বিষয়বস্তুতে চলুন

চিলিতে ইসলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চিলিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা আনুমানিক ৫,০০০ জন। চিলিতে মুসলিমের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.০২% এরও কম।[] চিলিতে বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে আছে সান্তিয়াগোর মুসলিম সোসাইটি অফ চিলি এবং আস-সালাম মসজিদ, ইকুইকের বিলাল মসজিদ, কোকিম্বোর মোহাম্মদ ষষ্ঠ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং সান্তিয়াগোর ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফ চিলি।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

অরেলিও দিয়াজ মেজার লেখা "ক্রিকলস অফ দ্য হিস্ট্রি অফ চিলি" গ্রন্থ অনুসারে, চিলি আবিষ্কারের অভিযানে দিয়েগো দে আলমাগ্রোর দলের এক সদস্য ছিলেন পেদ্রো দে গাসকো। পেদ্রো মরিস্কো ছিলেন অর্থাৎ স্পেনের মুসলিম। তাকে ইসলাম থেকে ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]মরিস্কোদের আগমন ইতিহাসে উল্লেখিত হয়েছে। তবে সম্প্রতি চিলির ইতিহাসবিদরা দেশের মুরিশ ঐতিহ্য এবং এর চিলির সংস্কৃতি ও পরিচয়ের উপর প্রভাবকে স্বীকার করতে শুরু করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৮৫৪ সালে জানা যায়, দেশে দুজন "তুর্কি" বাস করতেন। ১৮৬৫ এবং ১৮৭৫ সালের আদমশুমারিতেও এ দুজনের নাম ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তারা কোথা থেকে এসেছেন তা জানা যায়নি। কেবল এটুকু জানা যায় যে তারা বিশাল উসমানীয় সাম্রাজ্যের কোনো এক অংশের বাসিন্দা ছিলেন। এ ঘটনার দুই বছর পরে ১৮৫৬ সালে চিলিতে মুসলিমদের আগমন বাড়তে থাকে। তখনকার উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন এলাকা থেকে আরব অভিবাসীরা চিলিতে এসে বসবাস শুরু করেন।[]

সান্তিয়াগোতে, চিলির প্রথম ইসলামী প্রতিষ্ঠান, সোসাইটি অফ মুসলিম ইউনিয়ন অফ চিলি (সোসিয়েদাদ ইউনিয়ন মুসলিমানা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ সালে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পরবর্তীতে, ১৬ অক্টোবর ১৯২৭ সালে, সোসাইটি অফ মিউচুয়াল এইডস অ্যান্ড ইসলামিক চ্যারিটি নামে আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের আদমশুমারিতে মুসলমানদের সংখ্যা আবার বেড়ে ৯৫৬-এ পৌঁছে। বেশিরভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী সান্তিয়াগোতে বাস করত। বাকি মুসলিমরা আন্তোফাগাস্টা, কোকিম্বো, ভালপারাইসো, ও'হিগিন্স, কনসেপসিওন, ম্যালেকো, কৌটিন এবং ভালদিভিয়া প্রদেশে বসবাস করত। তাদের মধ্যে খুব বেশি সংগঠন বা একতা ছিল না। ১৯৬০ সালের আদমশুমারিতে মুসলমানের সংখ্যা ৫২২ জনে নেমে আসে। এদের মধ্যে ২০৯ জনই সান্তিয়াগোতে থাকত। এক দশক পর, ১৯৭০ সালের আদমশুমারিতে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে হয় ১,৪৩১ জন। তবে, আদমশুমারিতে তারা পুরুষ না মহিলা, নাগরিক না বিদেশী তা উল্লেখ করা হয়নি।

১৮৮৫ সালের আদমশুমারি অনুসারে, "তুর্কিদের" সংখ্যা বেড়ে ২৯ জনে পৌঁছেছিল। তবে তাদের সঠিক আদি বাসস্থান বা ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ সেই আদমশুমারিতে ধর্মের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে, ১৮৯৫ সালের আদমশুমারিতে ৭৬ জন "তুর্কি" নিবন্ধিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৮ জন মুসলিম ছিল। তারা মূলত চিলির উত্তরে তারাপাকা, আতাকামা, ভালপারাইসো এবং সান্তিয়াগো এলাকায় বসবাস করত। ১৯০৭ সালের আদমশুমারিতে, মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে ১,৪৯৮ জনে দাঁড়ায়। এদের সবাই বিদেশী ছিল। তাদের মধ্যে ১,১৮৩ জন পুরুষ এবং ৩১৫ জন মহিলা ছিল, যা জনসংখ্যার মাত্র ০.০৪ শতাংশ। তবে এসময় চিলির ইতিহাসে মুসলিমদের সংখ্যা শতাংশের বিচারে সর্বোচ্চ হয়েছিল।[] ১৯২০ সালে একটি নতুন আদমশুমারিতে দেখা যায় যে, মুসলিমদের সংখ্যা কমে ৪০২ জনে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৩৪৩ জন পুরুষ এবং ৫৯ জন মহিলা ছিলেন। সবচেয়ে বেশি মুসলমান সান্তিয়াগো ও আন্তোফাগাস্তা প্রদেশে ছিল। এই দুই প্রদেশে ৭৬ জন করে মুসলমান ছিল। ২০০২ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, চিলিতে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৮৯৪ জনে। এটি ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ। এদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই পুরুষ ছিল। এর আগের ১৯৯২ সালের আদমশুমারিতে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে আলাদা করে উল্লেখই করা হয়নি।

১৯৮৮ সালে, সান্তিয়াগোতে শেখ তৌফিক রুমি মেজকুইতা আস-সালাম নামে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মসজিদটির নির্মাণকাজ ১৯৮৯ সালে সম্পন্ন হয়। ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ার একজন রাজপুত্র এটি উদ্বোধন করেন। জানা যায় যে ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে কিছু আদিবাসী চিলির মানুষও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মুসলিম দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কারণে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা ও তাদের পরিবার মসজিদ উদ্বোধনের পর চিলিতে বসতি স্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে ইরানের সহায়তায় এখানে শিয়া ইসলামের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। সান্তিয়াগোর লাস কোন্ডেসে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। এখানের বেশিরভাগ শিয়া মুসলিম ইরানি বংশোদ্ভূত এবং ফার্সি, আরবি ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা ইকুইকে বিলাল মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য জমি কেনেন। ১৯৯৯ সালে এর পুরো কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৯৮ সালে শেখ তৌফিক রুমিয়ে’র মৃত্যুর পর উসামা আবু গাজালে মসজিদের নতুন ইমাম নির্বাচিত হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

স্থাপত্য ও পরিকাঠামো

[সম্পাদনা]
লেকোকিম্বোর একটি মসজিদ।

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ধর্মীয় নেতা বা প্রার্থনার কেন্দ্র ছিল না। যারা ধর্ম পালন করতেন, তারা সিরিয়ার ব্যবসায়ী তৌফিক রুমিয়ে’র বাসায় মিলিত হতেন। ১৯৯০ সালে চিলির প্রথম মসজিদ আল-সালাম মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে তেমুকোতে আরেকটি মসজিদ উদ্বোধন হয় এবং ১৯৯৮ সালে ইকুইকে একটি নতুন মসজিদ তৈরি হয়। চিলিতে ইসলাম মূলত লেবানন, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন থেকে আগত অভিবাসীদের মাধ্যমে এসেছে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে এই লেভান্তাইন অভিবাসী ও তাদের বংশধররা চিলিতে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। ১৯২০-এর দশকে তারা প্রথম ইসলামী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।[]

চিলিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে:

  • চিলির ইসলামী সমিতি (Asociación Islámica de Chile)
  • ইসলামী সংস্কৃতি ও কল্যাণ কেন্দ্র (Centro de Cultura y Beneficencia Islámico)
  • পুয়ের্তো মন্টের চিলি ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র (Centro Chileno Islámico de Cultura de Puerto Montt)
  • চিলির ইসলামী ফাউন্ডেশন (Fundación Islámica de Chile)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Miller, Tracy, সম্পাদক (অক্টোবর ২০০৯), Mapping the Global Muslim Population: A Report on the Size and Distribution of the World's Muslim Population (পিডিএফ), Pew Research Center, পৃষ্ঠা 35, আগস্ট ৫, ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৮ 
  2. Kusumo, Fitra Ismu, সম্পাদক (২০০৭), ISLAM EN AMÉRICA LATINA Tomo II: Migración Árabe a América Latina y el caso de México, সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৮ 
  3. Islam Online। "The Muslim Community in Chile Origins and Dreams"। ২০০৭-০৩-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৯ 
  4. Perez, Michael Vicente; Ingalls, Matthew (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। "Chile has a growing Muslim community – but few know about it"news.yahoo.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২৪