কারওয়ানে মদীনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কারওয়ানে মদীনা
বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ
লেখকআবুল হাসান আলী নদভী
মূল শিরোনামআরবি: الطريق الى المدينة, প্রতিবর্ণীকৃত: আত তরীক ইলাল মদীনা; উর্দু: کاروان مدینہ‎, প্রতিবর্ণী. কারওয়ানে মদীনা
অনুবাদক
  • শাহ আবদুল হালিম হুসাইনী (বাংলা)
  • জুবাইর আহমদ আশরাফ (মদিনার স্মৃতি)
দেশভারত
ভাষাআরবি (মূল)
মুক্তির সংখ্যা
১ খণ্ড
বিষয়সীরাত[১]
প্রকাশিত১৯৬৫ (আরবি)
প্রকাশকআল মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ, মদিনা (আরবি), মুহাম্মদ ব্রাদার্স (বাংলা)
মিডিয়া ধরন
পৃষ্ঠাসংখ্যা
  • ১৩১ (আরবি)
  • ১৮৮ (বাংলা)
আইএসবিএন৯৭৮-৯৮৪-৯০১৭৮-৭-৫ (বাংলা সংস্করণ)
ওসিএলসি১২৪২১৭৮০
২৯৭.৬৩ বি
এলসি শ্রেণীবিপি ৭৫ এন৩৩ ১৯৮২
ওয়েবসাইটabulhasanalinadwi.org
উর্দু সংস্করণ

কারওয়ানে মদীনা (আরবি: الطريق الى المدينة, প্রতিবর্ণীকৃত: আত তরীক ইলাল মদীনা ; মদীনার স্মৃতি/মদীনার কাফেলা নামেও পরিচিত) ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর আরবি ভাষায় রচিত একটি বই, যা মূলত সীরাত বিষয়ক কয়েকটি প্রবন্ধের সমষ্টি। ১৯৬৫ সালে মদিনা থেকে এটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে আরব বিশ্বসহ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত হয়েছে। এই গ্রন্থে লেখক আবেগ ও দরদ নিয়ে ইসলামের নবীর শিক্ষা, পয়গাম, উপহার, ইহসান এবং তার বিশ্বজনীন ফলাফলের উপর আলােকপাত করেছেন।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

গ্রন্থটি লেখকের বিভিন্ন ভাষণ-বক্তৃতা ও সীরাত সংক্রান্ত আলােচনার সংকলন। এসব বক্তৃতা ও বিষয়বস্তুর বেশিরভাগ প্রথমে আরবিতে লেখা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বয়ং লেখক অথবা তার কোন সুহৃদ বন্ধু উর্দুতে এগুলাে ভাষান্তর করেছেন। তাছাড়া এগুলাে বিভিন্ন জননন্দিত পুস্তিকা ও পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। কয়েক বছর যাবৎ লেখকের মনে খটকা ছিল এবং তােলপাড় হচ্ছিল যে, আরব বিশ্বের শিক্ষিত শ্রেণীর অনেকেরই বিশেষত যারা আরব জাতীয়তাবাদে প্রভাবিত ছিল, তাদের সম্পর্ক ঐ পবিত্র সত্ত্বার সাথে, যিনি তাদের সকল প্রকার সৌভাগ্যের উৎস ও প্রাণকেন্দ্র। যার উসিলায় তারা দীন দুনিয়ার কল্যাণ, দৌলত ও সম্মান লাভ করেছে। আজ তা বড়ই দুর্বল-জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং বেশিরভাগ ব্যবস্থাপনাও আইনি হয়ে গেছে। যেখানে এশকের আবেগ-উচ্ছ্বাস এবং জীবনের তৎপরতা নেই।[২][৩] এ অবস্থা পরিদৃষ্টে তিনি লিখেন,

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৬৪ সালে হজ্জ ও জিয়ারতের সময় লেখক বইটির পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে মদিনার আল মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহর স্বত্বাধিকারী মুহাম্মাদ আন নামনানীকে সােপর্দ করেন এবং এর আরবি নাম রাখেন ‘আত তরীক ইলাল মদীনা ’। ১৯৬৫ সালে এর উর্দু অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যার কিছুটা অনুবাদ লেখক নিজেই করেছেন এবং এর উর্দু নাম রাখেন ‘কারওয়ানে মদীনা ’। মুহাম্মদ ইউসুফ কিদওয়ী কর্তৃক ১৯৮২ সালে ‘Pathway to Medina’ নামে এর ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন হয়। বইটির একাধিক বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৮ সালে মুহাম্মদ ব্রাদার্স প্রকাশিত শাহ আবদুল হালিম হুসাইনী ও ২০১১ সালে প্রকাশিত মাকতাবাতুল আখতারের জুবাইর আহমদ আশরাফের অনুবাদ উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় অনূদিত সংস্করণটির নাম ‘মদিনার স্মৃতি’।[৪]

গঠন[সম্পাদনা]

গ্রন্থের শুরুতে আলী আল তানতাভি ও লেখকের দুটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা রয়েছে। তারপর যেসব শিরোনামে লেখক প্রবন্ধগুচ্ছ সংকলন করেছেন:[৪]

  • যে কিতাবের দান যায় না ভােলা
  • নতুন পৃথিবী
  • জীবনের প্রতিচ্ছবি
  • হেরাগুহার আলােকরশ্মিতে
  • নবুওয়াতের স্বার্থকতা নবুওয়াতের দান
  • নবীজীর দরবারে উম্মতের প্রতিনিধি দল
  • বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর নামে সীরাতে মুহাম্মাদীর বার্তা
  • সমকালীন মুসলমানদের নামে সীরাতের পয়গাম
  • রহমতে আলমের দুয়ারে আল্লামা ইকবাল
  • নৈকট্য ও আনন্দ
  • মদীনার স্মৃতি
  • ফারসি কবিদের শ্রদ্ধা উপহার
  • উর্দু কবিদের শ্রদ্ধা নিবেদন

মন্তব্য[সম্পাদনা]

সিরিয়ার বিচারক, ফকিহবাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত আরবি সাহিত্যিক আলী আল তানতাভি গ্রন্থটি সম্পর্কে লিখেছেন,

আমাদের সিরিয়ার জনগণের মাঝে শিরােনাম দেখেই আসল ব্যক্তি বা বিষয় চিনে নেওয়ার একটি রীতি আছে। নদভীর কিতাবের নাম “আত তরীক ইলাল মদীনা”। তা খােলার পূর্বেই আমার ভেতরে জীবনের এক তরঙ্গ সৃষ্টি করে দেয়। আমার কাছে মনে হয়, এই শিরােনাম আমাকে স্বীয় জীবনের দীর্ঘ সফরে তেত্রিশ বছর পিছনে নিয়ে গেছে। পূর্ণ দুই-তৃতীয়াংশ শতক পিছনে। আমি দেখতে পেলাম, আমি হেজাজের মরুভূমিতে অবস্থান করছি। আমি এবং আমার বন্ধুরা সেখানে পঞ্চাশ দিন কাটিয়েছি। এই প্রস্তরাকীর্ণ মরুপ্রান্তরে। উপরে ক্ষিপ্র সূর্য। নিচে উত্তপ্ত টগবগে বালি। এক টিলা দিয়ে আমরা অতিক্রম করছিলাম। সহসা এক বালুকাময় প্রান্তরে হারিয়ে গেলাম। পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে। পথ হারানাের ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। আমাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা একই আশা-আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। আর তা হল, আমরা যেন মদীনা শরীফ যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ করি।........কী আশ্চর্য! আজ আমার মধ্যে এ ধরনের আগ্রহ নেই আর না আমার মধ্যে এ ধরনের আনন্দানুভূতি আছে? কত বিস্ময়!........কিন্তু আমার প্রিয় ভাই আবুল হাসান! আমি যখন তার বই “আত তরীক ইলাল মদীনা” পড়লাম, তখন অনুভব করলাম, সেই আবেগ-অনুভূতি পুনরায় আমার মধ্যে উজ্জীবিত হচ্ছে। আমার বক্ষে আবার সেই উত্তাপ ও অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে পুনরায় আস্থা জন্মে যে, আমার অন্তরাত্মা সেই নতুন এশক ও প্রেমের রত্নশূন্য হয়নি। কিন্তু যুগ-সময়ের নানা চিন্তা পেরেশানী সেই রত্নকে ধূলিমলিন করে দিয়েছিল। মুহতারাম আবুল হাসান আলীর গ্রন্থখানি সেই ধূলিবালি সম্পূর্ণ সাফ করে দিয়েছে। সাহিত্যের প্রতিও আমার আকর্ষণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। কেননা দীর্ঘকাল ধরে কবি-সাহিত্যিকদের সেই আসমানী সুর-তরঙ্গ দৃষ্টিগােচর হয়নি, যার মূর্চ্ছনায় শরীফ রাজীর সময় থেকে নিয়ে আব্দুর রহীম বারঈ পর্যন্ত কবিগণ আবৃত্তি করতেন। যখন আমি মাওলানার গ্রন্থখানি পাঠ করলাম, তখন আমি সেই হারানাে সুর-তরঙ্গ পুনঃ ফিরে পেলাম। এই সুর তরঙ্গ তার সেই গদ্যে আমি পেলাম, যা সত্যিই কবিত্ব। কিন্তু ছন্দতাল মুক্ত। আমার ভ্রাতৃপ্রতিম আবুল হাসান! আপনার শত সহস্র শােকরিয়া! আপনি পুনর্বার আমার ভেতর ব্যক্তিসত্ত্বা ও নিজের সাহিত্যের উপর আস্থার জন্ম দিয়েছেন। — ভূমিকা, কারওয়ানে মদীনা

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. মুহাম্মদ সালমান, মাওলানা (মে ২০০২)। আবুল হাসান আলী নদভীর জীবন ও কর্ম (পিডিএফ)। ঢাকা: আল ইরফান পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৩৪২। 
  2. আল মালিকি, হায়দার আব্দুল সাহিব খাদেম (২০১৬)। আবুল হাসান আলী নদভী : মানহাজুহু ওয়াকুতুবুহু আল-আদাবিয়্যাহ (আরবি ভাষায়)। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ। ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র: ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর মারাঠওয়াদা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৪২–২৫৫। 
  3. আহমদ, পীর মকসুদ (১৯৯২)। "আরবি ভাষা ও সাহিত্যে মাওলানা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভীর অবদান"কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় (আরবি ভাষায়): ২৮৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২১ 
  4. নদভী, আবুল হাসান আলী (১৯৬৫)। কারওয়ানে মদীনা (পিডিএফ) (আরবি ভাষায়)। হুসাইনী, শাহ আব্দুল হালিম কর্তৃক অনূদিত। মদিনা; ঢাকা: আল মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ; মুহাম্মদ ব্রাদার্স। আইএসবিএন 978-984-90178-7-5এএসআইএন B08NXFFL19ওসিএলসি 12421780 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]