বিষয়বস্তুতে চলুন

কৃষিবিজ্ঞানের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইতালীয় রেনেসাঁর চাষাবাদ সম্পর্কিত বই যা লেখা হয় ১৫৪৯ সালে

কৃষিবিজ্ঞানের ইতিহাস হল কৃষিকাজের ইতিহাসের একটি উপক্ষেত্র, যাতে বৈজ্ঞানিক কৌশল এবং কৃষির উন্নতির দিকগুলোর উপর আলোকপাত করা হয়। উদ্ভিদ উদ্যানগুলোতে জৈব উৎপাদন সম্পর্কিত প্রাথমিক গবেষণা পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং পুষ্টি ক্ষয় হ্রাসকরণে[] সার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সার সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ১৮৪০ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়, যখন জাস্টাস ভন লিবিগ Die organische Chemie in ihrer Anwendung auf Agrikulturchemie und Physiologie (জৈব রসায়ন এবং কৃষি ও শারীরবিদ্যায় এর প্রয়োগ) গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন। লিবিগের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার হলো তিনি নাইট্রোজেনকে একটি অপরিহার্য উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন[]

মাটির পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য প্রচলিত প্রথম দিককার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কম্পোস্ট সার। কম্পোস্ট সার পচনশীল জৈব পদার্থ ব্যবহার করে মাটির পুষ্টি পুনরুদ্ধার করত, এবং দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর বিভিন্ন আরব রচনায়ও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্তও এটি ছিলো সার ব্যবহারের একটি সাধারণ এবং বহুল প্রচলিত পদ্ধতি[][তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জোহান ফ্রিডরিশ মেয়ার প্রথম বিজ্ঞানী যিনি জিপসামকে সার হিসেবে ব্যবহারের উপর গবেষণা প্রকাশ করেন, তবে এটি কীভাবে কাজ করত তা নিয়ে তখন বিতর্ক ছিলো[]

বিশ্লেষণাত্মক রসায়ন জৈব যৌগগুলোর উপর গবেষণা শুরু করলে কৃষি বিজ্ঞান বিকশিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে পচে যাওয়া উদ্ভিদ থেকে অ্যামোনিয়া নির্গত হতো, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির পেছনে নাইট্রোজেনের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত দিত। গেরার্ডাস মুলডার অ্যালবুমিন এবং অনুরূপ জৈব পদার্থগুলোর রাসায়নিক গঠন নির্ধারণের চেষ্টা করেন, তবে জাস্টাস ভন লিবিগ সাধারণত প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে প্রথম দূরদর্শী বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। তিনি ইবেন হর্সফোর্ডকে বিভিন্ন শস্যে নাইট্রোজেনের উপস্থিতি পরিমাপের দায়িত্ব দেন। এছাড়াও, লিবিগ সীমাবদ্ধ উপাদান তত্ত্বের মাধ্যমে দেখান যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ফসফরাস, পটাসিয়াম বা নাইট্রোজেনের অভাবের ফলে সীমিত[][][] হতে পারে। এটি লিবিগের সর্বনিম্ন নিয়ম নামে পরিচিত।

ফ্রিটজ হাবার এবং কার্ল বোশ সিন্থেটিক অ্যামোনিয়া উৎপাদনের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। হাবার অ্যামোনিয়া তৈরির রাসায়নিক বিক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন, এবং বোশ এই কাজ[][]টিকে উচ্চচাপে সম্পন্ন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তারা একসঙ্গে হাবার-বোশ প্রক্রিয়া তৈরি করেন, যা নাইট্রোজেনকে জমা করে সার উৎপাদন করে। ১৯১৮ সালে, ফ্রিটজ হাবার এই আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, এবং বোশ উচ্চচাপ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার পান। চাপ সংক্রান্ত গবেষণা না হলে এটি সম্ভব ছিলো না।

১৮৮৭ সালের হ্যাচ আইন কৃষিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন যুগের সূচনা করে যেখানে "কৃষি বিজ্ঞান" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হ্যাচ আইন মূলত কৃষকদের আগ্রহের মাধ্যমে চালিত হয়েছিল, বিশেষত যারা প্রথম দিকে তৈরি কৃত্রিম সারের উপাদানগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ১৯১৭ সালের স্মিথ-হিউজ আইন কৃষি শিক্ষাকে আবারও এর বৃত্তিমূলক শেকড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তবে ইতোমধ্যেই একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে উঠেছিল।[১০] ১৯০৬ সালের পরে, যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি গবেষণার জন্য সরকারি ব্যয় পরবর্তী ৪৪ বছর ধরে বেসরকারি ব্যয়ের তুলনায় বেশি ছিল।[১১]

জিনতত্ত্ব

[সম্পাদনা]

গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণা থেকে কৃষি বিজ্ঞানে জিনতত্ত্বের অধ্যয়ন শুরু হয়। পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে মেন্ডেল মেন্ডেলিয়ান বংশগতিবিদ্যা মডেল তৈরি করেন, যা প্রকট এবং প্রচ্ছন্ন জিন কীভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় তা ব্যাখ্যা করে। তার গবেষণার ফলাফল তখন বিতর্কিত ছিল এবং ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

১৯০০ সালে, হুগো দে ভ্রিস মেন্ডেলের কাজ পুনরায় আবিষ্কারের পর তার গবেষণার ফল প্রকাশ করেন, এবং ১৯০৫ সালে উইলিয়াম বেটসন অ্যাডাম সেডজউইককে লেখা একটি চিঠিতে প্রথমবারের মতো "জেনেটিক্স" (genetics) শব্দটি ব্যবহার করেন।[১২] জিনতত্ত্বের গবেষণা ডিএনএ পৃথকীকরণের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হয়।

কৃষিবিদ্যা

[সম্পাদনা]

১৮৪৩ সালে, জন লস এবং জোসেফ হেনরি গিলবার্ট রথামস্টেড গবেষণা কেন্দ্রে দীর্ঘমেয়াদী কৃষিবিজ্ঞান গবেষণা শুরু করেন, যার মধ্যে কিছু কিছু গবেষণা এখনো চালু রয়েছে।[১৩]

১৯০৫ সালে, স্যার অ্যালবার্ট হাওয়ার্ড জৈব কৃষি পদ্ধতিগুলোর উপর গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৪৩ সালে অ্যান এগ্রিকালচারাল টেস্টামেন্ট An Agriculture Testament.) গ্রন্থটি প্রকাশ করেন।[]

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

১৯১৭ সালে স্মিথ-হিউজ আইন পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি শিক্ষাকে স্কুল পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৪]

জাতীয় কৃষি শিক্ষাবিদ সমিতি (NAAE) শিক্ষকদের সহায়তা করতে এবং সারা দেশে কৃষি শিক্ষার পাঠ্যক্রম মানক করতে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষভাবে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়, স্টিফেন এফ. অস্টিন স্টেট ইউনিভার্সিটি, আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও অনেকে।


শিক্ষা

[সম্পাদনা]

১৯১৭ সালে স্মিথ-হিউজ আইন, ১৯১৭ কৃষি শিক্ষাকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি দেয়।[১৪]

১৯২০-এর দশকের শেষ এবং ১৯৩০-এর দশকের শুরুর দিকে, মহামন্দা এবং ডাস্ট বোলের (Dust Bowl) কারণে কৃষিখাত বড় ধাক্কা খায়। সম্ভাব্য কৃষকদের শিক্ষিত করা এবং কৃষিতে আগ্রহ ধরে রাখার লক্ষ্যে ১৯২৬ সালে ফিউচার ফার্মার্স অব আমেরিকা (এফএফএ) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা একসময় ফিউচার ফার্মার্স অব ভার্জিনিয়া নামে পরিচিত ছিল।[১৫] পরবর্তীতে, এই সংস্থাটি নিউ ফার্মার্স অব আমেরিকা-এর সঙ্গে একীভূত হয় এবং কৃষি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব এগ্রিকালচারাল এডুকেটরস (NAAE) শিক্ষকদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে এফএফএ অধ্যায় শুরু করতে সহায়তা করে এবং সারা দেশে কৃষি শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে মানসম্মত করে।[১৪]

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য সুপরিচিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়, স্টিফেন এফ. অস্টিন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Roberts, T.L. (২০০৯)। "The Role of Fertilizer in Growing the World's Food" (পিডিএফ)International Plant Nutrition Institute। ২৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "The agricultural sciences" 
  3. "History of Composting - Composting for the Homeowner - University of Illinois Extension"web.extension.illinois.edu। ২০১৮-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৭ 
  4. John Armstrong, Jesse Buel. A Treatise on Agriculture, The Present Condition of the Art Abroad and at Home, and the Theory and Practice of Husbandry. To which is Added, a Dissertation on the Kitchen and Fruit Garden. 1840. p. 45.
  5. Margaret Rossiter (1975) The Emergence of Agricultural Science, Yale University Press
  6. "Justus von Liebig - Biography, Facts and Pictures"www.famousscientists.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৭ 
  7. van der Ploeg, R.R.; Bo¨hm, W.; Kirkham, M.B. (১৯৯৯)। "On the Origin of the Theory of Mineral Nutrition of Plants and the Law of the Minimum" (পিডিএফ) 
  8. "Fertilizer History: The Haber-Bosch Process"www.tfi.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১১-১৯। ২০২০-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৭ 
  9. "Haber-Bosch process | chemistry"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৭ 
  10. Hillison J. (1996)। The Origins of Agriscience: Or Where Did All That Scientific Agriculture Come From? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-০৯-২২ তারিখে। Journal of Agricultural Education
  11. Huffman WE, Evenson RE. (2006)। Science for AgricultureBlackwell Publishing
  12. উইলিয়াম বেটসনের অ্যাডাম সেডজউইককে লেখা চিঠির অনলাইন অনুলিপি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-১০-১৩ তারিখে
  13. "The Long Term Experiments"। Rothamsted Research। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৮ 
  14. "What is Agricultural Education?"National Association of Agricultural Educators। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৭ 
  15. "FFA History"www.FFA. org। ৩ এপ্রিল ১৯১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৬ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]