কেশবেশ্বর মন্দির
কেশবেশ্বর মন্দির | |
---|---|
![]() | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
ঈশ্বর | শিব |
উৎসবসমূহ | চড়ক |
অবস্থান | |
অবস্থান | মন্দির বাজার, রামনাথপুর |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২২°৯′১৫.০৪″ উত্তর ৮৮°১৯′১৯.৪০″ পূর্ব / ২২.১৫৪১৭৭৮° উত্তর ৮৮.৩২২০৫৫৬° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
স্থপতি | বাসুদেব |
ধরন | শিব মন্দির |
স্থাপত্য শৈলী | চালা স্থাপত্য (আটচালা) |
প্রতিষ্ঠাতা | কেশব রায়চৌধুরী |
অর্থায়নে | কেশব রায়চৌধুরী |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৭৪৮ |
সম্পূর্ণ হয় | ১৭৪৮ |
সম্মুখভাগের দিক | দক্ষিণ |
[১][২] |
কেশবেশ্বর মন্দির রামনাথপুর গ্রামের একটি চালা শৈলীর হিন্দু মন্দির। এটি সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত এবং হিন্দু দেবতা শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর চড়ক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি স্থানীয় জমিদার কেশব রায়চৌধুরী শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্যে মন্দিরের র্নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বাসুদেব নামে এক জনৈক স্থপতি মন্দির নির্মাণ করেন, এবং নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হতে ১২ বছর সময় লেগেছিল। জমিদার কেশব রায়চৌধুরী ১৬৭০ শকাব্দ বা ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, এবং নিজের নামে নামকরণ করেন। রায়চৌধুরী পরিবার ও গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে প্রথম বারের জন্য মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছিল; সর্বশেষ ১৪০২ বঙ্গাব্দে মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছিল।
কেশবেশ্বর মন্দিরের স্থানীয়ভাবে তৈরির পোড়া ইট থেকে নির্মিত। মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটার অলংকরণ রয়েছে, যেমন — ফুলকারী ও লতাপাতার নকশা। বাইরের অংশটি দুটি ধাপে আটটি চালা দ্বারা আবৃত—চারটি নিচে ও চারটি উপরের। উপরের চালা কাঠামোর মধ্যভাবে ত্রিশূল সহ তিনটি কলস স্থাপিত রয়েছে। দক্ষিণের মূল প্রবেশদ্বারে সূচলমুখী তিনটি খিলান রয়েছে।
স্থাপত্য
[সম্পাদনা]শৈলী
[সম্পাদনা]কেশবেশ্বর মন্দির হল আটচালা স্থাপত্য রীতির—বাংলায় উদ্ভূত চালা মন্দির স্থাপত্য শৈলীর একটি উপ-শৈলী—প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্থাপত্যের দিক থেকে, শৈলীর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে চালু আচ্ছাদন, সূচলমুখী খিলান, শীর্ষে ত্রিশূল সহ কলস; গর্ভগৃহের তিনদিক জুড়ে রয়েছে অলিন্দ বা বারন্দা। সাধারণ আলংকারিক উপাদানগুলি হল ফুলকারী, লতাপাতা, নৃত্যরতা রমণী, দেবতা এবং বর্ণনামূলক দৃশ্য। নকশার অন্যান্য উপাদান অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে বা ক্ষয়িষ্ণু।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]মন্দির কাঠামো
[সম্পাদনা]মন্দিরটি একটি উঁচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। এটি প্রায় বর্গাকার গর্ভগৃহের দেওয়ালের চারকোণা থেকে স্টাল্যাকটাইট পেন্ডেনটিভ পদ্ধতিতে তৈরি একটি কেন্দ্রীয় চুড়া বা গম্বুজ উঠছে। উত্তর দিক ব্যতীত গর্ভগৃহকে তিনদিকে বেষ্টন করে আছে চওড়া অলিন্দ। অলিন্দটি তিনদিকেই (পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম) খিলান দ্বারা মন্দির চত্বরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। মন্দির কাঠামোতে অতিরিক্ত মজবুতি প্রদানের লক্ষ্যে অলিন্দ ও গর্ভগৃহের দেওয়াল পরস্পর সরদাল দ্বারা জোড়া হয়েছে।
সজ্জা
[সম্পাদনা]ভবনটির স্থাপত্যের সাথে একীভূত, এর খ্যাতির অন্যতম কারণ হল আয়তন, উচ্চতা, গঠন পরিকল্পনা ও সাজসজ্জা। উত্তর দিকের দেওয়াল ব্যতীত সকল দেওয়ালেই পোড়ামাটি ও চুনবালির অলংকরণ স্থান পেয়েছে। অলংকরণ হিসাবে দেয়ালগুলি প্রধানত দেব-দেবী, পশুপাখি, লতাপাতা ও নৃত্যরতা রমণীর দৃশ্য বহন করে। তিনদিকের খিলানের উপরে পত্রাকৃতি আচ্ছাদন ছাড়াও দক্ষিণমুখী খিলানের মাঝের দুটি স্তম্ভের মাথায় ‘রিলিফ’ পদ্ধতিতে তৈরি টেরাকোটার সেবিকা পরিবৃত বিষ্ণু ও প্রান্তিক বা দেওয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত দুটি অর্ধ-স্তম্ভের উপরে দু-ভাগে বিভক্ত দুটি টালি দেখা যায়। বিভক্ত টালির একভাগে হনুমান ও অন্যভাগে কালীর চিত্র রয়েছে; বর্ডার দ্বারা বিষয়বস্তু দুটিকে পৃথক করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ চট্টোপাধ্যায় ২০০৫, পৃ. ২৫৭–২৫৮।
- ↑ (ভট্টাচার্য ও অন্যান্য ২০১৭, পৃ. ১৭৬–১৮২)
উৎস
[সম্পাদনা]- ভট্টাচার্য, আশোক; সাঁতরা, তারাপদ; মজুমদার, হেমেন; মুখোপাধ্যায়, সমীরকুমার; বসু, দেবাশিস; চৌধুরী, ইন্দ্রজিৎ; মিত্র, সুমেধ; সেনগুপ্ত, গৌতম, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "পুরাবৃত্ত ১"। পুরাবৃত্ত। কলকাতা: প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
- চট্টোপাধ্যায়, সাগর (২০০৫)। "পুরাকীর্তি পরিচয় - রামনাথপুর"। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পুরাকীর্তি (প্রথম সংস্করণ)। কলকাতা: প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃষ্ঠা ২৫৭–২৫৮।