বিষয়বস্তুতে চলুন

গতিবিধি ব্যাধি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গতিবিধি জনিত ব্যাধি
বিশেষত্বস্নায়ুবিদ্যা
মনোরোগবিদ্যা

গতিবিধি ব্যাধি এক ধরণের ক্লিনিক্যাল সংলক্ষণ, যেখানে হয় অতিরিক্ত নড়াচড়া অথবা স্বেচ্ছাসেবী এবং অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়ার অভাব থাকে, যা দুর্বলতা বা স্পাস্টিসিটির সাথে সম্পর্কিত নয়।[] চলাচলের ব্যাধিগুলি এক্সট্রাপিরামিডাল লক্ষণগুলির সাথে উপস্থিত থাকে এবং বেসাল গ্যাংলিয়া রোগের কারণে ঘটে।[] চলাচলের ব্যাধিগুলিকে প্রচলিতভাবে দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা হয় - হাইপারকাইনেটিক এবং হাইপোকাইনেটিক

হাইপারকাইনেটিক গতিবিধি ব্যাধিতে ডিসকাইনেসিয়া অর্থাৎ অতিরিক্ত, পুনরাবৃত্তিমূলক ও অনিচ্ছাকৃত গতি দেখা যায়। এটি স্বাভাবিক চলাফেরার ধারায় বাধা সৃষ্টি করে।

হাইপোকাইনেটিক গতিবিধি ব্যাধি চারটি উপশ্রেণিতে বিভক্ত – অ্যাকাইনেসিয়া (গতি অনুপস্থিতি), হাইপোকাইনেসিয়া (গতির পরিমাণ কমে যাওয়া), ব্র্যাডিকাইনেসিয়া (গতি ধীর হয়ে যাওয়া), এবং রিজিডিটি বা কঠোরতা। প্রাথমিক গতিবিধি ব্যাধিতে অস্বাভাবিক গতি নিজেই রোগের মূল প্রকাশ। কিন্তু গৌণ গতিবিধি ব্যাধিতে অস্বাভাবিক গতি অন্য কোনো সিস্টেমিক বা স্নায়বিক রোগের ফল।[] চিকিৎসা নির্ভর করে অন্তর্নিহিত কারণের উপর।[]

শ্রেণিবিন্যাস

[সম্পাদনা]

এই শ্রেণিবিন্যাসে মানবদেহের বিভিন্ন গতিবিধি ব্যাধিকে দুই প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—হাইপোকাইনেটিক ও হাইপারকাইনেটিক। প্রথম শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত রোগগুলোতে শরীরের গতি কমে যায় বা স্থবির হয়ে পড়ে, যেমন পারকিনসন রোগ, অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস), ও সেরিব্রাল পালসি। অপরদিকে, হাইপারকাইনেটিক ব্যাধিতে অনিচ্ছাকৃত বা অতিরিক্ত গতি দেখা যায়; যেমন হান্টিংটন রোগ, টিক ডিসঅর্ডার, ডিস্টোনিয়া, ও ট্রেমর। টেবিলটিতে প্রতিটি ব্যাধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণিবিন্যাস কোড (ICD-9-CM ও ICD-10-CM) দেওয়া হয়েছে। এটি চিকিৎসা ও গবেষণায় এসব রোগের সনাক্তকরণ ও তুলনামূলক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।

গতিবিধি ব্যাধি[] ICD-9-CM ICD-10-CM
হাইপোকাইনেটিক গতিবিধি ব্যাধি
পোলিওমাইলাইটিস,[] তীব্র 045 A80
অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস, ALS[] (লু গেরিগ রোগ) 335.20 G12.21
পারকিনসন রোগ (প্রাথমিক বা অজানা কারণজনিত পারকিনসনিজম) 332 G20
গৌণ পারকিনসনিজম G21
পারকিনসন প্লাস সিন্ড্রোমসমূহ
প্যানটোথেনেট কিনেজ-সম্পর্কিত নিউরোডিজেনারেশন G23.0
প্রগ্রেসিভ সুপ্রানিউক্লিয়ার অপথালমোপ্লেজিয়া G23.1
স্ট্রিয়াটোনিগ্রাল ডিজেনারেশন G23.2
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস[] 340 G35
রেডিয়েশন-জনিত পলিনিউরোপ্যাথি (ব্র্যাকিয়াল ও লাম্বার প্লেক্সোপ্যাথি) G62.82
মাসকুলার ডিসট্রফি[] 359.0 G71.0
সেরিব্রাল পালসি[] 343 G80
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস[] 714 M05
হাইপারকাইনেটিক গতিবিধি ব্যাধি
গ্লুট১ ঘাটতি সিন্ড্রোম E74.810
অ্যাটেনশন-ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (হাইপারঅ্যাকটিভিটির সঙ্গে) 314.01 F90
টিক ব্যাধিসমূহ (অনিচ্ছাকৃত, পুনরাবৃত্তিমূলক, স্থির ধাঁচের গতি) F95
টুরেটস সিন্ড্রোম F95.2
স্টেরিওটাইপিক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার F98.5
হান্টিংটন রোগ (হান্টিংটন কোরেয়া) 333.4 G10
ডিস্টোনিয়া G24
ওষুধ-জনিত ডিস্টোনিয়া G24.0
অজানা পারিবারিক ডিস্টোনিয়া 333.6 G24.1
অজানা অ-বংশগত ডিস্টোনিয়া 333.7 G24.2
স্পাজমোডিক টর্টিকলিস 333.83 G24.3
অজানা মুখের ডিস্টোনিয়া G24.4
ব্লেফারোস্পাজম 333.81 G24.5
অন্যান্য ডিস্টোনিয়া G24.8
অন্যান্য এক্সট্রাপিরামিডাল গতিবিধি ব্যাধি G25
এসেনশিয়াল ট্রেমর 333.1 G25.0
ওষুধ-জনিত কম্পন G25.1
অন্যান্য নির্দিষ্ট ধরনের ট্রেমর G25.2
মায়োক্লোনাস 333.2 G25.3
কোরেয়া (দ্রুত, অনিচ্ছাকৃত গতি)
ওষুধ-জনিত কোরেয়া G25.4
ওষুধ-জনিত টিক ও জৈবিক কারণে টিক 333.3 G25.6
রাতের অঙ্গ-চালনা G25.80
বেদনাদায়ক পা বা হাত, চলমান আঙুল সিন্ড্রোম G25.81
অস্থির পা সিন্ড্রোম (বিক্ষিপ্ত) G25.82
পারিবারিক অস্থির পা সিন্ড্রোম G25.83
স্টিফ পারসন সিন্ড্রোম 333.91 G25.84
ব্যালিজম (হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত দ্রুত গতি) G25.85
হেমিব্যালিজম (শরীরের একপাশে প্রভাব ফেলে) G25.85
মায়োকাইমিয়া, মুখে G51.4
নিউরোমায়োটোনিয়া (আইজ্যাক সিন্ড্রোম) 359.29 G71.19
অপসোক্লোনাস 379.59 H57
রিউম্যাটিক কোরেয়া (সিডেনহ্যাম কোরেয়া) I02
অস্বাভাবিক মাথার গতি R25.0
অজানা কম্পন R25.1
ক্র্যাম্প ও পেশী টান R25.2
ফ্যাসিকুলেশন R25.3
অ্যাথেটোসিস (বাঁকানো বা মোচড়ানো গতি) 333.71 R25.8
ডিসকাইনেসিয়া (অস্বাভাবিক, অনিচ্ছাকৃত গতি)
টারডিভ ডিসকাইনেসিয়া

নির্ণয়

[সম্পাদনা]

ধাপ ১ : প্রধান গতিবিধি ধরনের ধরন নির্ধারণ করো[]

ধাপ ২ : নির্দিষ্ট রোগের পার্থক্যমূলক নির্ণয় করো[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ধাপ ৩ : পরীক্ষাগারের মাধ্যমে নির্ণয় নিশ্চিত করো[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এসব পরীক্ষার মধ্যে আছে, বিপাকীয় পরীক্ষা, অণুজীববিদ্যা পরীক্ষা, রোগপ্রতিরোধবিদ্যা পরীক্ষা, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা, জিনতত্ত্ব পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা, নিউরোফিজিওলজিক পরীক্ষা, ফার্মাকোলজিক পরীক্ষা।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৬শ শতকে ভেসালিয়াস ও পিক্কোলোমিনি সাবকর্টিকাল নিউক্লিয়াসকে সেরিব্রাল কর্টেক্সশ্বেতপদার্থ থেকে পৃথক করেছিলেন। ১৭শ শতকের শেষের দিকে উইলিস করপাস স্ট্রিয়াটামকে মোটর শক্তির কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেন। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি ব্রডবেন্ট ও জ্যাকসন কোরেয়ার স্থান নির্ধারণ করেন স্ট্রিয়াটামে এবং হ্যামন্ড অ্যাথেটোসিস শনাক্ত করেন। ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ অনেক গতিবিধি ব্যাধি শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কোনো নির্দিষ্ট রোগগত কারণ জানা ছিল না।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Fahn, Stanley; Jankovic, Joseph (৯ আগস্ট ২০১১)। Principles and Practice of Movement Disorders (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩৭৭৩৭৭০৭
  2. Bradley, Walter George (১ জানুয়ারি ২০০৪)। Neurology in Clinical Practice: Principles of diagnosis and management (ইংরেজি ভাষায়)। Taylor & Francis। আইএসবিএন ৯৭৮৯৯৯৭৬২৫৮৮৫
  3. Flemming, Kelly; Jones, Lyell (১৫ জুন ২০১৫)। Mayo Clinic Neurology Board Review: Clinical Neurology for Initial Certification and MOC (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন ৯৭৮০১৯০২৪৪৯৩৪
  4. "MedlinePlus: Movement Disorders"
  5. Singer, Harvey S.; Mink, Jonathan; Gilbert, Donald L.; Jankovic, Joseph (২৭ অক্টোবর ২০১৫)। Movement Disorders in Childhood (ইংরেজি ভাষায়)। Academic Press। আইএসবিএন ৯৭৮০১২৪১১৫৮০৪
  6. 1 2 3 4 5 6 "Debilitating Diseases – 12 Diseases that change millions of lives"dodgepark.com। Dodge Park। ২ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২৪
  7. Poewe, Werner; Jankovic, Joseph (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। Movement Disorders in Neurologic and Systemic Disease (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন ৯৭৮১১০৭০২৪৬১৮
  8. Lanska, Douglas J. (১ জানুয়ারি ২০১০)। "Chapter 33 the history of movement disorders"। History of Neurology। Handbook of Clinical Neurology। খণ্ড ৯৫। পৃ. ৫০১–৫৪৬। ডিওআই:10.1016/S0072-9752(08)02133-7আইএসবিএন ৯৭৮০৪৪৪৫২০০৯৮আইএসএসএন 0072-9752পিএমআইডি 19892136

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
শ্রেণীবিন্যাস