ক্রুজার


ক্রুজার হল এক ধরনের যুদ্ধজাহাজ। আধুনিক ক্রুজার সাধারণত বিমান বাহক এবং উভচর আক্রমণকারী জাহাজের পরে একটি বহরে বৃহত্তম জাহাজ এবং সাধারণত অনুসন্ধান ও ধ্বংস, সমুদ্র সহচারিতা থেকে সমুদ্র অস্বীকার করা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
"ক্রুজার" শব্দটি, যা কয়েকশ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সময়ের সাথে সাথে এর অর্থ পরিবর্তন হয়েছে। পাল তোলার যুগে, ক্রুজিং (cruising) শব্দটি নির্দিষ্ট ধরণের মিশনকে বোঝাত - স্বাধীন স্কাউটিং, বাণিজ্য সুরক্ষা, বা অভিযান। এসব মিশন সাধারণত ফ্রিগেট বা স্লুপ-অফ-ওয়ার দ্বারা সম্পন্ন হত, যা একটি নৌবহরের ক্রুজিং যুদ্ধজাহাজ হিসেবে কাজ করত।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, ক্রুজার দূরবর্তী জলপথে পরিভ্রমণ, বাণিজ্যিক অভিযান এবং যুদ্ধ বহরের জন্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে তৈরি জাহাজগুলির একটি শ্রেণিবিন্যাসে পরিণত হয়েছিল। ক্রুজারগুলি বিভিন্ন আকারে হতো, মাঝারি আকারের সুরক্ষিত ক্রুজার থেকে শুরু করে বৃহৎ সাঁজোয়া ক্রুজার পর্যন্ত যেগুলি প্রায় প্রাক-ড্রেডনট যুদ্ধজাহাজের মতো বড় (যদিও ততটা শক্তিশালী বা সুসজ্জিত নয়) ছিল। [১] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ড্রেডনট যুদ্ধজাহাজের আবির্ভাবের সাথে সাথে, সাঁজোয়া ক্রুজার বিকশিত হয়ে ব্যাটলক্রুজার নামে পরিচিত একই আকারের একটি জাহাজে পরিণত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুগের খুব বড় ব্যাটলক্রুজারগুলি, যেগুলি সাঁজোয়া ক্রুজারগুলির পরে এসেছিল, তা ড্রেডনট যুদ্ধজাহাজের সাথে, প্রধান জাহাজ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, সুরক্ষিত ক্রুজারগুলির সরাসরি উত্তরসূরি জাহাজগুলোর আকার ছিল একটি যুদ্ধজাহাজের চেয়ে ছোট কিন্তু একটি ডেস্ট্রয়ারের চেয়ে বড়। ১৯২২ সালে, ওয়াশিংটন নৌ চুক্তি এই ক্রুজারগুলির উপর একটি আনুষ্ঠানিক সীমা নির্ধারণ করে, যেগুলিকে সর্বোচ্চ ৮ ইঞ্চি ক্যালিবারের বন্দুক বহনকারী ও সর্বোচ্চ ১০,০০০ টন ওজনের যুদ্ধজাহাজ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। ; যদিও ১৯৩০ সালের লন্ডন নৌ চুক্তি ক্রুজারকে দুটি ধরণে বিভক্ত করে, ভারী ক্রুজারগুলিতে ৬.১ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি ক্যালিবারের বন্দুক ছিল, যেখানে ৬.১ ইঞ্চি বা তার কম ক্যালিবারের বন্দুকযুক্ত ক্রুজারগুলি ছিল হালকা ক্রুজার । প্রতিটি ধরণের জাহাজের মোট এবং পৃথক ওজন সীমিত ছিল যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে চুক্তি ব্যবস্থার পতনের আগ পর্যন্ত ক্রুজারের নকশা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। চুক্তি ক্রুজার নকশার মধ্যে কিছু বৈচিত্র্য ছিল। যেমন, জার্মান ডয়চল্যান্ড-শ্রেণীর "পকেট যুদ্ধজাহাজ", যাতে আদর্শ ভারী ক্রুজারের তুলনায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল, যা গতি কমিয়ে দেয়। এছাড়াও ছিল আমেরিকান আলাস্কা-শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ, যা একটি বৃহৎ(ওজনে ও আকারে) ভারী ক্রুজার হিসেবে নকশা করা হয়েছিল এবং "ক্রুজার-কিলার" উপাধি পেয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, যুদ্ধজাহাজের প্রচলন কমে যাওয়ায় ফলে ক্রুজার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ভূপৃষ্ঠের যুদ্ধজাহাজ হিসেবে পরিণত হয় (আকাশ যুদ্ধে বিমানবাহী জাহাজের ভূমিকার বিপরীতে)। জাহাজ এবং নৌবাহিনী ভেদে ক্রুজারের ভূমিকা পরিবর্তিত হয়েছিল, প্রায়শই বিমান প্রতিরক্ষা এবং তীরে বোমাবর্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত নৌবাহিনীর ক্রুজারগুলিতে ভারী জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছিল যা স্যাচুরেশন আক্রমণের মাধ্যমে ন্যাটো ক্যারিয়ার টাস্ক-ফোর্সকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য নকশা করা হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের শেষের দিকে ক্রুজার এবং ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে সীমারেখা ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল, যখন Ticonderoga-শ্রেণি ক্রুজারটি Spruance-শ্রেণি ডেস্ট্রয়ারের হাল ব্যবহার করেছিল কিন্তু এর উন্নত মিশন এবং যুদ্ধ ব্যবস্থার কারণে ক্রুজার উপাধি পেয়েছিল।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Keegan, John (১৯৮৯)। The Price of Admiralty। Viking। পৃষ্ঠা 277। আইএসবিএন 0-670-81416-4।