চান্নাপাতনা খেলনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চান্নাপাতনা খেলনা এবং পুতুলের সমাবেশ

চান্নাপাতনা খেলনা হচ্ছে কাঠের তৈরি খেলনার এক বিশেষ রূপ যা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু গ্রাম্য জেলা চান্নাপাতনায় নির্মাণ করা হয়। ঐতিহ্যগত এই কারুশিল্পটি কর্ণাটকএর সরকার দ্বারা স্বায়ত্বশাসিত এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে ভৌগোলিক স্বীকৃতির(GI) মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়েছে।[১] এই খেলনার প্রসিদ্ধতার জন্য কর্ণাটক, গমবেগালা উরু (খেলনা-শহর) হিসেবে পরিচিত।[২] প্রথাগতভাবে, এই কাজটি রিঘশিয়া টিনটরিয়া গাছের কাঠ কে বার্নিশ করার মাধ্যমে করা হয়,[৩] যা আঞ্চলিক ভাষায় আলে মারা (গজদন্ত-কাঠ)বলে।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

চান্নাপাতনা খেলনা

এই খেলনার উৎপত্তি টিপু সুলতানএর শাসনামলে হয়েছিল, স্থানীয় কারিগরদের প্রশিক্ষণ দিতে তিনি পারস্য থেকে কারিগরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন। স্কুল বাভাস মিয়ান কে চান্নাপাতনা খেলনার জনক বলা হয়। তিনি সারাজীবন চান্নাপাতনা খেলনার জন্য নিবেদিত ছিলেন। খেলনা তৈরিতে তিনি জাপানী প্রযুক্তি কাজে লাগান এবং স্থানীয় কারিগরদের শিল্প নৈপুণ্য বৃদ্ধি করে খেলনা তৈরিতে সহায়তা করেন। [২] প্রায় দুই শতাব্দী যাবত, গজদন্ত-কাঠ এই খেলনা তৈরির প্রধান কাঠ হিসেবে ব্যবহৃ হয়েছে, যদিও রোজকাঠ এবং চন্দনকাঠ মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হত।

প্রস্থুতকরণ[সম্পাদনা]

এই শিল্পটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিবর্তিত হয়েছে;ঐতিহ্যবাহী গজদন্ত-কাঠ ছাড়াও, অন্যান্য কাঠ যেমন- রবার,ডুমুর, দারুবৃক্ষ, পাইন এবং সেগুণ গাছ ও ব্যবহার করা হয়।[৫] প্রস্তুত প্রক্রিয়া যে কয়টি ধাপে সম্পন্ন হয়- কাঠ প্রক্রিয়াকরণ, কাঠ পাকান, নির্দিষ্ট পরিমাপে কাঠ কাটন, কাঠ সাফ এবং খোঁদাই করে খেলনা করণ, রং করণ এবং অবশেষে সজ্জিত পণ্যটিকে ঘর্ষণ মার্জন। শাকসবজির রং কালারিং প্রক্রিয়াতে ব্যবহার করা হয় যাতে খেলনা এবং পুতুল শিশুরা নিরাপত্তার সাথে ব্যবহার করতে পারে।[২] ২০০৬ সাল মোতাবেক,চান্নাপাতনায় ৬০০০ এর ও অধিক লোক, ২৫৪ টি বাড়িতে তৈরি হস্তশিল্পে এবং ৫০ টি ছোট ছোট ফ্যাক্টরিতে কাজ করত এবং এসব খেলনা তৈরি করত। কর্ণাটক হস্তশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (KHDC) বাজারজাত করণের সার্বিক সহযোজিতা করে। সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত আর্ট এন্ড ক্র্যাফট উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করে থাকে।[২]

বিকাশ[সম্পাদনা]

পর্যাপ্ত সমর্থন বা বাজারজাতকরণের অভাবে, চান্নাপাতনা খেলনা শিল্প প্রায় এক দশক যাবত আর্থিক মন্দার সম্মুখীন এবং প্রায় মরতে বসেছে।[৫] যাইহোক, কর্ণাটক হস্তশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (KHDC) এর সাহায্যে শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং এই পেশার সাথে জড়িত কারিগরদের কারখানা পরিবর্তনের প্রবণতা হ্রাসে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দক্ষ কারিগর দ্বারা প্রোটোটাইপ ডিজাইন স্থানীয় কারিগরদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে, যারা এগুলোকে সুসজ্জিত খেলনা এবং পুতুলে রূপ দিতে পারে। কর্ণাটক সরকার চান্নাপাতনায় বার্নিশ শিল্পের জন্য ভবন নির্মাণ করেছে যেটির কেন্দ্রে ৩২ মোড়ে লেদমেশিন স্থাপন করা হয়েছে।[৫] কারিগরদের আর্থিক সহায়তার জন্য, ডাচ সরকার এবং কর্ণাটক সরকারের বিশ্ব প্রকল্প থেকে ও সহায়তা প্রদান করা হয়।

বিগত ৪(চার) বছর ধরে,অনেক নতুন নতুন কোম্পানি এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে চান্নাপাতনার এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে আধুনিক রূপদানের কাজ চলছে।[৬] চান্নাপাতনার খেলনাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান্নাটয়স.কম(Channatoys.com) অনলাইনে তাদের ইকমার্স কার্যক্রম শুরু করেছে। [৭] কারিগরদের সাহায্যার্থে ক্র্যাফটইজোন.কম(Craftizone.com) সরাসরি তাদের কাছ থেকে পণ্য এনে বিক্রি করে। বর্তমানে তারা চান্নাপাতনার কারিগরদের জন্য কাজ করছে পাশাপাশি তাদের সমর্থন দিচ্ছে, এমনকি শীঘ্রই তারা এই শিল্পকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে এবং এই শিল্পের অধীনে নতুন নতুন বৈচিত্র্য আনছে। ভারনাম, বহু পুরষ্কারে পুরস্কৃত একটি সামাজিক উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান চান্নাপাতনার কারিগরের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, যিনি বিগত দুই শতাব্দীতে বাড়িতে এবং জীবনধারার সাথে মানানসই খেলনা-তৈরির নৈপুণ্য কাজে লাগিয়ে অনেক ডিজাইন, মহিলাদের জিনিসপত্রকে সমসাময়িক প্রথা অনুযায়ী নকশা করেছেন।[৮] আইফোক(iFolk) চান্নাপাতনা খেলনা এবং হস্তশিল্প,‘’’ ভারত আর্ট এন্ড ক্র্যাফট’’’ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি দল, যারা ল্যাকোয়েওয়্যার কারিগরদের প্রচার এবং সমর্থনের দ্বারা নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং আধুনিকায়নে সহায়তা করে যাচ্ছে।[৫] ‘“শ্রী বীরেশ্বর আর্টস এন্ড ক্র্যাফট’’’ , ব্যাঙ্গালুরু ভিত্তিক এনজিও ‘“মায়া অর্গানিক’’’ এবং ‘“নিশী চৌহানের প্রাণী খামার’’’ হচ্ছে অন্যান্য ডিজাইনার এবং কোম্পানি যারা এই শিল্পের গণ্ডীতে কাজ করছে।[৭]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. GI for Channapatna toys and dolls is mentioned by P. Manoj (২০০৬-০২-১৯)। "GI certificate for Channapatna toys, Bidriware, Coorg orange"Online Edition of The Hindu, dated 2006-02-19। Chennai, India: 2006, The Hindu। ২০০৭-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  2. A brief history of Channapatna toys is provided by Govind D. Belgaumkar and Anil Kumar Sastry (২০০৬-১০-২৭)। "Unique symbols of Karnataka"Online Edition of The Hindu, dated 2006-10-27। Chennai, India: 2006, The Hindu। ২০০৭-০২-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  3. "Chapter 3: Case Study 2 – LAC-Turnery and the Lacquerware Industry" 
  4. A brief description of Channapatna toys is provided by National Informatics Centre। "Industries and Commerce, Bangalore Rural district"Official Webpage of the Bangalore Rural district। Government of Karnataka। ২০০৭-০৫-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  5. A detailed summary of Channapatna toys is provided by Azmathulla Shariff। "Toy town changes with new trends"Online Edition of The Deccan Herald, dated 2005-03-29। 2005, The Printers (Mysore) Private Ltd.। ২০০৭-০৪-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  6. Bharath art and crafts a leading and oldest manufacturing unit of toys based from Channapatna, in its Fourth generations to innovate the tradition of toys and handicrafts into modernization.
  7. Pavitra Jayaraman। "Channapatna, Karnataka – Back in the game"livemint.com/ 
  8. S. S. R.। "Toy destination"The Hindu 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]