বিষয়বস্তুতে চলুন

চান্দারলি খলিল পাশা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চান্দারলি খলিল
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ১১তম উজিরে আজম
কাজের মেয়াদ
১৪৩৯  ১ জুন ১৪৫৩
সার্বভৌম শাসকদ্বিতীয় মুরাদ
মুহাম্মাদ ফাতিহ
পূর্বসূরীমুহাম্মাদ নিজামুদ্দিন পাশা
উত্তরসূরীজাগানোস পাশা
ব্যক্তিগত বিবরণ
মৃত্যু১০ জুলাই ১৪৫৩
কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য (বর্তমানে তুরস্ক)
জাতীয়তাউসমানীয়

চান্দারলি খলিল পাশা বা ইংরেজিতে প্রসিদ্ধ চান্দারলি হালিল পাশা (মৃত্যু: ১০ জুলাই ১৪৫৩) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী উজিরে আজম। তিনি সুলতান দ্বিতীয় মুরাদমুহাম্মাদ ফাতিহের শাসনামলে এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।[] তিনি প্রভাবশালী চান্দারলি পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। তার দাদা চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশা প্রথম মুরাদের সময়েও উজিরে আজম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জীবনী

[সম্পাদনা]

খলিল পাশা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের উজিরে আজম পদে অধিষ্ঠিত চান্দারলি পরিবারের একজন সদস্য। তার পিতা ছিলেন প্রথম চান্দারলি ইব্রাহিম পাশা, চাচা চান্দারলি আলী পাশা এবং দাদা চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশা, যারা পূর্বে একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার পুত্র দ্বিতীয় চান্দারলি ইব্রাহিম পাশা পরবর্তীতে উজিরে আজম হন। উজিরে আজম থাকা অবস্থায় সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ দুইবার মানিসা প্রদেশের মানিসা শহরে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

তখন সুলতানের সুরক্ষার জন্য খলিল পাশা নিকটবর্তী একটি শহরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন এবং সেটির নামকরণ করেন তার নিজের পরিবারের নামে। দ্বিতীয় মুরাদের অবসরকালীন এই সময়ে, খলিল পাশা নামমাত্র সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহকে নিয়ে রাজধানী এদির্নে থেকে সাম্রাজ্যের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। একপর্যায়ে ইউরোপীয় সেনাবাহিনী উসমানীয় অঞ্চলসমূহে আক্রমণ করতে শুরু করলে, চান্দারলি দ্বিতীয় মুরাদকে পুনরায় সিংহাসনে ফিরিয়ে আনেন এবং কিশোর মুহাম্মাদ ফাতিহকে তার অধিক সক্ষম পিতার সঙ্গে প্রতিস্থাপন করেন। এই দুটি ঘটনার ফলে মুহাম্মাদ ফাতিহ-এর মনে চান্দারলি পরিবারের প্রতি স্থায়ী বিরক্তি জন্মে। চান্দারলি পরিবার এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছিল এবং তারা এতটাই প্রভাবশালী ও ধনী হয়ে ওঠে যে, অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন উসমানীয় রাজপরিবারকেও ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে মুহাম্মাদ ফাতিহচান্দারলি পরিবারের বংশধর খলিল পাশার মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

ইজনিকে চান্দারলি খলিল পাশার সমাধি

মুহাম্মাদ ফাতিহ যখন সুলতান হন, তখন বাইজেন্টাইন সম্রাট কনস্টানটাইন একাদশ প্যালেওলোগোস উসমানীয়দের কাছে একজন বার্তাবাহক প্রেরণ করেন। তিনি মুহাম্মাদ ফাতিহের চাচাতো ভাই ওরহান চেলেবির বার্ষিক বৃত্তি বাড়ানোর অনুরোধ জানান।[] ওরহান ছিলেন উসমানীয় রাজপরিবারের সদস্য এবং নিজেকে সিংহাসনের দাবিদার বলে দাবি করতেন। তিনি একাধিকবার গৃহযুদ্ধ শুরু করারও চেষ্টা করেছিলেন।[] বাইজেন্টাইনরা পূর্বেও এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কৌশল ব্যবহার করেছিল।[] এই প্রেক্ষাপটে খলিল পাশা বার্তাটিতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং বার্তাবাহককে কড়া জবাব দেন।[]

হে মূর্খ গ্রীক, তোমার এই ধূর্ত কৌশল আমি অনেক আগেই বুঝেছি। মরহুম সুলতান ছিলেন তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও বিবেকবান বন্ধু। কিন্তু বর্তমান সুলতান মুহাম্মাদ তেমন নন।

যদি কনস্টান্টিনোপল তার সাহসী ও অদম্য হাত থেকে বেঁচে যায়, তবে তা কেবল আল্লাহর কৃপায়—যিনি এখনো তোমার কুটিল ও দুষ্ট ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করছেন।

আমাদের সাম্প্রতিক শান্তিচুক্তির কালি এখনো শুকিয়ে যায়নি, আর তুমি ভাবছো তোমার কল্পিত হুমকিতে আমরা ভয় পাব? এটা সরল মূর্খতা। আমরা শিশু নই, যারা শক্তি ও বুদ্ধি থেকে বঞ্চিত।

তুমি যদি ওরহানকে সুলতান ঘোষণা করতে চাও, করো। তুমি যদি হাঙ্গেরিয়ানদের দানিয়ুব পার করাতে চাও, করাও। তুমি যদি হারিয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করতে চাও, চেষ্টা করো।

কিন্তু এটুকু জেনে রেখো:

তুমি এই কাজগুলোর একটিও করতে পারবে না। তুমি কেবল তোমার যা কিছু আছে, তা-ই হারাবে।[]

কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর, সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ যেসব কাজ প্রথমে করেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল চান্দারলি খলিল পাশাকে বন্দী করা। ১৪৫৩ সালের ২৯ মে শহর বিজয়ের পর, ১ জুন খলিল পাশাকে কারাবন্দী করা হয়। একই বছরের ১০ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাকে ইজনিক শহরে তার পূর্বপুরুষদের মতো একটি খোলা (ছাদবিহীন) সমাধিতে দাফন করা হয়।[]

মুহাম্মাদ ফাতিহ এইভাবে উসমানীয় সাম্রাজ্যে চান্দারলি পরিবারের দীর্ঘ আধিপত্যের অবসান ঘটান। এরপর এই পরিবারের সদস্যরা আর ইজনিক-ভিত্তিক প্রাদেশিক অভিজাতদের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারেননি। তবে, ১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকে চান্দারলি পরিবারের একজন সদস্য দ্বিতীয় চান্দারলি ইব্রাহিম পাশা স্বল্প সময়ের জন্য উজিরে আজম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চান্দারলি খলিল পাশা ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসে প্রথম উজির, যাকে সরাসরি সুলতানের আদেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

কাল্পনিক চরিত্র

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. İsmail Hâmi Danişmend, Osmanlı Devlet Erkânı, Türkiye Yayınevi, İstanbul, 1971, p. 10. (Turkish)
  2. 1 2 3 4 5 The Last Centuries of Byzantium, 1261–1453, Donald M. Nicol, page 375, 1993
  3. "ÇANDARLI HALİL PAŞA"TDV İslâm Ansiklopedisi (তুর্কি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
মুহাম্মাদ নিজামুদ্দিন পাশা
উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রধান উজিরে আজম
১৪৩৯–১৪৫৩
উত্তরসূরী
জাগানোস পাশা