ক্রায়োসার্জারি
ক্রায়োসার্জারি (ইংরেজি: Cryosurgery) বা ক্রায়োথেরাপি (ইংরেজি: Cryotherapy) হল অস্ত্রোপচারের অন্যতম একটি আধুনিক পদ্ধতি। ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতির জনক ইরভিং কুপার[১]। অস্বাভাবিক টিস্যু[২] ধ্বংস করতে নাইট্রোজেন গ্যাস বা আর্গন গ্যাস হতে উৎপাদিত প্রচন্ড ঠান্ডা তরল ত্বকের বাহ্যিক চামড়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় যা ক্রায়োসার্জারি নামে পরিচিত[৩]। গ্রিক শব্দ cryo (κρύο) এর অর্থ বরফের মত ঠান্ডা এবং surgery (cheirourgiki – χειρουργική) অর্থ হাতের কাজ।[৪] খুব শীতলীকরণ তরল পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের অসুস্থ বা অস্বাভাবিক টিস্যুকে ধ্বংস করার চিকিৎসা পদ্ধতিকে ক্রায়োসার্জারি বলে। [৫]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]- ১) ত্বকের ছোট টিউমার , তিল , আচিল , মেছতা , ত্বকের ক্যান্সার চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয় ৷
- ২) ক্রায়োসার্জারি দ্বারা অভ্যন্তরীণ কিছু রোগ যেমন - যকৃত ক্যান্সার , প্রস্টেট ক্যান্সার , ফুসফুস ক্যান্সার , মুখের ক্যান্সার , গ্রীবাদেশীয় গোলযোগ , পাইলস ক্যান্সার , স্তন ক্যান্সার ইত্যাদির চিকিৎসাও করা হয় ৷
- ৩) মানবদেহের কোষকলার কোমল অবস্থা Planter Fasciitis এবং Fibroma ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় ৷[৬]
পদ্ধতি
[সম্পাদনা]বহিরাগত টিউমারের ক্যান্সার কোষে সরাসরি তরল নাইট্রোজেন একটি সুঁচ, তুলা বা স্প্রে করা যন্ত্র দিয়ে প্রয়োগ করা হয়। অভ্যন্তরীণ টিউমারের ক্ষেত্রে, ক্রায়োপ্রোব (Cryoprobe) নামক একটি ফাঁপা উপকরণ দিয়ে তরল নাইট্রোজেন বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস টিউমারের সংস্পর্শে সঞ্চালন করা হয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারগণ আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই (MRI)ব্যবহার করেন। ক্রায়োপ্রোব টিউমারকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জমাটবদ্ধ কোষ নিরীক্ষণ করতে যাতে চারপাশের সুক্ষ টিস্যুগুলোর ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। সার্জারির পরে জমাটবদ্ধ কোষ স্বাভাবিকভাবেই শরীর দ্বারা শোষিত হয়। রেটিনোব্লাসটোমা (Retinoblastoma) রোগের ক্ষেত্রে সার্জারি খুবই কার্যকর হয় যখন টিউমারের আকার খুব ছোট থাকে এবং রেটিরার খুব কম অংশ আক্রান্ত হয়। ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে নল ব্যবহার করে তরল নাইট্রোজেন, কার্বন-ড্রাই অক্সাইড, আর্গন ও ডাই মিথাইল ইথার ব্যবহার করা হয় তাকে ক্রায়োপ্রোব বলে। [৫]
তরল নাইট্রোজেন
[সম্পাদনা]ক্ষত জমাটবদ্ধ করার একটি সাধারণ পদ্ধতি হল তরল নাইট্রোজেনকে শীতলকারী পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা। এই -১৯৬°C (−৩২১ °F) তাপমাত্রার ঠান্ডা তরল পদার্থটি অসুস্থ টিস্যুতে স্প্রে করা, ক্রায়োপ্রোব নামক নলের মাধ্যমে বা শুধুমাত্র তুলো অথবা ফোম দিয়ে লেপন করার মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কার্বন-ডাইঅক্সাইড
[সম্পাদনা]কার্বন ডাইঅক্সাইডও স্প্রে হিসেবে পাওয়া যায় এবং এটি বিভিন্ন ক্ষতিকর দাগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
আর্গন
[সম্পাদনা]ডাইমিথাইল-ইথার-প্রোপেন
[সম্পাদনা]পণ্যসমূহ
[সম্পাদনা]ক্রায়োসার্জিক্যাল সিস্টেমস
[সম্পাদনা]কিছু সংখ্যক চিকিৎসা সেবা সরবরাহ কোম্পানি ক্রায়োসার্জারির জন্য ক্রায়োজেন সরবরাহ পদ্ধতি বিকশিত করেছে। এর বেশিরভাগই তরল নাইট্রোজেন ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। সচরাচর ব্যবহৃত কয়েকটি ক্রায়োসার্জিক্যাল পণ্যসমূহ হল:
- Brymill
- Cry-Ac
- Cryoalfa
- CryoClear
- CryoPen
- CryoPro, Cortex Technology
- CryoProbe
- Cryosurgery, Inc. Verruca-Freeze
- Cryo-S Electric II by Metrum Cryoflex
- Histofreezer
- MedGyn Cryotherapy System
- Miltex Cryosolutions
- Premier CryOmega
- Premier NitroSpray
- Myoscience Iovera
- Wartner[৭]
ফলাফল
[সম্পাদনা]ক্রায়োসার্জারির সুবিধা হলো এটি বারবার করা সম্ভব। এটি সার্জারির চেয়ে কম বেদনাদায়ক এবং তা ব্যাথা, রক্তক্ষরণ এবং অস্ত্রোপচারের অন্যান্য জটিলতা কমিয়ে আনে। ক্রায়োসার্জারি অন্যান্য চিকিৎসার চেয়ে কম ব্যয়বহুল। কিন্তু এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তবে আশার কথা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ক্ষণস্থায়ী। অনেক সময় এর কারণে অনেক পুরুষ পুরুষত্ব হারতে পারেন, কোন কোন ক্ষেত্রে তা মলদ্বারের ক্ষতিসাধন করে। ক্রায়োসার্জারি যকৃতে পিত্ত, প্রধান রক্তনালীসমূহে রক্তক্ষরণ ঘটায়। ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির ফলে ত্বক ফুলে যায়, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়। হাড়ের টিউমারের চিকিৎসায় ব্যবহারের সময় কাছাকাছি অবস্থিত অস্থি কলা ধ্বংস হয় এবং হাড় ভেঙ্গে যায়। প্রতিক্রিয়াগুলো চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপে দেখা যায় না। অন্যান্য চিকিৎসার সাথে ধীরে ধীরে প্রতীয়মান হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাদের ক্ষেত্রেই হয় যাদের প্রস্টেট গ্রন্থিগত সমস্যা রয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ admin (২০২২-০২-০৯)। "ক্রায়োসার্জারি কি"। SuggestFor (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১৬।
- ↑ eMedicine.com – Dermatology – Cryotherapy
- ↑ DermNet NZ – Cryotherapy
- ↑ http://visualsonline.cancer.gov/retrieve.cfm?imageid=7293&dpi=72&fileformat=jpg
- ↑ ক খ উচ্চ মাধ্যমিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই by প্রকাশ কুমার দাস ও প্রকৌ. মোঃ মেহেদী হাসান (পৃষ্ঠা-৪৪)
- ↑ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি by মো:আব্দুল মান্নান মন্ডল ও অনুপম হালদার ( পৃষ্ঠা -২০ )
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০২১।