কেউটে সাপ
| মনোকলড কোবরা বা পদ্মগোখরা (বাংলাদেশ) পদ্মগোখরো সাপ / গোখরো (পশ্চিমবঙ্গ) বা গোক্ষুর গোখরা | |
|---|---|
| পদ্ম গোখরার ফণার পিছনে এক চোখা চশমার মত চিহ্ন | |
| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
| জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
| পর্ব: | কর্ডাটা (Chordata) |
| শ্রেণি: | রেপটিলিয়া (Reptilia) |
| বর্গ: | স্কোয়ামাটা (Squamata) |
| উপবর্গ: | সারপেন্টস (Serpentes) |
| পরিবার: | এলাপিডি(Elapidae) |
| গণ: | Naja Lesson, 1831 |
| প্রজাতি: | N. kaouthia |
| দ্বিপদী নাম | |
| Naja kaouthia Lesson, 1831 | |
| পদ্ম গোখরা বিস্তৃতি | |
পদ্ম গোখরা (বৈজ্ঞানিক নাম Naja kaouthia, ইংরেজিতে monocled cobra) হল গোখরা প্রজাতির একটি সাপ যা দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া দেখা যায়। এটিকে আইইউসিএন কর্তৃক ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।[১] এ গোখরোর ফণার পিছনে গরুর ক্ষুরের মত দাগ থাকে যার থেকে বাংলা গোক্ষুর নামটি এসেছে। অন্যদিকে ইংরেজিতে মনোকলড অর্থ হল একচোখা। এ সাপটিকে মনোকলড বলার কারন হল এই সাপের ফণার পিছনে গোল দাগ থাকে যা দেখতে একচোখা চশমার মত লাগে তাই এর ইংরেজি নাম মনোকল্ড কোবরা। সকল গোখরা প্রজাতির সাপ উত্তেজিত হলে ফণা মেলে ধরে। সাপের ঘাড়ের লম্বা হাড় স্ফীত হয়ে ওঠে, তাতে চমৎকার ফণাটি বিস্তৃত হয়।
ইংরেজি কোবরার (Cobra) আক্ষরিক অর্থ হল গোখরা। প্রকৃত পক্ষে কোবরা হল নাজা নামক বিস্তৃত ও বৃহৎ সর্পগণ (Genus)। এই গণে (Genus) সকল প্রজাতির কোবরাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কোবরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও মিশর, আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, বার্মা, চীন ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলে দেখা যায়।
অনেকে ভুলবশত গোখরা বলতে শুধুমাত্র স্পেকটাকলড কোবরা বা মনোকল্ড কোবরাকে বুঝে থাকে। এটি আসলে একটি বৃহৎ সর্পগোষ্ঠির সাধারণ নাম।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]কেউটে শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ কালকূট থেকে।
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]বৈজ্ঞানিক নাম নাজা কৌথিয়া ১৮৩১ সালে রেন লেসন প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি মনোকলড কোবরাকে একটি সুন্দর সাপ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন যা খৈয়া গোখরা থেকে পৃথক। এর ১৮৮ ভেন্ট্রাল স্কেল এবং ৫৩ জোড়া শৈলাকার আঁশ বিন্যাস রয়েছে।
সেই থেকে বেশ কয়েকটি মনোকলড কোবরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নামে বর্ণিত হয়েছিল:
- ১৮৩৪ সালে জন এডওয়ার্ডসের গ্রে প্রকাশিত টমাস হার্ডউইকস এর অধীনে একটি মনোকলড কেউটের প্রথম চিত্রণ করেন ট্রাইনোমিয়ান নোমেনক্লেচারের ভিত্তিতে নাজা ট্রাইপুডিয়ানস ভার.ফ্যাসিটা (Naja tripudians Var fasciata) । [৩]
- ১৮৩৯ সালে, থিওডোর এডওয়ার্ড ক্যান্টর বোম্বাই, কলকাতা এবং আসামে ট্রাইনোমিয়ান নোমেনক্লেচারের ভিত্তিতে নাজা লার্ভাতার (Naja larvata) অধীনে সাদা আংটির চিহ্নযুক্ত একটি বাদামী বর্ণের মনোকলড কোবরার বর্ণনা করেছিলেন। [৪]
১৮৯৫ এবং ১৯১৩ এর মধ্যে দ্বিপদী নাজা ট্রিপুডিয়ানদের অধীনে বিভিন্ন জাতের মনোকলড কোবরা বর্ণিত হয়েছিল:
- এন জে ভার স্কোপিনিচা ১৮৯৫
- এন জে ভার একরঙা ১৮৭৬
- এন জে ভার ভিরিডিস ১৯১৩
- এন জে ভার সগিত্তিফের ১৯১৩
১৯৪০ সালে ম্যালকম আর্থার স্মিথ মনোকলড কোবরাকে ট্রাইনোমিয়াল নাজা নাজা কৌথিয়ার অধীনে স্পেকটাকলড কোবরার উপ-প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেন। [৫] ১৯৯০ এর দশকে পুনশ্রেণীকরণের সময়ে Naja kaouthia কে আলাদা করা হয় Naja siamensis প্রজাতি থেকে। নাজা সিয়ামেনসিস নামটি সাধারণভাবে পুরোনো শ্রেণীকরণ অনুযায়ী গবেষণায় ব্যবহৃত একটি কমন নাম ছিল। [৬]
থাইল্যান্ডে ফাইলোজেনেটিক গবেষণায় নাজা কৌথিয়া প্রজাতির বিস্ময়কর প্রকরণ প্রদর্শিত হয়েছে। অন্যান্য এশিয়াটিক কোবরার সঙ্গে প্রজাতির বিস্ময়কর প্যারাফাইলেটিক প্রকরণ রয়েছে।[৭]
| নাজা |
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]
গোক্ষুর গোখরার ইংরেজি ও অক্ষরের মত ফণা রয়েছে যা প্রায় খইয়া বা খড়মপায়া গোখরার কাছাকাছি। ছোট সাপের রং স্থিত থাকে। গায়ে হলুদ, বাদামি, ছাই বা কাল ধরনের রংয়ের সাথে ক্রসব্যান্ড দেখা যায়। ফণার দুই ধারে নিচের দিকে কাল ছোপ দেখতে পাওয়া যায় এবং একটি বা দুটি ক্রস আকারের রেখা কালো ছোপের পেছন থেকে পেটের দিকে নামে। বয়সের সাথে সাথে সাপের গায়ের রং ফিকে হতে শুরু করে। এর দুটি সরু, লম্বা বিষ দাঁত আছে। সবচেয়ে বড় বিষ দাঁতের রেকর্ড হল ৬.৭৮ মিমি (০.৬৭৮ সেমি)। বিষদাঁতগুলো বিষছুঁড়ে মারার জন্য কিছুটা উপযুক্ত।[৮] পূর্ণ বয়স্ক গোক্ষুর গোখরা প্রায় ১.৩৫ থেকে ১.৫ মি (৪.৪ থেকে ৪.৯ ফু) হয়, লেজ সহ তা দাঁড়ায় প্রায় ২৩ সেমি (৯.১ ইঞ্চি)। আরো অনেক বড় প্রজাতি পাওয়া গেছে তবে তা খুব বিরল। পূর্ণ বয়স্ক হলে এরা লম্বায় প্রায় ২.৩ মি (৭.৫ ফু) হয়।[৯][১০]
বিস্তৃতি ও আবাস
[সম্পাদনা]গোক্ষুর গোখরা পাওয়া যায় ভারত এর পশ্চিম থেকে চীন, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়াতে। মালয় দ্বীপপুঞ্জ, বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, নেপাল ও থাইল্যান্ড এদের আদি নিবাস।
আচরণ
[সম্পাদনা]এরা নিশাচর। মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে, চাষের জমি, বনাঞ্চল বা ধানক্ষেতের আশেপাশের ইদুরের গর্তে থাকতে ভালবাসে। শিশু গোক্ষুর গোখরা উভচর প্রাণী আর বড়গুলো স্তন্যপায়ী প্রাণি, সাপ বা মাছ শিকার করে। যখন বিরক্ত হয় পালাতে পছন্দ করে।[৮] কিন্তু যদি তার কাছে কাউকে প্রাণ সংশয়কারী মনে হয় তাহলে ফণা তুলে জোরে হিস হিস শব্দ করে। আত্মরক্ষার্থে কামড়ও দিতে পারে।[১০]
বাস্তুসংস্থান
[সম্পাদনা]এগুলোকে গাছের গুঁড়ির গর্ত বা যেখানে ইঁদুর রয়েছে এমন স্থানে পাওয়া যায়।[১১]
কিছু কিছু গোক্ষুর গোখরার বিষ নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে।[১২][১৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 "Naja kaouthia"। বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2016.2। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। ২০১২।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: অবৈধ|ref=harv(সাহায্য) - ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৮
- ↑ Gray, J. E. (১৮৩৪)। "Cobra Capella"। Illustrations of Indian zoology chiefly selected from the collection of Maj.-Gen. Hardwicke। পৃ. Plate ৭৮।
- ↑ Cantor, T. (১৮৩৯)। "Naja larvata": ৩২–৩৩।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ Smith, M. A. (১৯৪০)। "Naja naja kaouthia": ৪৮৫।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ Wüster, W. (১৯৯৬)। "Taxonomic changes and toxinology: Systematic revisions of the Asiatic cobras (Naja naja species complex)": ৩৯৯–৪০৬। ডিওআই:10.1016/0041-0101(95)00139-5।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ Ratnarathorn, N.; Harnyuttanakorn, P. (২০১৯)। "Geographical differentiation and cryptic diversity in the monocled cobra, Naja kaouthia (Elapidae), from Thailand": ৭১১–৭২৬। ডিওআই:10.1111/zsc.12378।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - 1 2 Wüster, W (১৯৯৮)। "The cobras of the genus Naja in India" (PDF)। Hamadryad। ২৩ (1): ১৫–৩২।
- ↑ Smith, M. A. (1943) Naja naja kaouthia In: The Fauna of British India, Ceylon and Burma, Including the Whole of the Indo-Chinese Sub-Region. Reptilia and Amphibia. Volume III (Serpentes). Taylor and Francis, London. Pages 428–432.
- 1 2 Chanhome, L.; Cox, M. J.; Vasaruchaponga, T.; Chaiyabutra, N. Sitprija (২০১১)। "Characterization of venomous snakes of Thailand"। Asian Biomedicine। ৫ (3): ৩১১–৩২৮।
- ↑ "Naja kaouthia: General Details and Information"। WCH Clinical Toxinology Resource। University of Adelaide। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- ↑ Wuster, Wolfgang; Thorpe, Roger S. (১৯৯২)। "Dentitional phenomena in cobra revisited: spitting and fang structure in the Asiatic species of Naja (Serpentes: Elapidae)" (পিডিএফ)। Herpetologica। ৪৮ (4): ৪২৪–৪৩৪।
- ↑ Santra, Vishal & Wolfgang Wüster (2017) Naja kaouthia behavior/spitting. Herpetological Review 48(2):?
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Wüster, Wolfgang (১৯৯৩)। "A century of confusion: Asiatic cobras revisited"। Vivarium। ৪ (4): ১৪–১৮।
- Cox, Merel J (১৯৯৫)। "Naja kaouthia"। Herpetological Review। ২৬ (3): ১৫৬–১৫৭।
- Kyi, S. W.; Zug, G. R. (২০০৩)। "Unusual foraging behaviour of Naja kaouthia at the Moyingye Wetlands Bird Sanctuary, Myanmar"। Hamadryad। ২৭ (2): ২৬৫–২৬৬।
- Wüster, W. Thorpe, R.S. (1991). Asiatic cobras: Systematics and snakebite. Experientia 47: 205–209
- Wüster, W.; Thorpe, R.S.; Cox, M.J.; Jintakune, P.; Nabhitabhata, J. (১৯৯৫)। "Population systematics of the snake genus Naja (Reptilia: Serpentes: Elapidae) in Indochina: Multivariate morphometrics and comparative mitochondrial DNA sequencing (cytochrome oxidase I)"."। Journal of Evolutionary Biology। ৮: ৪৯৩–৫১০। ডিওআই:10.1046/j.1420-9101.1995.8040493.x।
- Wüster, W (১৯৯৬)। "Taxonomic changes and toxinology: Systematic revisions of the Asiatic cobras (Naja naja complex)"। Toxicon। ৩৪ (4): ৩৯৯–৪০৬। ডিওআই:10.1016/0041-0101(95)00139-5। পিএমআইডি 8735239।
- Wüster, W (১৯৯৮)। "The cobras of the genus Naja in India"। Hamadryad। ২৩ (1): ১৫–৩২।