গ্যাস ক্ষরণ বাতি

গ্যাস ক্ষরণ বাতি বলতে এক ধরনের বাতিকে (কৃত্রিম উপায়ে আলো উৎপাদনকারী উৎস) বোঝায়, যেটি একটি আয়নীকৃত গ্যাস তথা প্লাজমার ভেতর দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষরণ প্রেরণ করে আলো উৎপাদন করে। সাধারণত এই বাতিগুলিতে একটি নিষ্ক্রিয় তথা অভিজাত গ্যাস (যেমন আর্গন, নিয়ন, ক্রিপ্টন ও জেনন) বা এগুলির একটি মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু বাতিতে অতিরিক্ত কিছু পদার্থ, যেমন পারদ, সোডিয়াম ও ধাতব হ্যালাইড (হ্যালোজেন লবণ) থাকে, যেগুলিকে বাষ্পীভূত করে গ্যাস মিশ্রণের অংশীভূত করে নেয়া হয়। এক প্রান্তবিশিষ্ট স্বতশ্চালিত বাতিগুলি একটি অভ্র চাকতি দ্বারা অন্তরিত করা থাকে, গ্যাসটিএকটি বোরোসিলিকেট কাচ দিয়ে তৈরি গ্যাস ক্ষরণ নলের (ধনুরাকৃতি নল) মধ্যে ভরা থাকে ও নলটির একটি ধাতব টুপি থাকে।[১][২] সড়ক আলোকিতকরণে ব্যবহৃত সোডিয়াম বাষ্প বাতি (সংক্ষেপে সোডিয়াম বাতি) গ্যাস ক্ষরণ বাতির একটি উদাহরণ।[১][২][৩][৪]
বাতিটি চলার সময় দুই তড়িৎদ্বারের মধ্যবর্তী স্থানে যে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি প্রযুক্ত হয়, তার কারণে ধনাত্মক তড়িৎদ্বার তথা অ্যানোডের কাছে অবস্থিত গ্যাসের পরমাণুগুলি থেকে কিছু ইলেকট্রন নিষ্ক্রান্ত হয়, ফলে ঐ পরমাণুগুলি ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এভাবে নির্গত মুক্ত ইলেকট্রনগুলি অ্যানোডের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এর বিপরীতে এই প্রক্রিয়াতে গঠিত ধনাত্মক আয়ন তথা ক্যাটায়নগুলি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র দ্বারা ত্বরিত হয়ে ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার তথা ক্যাথোডের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। আয়নগুলি খুব কম দূরত্ব অতিক্রম করার পরেই বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ গ্যাসের পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যেগুলি আয়নগুলিকে তাদের ইলেকট্রন প্রদান করে। এভাবে ইলেকট্রন দানকারী পরমাণুগুলি নিজেদের আয়নীভবন ঘটে এবং এগুলি আবার ক্যাথোডের দিকে ধাবিত হয়। অন্যদিকে যে ক্যাটায়নগুলি সংঘর্ষের সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করেছিল, সেগুলি নিম্ন শক্তি অবস্থাতে ফেরত আসে এবং একই সাথে ফোটন কণার আকারে শক্তি নির্গত করে। ফলে একটি বিশেষ কম্পাংকের আলো নিঃসৃত হয়। এইভাবে ইলেকট্রনগুলি গ্যাসের ভেতর দিয়ে ঋণাত্মক তড়িৎদ্বারা (ক্যাথোড) থেকে ধনাত্মক তড়িৎদ্বারে (অ্যানোড) পরিবাহিত হয়।
কোন রঙের আলো উৎপাদিত হবে, তা গ্যাস গঠনকারী পরমাণুগুলির নিঃসরণ বর্ণালীগুলির উপর এবং একই সাথে গ্যাসের চাপ, তড়িৎ প্রবাহ ঘনত্ব ও অন্যান্য চলরাশির উপর নির্ভর করে। গ্যাস ক্ষরণ বাতিগুলি বহু বিভিন্ন ধরনের আলো উৎপাদন করতে পারে। কিছু বাতি অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ করে, যা বাতির কাচের ভেতরের পৃষ্ঠে অবস্থিত প্রতিপ্রভ পদার্থের প্রলেপের উপর পড়লে দৃশ্যমান আলোর সৃষ্টি হয়। প্রতিপ্রভ বাতি গ্যাস ক্ষরণ বাতির সবচেয়ে সুপরিচিত একটি উদাহরণ।
ভাস্বর বাতির তুলনায় গ্যাস ক্ষরণ বাতিগুলি উচ্চতর দীপন ক্ষমতা প্রদান করে।[৫][৬] তবে এগুলি শিল্পোৎপাদন করে অধিকতর জটিল এবং এগুলির বেশিরভাগই ঋণাত্মক রোধ প্রদর্শন করে, ফলে তড়িৎ প্রবাহ ব্রৃদ্ধির সাথে সাথে প্লাজমার রোধ হ্রাস পায়। তাই সাধারণত এগুলিতে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক উপকরণ যেমন সুস্থিতকারকের (ব্যালাস্ট) প্রয়োজন হয়, যাতে গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ও তড়িৎ পলায়ন (ধনুরাকৃতি আলোক চমকানি) প্রতিরোধ করা যায়।
কিছু কিছু গ্যাস ক্ষরণ বাতি চালুর পরে পূর্ণ আলোক উৎপাদনী ক্ষমতায় আসতে বেশ কিছুটা সময় নিতে পারে। তা সত্ত্বেও অধিকতর দক্ষতার সুবাদে বিভিন্ন আলোকিতকরণ ব্যবস্থাতে ভাস্বর বাতির তুলনায় গ্যাস ক্ষরণ বাতিগুলিকেই বেশি পছন্দ করা হত। তবে সাম্প্রতিককালে এলইডি বাতি প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এগুলির ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "The Low Pressure Sodium Lamp"।
- ↑ ক খ "The Low Pressure Sodium Lamp"।
- ↑ "Lighting Comparison: LED vs High Pressure Sodium/Low Pressure Sodium"। www.stouchlighting.com।
- ↑ "The Sodium Lamp - How it works and history"। edisontechcenter.org।
- ↑ "Types of Lighting"। Energy.gov। US Department of Energy। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৩।
- ↑ "Lighting technologies: a guide to energy-efficient illumination" (পিডিএফ)। Energy Star। US Environmental Protection Agency। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৩।