ক্যাম্পে (কবিতা)
ক্যাম্পে | |
---|---|
জীবনানন্দ দাশ দ্বারা রচিত | |
প্রথম প্রকাশ | পরিচয় (১৯৩২) |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
উৎস | ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬) |
প্রকাশের তারিখ | ১৯৩২ |
পঙক্তি | ৯৫ |
পূর্ববর্তী | "অবসরের গান" |
পরবর্তী | "জীবন" |
পূর্ণ পাঠ্য | |
উইকিসংকলনে ক্যাম্পে |
"ক্যাম্পে" বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ চরিত একটি কবিতা। এটি ১৯৩২ সালে পরিচয় সাহিত্য-সাময়িকীর তৃতীয় সংখ্যায় ১৯৩২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটি পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ হল হরিণ শিকার, যদিও ক্যাম্পে যাওয়া এবং শিকার এই কবিতার মূল বিষয় নয়।[১] কবিতাটি প্রকাশের আগে এবং পরে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।[২][৩][৪] একইসঙ্গে এই কবিতাটিকে রবীন্দ্রোত্তর যুগের কবিতাপর্বে আধুনিকতার কবিতা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।[৫]
প্রকাশনা
[সম্পাদনা]পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক কবি বিষ্ণু দের অনুরোধে জীবনানন্দ কবিতাটি পরিচয়ের কাছে পাঠান।[২] তবে আরেক সম্পাদক, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, কবিতাটিকে বোধগম্য নয় বলে প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।[২] যদিও পরে বিষ্ণু দে কবিতাটি প্রকাশ করেছিলেন।
সমালোচনা
[সম্পাদনা]পরিচয় সাময়িকীর সম্পাদক, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, কবিতাটির বিরুদ্ধে বোধগম্যতার অভিযোগ করেছিলেন। সাহিত্য-সমালোচক সজনীকান্ত দাস এটিকে অশ্লীলতার অভিযোগ করেন।[২] উভয় অভিযোগই কবিতার "ঘাই হরিণী" অভিব্যক্তি থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[২] "হরিণী" মানে স্ত্রী হরিণ; তবে "ঘাই", শব্দটি অসমীয়া ভাষা থেকে এসেছে। বাংলা ভাষায় এই শব্দের মাধ্যমে এটি অন্য পাখিকে ধরার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহৃত আরেকটি পাখিকে বোঝানো হয়।[৬] টোপের এই সংজ্ঞাটিকে জীবনানন্দ হরিণীতে রূপান্তর করেছিলেন। জীবনানন্দের ভাইয়ের মতে, তিনি তার জীবনে কখনও শিকার করেননি, তবে পেশাদার শিকারীদের কাছ থেকে তিনি এই শব্দটি শিখেছিলেন, যারা সুন্দরবনে অভিযানের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই জীবনানন্দের জন্মস্থান বরিশাল হয়ে যাত্রা করত, কারণ এটি জঙ্গলের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। জীবনানন্দের নিজের ভাষায়,
এই ব্যথা—এই প্রেম সব দিকে র’য়ে গেছে—
কোথাও ফড়িঙে-কীটে—মানুষের বুকের ভিতরে,
আমাদের সবের জীবনে।— "ক্যাম্পে", ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬)
বুদ্ধদেব বসু এবং অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সহ অনেকেই ভেবেছিলেন এই কবিতার কারণে জীবনানন্দকে তার শিক্ষকতা পেশা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যদিও পরে গবেষকরা এই মতকে অস্বীকার করেছিলেন।[৪] কারণ তিনি সিটি কলেজ থেকে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন ১৯২৮ সালে[১] "ক্যাম্পে" কবিতাটি পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে।[৭] জীবনানন্দের মৃত্যুর পর, তার লেখা একটি ব্যাখ্যামূলক লেখা পাওয়া যায়, ফলে এই বিতর্কের কিছুটা হ্রাস হয়। যদিও, তিনি এটি প্রকাশ করেননি কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে কোনও লেখকের পক্ষে কোনও পাঠ্যের অর্থ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সেই টীকায়, জীবনানন্দ লিখেছিলেন যা "ক্যাম্পে" ছড়িয়ে পড়ে "জীবনের অসহায়ত্বের একটি - সমস্ত জীবনের জন্য, মানুষের, কীট, পঙ্গপালের।"[২]
অন্যদিকে কবি বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের প্রশংসা করে বলেছেন, কবিজীবনের প্রথমদিকে জীবনানন্দের রচনা ছিল সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও নজরুল ইসলামের দ্বারা প্রভাবিত। তবে ধূসর পাণ্ডুলিপিতে এসে প্রকাশিত হল তার অনন্যতা। বুদ্ধদেব লিখছেন, "রূপকথার জগতের মতোই এ-কবির জগৎ আমাদের আত্মসাৎ করে নেয়, সেখান থেকে বেরোবার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না।"[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ তানিম, রেজওয়ান (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "আশি বছরের পাঠ : জীবনানন্দের ক্যাম্পে, সেকালে ও একালে"। সিলেট টুডে। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ সিলি, ক্লিনটন বি.। "In Camp"। parabaas.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ সিলি, ক্লিনটন বি. (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "জীবনানন্দের 'ক্যাম্পে'র 'ঘাই হরিণী'"। কালের খেয়া, দৈনিক সমকাল। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ ক খ মাইনুদ্দিন, ফারুক (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "জীবনানন্দের আলোচিত ও বিতর্কিত 'ক্যাম্পে'"। কালের খেয়া, দৈনিক সমকাল। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ রশীদ, মামুনুর (১৯ এপ্রিল ২০২৪)। "হরিণেরা খেলা করে…"। দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ সম্পাদকীয় (২২ অক্টোবর ২০২১)। "জীবনানন্দের 'ক্যাম্পে'"। আজকের পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ গুপ্ত, তিয়াষা (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। "কেন সিটি কলেজ থেকে শিক্ষকের চাকরি খোয়াতে হয়েছিল জীবনানন্দকে?"। বঙ্গদর্শন।