গঙ্গাবাই যাজ্ঞিক
গঙ্গাবাই প্রাণশঙ্কর যাজ্ঞিক | |
---|---|
জন্ম | ১৮৬৮ |
মৃত্যু | ১৯৩৭ (বয়স ৬৮–৬৯) |
পেশা | লেখক, শিক্ষক, আয়ুর্বেদ-চর্চাকারী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | হুন্নার মহাসাগর (১৮৯৮) |
গঙ্গাবাই প্রাণশঙ্কর যাজ্ঞিক (১৮৬৮ - ১৯৩৭) উনিশ শতকের ভারতের একজন গুজরাটি লেখক ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক এবং আয়ুর্বেদ পেশার অনুশীলনকারী। তিনি "হুন্নার মহাসাগর" (১৮৯৮) লিখেছিলেন যা প্রায় ২০৮০ রকমের বাণিজ্য, দক্ষতা এবং স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য পরামর্শের একটি সংকলন। তাঁকে প্রথম মহিলা গুজরাটি লেখক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[ক]
জীবনী
[সম্পাদনা]গঙ্গাবাই যাজ্ঞিক ১৮৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[১][৩] তিনি ভাভোলের (গান্ধীনগরের কাছে, গুজরাত, ভারত) বাসিন্দা ছিলেন। ১৮৮১ সালে তাঁর স্বামী যখন মারা যান, তখন তিনি মাত্র তেরো বছর বয়সী। সে সময়ের প্রথা অনুযায়ী মস্তক মুণ্ডন করতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন।[১][২] তাঁকে তার বোন বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি নিজের পড়াশোনা শেষ করেন।[৩] তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[৩] তিনি আরও পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আহমেদাবাদের মহালক্ষ্মী ফিমেল ট্রেনিং কলেজে যোগ দেন।[৩] তিনি ১৮৮৭ সালে ভাভোল ত্যাগ করেন এবং মানসায় চলে আসেন যেখানে তিনি ভিক্টোরিয়া গার্ল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিযুক্ত হন।[৩] তিনি একজন উদ্যোক্তা ছিলেন এবং স্বদেশী (স্থানীয় পণ্য) ও স্ব-কর্মসংস্থানের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি একজন আয়ুর্বেদ-অভ্যাসকারী ছিলেন এবং স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সমস্যারও চিকিৎসা করেছিলেন।[১][২] তিনি ১৮৭৯ সালের কাছাকাছি সময়ে মানসায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম ছিল গর্ভজীবন চিকিৎসালয় এবং পরে আহমেদাবাদে এর শাখা চালু করেন।[৩]
তিনি ১৯৩৭ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর হাসপাতালের আয় থেকে ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য তিনি ইচ্ছাপত্র করে গিয়েছিলেন।[১]
কাজ
[সম্পাদনা]যাজ্ঞিকের লেখাকে বিদ্রোহী ও সংস্কারবাদী মনে করা হয়। তিনি নিজের লেখা ভহেম খান্দান পথি (১৮৯১) এবং দেবী ত্রিয়া নিষেধ (১৮৯২) বইতে ডাইনি শিকার, অন্ধ বিশ্বাস, বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের মত কুসংস্কার এবং সামাজিক অন্যায়ের বিরোধিতা করেছিলেন।[১][২][৩]
তাঁর হুন্নার মহাসাগর (১৮৯৮) হল প্রায় ২০৮০টি ব্যবসা, দক্ষতা এবং স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য পারিবারিক পরামর্শের একটি সংকলন। এতে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক প্রয়োজনীয় পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত আছে। এর মধ্যে আছে ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরির পদ্ধতির তথ্য, যেমন কামড়, চোখ এবং কানের জন্য; ধাতুবিদ্যা এবং তার পাশাপাশি দেশীয় কুটির শিল্প সামগ্রী প্রস্তুতির তথ্য যেমন সাবান, কাগজ, পাঁপড়, সুগন্ধী, চুলের তেল, কৃত্রিম মুক্তা, ভেষজ রং, ধোলাই-সাবান, ধূপ, দন্ত মঞ্জন, বারুদ এবং বার্নিশ ইত্যাদি।[১][৩][৪][৫] এটি এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে এটি প্রকাশের মাত্র তিন দিনের মধ্যে হাজার কপি বিক্রি হয়ে যায় এবং ১৯০৮ সাল নাগাদ সপ্তম সংস্করণ মুদ্রিত হয়।[৩][৪][৫]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]গঙ্গাবাই যাজ্ঞিককে প্রথম মহিলা গুজরাটি লেখক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৩] দাবিটি বিতর্কিত কারণ তাঁর লেখাকে কিছু পণ্ডিত যেমন রঘুবীর চৌধুরী সাহিত্যিকর্ম বলে মনে করেন না।[১][২] আহমেদাবাদ ভিত্তিক একটি ফাউন্ডেশন সৃষ্টি, তাঁর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ২০০৩ সালে হুন্নার মহাসাগর-এর নতুন সংস্করণ পুনঃপ্রকাশ করে। এরা গুজরাটি সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর স্বীকৃতির জন্য প্রচারণা চালিয়েছিল।[১][২][৫] ইতিহাসবিদ শিরিন মেহতা উল্লেখ করেছেন যে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশীকে (স্থানীয় পণ্য) জনপ্রিয় করার অনেক আগেই গঙ্গাবাই এটিকে সমর্থন করেছিলেন।[২][৫]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা এবং তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ Parekh, Tina (২০০৩-০৮-১৩)। "Claiming her right in Gujarati writing"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "Quest for woman Gujarati writer brings up new name"। The Times of India। ২০১৩-০৮-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ Menon, Sujata (২০০৭-১২-৩১)। "6. The Middle Class Educated Women and Women Organizations in Gujarat 1880-1947"। Women and education: Their role in society in British Gujarat 1850-1947 (Ph. D.) (ইংরেজি ভাষায়)। Department of History, Maharaja Sayajirao University of Baroda। পৃষ্ঠা 313–314। hdl:10603/59065 – Shodhganga-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ Sucharita, Swati (২০০১-০৭-১৬)। "A grassroots professor in the ideas market"। www.gujaratplus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ Gupta, Anil K, সম্পাদক (জানুয়ারি–মার্চ ২০০৩)। "Book Review: A Nationalist-Feminist User's Guide for Swadeshi" (পিডিএফ)। HoneyBee। Sristi Innovations। 14 (1): 16। ২০১০-০১-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৫।