গোলাম মওলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গোলাম মওলা (২০ অক্টোবর ১৯২০-২৯ মে ১৯৬৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ভাষা সৈনিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠক।[১][২] তিনি ১৯৫৬ সালের উপ-নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এসময় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের হুইপ ছিলেন।[৩]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

গোলাম মওলা ১৯২০ সালের ২০ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার পোড়াগাছা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২][৩] তার পিতার নাম আলহাজ্ব আবদুল গফুর ঢালী এবং মাতার নাম ছুটু বিবি। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় জাজিরা উপজেলার পাচুখার কান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি নড়িয়া বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪১ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯৪৩ সালে বিএস.সি পাস করেন। [১]

তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূ-তত্ত্ব বিদ্যায় এমএসসি প্রথম পর্ব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।[২]

ভাষা আন্দোলন[সম্পাদনা]

ছাত্রাবস্থায় গোলাম মাওলা কলকাতায় মুকুল ফৌজের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী। ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।[২] ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তিনি ঐ বছরের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে ১৫০ নম্বর মুগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ কর্মশিবির অফিসে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন এবং ২১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোলাম মাওলা বিশেষ ভূমিকা রাখেন।[২][৩]

১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার পরপরই গোলাম মাওলার নেতৃত্বে মেডিক্যালের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে গুলিবর্ষণের পর আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের জন্য আন্দোলনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ রাতে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মিলিত হন। এ বৈঠকে ছাত্র সংগ্রাম কমিটি নতুনভাবে গঠিত হলে গোলাম মাওলা কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন।[৩] মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণের যে যায়গায় প্রথম গুলি হয়েছিল সে স্থানে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম মাওলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়।[১]

রাজনীতিক জীবন[সম্পাদনা]

ছাত্রজীবন শেষে গোলাম মাওলা মাদারীপুরে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন।[২] এ সময় তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। গোলাম মাওলা মাদারীপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালের উপ-নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের হুইপ ছিলেন।[২]

মৃত্যু ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

গোলাম মাওলা ১৯৬৭ সালের ২৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।[১] গোলাম মাওলার স্মৃতি রক্ষার্থে নড়িয়া কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির নামকরণ হয়েছে ডাঃ গোলাম মাওলা সেতু এবং সম্প্রতি ঢাকার ধানমন্ডি ১ নম্বর সড়কের নতুন নামকরণ হয় ডা. গোলাম মাওলা সড়ক।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "একজন ভাষাসৈনিক"মানবজমিন। ২৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  2. "The Daily Janakantha"oldsite.dailyjanakantha.com [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. #fb। "print"