চুকাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চুকাই
মেস্তা
Hibiscus sabdariffa
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
বর্গ: Malvales
পরিবার: মালভেসি
গণ: হিবিস্কাস
প্রজাতি: H. sabdariffa
দ্বিপদী নাম
Hibiscus sabdariffa
এল.

চুকাই বা চুকুর বা মেস্তা বা টক ফল[১](সিলেটে হইলফা[২]), যা ইংরেজিতে রোজেলা, রোজেলসরেল (roselle, sorell) নামে পরিচিত, (Hibiscus sabdariffa) একপ্রকার উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ফল।[৩] ফলটি টক স্বাদযুক্ত; রঙ গাঢ় লাল। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই গাছের বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশেও এই ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই ফলটি জন্মে, তবে বাণিজ্যিক চাষ হয় না। ক্রান্তীয় আফ্রিকা চুকাই গাছের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়।[৪]

এটি অপ্রকৃত ফল। বৃতি এর ভক্ষ্য অংশ, যা খুবই পাতলা এবং পরিমাণে অল্প; গর্ভাশয় বড় এবং ছোট ছোট হুলযুক্ত। ভক্ষ্য অংশটি গর্ভাশয়কে ঘিরে থাকে। পরিপক্ব গর্ভাশয়ে অনেকগুলো বীজ থাকে। এটি বিদারী ফল, অর্থাৎ পাকলে এটি ফেটে যায় এবং বীজ ছড়িয়ে যায়।

নাম[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ফলটি পরিচিত। যেমন: রাজশাহীতে চুকাই, খুলনায় ও সাতক্ষীরাতে অম্ব মধু বা অম্বল মধু, ধামরাই এবং মানিকগঞ্জে চুকুল, সিলেটে হইলফা, কুমিল্লায় মেডশ, মেট্টস বা মেষ্টা ইত্যাদি। এছাড়া চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুপড়, চুকা, চুক্কি, চুই, মেস্তা, খিইরুপ ইত্যাদি নামও প্রচলিত আছে।[২] এটি ভারতের আসামে টেঙ্গামোরা, কেরালায় লালচাটনি, ইরানে চায়ে-তরশ, আরব দেশগুলোতে কারকাদি, ক্যারিবিয় ও লাতিন আমেরিকায় সরেল, ইন্দোনেশিয়ায় রোজেলা, রোসেলা বা রোজেল, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে বিসাপ নামে পরিচিত। এছাড়া এটি সরেল নামেও পরিচিত।[৪]

ব্যবহার[সম্পাদনা]

কলকাতার একটি বাজারে বিক্রয়ের জন্য চুকাই ফল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

বাংলাদেশে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এটি। এছাড়া এদেশে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয়। এর মধ্যে 'পেকটিন' আছে বলে শুধুমাত্র চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে পেকটিন মেশাতে হয় না। অস্ট্রেলিয়া, বার্মা এবং ত্রিনিদাদে এই ফলটি জ্যাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই জ্যাম লালভর্তা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে যাকে সরেল জেলি নামে ডাকা হয়।

চুকাই অনেক দেশে সস্তা সবজি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সম্ভবতঃ এটি মায়ানমারের সবচে জনপ্রিয় সবজি।[৫] চুকাই পাতা রসুন, কাঁচামরিচ ও চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছ সহযোগে ভাজি করে অথবা তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। চুকাই পাতা ও চিংড়ি শুটকি দিয়ে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং এটি মায়ানমারে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের প্রিয় সবজির মধ্য এটি একটি। জুম পাহাড়ে এটার ভালো ফলন হয় ।চাকমা ভাষায় এটাকে আমিল্যে বলা হয়।

ইতালি, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে চুকাই পাতা দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খাওয়া হয়। ত্রিনিদাদে বিয়ারের সাথে এই চা মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ আছে।

চুকাই বীজে স্নেহ-দ্রবনীয় (lipid soluble) এন্টি অক্সিডেন্ট আছে, বিশেষতঃ গামা-টোকোফেরল।[৬]

চুকাই গাছ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে ধারণা করা হয়। এই গাছের কাণ্ড থেকে ভাল মানের আঁশ পাওয়া যায়; তাই অনেক দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চুকাই গাছ চাষ করা হয়।[৭] এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজী ওষুধ হিসেবে মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। [৮]

তবে রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে চুকাই গাছের ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। [৯] রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা প্রমাণিত নয়। [১০] এ ব্যাপারে কিছু গবেষণা হয়েছে, তবে সেগুলোর ফলাফল সম্পর্কে মতভেদ আছে। [১১]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মেস্তা বা রোজেলার গুণের নেই শেষ"। ২৪ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "স্বাদে ও ভেষজ গুণে অনন্য 'চুকাই'"বার্তা২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২২ 
  3. http://www.biodiversitylibrary.org/item/13830#page/137/mode/1up
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১১ 
  5. http://articles.latimes.com/1993-10-07/food/fo-42908_1_chin-baung
  6. Mohamed R. Fernandez J. Pineda M. Aguilar M.."Roselle (Hibiscus sabdariffa) seed oil is a rich source of gamma-tocopherol." Journal of Food Science. 72(3):S207-11, 2007 Apr.
  7. "hort.purdue.edu"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৫ 
  8. "drugs.com"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১১ 
  9. Ngamjarus, Chetta; Pattanittum, Porjai; Somboonporn, Charoonsak (২০১০)। Ngamjarus, Chetta, সম্পাদক। "Cochrane Database of Systematic Reviews"। ডিওআই:10.1002/14651858.CD007894.pub2  |অধ্যায়= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  10. Kuriyan, R; Kumar, DR; r, R; Kurpad, AV (২০১০)। "An evaluation of the hypolipidemic effect of an extract of Hibiscus Sabdariffa leaves in hyperlipidemic Indians: a double blind, placebo controlled trial"BMC complementary and alternative medicine10: 27। ডিওআই:10.1186/1472-6882-10-27পিএমআইডি 20553629পিএমসি 2906418অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  11. Gurrola-Diaz CM. Garcia-Lopez PM. Sanchez-Enriquez S. Troyo-Sanroman R. Andrade-Gonzalez I. Gomez-Leyva JF."Effects of Hibiscus sabdariffa extract powder and preventive treatment (diet) on the lipid profiles of patients with metabolic syndrome (MeSy)." Phytomedicine. 17(7):500-5, 2010 Jun.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]