চণ্ডালিকা (নৃত্যনাট্য)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(চন্ডালিকা (নৃত্যনাট্য) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

চণ্ডালিকা হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত একটি উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্য। এটি ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়।[১][২] রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত তাঁরই নাটক চণ্ডালিকার কাহিনী অবলম্বনে একই নামে রচনা করেন এই "চণ্ডালিকা" নামক নৃত্যনাট্যটি।[২]

চণ্ডালিকা
লেখকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দেশভারত
ভাষাবাংলা
ধরনরবীন্দ্র নৃত্যনাট্য
প্রকাশিত১৯৩৮

চরিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

  • মা
  • প্রকৃতি
  • আনন্দ
  • ফুলওয়ালির দল
  • দইওয়ালা
  • মেয়ে
  • মেয়েরা
  • চুড়িওয়ালা
  • ভিক্ষুগণ
  • অনুচর[৩]

কাহিনী এবং সমালোচনা[সম্পাদনা]

বৌদ্ধ সাহিত্যের কাহিনী থেকে 'চণ্ডালিকা'র মূল ভাবটি গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই নৃত্যনাট্যের ঘটনাস্থল শ্রাবস্তী নগরী। প্রভু বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য (বৌদ্ধ সন্ন্যাসী) আনন্দ এক গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে বিহারে ফিরে যাওয়ার সময় তৃষ্ণা বোধ করেন। তিনি দেখতে পেলেন একজন তরুণী কুয়ো থেকে জল তুলছে। সে এক চণ্ডালকন্যা, তার নাম প্রকৃতি। তার কাছে জল চাইলেন আনন্দ। কিন্তু তাকে তো সবাই চণ্ডালকন্যা বলে অস্পৃশ্য মনে করে। তাই সংকোচভরে প্রকৃতি আনন্দকে বলে যে, সে চণ্ডালকন্যা আর তার কুয়োর জল অশুচি। আনন্দ তাকে বলেন যে, তিনি যে মানুষ, প্রকৃতিও সেই মানুষ। সব জলই তীর্থজল, যা তৃষ্ণার্তকে তৃপ্ত করে, স্নিগ্ধ করে। আনন্দের এই ব্যবহারে, সেইসঙ্গে তাঁর রূপে মুগ্ধ হল প্রকৃতি। নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবনা বদলে গেল তার। এ যেন তার নতুন জন্ম। তার হাতের এক গণ্ডূষ জল গ্রহণ করে আনন্দ তার জীবনের সমস্ত অপমান ধুয়ে দিয়ে গেছেন। আনন্দকে পেতে চাইল প্রকৃতি। কিন্তু তাঁকে পাবার কোনো উপায় না দেখে সে তার মায়ের সাহায্য চাইল। তার মা জাদুবিদ্যা জানত। মন্ত্র পড়ে এবং জাদুশক্তির জোরে তার মা শেষ পর্যন্ত আনন্দকে টেনে আনে। সে প্রকৃতিকে তার মায়াদর্পণে দেখতে বলে আনন্দকে। কিন্তু আনন্দের ক্লান্ত, ম্লান রূপ সহ্য করতে পারে না প্রকৃতি। কোথায় গেল তাঁর সেই দীপ্ত উজ্জ্বল, স্বর্গের আলোর মতো রূপ! সে পা দিয়ে ভেঙে ছড়িয়ে ফেলল তার মায়ের মন্ত্রের সমস্ত উপকরণ। তারপর প্রকৃতি ও তার মা দু'জনেই ক্ষমাপ্রার্থনা করে আনন্দের কাছে। তাদের এই নতুন উপলব্ধির মধ্যে দিয়েই শেষ হয় রবীন্দ্রনাথের 'চণ্ডালিকা'র কাহিনী।[৩]

১৩৪৪ সালের ফাল্গুন মাসে 'চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য' নামে পুস্তিকা আকারে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে ১৩৪৫ সালের চৈত্র মাসে 'নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা' নামে স্বরলিপিসহ এর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই নৃত্যনাট্য সম্পর্কে প্রতিমা দেবীর লেখা একটি প্রবন্ধের কয়েকটি লাইন এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন: "একটি মানুষের মানসিক ক্রমবিকাশের উপর তার ('চণ্ডালিকা'র) রচনা। মানুষের মধ্যে যা আদিম আকর্ষণ তারই আবেগ দিয়ে শুরু হয়েছে চণ্ডালিকার নৃত্যকলা। দেহের যে আকর্ষণী মন্ত্র যা শিবের তপস্যাকেও টলাতে পেরেছিল প্রকৃতি-পুরুষের অন্তরের সেই চিরন্তন দ্বন্দ্ব পৌঁছল চণ্ডালিকার প্রাণে, তারই আঘাতে দোল-খাওয়া মন নৃত্যসংগীতের তালে আপনাকে বিচ্ছুরিত করে দিল অবসাদ বিষাদ করুণার আতিশয্যে।... এই যে প্রকৃতি-পুরুষের স্বভাবের মধ্যে মূলগত বিরুদ্ধতা, চণ্ডালিকার সাহিত্য ও নৃত্যনাট্য সেই মানসিক জটিলতাকে সুরে ও তালে প্রকাশ করতে চেয়েছে।"

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Foundation, Poetry (২০২০-০৮-১১)। "Rabindranath Tagore"Poetry Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১১ 
  2. "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর"Bengali Grammar । বাংলা ব্যাকরণ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১১ 
  3. নৃত্যনাট্য : চণ্ডালিকা, রবীন্দ্র নাটক সমগ্র (অখন্ড), সেপ্টেম্বর ২০১৫ (ষষ্ঠ প্রকাশ), কামিনী প্রকাশালয়।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]