কলাদাঁ বহু-মাধ্যম অতিক্রমণ পরিবহন প্রকল্প

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প যা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সমুদ্র বন্দরকে সংযুক্ত করবে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সিত্তে সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে। মায়ানমারের মধ্যে কালাদান নদী দ্বারা নৌযান দ্বারা চীন রাজ্যের পালেটওয়া শহর যুক্ত হবে সিত্তে বন্দরের সঙ্গে এবং তারপর উত্তর-পূর্ব ভারতে মিজোরামের রাজ্যের সঙ্গে সড়কপথে পালিতওয়া যুক্ত হবে। মূলত, প্রকল্পটি ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার কথাছিল,[১] তবে ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, সিত্তে বন্দর এবং বিদ্যুৎ, নদী খনন, পালেটওয়া জেটিসহ প্রকল্পটির সবকটি অবকাঠাম সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ অধীনে রয়েছে জোরিনপুরই-পালেটওয়া সড়ক। (মে ২০১৮)। [২][৩]

এই প্রকল্প উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ করে দেবে এবং এঅঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। একটি অন্যতম প্রধান যোগাযোগ প্রকল্প হিসেবে এই প্রকল্প ভারতমায়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত যোগসূত্র গড়ে তুলবে। উল্লেখ্য, কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট ভারত ও মায়ানমার যৌথভাবে চিহ্নিত করেছে | ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কলকাতা বন্দর থেকে মায়ানমারে এবং পাশাপাশি মায়ানমারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে জলপথ ও সড়কপথের মাধ্যমে পণ্য দ্রব্য আনা-নেওয়ার জন্য বহুমুখি এক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে ভারত মায়ানমার সীমান্তের মিজোরাম রাজ্য মায়ানমারের সিত্তে বন্দরের সাথে যুক্ত হবে । আশা করা যায়, এর সাহায্যে উৎপাদন সামগ্রীর সমুদ্রপথে পরিবহনের ব্যবস্থা হওয়ার ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশে গতি আসবে | এছাড়াও এই প্রকল্প উত্তর-পূর্বে সামরিক কৌশলগত সুবিধা দেবে । তাছাড়া, শিলিগুড়ির রুটে যোগাযোগ পথের উপর চাপ কমবে। এই প্রকল্পের ডিপিআর অনুযায়ী রাইটস (রেলওয়ের অধীন নির্মাণ সংস্থা) সুপারিশ করেছে যে, কালাদান নদী বরাবর সিত্তে বন্দর থেকে পালেটওয়া পর্যন্ত ২২৫ কিমি দীর্ঘ জলপথ গড়ে তোলা হবে এবং পালেটওয়া থেকে ভারত মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত ৬২ কিমি দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণ করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০০৮-এর মার্চে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রকল্পের জন্য ৫৩৫.৯১ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দের অনুমোদন করা হয়েছে।[৪] এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে ২৯০৪.০৪ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।

পথ[সম্পাদনা]

এই প্রকল্পে বহুমুখী পরিবহনের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে:[৫]

  1. ভারতের কলকাতা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৩৯ কিলোমিটার সমুদ্র পথ (শিপিং রুট) বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে মায়ানমারের সিত্তে বন্দরকে যুক্ত করে। এই সমুদ্র পথ কয়েক দশক ধরে চালু হয়েছে।[৬] সম্পূর্ণ
  2. ১৫৮ কিলোমিটার নদী পথ সিত্তে বন্দর থেকে কালাদান নদী দ্বারা পালেটওয়ার ইনল্যান্ড ওয়াটার টার্মিনাল (ইডব্লিউটি) সংযুক্ত রয়েছে। (জুন ২০১৭)[৬] সম্পূর্ণ [২]
  3. জুন ২০১৭ সালে ইন্দো-মিয়ানমার সীমান্তে আইওএফটি পালেতওয়া থেকে জোরিনপুই পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার সড়ক পথের নির্মাণ চুক্তি করা হয়। [৬] ২০১৯ সালে সড়কটির নির্মান সম্পন্ন করা হবে। [২]
  4. ইন্দো-মিয়ানমারে সীমান্তে জোরিনপুই থেকে আইজল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মান করা হবে। আইজল থেকে এটি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লংটলেই আইজাল-সাইহা জাতীয় মহাসড়কের দ্বারা ৮৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় সড়ক ৫৪ (এনএইচ ৫৪)-এর সাথে সংযুক্ত। জাতীয় সড়ক ৫৪ আইজলকে মাধ্যমে আসামের ডাবাকার সঙ্গে যুক্ত। জাতীয় সড়কটি আবার পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের অংশ হসাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে যুক্ত। [৭] প্রায় সম্পূর্ণ (জুন ২০১৭)। [৬] নির্মানাধীন এবং ২০১৯ সালে সম্পন্ন করা হবে। [২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

এই প্রকল্পটি প্রায় ১,৩২৮ কিলোমিটারের দীর্ঘ কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য পরিবহন পথের দূরত্ব কমাবে কলকাতা থেকে সিত্তে বন্দর হয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের নতুন পণ্য পরিবহন পথ দ্বারা। এই নতুন রুটের ফলে শিলিগুড়ি করিডোরের উপর চাপ কমবে, যা চিকেন নেক নামেও পরিচিত।

প্রাথমিকভাবে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে পরিবহন এবং ট্রানজিট অধিকার প্রদানের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব করেছিল। যাইহোক, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য পরিবহনের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। [৮]

এই প্রকল্পটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ভারত) দ্বারা পরিচালিত এবং অর্থায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণাগুলি ভারতের রেল ইন্ডিয়া টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস) দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ২০০৭ সালের মে মাসে নিয়োগকৃত এসএসআর গ্রুপের একটি বিভাগ, এসর প্রজেক্টস লিমিটেড ও ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথ কর্তৃপক্ষ (আইডব্লিউএআই) দ্বারা সিত্তে বন্দরের নির্মাণ কাজ, পালেতওয়ারে জাহাজের জেটি নির্মান এবং নদীর গভীরতা বৃদ্ধির জন্য খননের (ড্রেজিংয়ের) কাজ শুরু করে। [৯]

কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের প্রধান সমস্যা হল মায়ানমারে সড়ক পথের অযৌক্তিক দৈর্ঘ্যকে এবং কালাদান নদীর দুটি উপনদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা; নদী দুটি- ছিনতুইপুই নদীলুংলেঙ নদী, এছাড়া নদীর নিন্ম প্রবাহে একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রথম দুটি প্রকল্প একটি পাবলিক সেক্টর উদ্যোগের দ্বারা নির্মিত হচ্ছে এবং তৃতীয়টি অন্য পিএসইউ (পাবলিক সেক্টর ইউনিট) দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে এছাড়াও সমন্বয় সমস্যা হয়েছে। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কারণে নৌযানগুলির ন্যাভিগেশন কার্যকর করা যেতে পারে। [১০]

প্রকল্পটি মায়ানমারের সিত্তে থেকে পালেটওয়া পর্যন্ত কালাদান নদীতে ১৫৮ কিলোমিটার এবং পালেটওয়া থেকে জোরিনপুই পর্যন্ত ১০৯ কিলোমিটার একটি সড়ক পথের অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা মিজোরামে ভারত-মায়ানমার সীমান্ত বরাবর অবস্থিত।

উন্নয়ন[সম্পাদনা]

১৯ এপ্রিল ২০১৬ ভারতীয় মন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং জানান যে, ভারতের পক্ষ থেকে মিজোরামের লংট্লাইয়ের কাছে জাতীয় সড়ক ৫৪ থেকে শুরু করে জোরিনপুই পর্যন্ত নতুন ৪-লেনের ১২-মিটার-প্রশস্ত ৯৯.৮৩ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক ৫০২এ (এনএইচ৫০২এ) -এর ৬৬% কাজ শেষ হয়েছে এবং ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। বন্দর, জলপথ এবং মায়ানমারের পালেটওয়া থেকে ভারত-মায়ানমার সীমান্তে জোরিনপুই পর্যন্ত ১০৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মান প্রকল্পটি সহ অন্যান্য প্রকল্প সম্পন্ন হবে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। [10] ভারত পক্ষের প্রকল্প সাইট ইঞ্জিনিয়ার লালরিংঘাটাও কাজ চলছে বলে রিপোর্ট করেছে। [11]

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, সিত্তে বন্দর এবং আইডব্লিউটি পালেটওয়া জেটি প্রস্তুত এবং কার্যকর হয়। [12] ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, মায়ানমারের পালেটওয়ারে সিত্তে বন্দর ও ইনল্যান্ড ওয়াটার টার্মিনালের পরিচালনা মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে ভারত। ২০১৭ সালের জুন মাসে ভারত মণিপুরে মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে গ্যাস পরিবহনের জন্য মায়ানমার সরকারের কাছে ৮১.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (কে -১১০.০৮ বিলিয়ন)-এর ছয়টি মালবাহী গ্যাস ট্যাঙ্কার জাহাজ হস্তান্তর করে। সিত্তে বন্দর এবং চিন রাজ্যের পালেটওয়ারে আইডব্লিউটিটি কাজ করছে, কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, ছয়টি জাহাজের দ্বারা সিত্তে বন্দর থেকে পালেটওয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে। ভারতে ৮১,২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অনুদান মায়ানমারকে প্রদান করে জাহাজ ক্রয়ের জন্য। অক্টোবর ২০১২ সালে নির্মাণ কাজটি আইডব্লিউটি'তে জমা দেওয়া হয়, ২০১৩ সালের মার্চে জাহাজ নির্মানের জন্য কীল স্থাপন করা হয় এবং জাহাজটি এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ সাল পর্যন্ত চালু করা হয়। জাহাজের পরীক্ষা এবং ট্রায়াল সম্পন্ন হলে মার্চ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সিত্তে পৌছায়। এপ্রিল ২০১৭ সালে সিত্তে জাহাজের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়। [12]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Purushothaman, Vakkom। "Kaladan Multi Modal Transit Transport Project to link sea route in Myanmar with Mizoram"The Northeast Times। ১৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১২ 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; update2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. India starts construction of ₹1,600-cr Mizoram-Myanmar Kaladan road , Business Line, 17 April 2018.
  4. "কালাদান প্রকল্প"। সংগ্রহের তারিখ ৩০-১১-২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Multi-modal project introduction
  6. India awards road contract to complete Kaladan project in Myanmar, Business Line, 9 June 2017.
  7. "Multi-modal route map"। ২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  8. Phukan, Papori। "Kaladan Multi-Modal Project In Myanmar"Manipur Online। ১৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১২ 
  9. "Kaladan Multi-Modal Transit Transport Project"Arakan Rivers। ২৯ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১২ 
  10. Dikshit, Sandeep। "India-Myanmar transport project hits roadblock"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১২