চান্দারলি আলী পাশা
আলী | |
---|---|
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ৬ষ্ঠ উজিরে আজম | |
কাজের মেয়াদ ২২ জানুয়ারি ১৩৮৭ – ১৮ ডিসেম্বর ১৪০৬ | |
সার্বভৌম শাসক | প্রথম মুরাদ প্রথম বায়েজিদ সুলেমান চেলেবি |
পূর্বসূরী | চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশা |
উত্তরসূরী | ইমামজাদা খলিল পাশা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
মৃত্যু | ১৮ ডিসেম্বর ১৪০৬ আঙ্কারা, উসমানীয় সাম্রাজ্য (বর্তমানে আঙ্কারা, তুরস্ক) |
সম্পর্ক | চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশা (বাবা) |
বংশ | চান্দারলি |
চান্দারলি আলী পাশা (মৃত্যু: ১৮ ডিসেম্বর ১৪০৬) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একজন উজিরে আজম। তিনি ১৩৮৭ থেকে ১৪০৬ সাল পর্যন্ত প্রথমে সুলতান প্রথম মুরাদ, তারপর সুলতান প্রথম বায়েজিদ এবং উসমানীয় অন্তবর্তীকালের সময় সুলেমান চেলেবির অধীনে উসমানীয় সাম্রাজ্যের উজিরে আজম ছিলেন।
জীবন ও কর্মজীবন
[সম্পাদনা]বিশিষ্ট চান্দারলি পরিবারের সদস্য হিসাবে, আলী ছিলেন উজিরে আজম চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশার পুত্র।[১] তিনি উজিরে আজম হওয়ার আগে আনুমানিক ১৩৮৭ সালে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তিনি কাদি থেকে কাজাস্কর হন।[১][২] তিনি ১৪০৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুলতান প্রথম মুরাদ (শা. ১৩৬২–১৩৮৯), প্রথম বায়েজিদ (শা. ১৩৮৯–১৪০২) এবং উসমানীয় অন্তর্বর্তীকালের সময় সুলেমান চেলেবির (শা. ১৪০২–১৪১১) প্রধান উজিরে আজম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] উজিরে আজম হিসেবে তিনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রধানই ছিলেন না, ছিলেন প্রধান সেনাপতিও।[১]
প্রথম মুরাদ ও প্রথম বায়েজিদের অধীনে
[সম্পাদনা]১৩৮৭ ও ১৩৮৮ সালে তিনি মধ্য আনাতোলিয়ার কারামানিদদের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রথম মুরাদের সাথে ছিলেন। কারামানি শাসক আলেদ্দিন (শা. ১৩৬১–১৩৯৮) শান্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু চান্দারলি আলী সুলতানকে আলেদ্দিনের সম্পূর্ণ বশ্যতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।[২] পরবর্তীতে ১৩৮৮ ও ১৩৮৯ সালে তিনি বুলগেরিয়ান জার ইভান শিসমানের (শা. ১৩৭১–১৩৯৫) বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তার সেনাবাহিনী সহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করেছিল। যার মধ্যে ছিল: প্রোভাদিয়া, পাইরোট এবং শুমেন। এছাড়াও বুলগেরিয়ানের রাজধানী ভেলিকো তারনভোকে উসমানীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে।[১][২] এরপরে চান্দারলি আলী সার্বিয়ান শাসক লাজারের (শা. ১৩৭৩–১৩৮৯) বিরুদ্ধে ১৩৮৯ সালের ২০ জুন কসোভোর যুদ্ধে সুলতান প্রথম মুরাদের সাথে যোগ দিতে তার সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন। উসমানীয়রা জয়লাভ করে কিন্তু সুলতান প্রথম মুরাদ নিহত হন এবং তার পুত্র সুলতান প্রথম বায়েজিদ তার স্থলাভিষিক্ত হন।[১][২]
চান্দারলি আলী গ্রিস ও বসনিয়া অভিযানে সুলতান প্রথম বায়েজিদের সাথে ছিলেন এবং ১৩৯৬ সালে নিকোপোলিসের যুদ্ধ লড়াই করেছিলেন, যার ফলে হাঙ্গেরির রাজা সিগিসমুন্ডের অধীনে ক্রুসেডার সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল।[২] ১৩৯১ সালে প্রথম বায়েজিদ বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে অবরোধ ও থেমে থেমে অবরোধ শুরু করেন, যা ১৪০২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।[২]
সুলেমান চেলেবির অধীনে
[সম্পাদনা]১৪০২ সালের ২৬ জুলাই আঙ্কারার যুদ্ধে প্রথম বায়েজিদ তৈমুরের কাছে পরাজিত ও বন্দী হন। এ ঘটনাটি ঐ অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যকে উল্টে দেয়। কারণ আনাতোলিয়ায় উসমানীয় শিবিরগুলি তৈমুর দ্বারা বিভক্ত ছিল, যিনি পূর্বে বায়েজিদের দ্বারা শোষিত আনাতোলিয়ান বেইলিকদের অনেককে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তৈমুর অবশ্য বলকানদের সাথে হস্তক্ষেপ করেননি, যেখানে উসমানীয়রা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।[৩] আলী বায়েজিদের জ্যেষ্ঠ পুত্র সুলেমান চেলেবিকে বন্দী হওয়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করেন এবং তাকে প্রথমে উসমানীয় রাজধানী বুরসা এবং পরে উসমানীয়দের ইউরোপীয় রাজধানী আদ্রিয়ানোপলে নিয়ে যান।[১]
তিনি উসমানীয় অন্তর্বর্তীকালে গৃহযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে উজিরে আজম হিসাবে সুলেমান চেলেবির সেবা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং সম্ভবত ১৪০৩ সালের গোড়ার দিকে এই অঞ্চলের খ্রিস্টানদের সাথে গ্যালিপোলি চুক্তি করার সময় অবদান রেখেছিলেন, যা বলকানে বেশিরভাগ উসমানীয়দের বিজয় অব্যাহত করেছিল।[১][২] ১৪০৩-১৪০৪ সালে আনাতোলিয়ায় সুলেমান চেলেবির অভিযানের সময়, তার ছোট ভাই মেহমেদ চেলেবির (ভবিষ্যতের প্রথম মেহমেদ, (শা. ১৪১৩–১৪২১) বিরুদ্ধে,[৪] আলী আঙ্কারার শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণের জন্য মেহমেদের কাছ থেকে শহরের গ্যারিসনে চিঠি জাল করে দায়বদ্ধ ছিলেন বলে জানা যায়।[২] তিনি ১৪০৬ সালের ডিসেম্বরে আঙ্কারায় মারা যান।[১][২] তাকে ইজনিকের সবুজ মসজিদে দাফন করা হয়।[২]
তার মৃত্যু সুলেমানকে একজন দক্ষ মন্ত্রীর পদ থেকে বঞ্চিত করে, যা ১৪১০ সালে তার পতন ঘটাতে সাহায্য করে।[১]
অবদান
[সম্পাদনা]উজিরে আজম হিসাবে, চান্দারলি আলী উসমানীয় রাজ্যের প্রশাসনকে ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করার অবদান রেখেছিলেন।[১][২]
ইজনিকের সবুজ মসজিদ ছাড়াও আলী বুরসায় একটি ছোট মসজিদ এবং একটি খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১][২]
বিতর্ক
[সম্পাদনা]উসমানীয় ইতিহাসবিদরা চান্দারলি আলীর একটি অত্যন্ত নেতিবাচক চিত্র উপস্থাপন করেছেন, তাকে মাতাল এবং একজন শিশুপ্রেমী বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং বায়েজিদ ও সুলেমান উভয়কেই তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনধারা অনুসরণ করতে প্ররোচিত করেছেন। একইভাবে ঐতিহাসিকদের দাবি, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি অজনপ্রিয় ছিলেন।[১][২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]উৎস
[সম্পাদনা]- Atçıl, Abdurrahman (২০১৭)। "Çandarlızade Ali Paşa"। Fleet, Kate; Krämer, Gudrun; Matringe, Denis; Nawas, John; Rowson, Everett। Encyclopaedia of Islam, THREE। Brill Online। আইএসএসএন 1873-9830। ডিওআই:10.1163/1573-3912_ei3_COM_24854।
- Kastritsis, Dimitris (২০০৭)। The Sons of Bayezid: Empire Building and Representation in the Ottoman Civil War of 1402-13। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-15836-8।
- Mantran, R. (১৯৬০)। "Alī Pas̲h̲a Čāndārli̊̊-Zāde"। Gibb, H. A. R.; Kramers, J. H.; Lévi-Provençal, E.; Schacht, J.; Lewis, B. & Pellat, Ch.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume I: A–B। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 394। ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_SIM_0529।
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী চান্দারলি কারা খলিল খাইরুদ্দিন পাশা |
উসমানীয় সাম্রাজ্যের উজিরে আজম ২২ জানুয়ারি ১৩৮৭ – ১৮ ডিসেম্বর ১৪০৬ |
উত্তরসূরী ইমামজাদা খলিল পাশা |