কার্বি জনগোষ্ঠী
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৪১৯,৫৩৪ (আসাম, ২০০১ সালের জনগণনা মতে[১]) | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
কার্বি আংলং (আসাম) | |
ভাষা | |
কার্বি ভাষা | |
ধর্ম | |
হিন্দু ধর্ম, জনজাতীয় ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম |
কার্বি জনগোষ্ঠীর লোকরা আসামের সেউজীয়া পাহাড়ের বুকে বাস করা অন্যতম আদিম অধিবাসী। আগে তাঁরা মিকির বলে পরিচিত ছিল এবং তাঁরা বাস করা পার্বত্য জেলাটি মিকির পাহাড় নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের কার্বি বলেই জানা যায় এবং জেলাটির নামও কার্বি আংলং জেলা নামে নামকরণ করা হয়েছে। কার্বিরা বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে যদিও কার্বি আংলং মিকির পাহাড়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ কার্বি লোক থাকার ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকায়, এই জেলা কার্বিদের স্বায়ত্তশাসিত জেলা হিসাবে পরিগণিত হয়। অবশ্য এর জন্য কার্বিদের সংগঠিত রূপে লড়াই করতে হয়েছিল। ১৯৫২ সালের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত মিকির পাহাড় জেলা নামে নগাঁও জেলার সাথে সংযুক্ত ছিল। এর একটি অংশ শিবসাগর জেলা এবং খাসিয়া জয়ন্তীয়া জেলার সাথেও সংলগ্ন ছিল। বর্তমান কাবি আংলং জেলাটিই কার্বিদের মূল কর্মস্থল। কার্বিদের কৃষ্টি এবং জীবনদর্শনে খাসি ছিনটেং দর্শন ছাড়াও ভারতীয় হিন্দু দর্শনের প্রবাহ বিদ্যমান। 'ছাবিন আলুন' (কার্বি রামায়ণ), 'হাঈ'মু আলুন', বনগীত, সাধুকথা, ফকরা-যোজনা ইত্যাদি বিভিন্ন লোক সাহিত্যের মধ্যে থাকা কার্বি সমাজটি সমগ্র আসামের মাটির সাথে মিলে থাকা এক অমূল্য সম্পদ। কার্বিদের বাসস্থান হল আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, চীন, বাংলাদেশ, এবং থাইল্যান্ড।
কার্বিদের মূলগোষ্ঠী ৫ টা-
- ইংহি,
- ইংতি,
- টেরাং,
- টেরণ এবং
- তিমুং।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]কার্বিরা আসামের অতি প্রাচীন জাতি। এদের মিকির বলাও হয়। আসামের উত্তর-পূর্ব সীমান্তর পর্বতমালার কোনো একটি, যাকে কার্বিদের ইত্যাদি পুরুষরা 'নং পিলার' বলত- সেই নং পিলার পাহাড় থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষরা আসামে এসেছিল বলে কার্বিরা বিশ্বাস করে। তাঁরা আসামে প্রথমে ডিমাপুর থেকে আরম্ভ করে ডিফু পর্যন্ত এই অঞ্চলের একটি পাহাড়ে বসবাস করতেন বলে সেইসময়ের ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়। কাছাড়ি রাজার রাজ্যের মধ্যে এই কার্বি বা মিকিরদের থাকা পাহাড়টি পড়েছিল জন্য কাছাড়ি রাজা তাঁদের দাস হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়াও নানান অত্যাচার করেছিল। আসামে আহোমদের শাসন হওয়ার পরপরই কার্বিরা ভৈয়ামে নেমে আসে এবং কালক্রমে অন্যান্য জাতিসমূহের মধ্যে মিশে যায়।
কার্বিরা জুইকে 'মে' এবং জলকে 'লাং' বলে। এদের বিশ্বাস, একজন আদিম কার্বি নিজেদের ঘরের মধ্যে জুই একুরা ধরে আসায় পত্নী বলেছিল, "মে আকার চ্ছংহয় বি কাং কক?" অর্থাৎ, "জ্বলা জুই কিয় নুনুমুবাকৈ ছাড়ি আহিছে?" সেই আদিম কার্বি পুরুষ 'মে আকার বি' করার কারণেই পরে তাঁর বংশধরদের কার্বি বলা হয়। [২]
ভাষা
[সম্পাদনা]কার্বি ভাষাটি চীন-তিব্বতীয় মহাগোষ্ঠীর তিব্বত বর্মার কুকি চীন গোষ্ঠীর একটি ভাষা। কার্বি ভাষার বিভিন্ন উপভাষা বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় যদিও মূলত দুটি উপভাষা দেখা যায়। সেগুলি হল কার্বি এবং ডিমরীয়া কার্বি। ডিমরীয়া রাজ্য প্রাচীন কাল থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌগোলিক ভাবে পৃথক হওয়ার কারণে ডিমরীয়া কার্বি উপভাষাটি কিছু পৃথক হওয়া দেখা যায়।
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক বিতরণ
[সম্পাদনা]কার্বিদের মূলত আসামের কার্বি আংলং জেলায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেখা যায়। কার্বি আংলং জেলা বাদেও আসামের কামরূপ (ম), মরিগাঁও, নগাঁও, শোণিতপুর, গোলাঘাট, ডিমা হাচাও, কাছাড়, করিমগঞ্জ ইত্যাদি জেলায় এদের বসতি দেখা যায়। আসাম বাদেও অরুণাচল, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে কার্বিদের বসতি আছে। ভারতবর্ষ বাদেও বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে কার্বি মানুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ভৌগোলিকভাবে প্রায় ৯১ পূর্ব থেকে ৯৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২৪ উত্তর থেকে ২৭ উত্তর অক্ষাংশর মধ্যে বিস্তারিত দেখা যায়।
খাদ্যাভ্যাস
[সম্পাদনা]কার্বি লোকদের প্রধান আহার হচ্ছে ভাত। মুরগি, পাখি, গরু, ছাগল ইত্যাদির মাংস কার্বি লোকদের প্রিয় খাদ্য। এড়ীপলুর লেটা, শুকান মাছ এবং শুকতি ইত্যাদিও খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে। পূজা-পার্বন ইত্যাদিতে হর(মদ) নিতান্তই প্রয়োজনীয় এবং সম্মনীয়।
ধর্ম
[সম্পাদনা]কার্বিরা সাধারণত ধর্মভীরু। এদের মধ্যে আদিম (animism), হিন্দু এবং খ্রিস্টান দুইধরনের ধর্মের মানুষ আছে। হিন্দুরা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসক। তাঁরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী বলেই মৃত ব্যক্তি, যেমন: দাদুর নামে নাতির নাম ইত্যাদি রাখে এবং সেই মৃত ব্যক্তির পুনরায় জন্ম নেওয়া বলে ভাবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ http://www.censusindia.gov.in/Census_Data_2001/Census_Data_Online/Language/Statement1.aspx
- ↑ আসাম অভিধান (২০০১)। কার্বি জনগোষ্ঠী। গুয়াহাটি: বনলতা। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)