কুমারেশ ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কুমারেশ ঘোষ
জন্ম(১৯১৩-০১-২১)২১ জানুয়ারি ১৯১৩
কুষ্টিয়া ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু৩০ এপ্রিল ১৯৯৫(1995-04-30) (বয়স ৮২)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
দাম্পত্যসঙ্গীবেলারানী ঘোষ

কুমারেশ ঘোষ (২১ জানুয়ারি ১৯১৩ - ৩০ এপ্রিল ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক।[১] রঙ্গব্যঙ্গের জাদুকর হিসাবে বাংলার রসসাহিত্যের স্রষ্টাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। রসসাহিত্য পত্রিকা যষ্ঠীমধু নিয়মিত সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘ তেত্রিশ বৎসর। [২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

কুমারেশ ঘোষের জন্ম ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরে তার মাতুলালয়ে। পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের যশোহর জেলার মথুরাপুরে। পিতা যশোহরের চিরুনি ও ওরিয়েন্টাল মেশিনারি প্রা.লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মন্মথনাথ ঘোষ (১৮৮২-১৯৪৪) এবং মাতা কুষ্টিয়ার প্রখ্যাত উকিল রাইচরণ দাসের একমাত্র কন্যা সরলাবালা দেবী। মন্মথনাথ ব্যবসার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতেন। কুমারেশের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রাঁচিতে তার দাদামশাই মতিলাল দত্তের কাছে। এরপর তিনি কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের মডার্ন স্কুলে ভরতি হন। শেষে দমদম জংশনের বয়েজ হোম স্কুল থেকে ১৯৩১খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে ভরতি হন বিদ্যাসাগর কলেজে বি.কম পড়ার জন্য। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাঁচিতে চলে যান। এক বৎসর পর পুনরায় যখন পড়াশোনা শুরু করেন তখন তার নেওয়া বিষয় - ইকনমিক হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র না পাওয়ায় উঠিয়ে দিয়েছে। তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন এবং তার অনুমতিতে ওই বিষয়ের উপর একটি মাত্র প্রশ্নপত্র তৈরি হয় এবং কুমারেশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইতিমধ্যে কলকাতার গড়পারের বাড়িতে মাতা সরলাবালা ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এবং পিতা ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তিনি পিতার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল মেশিনারি প্রাইভেট লিমিটেডে যোগ দেন। [৩]

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

পিতার ন্যায় ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতে থাকেন। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই তার লেখালেখি শুরু হয়েছিল। সেসময় তিনি লেখেন দুটি ব্যঙ্গ নাটিকা- টাকার গরম এবং ম্যানিয়া। এ নাটিকা দুটি বহু জায়গায় অভিনীত হয়েছিল। ব্যক্তিজীবনে ভ্রমণপ্রিয় কুমারেশ ঘোষ রাশিয়া, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বহু দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। যেমন ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন আর ইংরেজের দেশে, মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ, দমদম থেকে দামাস্কাস তিনটি বই লেখেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া ঘুরে এসে রচনা করেন সবুজ রাশিয়া। তেমনই ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জাপান ভ্রমণের পর রচনা করেন জাপান ও জাপানী (সেকাল ও একাল) তার পিতাও জাপান ভ্রমণের পর রচনা করেছিলেন জাপান প্রবাস। তিনি একাল অংশটি জুড়ে পিতার রচিত - জাপান প্রবাস গ্রন্থটি পুনর্মুদ্রণও করেন। ছোটদের ভদ্রতা ও ব্যবহার শেখানোর জন্য লেখেন চালচলন, বেকার ছেলেমেয়েদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পরামর্শ দিতে লেখেন শিল্পসংক্রান্ত বই লাভের ব্যবসাসেলসম্যান। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

উপন্যাস-
  • ভাঙাগড়া
  • পণ্যা (১৯৫৪)
  • নীল ঢেউ সাদা ফেনা (১৯৬০)
  • বিনোদিনী বোডিং হাউস (১৯৬০)
  • এক বর অনেক কনে (১৯৭০)
  • অবনী সরকারের বউ
রম্যরচনা-
  • স্বামীপালন পদ্ধতি (১৯৫৩)
  • যদি গদি পাই (১৯৫৯)
গল্পগ্রন্থ-
  • সরস রুশ গল্প
  • হরেকরকম্বা
নাটক -
  • চারণকবি মুকুন্দদাস
আত্মজীবনী-
  • সেই আমি

তিনি সংস্কৃত হতে মনুসংহিতা বাংলায় অনুবাদ করেন। বাংলা ছায়াছবি "শেষ পর্যন্ত" তার রচিত উপন্যাস 'বিনোদিনী বোডিং হাউস' অবলম্বনে চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। কুমারেশ ঘোষ স্বনামের পাশাপাশি একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন, যেমন - 'কুশ', 'মর্জিনা', 'এ.ডি.কুমারস্বামী', 'অষ্টাবক্র', 'কে.জি' প্রভৃতি।

বাংলা রসসাহিত্যের মাসিক পত্রিকা যষ্ঠীমধু দীর্ঘ তেত্রিশ বৎসর নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে কুমারেশ ঘোষের একক সম্পাদনায়। অবশ্য এই পত্রিকা সম্পাদনার পূর্বে ১৩৫৫ বঙ্গাব্দের ৩১ ভাদ্র মাসে তিনি লিমিটেড কোম্পানির একাধিক মালিকানায় চাবুক, তারপর ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে কয়েকজন বন্ধুর অর্থ সাহায্যে সম্মার্জনী পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তবে চলেছিল মাত্র এক বৎসর। বন্ধুরা অর্থ সাহায্য করত বলে, তারা চাইতেন তাদের কথা মত বন্ধুদের অপাঠ্য লেখাও প্রকাশ করতে হত। কিন্তু কুমারেশ অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের অপাঠ্য লেখা প্রকাশ করতে চাইতেন না। বেশ কিছু দিন পর তিনি অসত্য ও অসুন্দরকে দূর করতে একদিকে 'যষ্ঠী'র তথা লাঠির আঘাত হানার আর অন্য দিকে সত্য সুন্দর ও নির্মল আনন্দের জন্য 'মধু'র প্রদানের জন্য ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল ( ১৩৫৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে) প্রথম প্রকাশ করেন কার্টুন পত্রিকা- যষ্ঠীমধু। এর প্রচ্ছদ আঁকেন প্রখ্যাত শিল্পী রঘুনাথ গোস্বামী। ওমিও ঘোষ, শতদল, চন্ডী লাহিড়ী, রেবতীভূষণ ঘোষ, সুফি, কাজি, সুদর্শন চক্রবর্তী, সানিয়েৎ, হীরেন চৌধুরী অমিয়ভূষণ গুপ্ত, অসীমানন্দ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কার্টুনিস্টদের কার্টুন পত্রিকায় প্রকাশিত হত। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে কুমারেশ ঘোষের একটি নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা "গ্রন্থগৃহ" ছিল।


সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সরস রুশ গল্প বইটির জন্য সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার পান। শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে হরেকরকম্বা বইটির জন্য ভারতের শিশুসাহিত্যে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।[৪]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৫২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. "রসসাহিত্য স্রষ্টা কুমারেশ ঘোষ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২০ 
  3. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৯৭,৯৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  4. "একই নামে দুই আষাঢ়ে গল্প: দুই রসসাহিত্যিকের রঙ্গরঙিন কলমে/কুমারেশ ঘোষ ও অজিত কৃষ্ণ বসু(অ কৃ ব)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২১