গণঅভ্যুত্থান
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |





গণঅভ্যুত্থান বা গণ-অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থান হল একটি রাষ্ট্র বা শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের বৃহৎ পরিসরের আন্দোলন বা প্রতিরোধ। সাধারণত এটি রাষ্ট্রের নিপীড়ন, দুর্নীতি, বৈষম্য, দখলদারিত্ব অথবা অবৈধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়। গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অংশগ্রহণ স্বতঃস্ফূর্ত, ব্যাপক এবং সিদ্ধান্তমূলক হয়। অনেক সময় এই অভ্যুত্থান সরকার পতন কিংবা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়।
ধরন ও বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]গণঅভ্যুত্থান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে:
- অহিংস – শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অনশন, নাগরিক অবাধ্যতা
- হিংসাত্মক – সংঘর্ষ, অবরোধ, আগুন, সশস্ত্র প্রতিরোধ
- সংগঠিত – রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে
- স্বতঃস্ফূর্ত – কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াই জনতার আবেগ ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ
প্রভাব
[সম্পাদনা]গণঅভ্যুত্থান একটি রাষ্ট্র বা সমাজে গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলে। যেমন:
- স্বৈরাচার বা কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন
- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
- নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান
- নাগরিক সচেতনতা ও অধিকারবোধ বৃদ্ধি
- কখনও কখনও গৃহযুদ্ধ বা বিশৃঙ্খলার সূচনা
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অস্বীকার করলে তীব্র গণপ্রতিবাদ গড়ে ওঠে
- ঢাকাসহ সারা বাংলায় ছাত্র ও সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে ব্যাপক আন্দোলন সংগঠিত হয়
- ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা পুলিশের গুলিতে শহীদ হন (শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার প্রমুখ)
- এই আন্দোলন বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার সূচনা করে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি রচনা করে
- অনেক ইতিহাসবিদ একে বাংলাদেশের প্রথম গণঅভ্যুত্থান হিসেবে বিবেচনা করেন
- পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান-এর দমননীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি
- বিক্ষোভে বহু শহীদ; আইয়ুব খানের পতনের পথ সুগম হয়, ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হন
- স্বাধীনতার আন্দোলনের পূর্বভূমি প্রস্তুত হয়
- শেখ মুজিব কর্তৃক বাকশাল গঠন, একদলীয় শাসন ও গণমাধ্যম বন্ধের ফলে জনমনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়
- ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সেনা সদস্যদের হাতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতা দখল করেন
- এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা করে
৭ নভেম্বর ১৯৭৫: সিপাহি-জনতার বিপ্লব
[সম্পাদনা]- ৩ নভেম্বর জেলহত্যার পর সৃষ্ট সংকটে ৭ নভেম্বর সাধারণ সৈনিক ও জনতা মিলিতভাবে ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব’ ঘটায়
- কারাবন্দি মেজর জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে রাষ্ট্রক্ষমতার পুনর্গঠন হয়
- এই আন্দোলন সামরিক শৃঙ্খলা ভেঙে গণসম্পৃক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে, জিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন এবং তার নেতৃত্বে ভেঙেপড়া রাষ্ট্রকাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়
- অনেক বিশ্লেষক এটিকে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান মনে করেন
- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ঐক্য জোট, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ রাস্তায় নামে
- পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা নূর হোসেনসহ অনেকে শহীদ হন
- গণআন্দোলনের চাপে এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়,বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি হন
- নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন এবং তার নেতৃত্বে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়
- শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী সরকারের দীর্ঘদিনের ভোট ডাকাতি, গুম-খুন, দমন-পীড়ন, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভারতের আধিপত্য এবং লুটপাট,দুর্নীতি ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ঐতিহাসিক গণপ্রতিরোধ
- নেতৃত্বে ছিল নতুন প্রজন্মের ছাত্র তরুণরা
- আনুমানিক ২০০০+ নিহত, হাজার হাজার আহত
- হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে 'দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র' গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, ড মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হন
- বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দী মুক্তি পায় ও দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে চলে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণঅভ্যুত্থান
[সম্পাদনা]বিশ্বের বহু দেশে গণঅভ্যুত্থান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯)
[সম্পাদনা]- রাজতন্ত্র ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির নেতৃত্বে বিদ্রোহ
- রাজা ষোড়শ লুই ও সামন্তবাদী ব্যবস্থার পতন
- বিপ্লবী রিপাবলিকানদের উত্থান ও গণতন্ত্রের সূচনা
- বিপ্লব-পরবর্তী বিশৃঙ্খলা থেকে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান এবং পরে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
রুশ বিপ্লব (১৯১৭)
[সম্পাদনা]- জারবাদ, দারিদ্র্য ও যুদ্ধবিরোধিতার বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষকদের নেতৃত্বে বিপ্লব
- জার নিকোলাস দ্বিতীয়ের রাজতন্ত্রের পতন
- বলশেভিকদের উত্থান এবং ভ্লাদিমির লেনিন-র নেতৃত্বে সোভিয়েত শাসন
- সামন্ততন্ত্র থেকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর
কিউবা বিপ্লব (১৯৫৩–১৯৫৯)
[সম্পাদনা]- মার্কিন-সমর্থিত স্বৈরশাসক ফুলহেনসিও বাতিস্তার দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন
- ফিদেল কাস্ত্রো, চে গেভারা ও রাউল কাস্ত্রো-র নেতৃত্বে আন্দোলনের গেরিলা যুদ্ধ
- ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি বাতিস্তা দেশ থেকে পালিয়ে যান; বিপ্লবীরা হাভানা দখল করে
- ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সরকারের প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও অর্থনীতির ব্যাপক পুনর্গঠন
- ভূমি সংস্কার, জাতীয়করণ ও মার্কিন প্রভাব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতি পরিবর্তন
- কিউবা পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক ব্লকের অংশ হয়ে ওঠে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে
ইরানী বিপ্লব (১৯৭৯)
[সম্পাদনা]- শাহর কর্তৃত্ববাদ ও পশ্চিমাপন্থী আধুনিকায়নের বিরুদ্ধে আয়াতুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন
- শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পতন ও রাজতন্ত্রের অবসান
- ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠিত হয় খোমেইনির নেতৃত্বে
- ধর্মনিরপেক্ষ রাজতন্ত্র থেকে ইসলামিক থিওক্রেসিতে রূপান্তর
গোয়াংজু অভ্যুত্থান (১৯৮০)
[সম্পাদনা]- দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র ও নাগরিকদের নেতৃত্বে গণবিদ্রোহ
- স্বৈরাচারী নেতা চুন দু-হুয়ানের ক্ষমতা দখল ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন
- সেনাবাহিনীর দ্বারা সহিংস দমন, শত শত বিক্ষোভকারীর নিহত ও আহত হওয়া
- পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে বিবেচিত
- দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্র আন্দোলনের প্রতীক এবং জাতীয় স্মৃতিচারণার বিষয়
- প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোসের একনায়কতন্ত্র, দুর্নীতি ও জাল নির্বাচনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন
- সাধারণ জনগণ, ধর্মীয় নেতা (বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ), রাজনৈতিক কর্মী ও সামরিক বিদ্রোহীদের সম্মিলিত নেতৃত্বে বিপ্লব সংঘটিত হয়
- চার দিনের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও বিক্ষোভের ফলে প্রেসিডেন্ট মারকোস পদত্যাগ করেন
- কোরাসন একুইনো ক্ষমতায় আসেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়
- বিশ্বে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের অন্যতম সফল উদাহরণ
ভেলভেট বিপ্লব (চেকোস্লোভাকিয়া, ১৯৮৯)
[সম্পাদনা]- সোভিয়েত ঘেঁষা একদলীয় কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র, নাগরিক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীদের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন
- বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি
- কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়
- ভাকলাভ হাভেল রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন
- শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার রূপান্তরের অনন্য দৃষ্টান্ত
বলিভারিয়ান বিপ্লব (ভেনিজুয়েলা, ১৯৯৮)
[সম্পাদনা]- ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও নবউদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হুগো শাভেজের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লব
- ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে শাভেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন
- সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও জনপ্রিয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হয়
- নতুন সংবিধান প্রণয়ন, গরিবদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণ
- লাতিন আমেরিকায় বামপন্থী জনপ্রিয় গণআন্দোলনের প্রতীক
গোলাপি বিপ্লব (জর্জিয়া, ২০০৩)
[সম্পাদনা]- বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনের পর ব্যাপক জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন
- সাবেক বিচারমন্ত্রী মিখাইল সাকাশভিলি ও তরুণ সমাজকর্মীদের নেতৃত্বে আন্দোলন
- প্রেসিডেন্ট এদুয়ার্দ শেভার্দনাদজে পদত্যাগ করেন
- গোলাপ ফুল নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে "গোলাপি বিপ্লব" নামে পরিচিত
- গণতান্ত্রিক সংস্কার ও পশ্চিমাপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়
অরেঞ্জ বিপ্লব (ইউক্রেন, ২০০৪)
[সম্পাদনা]- ২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন
- বিরোধীদলীয় প্রার্থী ভিক্টর ইউশচেঙ্কো ও সমর্থকদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ
- আন্দোলনের প্রতীক ছিল কমলা রঙ
- লাখো মানুষ কিয়েভের স্বাধীনতা স্কয়ারে অবস্থান করে
- নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠিত হয় এবং ইউশচেঙ্কো বিজয়ী হন
- গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা
সিডার বিপ্লব (লেবানন, ২০০৫)
[সম্পাদনা]- সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকাণ্ডের পর সিরিয়ার সেনা উপস্থিতি ও প্রভাবের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন
- বিভিন্ন বেসামরিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে "১৪ মার্চ জোট"-এর নেতৃত্বে আন্দোলন
- লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ
- সিডার গাছের প্রতীক নিয়ে আন্দোলন
- সিরিয়া লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে
- নতুন রাজনৈতিক আবহ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু
নীল বিপ্লব (কুয়েত, ২০০৫)
[সম্পাদনা]- নারীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন
- নারী অধিকারকর্মী ও প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে আন্দোলন
- নীল রঙ ছিল আন্দোলনের প্রতীক
- কয়েক মাস চাপ ও বিক্ষোভের পর কুয়েত সরকার নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে
- রাজনৈতিক সংস্কার ও লিঙ্গ-সমতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
টিউলিপ বিপ্লব (কিরগিজস্তান, ২০০৫)
[সম্পাদনা]- প্রেসিডেন্ট আসকার আকায়েভের দীর্ঘ শাসন ও নির্বাচন জালিয়াতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন
- বিরোধীদল ও নাগরিক সমাজের সমর্থনে ব্যাপক জনসমাবেশ
- টিউলিপ ফুলের প্রতীক নিয়ে আন্দোলন
- আকায়েভ পদত্যাগ করেন
- গণতান্ত্রিক সংস্কার ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা
নেপালের গণআন্দোলন (১৯৯০ ও ২০০৬)
[সম্পাদনা]- ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন
- পঞ্চায়েত শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ
- বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ
- রাজা বিরেন্দ্র বিক্রম শাহত ক্ষমতা শিথিল করে গণতান্ত্রিক সংবিধান মেনে নেন
- নেপালে গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
- ২০০৬ সালের গণআন্দোলন (জান্তুয়া আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান)
- শাসক রাজা গিয়ার বিরোধিতা করে সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক দলসমূহ ও মাওবাদী বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
- রাজা গিয়ার ক্ষমতা ত্যাগ ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা
- ২০০৮ সালে মোনার্কি বিলুপ্ত করে ফেডারেল গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা
- মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার একনায়কতন্ত্র, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তরুণদের ও জনগণের নেতৃত্বে গণআন্দোলন
- ▸ তিউনিসিয়া(২০১১)
- মোহাম্মদ বুয়াজিজির আত্মাহুতির মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু
প্রেসিডেন্ট জাইন আল আবিদিন বেন আলির পতন
- গণতান্ত্রিক নির্বাচনভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা
- ▸ মিসর(২০১০)
- তরুণ সমাজ ও তাহরির স্কয়ারে জনগণের জাগরণ
- প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতন
- সামরিক কাউন্সিল ও পরে মুহাম্মাদ মুরসির নেতৃত্বে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার
- স্বৈরশাসন থেকে নির্বাচিত সরকারে রূপান্তর, পরে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে পুনরায় সামরিক নিয়ন্ত্রণ
- ▸ লিবিয়া(২০১১)
- সশস্ত্র বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে
- মুয়াম্মর গাদ্দাফির পতন ও হত্যাকাণ্ড
- বিদ্রোহী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
- একনায়কতন্ত্র থেকে অনিশ্চিত ও বিভক্ত শাসনে রূপান্তর
- ▸ ইয়েমেন
- দীর্ঘদিনের শাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহ-র বিরুদ্ধে গণআন্দোলন
- সালেহের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট
- গৃহযুদ্ধে পরিণত ও হুতি নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন
- ▸ সিরিয়া
- বাশার আল-আসাদ-র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ
- সরকার কঠোরভাবে দমন করে
- গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, আল-আসাদ টিকে থাকেন
- মানবিক বিপর্যয় ও শরণার্থী সংকট
সুদানের গণবিপ্লব (২০১৮–২০১৯)
[সম্পাদনা]- অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও অসংবিধানিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন
- নাগরিক সমাজ, ছাত্র-যুব ও বামপন্থী দলসমূহের নেতৃত্বে বিক্ষোভ
- মোহাম্মদ ওমর আল-বশিরের ৩০ বছর শাসন শেষে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে
- সামরিক ও নাগরিক সরকারের যৌথ শাসন প্রতিষ্ঠা
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংকল্প
হংকং গণতন্ত্র আন্দোলন (২০১৯)
[সম্পাদনা]- ছাত্র ও নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে চীনের এক্সট্রাডিশন বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন
- প্রশাসনের পরিবর্তন না হলেও আইন স্থগিত হয়
- কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কঠোর দমন ও জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন
- হংকংয়ের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়
বেলারুশের বিক্ষোভ (২০২০)
[সম্পাদনা]- ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিজয়কে ঘিরে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ
- বিরোধী প্রার্থী স্ভেতলানা সিখানৌস্কায়ার সমর্থনে ব্যাপক গণবিক্ষোভ
- সরকারি বাহিনীর দমননীতি, সহিংসতা ও গণগ্রেপ্তার সত্ত্বেও মাসব্যাপী প্রতিবাদ
- বিক্ষোভকারীদের দাবি: নতুন অবাধ নির্বাচন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর
- সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করে লুকাশেঙ্কোর ক্ষমতা বজায় থাকে, আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা অব্যাহত
- ২০২০ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি দলের জয় এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণআন্দোলন
- তরুণ প্রজন্ম, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মচারী ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ
- সেনাবাহিনীর সহিংস দমন, গ্রেপ্তার ও হতাহতের মধ্যেও নাগরিক অমান্যতা আন্দোলন জোরদার হয়
- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংবিধান সংস্কার ও সেনাশাসন বিলুপ্তির দাবি
- আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা ও চাপের মধ্যেও সামরিক জান্তা ক্ষমতা ধরে রাখে
শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থান (২০২২)
[সম্পাদনা]- তরুণ ও নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে চরম অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে গণআন্দোলন
- প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশের পদত্যাগ ও দেশত্যাগ
- রানিল বিক্রমাসিংহে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হন
- অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও শাসনব্যবস্থার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
সিরিয়ার গণঅভ্যুত্থান (২০২৪)
[সম্পাদনা]- ২০১১ সালে শুরু হওয়া এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের নতুন করে গণআন্দোলন শুরু হয়,হাইআতু তাহরির আল-শামের নেতৃত্বাধীন সিরীয় বিরোধী শক্তির বৃহৎ নেতৃত্বে
- দীর্ঘমেয়াদী ২৪ বছরের একনায়ক শাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটে এবং তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন,আসাদ বংশের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়
- বিরোধী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সমর্থিত অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠিত হয়
- একনায়কতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরের পথ তৈরি হয়
জেন-জি রিভল্যুশন, নেপাল (২০২৫)
[সম্পাদনা]২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালে ‘জেন জেড রেভলুশন’ নামে পরিচিত ব্যাপক জনঅভ্যুত্থান শুরু হয়। ফেসবুক ও টিকটক নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদ থেকে সূচনা হলেও দ্রুত এটি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সংঘর্ষে বহু নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে রাজনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন সুশীলা কার্কি। ঘটনাটি নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গণঅভ্যুত্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]সূত্র
[সম্পাদনা]- দেশে দেশে গণ-অভ্যুত্থান : দৈনিক আমাদের সময় (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
- বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো (২০১৯–২০২৪)
- "বাংলাদেশে গণআন্দোলনের ইতিহাস", ড. মাহবুব উল আলম
- "Mass Uprisings in the Modern World", International Political Studies Journal
- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন (Human Rights Watch, Amnesty International)