কাজী দীন মুহাম্মদ (সাহিত্যিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ডক্টর কাজী দীন মুহাম্মদ বাংলাদেশের একজন বরেণ্য ভাষাতত্ত্ববিদ ও সাহিত্যিক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[১]

কাজী দীন মুহাম্মদ
জন্মফেব্রুয়ারি ১, ১৯২৭ ইং
রূপগঞ্জ , নারায়ণগঞ্জ
মৃত্যুঅক্টোবর ২৮, ২০১১ ইং
পেশাঅধ্যাপনা ও সাহিত্যচর্চা
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনা
  • বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (৪খণ্ড)
  • সেকালের সাহিত্য
  • সুফিবাদের গোড়ার কথা
  • ছোটদের হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার

জন্ম[সম্পাদনা]

ডক্টর কাজী দীন মুহাম্মদ ১৯২৭ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কাজী আলীম উদ্দীন এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ কাওসার বেগম।[২][১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

কাজী দীন মুহাম্মদ ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ) পড়াশোনা করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এম এ পাশ করেন। পরবর্তীতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

কাজী দীন মুহম্মদ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভের পর ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন ডক্টর কাজী দীন মুহাম্মদ। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০- এ তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চার বছর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আর্ট ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষণা পরিষদের সদস্য হিসাবে ডক্টর কাজী দীন মুহাম্মদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি বাংলা একাডেমীর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ডের পাঠ্যক্রম কমিটির সদস্য ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও তৎকালীন দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লার সদস্য ছিলেন।[১]

সাহিত্যচর্চা[সম্পাদনা]

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

  • বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (৪খণ্ড)
  • সাহিত্য সম্ভার
  • সাহিত্য শিল্প
  • মানবমর্যাদা (১৯৬০)
  • লোকসাহিত্যে ধাঁধা ও প্রবাদ (১৯৬৮)
  • সুফিবাদ ও আমাদের সমাজ (১৯৬৯)
  • সেকালের সাহিত্য (১৯৬৯)
  • একালের সাহিত্য (১৯৬৯)
  • ভাষাতত্ত্ব (১৯৭১)
  • সংস্কৃতি ও আদর্শ (১৯৭৩)
  • মানবজীবন (১৯৮০)
  • জীবন সৌন্দর্য (১৯৮১)
  • সুফিবাদের গোড়ার কথা (১৯৮১)
  • প্রতিবর্ণায়ন নির্দেশিকা (১৯৮২)
  • দি ভার্বাল স্ট্রাকচার ইন কলোকুয়াল বেঙ্গলি
  • সুখের লাগিয়া (১৯৮৯)
  • শিক্ষা (১৯৮৯)
  • ইসলামি সংস্কৃতি (১৯৮৯)
  • বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব (১৯৯০)
  • বিচিত্র প্রবন্ধ (১৯৯১)
  • জুমুয়ার ঘরে (১৯৯১)
  • নাস্তিকতা ও আস্তিকতা (১৯৯৩)
  • আমি তো দিয়েছি তোমাকে কাউসার (১৯৯৩)
  • মহানবীর বাণী শতক (১৯৯৮)
  • বিধান তো আল্লাহরই (১৯৯৯)
  • ছোটদের হযরত মুহাম্মদ সাঃ (১৯৯৯) ইত্যাদি।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

ড. কাজী দীন মুহম্মদ ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে -

১. বাংলাদেশ দায়েমী কমপ্লেক্স পুরস্কার (১৯৮৯)

২. বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৯০)

৩. Distinguished leadership award, American biographical institute published in 7th edition of biographical encyclopedia.

৪. Pandit iswar chandra vidyasagr gold plaque (২০০২), the Asiatic society, Calcutta, India.

৫. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্প স্বর্ণপদক (২০০৩)

৬. কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪)

৭. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম ব্যাচের পক্ষ থেকে গুণীজন সম্মাননা ইত্যাদি।[১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই বরেণ্য পণ্ডিত ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।[১][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সায়েম, আবু সালেহ মোহাম্মদ। "ভাষাপন্ডিত ড. কাজী দীন মুহাম্মদ"DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪ 
  2. "ড. কাজী দীন মুহম্মদ : বিশ্বাসী কীর্তিমান মনীষী - মাসিক আলকাউসার"www.alkawsar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪ 
  3. Unb, Dhaka (২০১১-১০-৩০)। "Prof Deen Mohammad passes away"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৫