বিষয়বস্তুতে চলুন

ঘোড়ার গাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের বাইরে একটি রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি।

ঘোড়ার গাড়ি ঘোড়ায় টানা একপ্রকার দুই বা চার চাকার যাত্রীবাহী গাড়ি। ১৯০০ সাল নাগাদ মোটরগাড়ি প্রচলনের আগে পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়ি ছিল স্থল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। ঘোড়ার গাড়ি সাধারণত ধনীদের অধিকারে থাকলেও পুরাতন ঘোড়ার গাড়ি গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে গিয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীতে রাজবংশের কুচকাওয়াজ এবং ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে ঘোড়ার গাড়ি কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আর কিছু শহরে পর্যটকদের পরিবহনের জন্য সাদামাটা আধুনিক ধাঁচের ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

কেল্টিক সভ্যতার কবর থেকে কিছু দুই চাকার ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়।[] ব্রোঞ্জ যুগে ইউরোপে চার চাকার ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রাপ্ত তখনকার ঘোড়ার গাড়ি থেকে জানা যায় যে চাকা ও অববাহনের মতো মৌলিক নির্মানকৌশল তখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা মোটরগাড়ি প্রচলনের আগে পর্যন্ত টিঁকে ছিল।[][]

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে গরুর গাড়ির আদিরূপ পাওয়া যায়। সেটি একজোড়া বলদের মাঝে একটি দৃঢ় কাঠের দণ্ড, বলদ দুটিকে সংযোগকারী একটি জোয়াল, যাত্রী বা মাল পরিবহনের জন্য় একটি কাঠের পাটাতন এবং ইস্পাতের বেড়ি দেওয়া বড় কাঠের চাকা নিয়ে গঠিত।[][]

সিন্ধু সভ্যতা থেকে দুই চাকার ঘোড়ার গাড়ির প্রতিরূপ পাওয়া যায়, যেমন হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোচানহুদারো থেকে প্রাপ্ত এক্কাগাড়ির মতো দেখতে একজোড়া ঘোড়ায় টানা গাড়ি।[]

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রোমানরা স্থলভাগে ভ্রমণের জন্য স্প্রিংযুক্ত চার চাকার ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করত।[] প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রাপ্ত রোমান গাড়ির অংশবিশেষ থেকে জানা যায় যে গাড়িতে সমালম্বনের জন্য সম্ভবত শিকল বা চামড়ার পটি ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০২১ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পম্পেইয়ের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চার চাকার ঘোড়ার গাড়ির অংশবিশেষ আবিষ্কার করেছে, যা বিবাহের মতো অনুষ্ঠান ব্যবহার করা হয় বলে মনে করা হয়।[]

চীনা গাড়ি

[সম্পাদনা]
চীনা রাজাদের ব্যবহৃত একটি রথ।

চীনারা ঠিক কবে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার শুরু করেছিল তা অনেকটাই অজানা। তবে হেনান প্রদেশ থেকে আবিষ্কৃত শিলালেখ থেকে জানা যায় যে তখন বিভিন্নরকমের ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। ১৯৩৩ সালে হেনান প্রদেশের একটি প্রত্নক্ষেত্র থেকে শাং রাজবংশের রাজা উ তিঙের আমলের রথ পাওয়া যায়, যা চীনা রথের প্রাচীনতম নমুনা। এছাড়া শিলালেখ থেকে এটার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে শাং রাজ্যের পশ্চিমের শত্রুরা সংঘাতে সীমিত সংখ্যক রথ ব্যবহার করত, আর শাং রাজবংশ কেবল আদেশ-যান ও রাজশিকারে রথ ব্যবহার করত।[] তখন রাজবংশের সদস্যদের গৃহজন, ভৃত্য, ঘোড়া, একটি রথ ও একজন সারথির সঙ্গে কবর দেওয়া হতো। শাং আমলের রথ প্রায়ই দুটি ঘোড়া দ্বারা চালিত, তবে কবরে কখনো কখনো চার ঘোড়ায় টানা রথও পাওয়া যায়।

খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ নাগাদ চৌ রাজবংশ শাং রাজ্য দখল করে। জাক জের্নে দাবি করেন যে চৌ রাজবংশ শাঙের তুলনায় বেশি রথ ব্যবহার কর, আর পাশাপাশি চারটি ঘোড়াসহ নতুনরকম সাজের উদ্ভাবন করেছিল।[১০] রথারোহী বাহিনীর মধ্যে একজন ধনুর্ধর, একজন চালক এবং কখনো কখনো একজন বর্শা বা খঞ্জরধারী। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ থেকে পঞ্চম শতাব্দীতে চীনে রথের ব্যবহার শীর্ষে পৌঁছেছিল, তবে সেখানে একাধিক সংখ্যক রথ থাকলেও সংঘাতের সময় পদাতিক বাহিনী সারথিদের পরাজিত করে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Raimund Karl (২০০৩)। "Überlegungen zum Verkehr in der eisenzeitlichen Keltiké" (পিডিএফ) (জার্মান ভাষায়)। Universität Wien। ১১ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০০৮ 
  2. Piggott, Stuart (১৯৮৩)। The Earliest Wheeled Transport। Cornell University Press। আইএসবিএন 0801416043 
  3. Pare, C.F.E (১৯৯২)। Wagons and Wagon-Graves of the Early Iron Age in Central Europe। Oxford। আইএসবিএন 0947816356 
  4. "Bullock carts"Singapore Infopedia। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১৭ 
  5. Wolpert, Stanley (১৯৯৪)। An Introduction to India (English ভাষায়)। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 5আইএসবিএন 9780140168709ওএল 24238499M 
  6. Piggott, Stuart (১৯৭০)। "Copper Vehicle-Models in the Indus Civilization"। The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland102 (2): 200–202। এসটুসিআইডি 163967541জেস্টোর 25203212ডিওআই:10.1017/S0035869X00128394 
  7. Jochen Garbsch (জুন ১৯৮৬)। "Restoration of a Roman travelling wagon and of a wagon from the Hallstadt bronze culture" (জার্মান ভাষায়)। Leibniz-Rechenzentrum München। ২৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল (.HTML) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ 
  8. "Pompeii: Archaeologists unveil ceremonial chariot discovery"BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  9. Shaughnessy, Edward L. (১৯৮৮)। "Historical Perspectives on The Introduction of The Chariot Into China"। Harvard Journal of Asiatic Studies48 (1): 189–237। জেস্টোর 2719276ডিওআই:10.2307/2719276 
  10. Gernet, Jacques (১৯৯৬)। A History of Chinese Civilization (2nd সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 51আইএসবিএন 0-521-49781-7