাত্রবর্ণ শরৎকালীন চন্দ্রের ন্যায়। তাঁর দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে বরদামুদ্রা এবং এক পদ্মের উপর স্থাপিত এক গ্রন্থ রয়েছে। অপর হস্তদ্বয়ে তিনি পাত্র ধারণ করে রয়েছেন। [১৩]
অভয়াকরগুপ্তের নিষ্পন্নযোগাবলী গ্রন্থে মঞ্জুবজ্রমণ্ডলে দেবীর বর্ণনা নিম্নরূপ:
চুণ্ডার গাত্রবর্ণ চন্দ্রের ন্যায় শুভ্র। তিনি ষড়বিংশভূজা। প্রধান দুই হস্তে তিনি প্রধান মুদ্রা প্রদর্শন করেন। অবশিষ্ট দক্ষিণ হস্তগুলিতে ধারণ করেন অভয়মুদ্রা, অসি, রত্নমালা, লেবু, তীর, পরশু, গদা, মুদ্গর, অঙ্কুশ, বজ্র, ত্রিপতাকা ও জপমালা। বাম হস্তগুলিতে তিনি ধারণ করেন চিন্তামণি রত্নখচিত ধ্বজা, পদ্ম, কমণ্ডলু, পাশ, ধনুক, বর্শা, চক্র, খড়্গ, তর্জনী মুদ্রা, পাদ্র, ভিণ্ডিপাল ও প্রজ্ঞাপারমিতা শাস্ত্র।[১৩]
তিব্বতি ধর্মগুরু লামা তারানাথ ষোড়শ শতকে চার প্রকার তন্ত্রগ্রন্থ থেকে সকল দেবতাদের বিবরণ সংকলন করেন রিনজুং গিয়াৎসা গ্রন্থে। এই গ্রন্থে চুণ্ডীর এক ত্রিমস্তকা ষড়বিংশভূজা রূপেরও উল্লেখ পাওয়া যায়।[১৯]
চুণ্ডী বা চুণ্ডার অনেক মূর্তিতেই তাঁর হাতে অসংখ্য প্রতীকী বস্তু অথবা বৌদ্ধ মুদ্রা (হস্ত ভঙ্গিমা) দেখা যায়।[৪] এই-জাতীয় মুদ্রাগুলির মধ্যে ধর্মচক্র মুদ্রা (ধর্মচক্রের প্রতীক), বরদামুদ্রা (বরদানের প্রতীক) ও অভয়মুদ্রা (অভয়দানের প্রতীক) প্রধান।[৪] অন্যদিকে সামগ্রীগুলির প্রতীকতত্ত্ব সম্পর্কে পুষ্পা নিয়োগীর মত:
হস্তধৃত বস্তুগুলির মধ্যে পদ্ম পবিত্রতার প্রতীক; চুণ্ডার হাতের বইটি হল চুণ্ডাধারিণী; জপমালা জপসংখ্যা গণনার জন্য; চক্র পরম পূর্ণতার প্রতীক; ধ্বজা হল বিজয়পতাকা; ত্রিশূল ধারণ করেন "শিখাসহ সূর্য"-এর প্রতীক হিসেবে, কিন্তু এ বিষয়ে নানা মত রয়েছে; খড়্গ শূন্যতার প্রতীক, যা প্রজ্ঞাপারমিতা মতবাদের সারকথা। ভিক্ষাপাত্র সকল সম্পদ ত্যাগের লক্ষণ।[৪]
হিন্দুধর্ম
[সম্পাদনা]হিন্দু ধর্মগ্রন্থে চুণ্ডা নামে এক দেবীকে শিবের পত্নী দুর্গা বা পার্বতীর এক ভয়ংকরী রূপ মনে করা হয়।[২০] অবশ্য গিমেলো লিখেছেন, "তিনি যে শৈব দেবী দুর্গার বৌদ্ধ রূপ এমন দাবি বারবার ওঠায় সন্দেহ জাগে। বিশেষত দুই দেবীই যেখানে সমগ্র মধ্যযুগীয় ভারতে নারী ও মাতৃকাদেবীর প্রতি ভক্তির সাধারণ বিকাশের উদাহরণ।"[২]
পূর্ব এশীয় বৌদ্ধধর্মে
[সম্পাদনা]
চীনা ইতিহাস
[সম্পাদনা]রবার্ট গিমেলোর মতে, পরবর্তীকালীন প্রথাগত চীনা বৌদ্ধধর্মের গুহ্যাচারে চুণ্ডী প্রধান দেবী না হলেও অন্যতম প্রধান দেবী বটে। চীনের বৌদ্ধধর্মে আজও তাঁর উপস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।[২] চীনে তিনি ঝুনতি ফোমু (চীনা: 準提佛母, "বুদ্ধ-জননী ঝুনতি") নামে পরিচিত।[২১] এছাড়া তিনি ঝুনতি পুসা (চীনা: 準提菩薩, "চুণ্ডী বোধিসত্ত্ব") নামেও পরিচিত।
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে দিবাকর (দিপোহেলুও, ৬১৩-৮৮ খ্রিস্টাব্দ) চুণ্ডীদেবীধারণীসূত্র গ্রন্থটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন। এরপরই চুণ্ডী দেবী চীনে পরিচিতি লাভ করেন।[২] জাননিং (৯১৯-১০০১ খ্রিস্টাব্দ) লিখেছেন যে, চুণ্ডীদেবীধারণীসূত্র গ্রন্থের অপর এক পাঠের অনুবাদক বজ্রবোধি তাং সম্রাট শোয়ানৎসুং-র (রাজত্বকাল ৭১২-৩৬) হয়ে রাজ্যে দীর্ঘ খরার অবসানের উদ্দেশ্যে চুণ্ডীর একটি গুহ্যাচার অনুষ্ঠান করেন এবং সেই কৃত্যটি সফল হয়েছিল বলেই বিশ্বাস করা হত।[২] অমোঘবজ্র চুণ্ডীদেবীধারণীসূত্র গ্রন্থের আরেকটি পাঠ অনুবাদ করেন (কু জুঝি ফোমা সুও শুও ঝুন তি তুওলুওনি জিং) এবং সেই অনুবাদটি ছিল বেশ দীর্ঘতর।[২] সম্পর্কিত বিভিন্ন আচার-সংক্রান্ত পুস্তিকা (যেমন সপ্ত কোটি বুদ্ধ দেবী চুণ্ডী হৃদয় ধারণী আচার ও সপ্ত কোটি দেবী আচার) শুভকরসিংহের রচনা বলে মনে করা হয়।[২]
সুং রাজবংশের রাজত্বকালে আরও কিছু ধর্মগ্রন্থ অনূদিত হলে চীনা কাল্ট ও গুহ্যাচারের দেবী হিসেবে চুণ্ডীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে ছিল কারণ্ডব্যূহসূত্র, মায়াজাল তন্ত্র ও চুণ্ডী (চুণ্ডা) তন্ত্র।[২]
খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে লিয়াউ রাজবংশের (৯১৬-১১২৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে চীনা বৌদ্ধধর্মে চুণ্ডী উপাসনা তার সর্বাধিক পরিচিত রূপটি লাভ করে এবং এই রূপটি অদ্যাবধি প্রভাবশালী রয়েছে। এর মূলে ছিল দাওশেনের রচনা। তিনি গুহ্য ও সহজবোধ্যের সম্পূর্ণ [আন্তঃ-]অনুধাবনের দ্বারা বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংকলন রচনা করেন। দাওশেনের রচনা চীনা গুহ্য বৌদ্ধধর্মকে, বিশেষত চুণ্ডী-কেন্দ্রিক গুহ্যাচারগুলিকে হুযান দর্শনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। গিমেলোর মতে, আজ যা চুণ্ডী গুহ্যাচার নামে পরিচিত, তার ভিত্তি হল দাওশেনের রুচনা।[২]
লিয়াউ যুগের পরেও চুণ্ডী গুহ্যাচার চীনে প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে (মিং রাজত্বের শেষ যুগে ও ছিং রাজ্যের আদি যুগে) চুণ্ডী গুহ্যাচারের বিকাশের আরেকটি পর্যায় দেখা যায়। এই ঘটনা ঘটেছিল প্রধানত দক্ষিণ চীনে।[২২] এই যুগে চুণ্ডী উপাসনা-বিষয়ক অন্তত ছ’টি গ্রন্থ রচিত হয়। এই ছ’টি বই বর্তমানে জিয়াশিং প্রামাণ্য ধর্মশাস্ত্র-এর সংযোজিত অংশ এবং [ক্যোটো] বৌদ্ধ প্রামাণ্য ধর্মশাস্ত্রের সম্পূরণী অংশের অন্তর্গত।[২২] এই যুগের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও চুণ্ডীর কথা অনেক বার উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়া এই যুগে দেবীর অনেক ছবি আঁকা হয় এবং মূর্তিও নির্মিত হয়। পরবর্তীকালীন মিং বৌদ্ধ পুনর্জাগরণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন যুনকি ঝুহং (১৫৩২-১৬১২), হানশান দেকিং (১৫৪৬-১৬২৩) ও ওউযি ঝিশু (১৫৯৯-১৬৫৫)। এঁরা সকলেই চুণ্ডী উপাসক ছিলেন।[২২]

সামান্য পরবর্তীকালের ধর্মগুরু শউদেং (১৬০৭-১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দ) চুণ্ডী গুহ্যাচারের এক প্রধান প্রচারক। তিনি ঝুনতি ধ্যানানুশীলনের পদ্ধতি (ঝুনতি সানমেই শিংফা 准提三昧行法) নামে একটি জনপ্রিয় সহায়িকা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[২৩]
মিং যুগে চুণ্ডী গুহ্যাচার চীনা বৌদ্ধ গৃহস্থদের দ্বারাও বহুলভাবে অনুশীলিত হত। প’এং চি-চ’ইং (১৭৪০-১৭৯৬) কৃত গৃহস্থ বৌদ্ধদের জীবনীতে দেখা যায়, গৃহস্থদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্ত্রটি ছিল চুণ্ডী মন্ত্র ও মহাকরুণা মন্ত্র। [২৪] পরবর্তীকালীন মিং যুগের শিল্পকলাতেও চুণ্ডী প্রাধান্য বজায় রেখেছিলেন, যেমন রেখেছিলেন চেন হংশউ-এর (১৫৯৮-১৬৫২) চিত্রকলায়।[২১] জার্মান জেসুইট অ্যাথানাসিয়াস কার্চারও (১৬০২-১৬৮০) পরবর্তীকালীন মিং যুগে গৃহস্থদের মধ্যে চুণ্ডী গুহ্যাচারের জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত চায়না ইলাস্ট্রাটা (১৬৬৭) গ্রন্থে এই দেবীর একটি ছবিও প্রকাশ করেন।[২৩]
বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]
পূর্ব এশীয় বৌদ্ধধর্মে চুণ্ডী অদ্যাবধি পূজিত হয়ে আসছেন। চীনে তাঁর পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। সেদেশে নান হুয়াই-চিন প্রমুখ কয়েকজন আধুনিক চীনা বৌদ্ধ ব্যক্তিও চুণ্ডী উপাসনা প্রচার করেন।[২৫] সমসাময়িক কালের চীনা ভিষকেরা আজও তাঁর মন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।[২৬]
কখনও কখনও চণ্ডীকে কুয়ানিনের অবতার বলে গণ্য করা হয় এবং এই রূপে তাঁর নাম ঝুনতি কুয়ানিন (চীনা: 準提觀音, "চুণ্ডী অবলোকিতেশ্বর")। কোরীয় ভাষায় তিনি জুনজে গোয়ান-এউম বোসাল (준제관음보살, হাঞ্জা: 准提觀音菩薩, "চুণ্ডী অবলোকিতেশ্বর বোধিসত্ত্ব") এবং জাপানে তিনি জুনদেই কাননোন (准胝観音, "চুণ্ডী অবলোকিতেশ্বর") নামে পরিচিত। ভিয়েতনামে তাঁর নাম চুয়ান দে কুয়ান আম (চু হান: 準提觀音, "চুণ্ডী অবলোকিতেশ্বর")।
আধুনিক চীনা বৌদ্ধধর্মে চুণ্ডীকে কখনও কখনও মারীচি বা স্বর্গের রানি রূপেও চিহ্নিত করা হয়।[২০] দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার চীনা বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে চুণ্ডীর মূর্তি প্রথাগতভাবে স্থাপন করা হয় নিরামিষভোজনের কক্ষে (齋堂; ঝাইতাং)।[২৭]
চুণ্ডী ধারণী
[সম্পাদনা]চুণ্ডীধারণীসূত্র অনুযায়ী, চুণ্ডীর সঙ্গে সম্পর্কিত ধারণীটি (মন্ত্র) নিম্নরূপ (সংস্কৃত, বাংলা ও চীনা ভাষায়):[৯][২৮]
- নমঃ সপ্তানাং সম্যকসম্বুদ্ধ কোটীনাং তাদ্যথা ওঁ চলে চুলে চুণ্ডে স্বাহা[২৯]
- সপ্ত কোটি সম্যকবুদ্ধ এইভাবে প্রণতি জানান: ওঁ চলে চুলে চুণ্ডে স্বাহা
- 南無 颯哆喃 三藐三菩陀 俱胝喃 怛姪他 唵 折隸 主隸 准提 娑婆訶
নান হুইয়া-জিনের পাঠে ধারণীর শেষে "ওঁ ভ্রূঁ" ("ওং বু লিন") যুক্ত করা হয়েছে।[৩০]
গিমেলোর মতে, "পরবর্তীকালীন কয়েকটি ধর্মগ্রন্থে দীর্ঘতর পাঠটি গতানুগতিকভাবে নির্দিষ্ট পূর্বকৃত্য দ্বারা নির্ধারিত করা হয়েছে এবং সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে ধারণীটি উচ্চারণ করা হবে শুদ্ধিকরণ ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যে।"[২] দীর্ঘতর পাঠের একটি উদাহরণ হল:[২]
ওঁ রাং ওঁ জ্রিং ওঁ মণিপদ্মে হূঁ
নমঃ সপ্তানাং সম্যকসম্বুদ্ধ কোটীনাং তাদ্যথা:
ওঁ চলে চুলে চুণ্ডে স্বাহা
ব্রাম্
অনুশীলন
[সম্পাদনা]

রবার্ট গিমেলো "চুণ্ডী ধারণী" অনুশীলনের বিষয়টিকে এইভাবে বর্ণনা করেছেন:
তাং অনুবাদের যুগ থেকে শুরু করে "চুণ্ডী ধারণী"-বিষয়ক শাস্ত্রগুলিতে ঝুনতি উপাসনার একটি সংজ্ঞামূলক বৈশিষ্ট্য এই যে, এতে ভক্তদের একটি দর্পণ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হত "বেদি হিসেবে" (ওয়েই তান); [আবার] কয়েকটি গ্রন্থে বলা হয়েছে "প্রত্যক্ষীকরণের সুবিধার জন্য"। ধারণী পাঠ করতে করতে দর্পণের দিকে তাকিয়ে ভক্তকে দেবীর মূর্তি ও তাঁর শরীর যে গুহ্য শব্দগুলি দ্বারা নির্মিত তা প্রত্যক্ষ করতে হয়। কালে ছোটো চাকতি-আকাএর ব্রোঞ্জ-নির্মিত দর্পণ এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা শুরু হয়। এই ধরনের দর্পণের পশ্চাদভাগে প্রামাণ্য শাস্ত্রের বিবরণ অনুযায়ী দেবীর রূপটি খোদাই করা থাকে এবং সামনে এবং/অথবা পিছনে খোদিত থাকে ধারণীটি। চাকতির সামনে বা প্রতিফলনকারী দিকের পরিধিসীমায় অনেক সময়েই মন্ত্রটির সংস্কৃত পাঠ খোদাই করা হত এবং পিছনের পরিধিরেখায় খোদাই করা হয় চীনা পাঠটিও। পবিত্র বর্ণের "মালা" দিয়ে ঘেরা মূর্তির এহেন উপস্থাপনার দ্বারা দেবী ও তাঁর মন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কটি দাবি করা হয়েছে। এবং অবশ্যই বস্তুটি যখন একটি দর্পণ, তখন সেখানে দেবী ও তাঁর মন্ত্রের বিমিশ্র রূপটি উপাসকের নিজের প্রতিফলনের সঙ্গে মিশে যায়। কখনও কখনও এর মাধ্যমে ভক্ত ও দেবীর যোগের বিষয়টির উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেবীর চিত্র দর্পণের পশ্চাদভাগে খোদিত থাকে পিছন দিকে মুখ করা অবস্থায়, তাই ভক্ত দর্পণের পশ্চাদভাগে দেবীর পৃষ্ঠদেশ দেখতে পায় এবং সেই কারণেই দর্পণের সামনের দিকে সহজেই কল্পনা করে নিতে পারে যে দেবী তার দিকে তাকিয়ে আছেন। এইভাবে দেবী স্বয়ং ভক্তের নিজের রূপের আড়ালে থেকে ভক্তকে দর্শন করেন।[২]
চিত্র প্রত্যক্ষীকরণ ও মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট চুণ্ডী মুদ্রা প্রদর্শনের নিয়মও যুক্ত হয়। এই তিন উপাদান (দর্পণ মণ্ডল, ধারণী ও মুদ্রা) চীনা গুহ্য বৌদ্ধধর্মের একটি প্রধান উপাদান "তিন গুহ্য"-এর (সানমি) প্রথা গঠন করেছে।[২]
গিমেলোর মতে, চীনা চুণ্ডী উপাসক দাওশেন মনে করতেন যে, গুহ্যাচার ও মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা দেবী চুণ্ডীকে আবাহন করলে হুযান শিক্ষার সত্যে পৌঁছানো যায়।[২] গিমেলো আরও লিখেছেন যে, দাওশেন এও মনে করতেন "হুযান মতবাদের "শরীর" ও চুণ্ডীর প্রত্যক্ষীকৃত মূর্তি কোনো এক দিক থেকে অন্তঃশায়ী। দেবীর উপস্থিতির আবাহন করলে আমরা কোনো ভাবে এই মতবাদের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি এবং সেগুলিকে ব্যবহারিকভাবে ঈপ্সিত ফলপ্রদানে সক্ষম বলে উপস্থাপনা করতে পারি।" প্রকৃত অর্থে তিনি "তাঁর পাঠকদের কাছে আবেদন করেছেন এক ধরনের ধর্মীয় সমন্বয়ে পৌঁছাতে, যাতে ধারণী দ্বারা পরিশোধিত মতবাদ শোনা বা পাঠ করা এবং দেবীকে দর্শন করা – শব্দের উপলব্ধি ও মূর্তির উপলব্ধি – একে অপরের ফলস্বরূপ ঘটতে পারে এবং একে অপরের মধ্যে মিশে যেতে পারে।"[২]
কথিত উপকারিতা
[সম্পাদনা]সূত্রে দেখা যায়, বুদ্ধ চুণ্ডী ধারণী পাঠের বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছেন। মূলত শুদ্ধিকরণ ও অন্তঃপ্রকৃতির উন্নতির জন্য এটি পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন, ধারণী উচ্চারণের উপর বুদ্ধ বলছেন:[২৮]
যদি ভিক্ষু, ভিক্ষুণী, উপাসক বা উপাসিকা এই ধারণী মুখস্থ রেখে আট লক্ষ জপ করে, তাহলে সর্বত্র তাদের অসংখ্য যুগ-সঞ্চিত খারাপ কর্ম সর্বত্র সম্পূর্ণ রূপে দূর হবে। তারা যেখানে জন্মগ্রহণ করবে ও বাস করবে সর্বত্রই তারা বুদ্ধগণের ও বোধিসত্ত্বগণের সাক্ষাৎ পাবে। সর্বদাই তারা ইচ্ছামতো কাজের জন্য পর্যাপ্ত রসদ ও ক্ষমতা অর্জন করবে। যে কোনো জন্মে তারা সর্বদাই গৃহত্যাগে সক্ষম হবে এবং এক বোধিসত্ত্বের শুদ্ধ অনুশাসন রক্ষা করার ক্ষমতা অর্জন করবে। তারা মানব বা স্বর্গলোকে জন্মগ্রহণ করবে এবং অমঙ্গলসূচক নিয়তির পথে পতিত হবে না এবং তারা সর্বদাই স্বর্গের রক্ষাকর্তাদের দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
ধারণীটি বুদ্ধত্ব ও সম্পূর্ণ বোধির (সংস্কৃত: অনুত্তরা সম্যকসম্বোধি) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। সূত্রের শেষে বুদ্ধ তাঁর উপদেশান্তে বলেছেন:[২৮]
চুণ্ডীর এই মহতী ধারণী হল একটি মহামহিমান্বিত মন্ত্রোপদেশ যা অতীতের সকল বুদ্ধ, ভবিষ্যতের সকল বুদ্ধ এবং বর্তমান কালের সকল বুদ্ধ দ্বারা কথিত। এবার আমি সকল জীবের মঙ্গলের জন্য এটি বলব, যাতে সকলে অনুত্তর সম্যকসম্বোধি অর্জন করতে পারে। যদি কোনো জীব অল্প পুণ্যবান হয়, কারো মধ্যে শুভবোধ, স্বাভাবিক ক্ষমতা এবং সপ্তবোধ্যঙ্গের অভাব হয়, সে সহজেই অনুত্তর সম্যকসম্বোধি অর্জন করতে পারবে। যদি লোকে সর্বদা এই ধারণী স্মরণে রাখতে পারে, পাঠ করতে পারে ও অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে, তাহলে তারা শুভবোধের অগণিত মূল অর্জন করতে পারবে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ বাসওয়েল, রবার্ট ই.; লোপেজ, ডোনাল্ড এস., সম্পাদকগণ (২৪ নভেম্বর ২০১৩)। দ্য প্রিন্সটন ডিকশনারি অফ বুদ্ধিজম। প্রিন্সটন, নিউ জার্সি: প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২০৪। আইএসবিএন 978-0-691-15786-3।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন গিমেলো, রবার্ট (২০০৪)। "আইকন অ্যান্ড ইনক্যান্টেশন: দ্য গডেস ঝুনতি অ্যান্ড দ্য রোল অফ ইমেজেস ইন দি অকাল্ট বুদ্ধিজম অফ চায়না"। মূল গ্রন্থ: ইমেজেস ইন এশিয়ান রিলিজিয়নস: টেক্সটস অ্যান্ড কনটেক্সটস, সম্পা. ফিলিস গ্র্যানোফ ও কোইচি শিনোহারা: পৃ. ৭১–৮৫
- ↑ শ, মিরান্ডা (২০০৬). বুদ্ধিস্ট গডেস অফ ইন্ডিয়া, পৃ. ২৬৫–২৬৭। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ পুষ্পা নিয়োগী (১৯৭৭)। চুণ্ডা – আ পপুলার বুদ্ধিস্ট গডেস। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২৩-১১-১৩ তারিখে ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট, পৃ. ২৭ (১-৬), ২৯৯–৩০৮। doi:10.2307/29756386
- ↑ কিনার্ড, জেকব (১৯৯৯)। ইমেজিং উইশডম: সিয়িং অ্যান্ড নোয়িং ইন দি আর্ট অফ ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজম, পৃ. ১১৪–১৪৮. রটলেজ।
- ↑ "হু ইজ ল্হামো চুণ্ডী?"। থেকচেন চোলিংন। ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ জোপা, থুবতেন। "রিনজাং গ্যাৎসা ভলিউমস ১ অ্যান্ড ২ ইনিশিয়েশনস অ্যান্ড ওরাল ট্রান্সমিশনস ট্রান্সমিটেড ব্য লামা থুবতেন জোপা রিংপোচে" (পিডিএফ)। Lamayeshe.com। ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ ক খ গ বিনয়তোষ ভট্টাচার্য (১৯২৪)। দি ইন্ডিয়ান বুদ্ধিস্ট আইকনোগ্রাফি মেইনলি বেসড অন দ্য সাধনমালা অ্যান্ড আদার কগনেট তান্ত্রিক টেক্সটস অফ রিচুয়ালস, পৃ. ২২০। অক্সফোর্ফ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- ↑ ক খ "দ্য বাকেট'স ডিসপ্লে, টীকা ২৯৯"। ৮৪০০০ ট্রান্সলেটিং দ্য ওয়ার্ডস অফ দ্য বুদ্ধ। ২০২৩-০৬-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৩।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০০৯-০৪-১১)। "চুন্ডি, চুণ্ডী, চুমডি: ৬ ডেফিনেশনস"। www.wisdomlib.org। ২০২৩-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৩।
- ↑ আপ্তে, বামন শিবরাম (১৯৫৭–১৯৫৯)। "রিভাইজড অ্যান্ড এনলার্জড এডিশন অফ প্রিন. ভি. এস. আপ্তে'জ দ্য প্র্যাকটিক্যাল সংস্কৃত-ইংলিশ ডিকশনারি"। dsal.uchicago.edu। ২০২৩-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৩।
- ↑ ক খ সি. এন. তায়। কুয়ান-য়িন: দ্য কাল্ট অফ হাফ এশিয়া, হিস্ট্রি অফ রিলিজিয়নস, খণ্ড ১৬, সংখ্যা ২ (নভেম্বর ১৯৭৬), পৃ. ১৫২।
- ↑ ক খ গ ঘ বিনয়তোষ ভট্টাচার্য (১৯২৪)। দি ইন্ডিয়ান বুদ্ধিস্ট আইকনোগ্রাফি মেইনলি বেসড অন দ্য সাধনমালা অ্যান্ড আদার কগনেট তান্ত্রিক টেক্সটস অফ রিচুয়ালস, পৃ. ২২১। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস
- ↑ ক খ স্টাডহোম, আলেকজান্ডার (২০০২) দি অরিজিনস অফ ওঁ মণিপদ্মে হূঁ: আ স্টাডি অফ দ্য কারণ্ডব্যূহ সূত্র: পৃ. ১৭৫
- ↑ স্টাডহোম, আলেকজান্ডার (২০০২) দি অরিজিনস অফ ওঁ মণিপদ্মে হূঁ: আ স্টাডি অফ দ্য কারণ্ডব্যূহ সূত্র: পৃ. ১৭
- ↑ ক খ কোনজ, এডওয়ার্ড (১৯৬৮)। থার্টি ইয়ার্স অফ বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ: সিলেক্টেড এসেজ বাই এডওয়ার্ড কোনজ। ব্রুনো ক্যাসিরার। পৃষ্ঠা ২৫৫।
- ↑ ক খ নিয়োগী, পুষ্পা (ডিসেম্বর ১৯৭৭)। "চুণ্ডা – আ পপুলার বুদ্ধিস্ট গডেস"। ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট। ২৭ (১/৪): ২৯৯–৩০৮। জেস্টোর 29756386। ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ শিনোহারা, কোইচি; গ্র্যানোফ, ফিলিস (২০০৪)। ইমেজেস ইন এশিয়ান রিলিজিয়নস: টেক্সটস অ্যান্ড কনটেক্সটস। ইউবিসি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৪৭। আইএসবিএন 9780774809481।
- ↑ জোপা, থুবতেন (৭ জুলাই ২০১৭)। "রিনজুং গিয়াৎসা"। লামা যেশে উইশডম আর্কাইভ। ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ ক খ আ ডিকশনারি অফ চাইনিজ বুদ্ধিস্ট টার্মস: উইথ সংস্কৃত অ্যান্ড ইংলিশ ইকুইভ্যালেন্টস অ্যান্ড আ সংস্কৃত-পালি ইনডেক্স। লুইস হোডোয়াস, উইলিয়াম এডওয়ার্ড সুটহিল। লন্ডন: রটলেজকার্জন। ২০০৪। আইএসবিএন 0-203-64186-8। ওসিএলসি 275253538।
- ↑ ক খ বেন্টলি, তামারা মেইমার্ক (২০১৭)। রিপেন্টেন্ট মংক: ইলিউশন অ্যান্ড ডিসইলিউশন ইন দি আর্ট অফ চ্যান হংশউ, পৃ. ৪৭। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস।
- ↑ ক খ গ "এসোটেরিসিজম ইন দ্য লেট মিং— আর্লি ছিং বুদ্ধিস্ট রিভাইভাল | ইউএস-চায়না ইনস্টিটিউট"। china.usc.edu। ২০২৩-১১-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৪।
- ↑ ক খ বেন্টলি, তামারা হেইমার্র (২০১৭)। রিপেন্টেন্ট মংক: ইলিউশন অ্যান্ড ডিসইলিউশন ইন দি আর্ট অফ চেন হংশউ, পৃ. ৪৮। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস।
- ↑ টুইচেট, ডেনিস ক্রিসপিন; ফেয়ারব্যাংক, জন কিং (১৯৭৮)। দ্য কেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া, ভলিউম ৮, পার্ট ২, দ্য মিং ডায়নাস্টি ১৩৬৮-১৬৪৪, পৃ. ৯৪৯। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস
- ↑ ওনবি, ডেভিড (২০১৭)। মেকিং সেন্টস ইন মডার্ন চায়না, পৃ. ৩৭৬। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- ↑ জুইয়ার, ক্যারেন আর. এবং অন্যান্য (২০১১)। মির্যাকলস: অ্যান এক্সারসাইজ ইন কমপেয়ারেটিভ ফিলোজফি অফ রিলিজিয়ন, পৃ. ১৪৪। স্প্রিংগার নেচার।
- ↑ যিং, রুও শো। চাইনিজ বুদ্ধিস্ট ভেজিটেরিয়ান হলস (ঝাইতাং) ইন সাউথইস্ট এশিয়: দেয়ার অরিজিনস অ্যান্ড হিস্টোরিক্যাল ইমপ্লিকেশনস। ওসিএলসি 1086162650।
- ↑ ক খ গ "দ্য চুণ্ডীধারণীসূত্র"। ২০১০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০১।
- ↑ রবার্টস উল্লেখ করেছেন যে, এই সংস্কৃত পাঠটি তিব্বতি সংস্করণ এবং কেমব্রিজে রক্ষিত পুথিতে পাওয়া যায়। যদিও বৈদ্য ও সামশ্রমী সংস্করণে "চুণ্ডে"-র বদলে রয়েছে "চুন্যে"।
- ↑ 南怀瑾大师1985年准提菩萨圣诞准提法开示-佛教导航 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-০২-২৩ তারিখে
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিমিডিয়া কমন্সে চুণ্ডী (বৌদ্ধধর্ম) সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
উইকিসংকলনে চুণ্ডী (বৌদ্ধধর্ম) সম্পর্কিত কর্ম দেখুন।