কুমারীত্ব পরীক্ষা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুমারীত্ব পরীক্ষা হলো কোন মেয়ে বা মহিলা কুমারী কিনা তা নির্ধারণ করার চর্চা বা প্রক্রিয়া; অর্থাৎ, সে কখনই যৌনমিলনে লিপ্ত হয় নি, অথবা তার শিকার হয় নি, তা নির্ধারণ করা। পরীক্ষায় সাধারণত একটি অক্ষত যোনিচ্ছদের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে, ত্রুটিপূর্ণ অনুমানের উপর ভিত্তি করে যে, এটি শুধুমাত্র যৌন মিলনের ফলেই ছিঁড়ে যেতে পারে। [১]

কুমারীত্ব পরীক্ষা ব্যাপকভাবে বিতর্কিত বলে বিবেচিত, কেননা, এক. পরীক্ষিত মেয়ে বা মহিলার উপর এর বিরুপ প্রভাবের কারণে দুই. একে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়। [২] সন্দেহজনক ধর্ষণ বা শিশু যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে, সতীচ্ছেদের একটি বিস্তারিত পরীক্ষা করা যেতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য এটা করা মোটেই উচিত নয়, কেননা সতীচ্ছেদের অবস্থা প্রায়শই অনির্দিষ্ট। [৩]

২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ, জাতিসংঘের নারী সংগঠন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে যে, কুমারীত্ব পরীক্ষা প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত কারণ এটি একটি বেদনাদায়ক, অপমানজনক এবং আঘাত প্রদানকারী একটি অভ্যাস, যা নারীর প্রতি সহিংসতা সৃষ্টি করে। [৪]

দুই আঙুলের পরীক্ষা[সম্পাদনা]

কুমারীত্ব পরীক্ষার প্রক্রিয়া অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। যেসব এলাকায় মেডিক্যাল ডাক্তার পাওয়া যায়, সেখানে প্রায়শই ডাক্তারের কার্যালয়ে পরীক্ষা করা হয়। [৫] যেসব দেশে ডাক্তার পাওয়া যায় না, সেখানে পরীক্ষকরা প্রায়ই বয়স্ক মহিলা হন, অথবা যাকে বিশ্বাস করা যেতে পারে সতীচ্ছেদ খোঁজার জন্য। [৬] সাধারণত এমন পরীক্ষা করা হয় আফ্রিকান উপজাতিদের মধ্যে। [৭]

কুমারীত্ব পরীক্ষার আরেকটি ধরন হল আঙ্গুল দিয়ে যোনির পেশীর শিথিলতার পরীক্ষা করা ("দুই আঙ্গুলের পরীক্ষা")। একজন ডাক্তার মহিলার যোনিতে আঙুল প্রবেশ করিয়ে যোনি শিথিলতার মাত্রা পরীক্ষা করেন, যা তাকে "যৌন মিলনে অভ্যস্ত" কিনা তা নির্ধারণে সহায়তা করে। [৮] যাইহোক, এই মানদণ্ডের উপযোগিতা, চিকিৎসক এবং কুমারীত্ব পরীক্ষার বিরোধীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারণ যোনি শিথিলতা এবং সতীচ্ছেদের অনুপস্থিতি উভয়ই অন্যান্য কারণেও হতে পারে এবং "দুই আঙুলের পরীক্ষা" বিষয়গত পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে। [৯] [১০]

নিষিদ্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের উপর পূর্ববর্তী পদ্ধতিতে যৌন কার্যকলাপের পরীক্ষা করা হত। [১১] [১২] [১৩]

সাব সাহারান আফ্রিকার বান্টু জনগনের মধ্যে, কুমারীত্ব পরীক্ষার বা এমনকি লেবিয়া মেজরার সার্জিক্যাল সেলাই (যাকে বলা হয় ইনফিবুলেশন ) প্রচলিত রয়েছে। প্রথাগতভাবে, (সুদানের) কেনুজি মেয়েদের বয়ঃসন্ধির আগেই বিয়ে দেয়া হয়, [১৪] তাদের প্রাপ্তবয়স্ক স্বামীরাই হয় তাদের কুমারীত্বের পরিদর্শক।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • কৃত্রিম সতীচ্ছেদ
  • ম্যাডোনা-হোর কমপ্লেক্স
  • ভার্জিন কমপ্লেক্স
  • কুমারীত্ব
  • কুমারী জালিয়াতি
  • শরীরের গহ্বর অনুসন্ধান
  • জিসিসি সমকামিতা পরীক্ষা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The little tissue that couldn't – dispelling myths about the Hymen's role in determining sexual history and assault"National Center for Biotechnology Information। ২০১৯-০৬-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  2. University of California at Santa Barbara's SexInfo – The Hymen ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ মার্চ ২০১২ তারিখে. Retrieved 4 March 2009.
  3. Perlman, Sally E.; Nakajyma, Steven T. (২০০৪)। Clinical protocols in pediatric and adolescent gynecology। Parthenon। পৃষ্ঠা 131আইএসবিএন 1-84214-199-6 
  4. "United Nations agencies call for ban on virginity testing"। World Health Organization। ১৭ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. "Document"www.amnesty.org 
  6. Karin Brulliard (২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Zulus Eagerly Defy Ban on Virginity Test"The Washington Post। NONGOMA, South Africa। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০০৯ 
  7. LeClerc-Madlala, Suzanne (২০০১)। "Virginity Testing: Managing Sexuality in a Maturing HIV/AIDS Epidemic": 533–552। ডিওআই:10.1525/maq.2001.15.4.533পিএমআইডি 11794875 
  8. McNeil Jr., Donald G. (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Rape: Rights Group Calls Test to Determine Sexual Activity a 'Second Assault' in India"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  9. "Dignity on Trial: India's Need Sound Standards for Conducting and Interpreting Forensic Examinations of Rape Survivors" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Human Rights Watch। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  10. "'Crude, degrading' finger-test forced on Mumbai gangrape victim by cops"First Post। ৯ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৩ 
  11. "Two Finger Rape Test – Now Banned in India" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৫-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৮ 
  12. Malik, Zainab Z. (২০১৭-১২-১৮)। "It's time Pakistan banned the two-finger test for decoding consent in rape trials"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৮ 
  13. Shaon, Ashif Islam (২০১৮-০৪-২৩)। "Bangladesh High Court Bans 'two finger test' for Rape"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৩ 
  14. (Godard, 1867)

 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]