খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(খান বাহাদুর আব্দুর রহমান খান থেকে পুনর্নির্দেশিত)
খান বাহাদুর

আবদুর রহমান খাঁ
জন্ম১৮৯০
ভান্দারীকান্দি, শিবচর, মাদারিপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৪(1964-12-23) (বয়স ৭৩–৭৪)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাশিক্ষক, সাহিত্যিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাঙ্গালী
শিক্ষাএমএ (গণিত)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯১৪)
সন্তানফজলুর রহমান খান, জিল্লুর রহমান খান

খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ (১৮৯০-১৯৬৪) ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসেবক। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অনন্য অনবদ্য গুনাবলীর স্বীকৃতিস্বরুপ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রথমে "খান সাহেব" (১৯২৬খ্রি.) এবং পরবর্তীতে "খান বাহাদুর" (১৯৩২খ্রি.) উপাধিতে ভূষিত করেন।[১]

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার  শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি গ্রামে আবদুর রহমান খাঁ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আসলত রহমান খাঁ। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে আবদুর রহমান এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে তিনি গণিতে অনার্সসহ স্নাতক এবং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবদুর রহমান ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যাপকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক পদে এবং শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে তিনি প্রায় একত্রিশ বছর চাকরি করেন। তিনি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা বোর্ডের সেক্রেটারি, ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল ইন্সপেক্টর ও ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় এ.ডি.পি.আই. (প্রথম মুসলমান হিসেবে[২]) নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঐ পদে বহাল থাকেন।[৩] তখন শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারি ছিলেন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মি. এইচ. গ্রাহাম এবং শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে ১৯৫৬ সালে অবসর গ্রহণের পর উক্ত কলেজের রেক্টর পদে পুনর্নিয়োগ প্রাপ্ত হন।[১] ঐ সময়ের মধ্যে তিনি জগন্নাথ কলেজে বি.এ. ও বি.কম. কোর্স চালু এবং নাইট শিফট প্রবর্তন করেন।[৩]

সামাজিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।[৪] মুসলিম সাহিত্য সমাজ, বাংলা একাডেমি, সরকারি টিচার্স এসোসিয়েশন ইত্যাদি সংস্থার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলা একডেমির সহ‌-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে রোম এবং ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড টিচার্স কনফারেন্সে পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিত্ব করেন। তৎকালে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে আবদুর রহমানের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি নিজ গ্রাম ভান্ডারিকান্দিতে পিতার নামে ‘আসলত মেমোরিয়াল স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।[৩] ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ' প্রতিষ্ঠায় আগ্রনী ভূমিকা পালন করেন এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন।[২]

সাহিত্য চর্চা[সম্পাদনা]

আবদুর রহমান একজন সাহিত্যিক হিসেবেও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। অনুবাদ, প্রবন্ধ ও জীবনী রচনার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা সকলের প্রশংসা অর্জন করে। কুরআনহাদিসের বঙ্গানুবাদ তার বিশেষ কীর্তি। "বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ)" এর লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই আবদুর রহমান খাঁ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন,

"বাংলা সাহিত্যে পবিত্র কুরআন হাদিসের অনুবাদ এবং ইসলামের মর্ম ব্যাখ্যার জন্য আবদুর রহমান খাঁর নাম স্মরণীয় থাকবে।"[১]

তার অধিকাংশ রচনাই  ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতিবিষয়ক। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো:

  • সাহিত্য সুধা (১৯২৪),
  • শিক্ষা বিজ্ঞান (১৯২৬),
  • বীজ গণিত (১৯২৬),
  • শিশুদের ভারত ইতিহাস (১৯২৬),
  • মুসলিম নারী (১ম খন্ড, ১৯২৭),
  • চার ইয়ার (১৯৩৩),
  • পাঁচ সুরা শরীফ (১৯৪৮),
  • হজ্বের সফর (১৯৪৯),
  • শেষ নবী (১৯৪৯),
  • ইসলাম পরিচিতি (১৯৫২),
  • কুরআন শরীফ (৩ খন্ড, ১৯৫২-৫৩),
  • ইসলামিক তমদ্দুন ও পাকিস্তান (১৯৫৬),
  • হাদিস শরীফ (৩ খন্ড, ১৯৫৭),
  • নয়া খুৎবা (১৯৫৯),
  • আমপারা (১৯৫৯),
  • সহীহ বুখারী শরীফ (২ খন্ড ১৯৬১),
  • জওয়াহিরুল কুরআন (১৯৬২),
  • আমার জীবন (১৯৬৪) ইত্যাদি।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর ভোর ৫ ঘটিকায় খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ ঢাকাতে তার বড়ছেলের বাসভবনে অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন। লালবাগ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে বেলা ১ টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মিয়া, আবদুল জব্বার (১৯৯৪)। মাদারীপুর জেলা পরিচিতি। মাদারিপুর: মিসেস লীনা জব্বার। পৃষ্ঠা ১১১–১১৫। 
  2. "প্রিন্সিপাল আবদুর রহমান আর নেই"। দি পাকিস্তান অবজারভার। ডিসেম্বর ২৪, ১৯৬৪। 
  3. "খাঁ, খানবাহাদুর আবদুর রহমান - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৩ 
  4. "Presidents"www.asiaticsociety.org.bd। ২০১৯-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৩