চতুরাজি
চতুরাজি বা চার রাজা চারজন খেলোয়াড়ের জন্য দাবার মত খেলা। ১০৩০ খ্রিষ্টাব্দের আবু রায়হান আল বিরুনির ভারত বিষয়ক গ্রন্থে এই খেলার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। [১] প্রকৃতপক্ষে দুইটি পাশার গুটি ব্যবহার করে খেলার জন্য এই খেলা সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স প্রথমে চারজন খেলোয়াড়ের পাশার গুটি ব্যবহারের খেলাকে চতুরাজির বদলে চতুরঙ্গ বলে উল্লেখ করেন এবং তার মতে চতুরাজি ছিল চতুরঙ্গের কিস্তিমাতের নাম।[২] পরবর্তীকালে অধ্যাপক ডানকান ফোর্বস ক্যাপ্টেন কক্সের তত্ত্বকে সম্প্রসারিত করে তাদের কক্স-ফোর্বস তত্ত্বতে বলেন যে, চতুরাজি থেকে দুই জনের খেলা চতুরঙ্গ খেলার উৎপত্তি হয়, যার থেকে পরবর্তীকালে আধুনিক দাবা খেলার উৎপত্তি হয়। তাদের মতে চতুরাজি থেকে পাশার গুটি সরিয়ে পরবর্তীকালে সম্ভাব্যতার বদলে বুদ্ধিকে স্থান দেওয়া হয়।[৩]
খেলার নিয়ম
[সম্পাদনা]গুটির চাল
[সম্পাদনা]চারটি বিভিন্ন রঙের গুটি দিয়ে এই খেলাটি হয়ে থাকে। চারজন খেলোয়াড় প্রত্যেকে একটি করে রঙের গুটি পায়। প্রত্যেক খেলোয়াড় পেছনের সারিতে চারটি বল ও তার ঠিক সামনের সারিতে চারটি বোড়ে পায়। চারটি বল হল রাজা, গজ, ঘোড়া এবং নৌকা। রাজা দাবা খেলার রাজার মতো চাল দিতে পারে। গজ দাবার নৌকার মত এবং ঘোড়া দাবার ঘোড়ার মত চাল দিতে পারে। নৌকার চাল সতরঞ্জের আলফিলের মতো চাল দেয়। এই নিয়মে নৌকা আড়াআড়ি ভাবে দুই ঘর অন্য গুটিকে টপকে যেতে পারে।
বোড়ে দাবার বোড়ের মত চাল দিতে পারে, কিন্তু প্রথমে জোড়া ঘর যেতে পারে না। বোড়ের উত্তরণ দাবার নিয়মের মতো উল্টো দিকের সারিতে হয় যেমন, g স্তম্ভে থাকা চিত্রের লাল বোড়ের উত্তরণ a স্তম্ভে হয়। কিন্তু দাবার বোড়ের উত্তরণ মতো চতুরাজিতে বোড়ে যে কোন বল প্রতিস্থাপিত করতে পারে না। বোড়েটি যে প্রারম্ভিক অবস্থায় সারি বা স্তম্ভে ছিল, শুধু সেই সারি বা স্তম্ভের বল দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হতে পারে ফলে এতে রাজা দ্বারাও প্রতিস্থাপিত হওয়ার সুযোগ থাকে।
নৌকার জয়
[সম্পাদনা]কোন নৌকা কোন স্থানে গেলে যদি ২×২ চতুর্ভুজের প্রত্যেকটি ঘরেই অন্য প্রতিপক্ষের নৌকা থাকে, তবে প্রথম নৌকা বাকি তিন নৌকাকে দখল করতে পারবে। এই নিয়মকে নৌকার জয় বলে।
পাশার গুটির দান
[সম্পাদনা]পাশার গুতি দুটি চার তল বিশিষ্ট কাঠির মতো দেখতে। প্রত্যেক সুযোগে, পাশার দুটি গুটি একসঙ্গে ফেলা হয়। খেলোয়াড়দের বাতাসে গুটিগুলি ছুড়ে লুফতে হয়। গুটির ওপর লেখা সংখ্যা দিয়ে খেলার চাল দেওয়া হয়। এতে ১ ও ৬ সংখ্যা থাকে না।
- ৫ : বোড়ে বা রাজা
- ২ : নৌকা
- ৩ : ঘোড়া
- ৪ : গজ
প্রত্যেক দানে দুইটি পাশার গুটির জন্য দুইটি চাল দেওয়া যায়। খেলোয়াড় এক বা ভিন্ন গুটি সরাতে পারে বা চাইলে দান নাও দিতে পারেন।
ফলাফল
[সম্পাদনা]এই খেলায় কিস্তি বা কিস্তিমাত নেই। রাজাকেও খেলা থেকে উচ্ছেদ করা যায়। বিপক্ষের গুটি উচ্ছেদ করে পয়েন্ট সংগ্রহ করা হয়। খেলার উদ্দেশ্য হল খেলার শেষে যত বেশি সংখ্যক সম্ভব পয়েন্ট সংগ্রহ করে নিয়ে বিজয়ী হওয়া। গুটির পয়েন্টগুলি হল নিম্নরূপঃ
- বোড়ে: ১
- নৌকা: ২
- ঘোড়া: ৩
- গজ: ৪
- রাজা: ৫
যে খেলোয়াড় তিন প্রতিপক্ষের তিনটি রাজাই উচ্ছেদ করতে পারেন, তাকে ৫৪ পয়েন্ট দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Murray
- ↑ Forbes, page 18
- ↑ Four-Handed Chaturanga by Jean-Louis Cazaux.
- Duncan Forbes (1860), The History of Chess, W. H. Allen & Company.
- হ্যারল্ড জেমস রুথভেন মারে (১৯১৩)। A History of Chess। Benjamin Press (originally published by Oxford University Press)। আইএসবিএন 0-936317-01-9।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- প্রিচার্ড, ডেভিড (১৯৯৪)। "চতুরাজি"। The Encyclopedia of Chess Variants। Games & Puzzles Publications। পৃষ্ঠা ৪৮–৪৯। আইএসবিএন 0-9524142-0-1।
- প্রিচার্ড, ডেভিড. (২০০৭)। "Classical Indian four-player games"। The Classified Encyclopedia of Chess Variants। John Beasley। পৃষ্ঠা ৩১১–৩১২। আইএসবিএন 978-0-9555168-0-1।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Chaturanga for four players by Hans Bodlaender.
- Chaturaji software, including multi-media encyclopedia with Cox-Forbes theory.
- Four-handed chaturanga with dice implementation for Zillions of Games.