কাচের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রোমদেশীয়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]  খাঁচা পেয়ালা (কেজ কাপ) ৪র্থ খ্রিস্টাব্দ

ইতিহাসে প্রথম কাচ তৈরির উল্লেখ পাওয়া যায় ৩৬০০ খ্রিস্টপূর্বে মেসোপটেমিয়ায়, তবে ভিন্নমতে কেউ কেউ দাবি করেন যে তারা মিশরের কাচের জিনিসপত্রের অনুলিপি তৈরি করেছিল মাত্র[১] । অন্যান্য প্রত্নতাত্বিক প্রমাণ অনুসারে প্রথম কাচ উৎপাদন হয় সম্ভবত উত্তর সিরিয়ার উপকূলে, মেসোপটেমিয়া অথবা মিশরে[২]। কাচের তৈরী প্রাচীনতম পরিচিত বস্তুর মধ্যে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ শতকের পুতির সন্ধান পাওয়া গেছে যা সম্ভবত ধাতব মল (বা স্লাগ) অথবা ফাইয়েন্স (একধরনের প্রাক-কাচ উপাদান) উৎপাদনের সময় দুর্ঘটনাজনিত উপপণ্য হিসাবে পাওয়া যায়[n ১] । প্রথম প্রথম কাচের তৈরী পণ্য ছিল বিলাসবহুল,যতক্ষণ না ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকের বিপর্যয় কাচ উৎপাদনে বিপুল ঘাটতির উদ্রেক করে।

ভারতে কাচ প্রযুক্তির বিকাশ সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১৭৩০ সালে শুরু হয়েছিল[৩]। প্রাচীন চিনে সিরামিক এবং ধাতুর তুলনায় কাচ প্রস্তুতি অনেক দেরিতে শুরু হয়।

প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের প্রত্নস্থল থেকে পুরাতাত্বিকেরা কাচের এমন অনেক বস্তুর খোঁজ পেয়েছেন যা গৃহকার্যে, বিভিন্ন শিল্পকর্মে  ব্যবহার হত। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন স্থানে পূরাতাত্বিক উৎখনন-এর সময়, প্রাচীন জনবসতি অঞ্চল এবং পুরাতন কবরস্থান থেকে এংলো-স্যাক্সন কাচের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বিশেষ ধরনের এংলো-স্যাক্সন কাচ, কাচের পাত্র তৈরী, পুতি তৈরী এবং জানলার কাচ থেকে শুরু করে বিবিধ ক্ষেত্রে, এমনকি অলংকার প্রস্তুতিতেও ব্যবহার হত।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রিসের

 হেলেনিস্টিক যুগের কাচের অ্যাম্ফোরা]]

প্রকৃতিজাত কাচ বিশেষত আগ্নেয়গিরিজাত কাচের সমগোত্রীয় অবসিডিয়ান পাথরের ব্যবহার প্রস্তর যুগ থেকেই সমগ্র বিশ্বে ধারালো অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং সীমিত উৎসের কারণে এগুলির ব্যাপক আদানপ্রদান হত। প্রত্নতাত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী মানুষের তৈরী কৃত্রিম কাচের উৎপত্তি সম্ভবত উত্তর সিরিয়া উপকূল, মেসোপটেমিয়া অথবা মিশরে[২]। মিশরের অনুকূল আবহাওয়ার কারণে যে পুরাতন কাচের নমুনা সেখান থেকে পাওয়া গেছে তা অবিকৃত, সংরক্ষিত এবং সুপরিক্ষিত, যদিও অনুমান করা হয় যে সেই নমুনাগুলো সম্ভবত অন্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব মধ্য তৃতীয় সহস্রাব্দের কিছু কাচের পুতির নমুনা পাওয়া গেছে যা এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম কাচের তৈরী বস্তু, যা সম্ভবত ধাতব প্রক্রিয়াকরন অথবা ফাইয়েন্স (একধরনের চকচকে প্রাক-কাচ উপাদান) উৎপাদনের সময় কাকতালীয়ভাবে প্রস্তুত হয় [n ১]

ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে মিশর এবং পশ্চিম এশিয়াতে ব্যাপকভাবে কাচশিল্পের বিকাশ হয়[৪]। প্রত্নতাত্বিক অনুসন্ধানে এই সময়কার নিদর্শন হিসাবে পাওয়া গেছে রঙিন কাচের বাট, কাচের পাত্র (রঙিন মূল্যবান পাথরখোদিত), এবং পুতির মালা। সিরিয়া এবং মিশরে কাচের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হত সোডাভস্ম(সোডিয়াম কার্বনেট), যা বহু আঞ্চলিক উদ্ভিদের ছাই থেকে পাওয়া যেত। বিশেষতঃ সমুদ্র তীরবর্তী হ্যালোফাইল জাতীয় উদ্ভিজ্জ স্লটওয়ার্ট ছিল এর সহজলভ্য উৎস।

আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের পূর্বে কাচ শিল্প যে পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল ছিল তা প্রায় পাথর খোদাই করার পদ্ধতির অনুরূপ। উত্তপ্ত তরল কাচের পরিবর্তে অবিকৃত কঠিন অবস্থায় থাকা কাচের উপর নকশা ও আকৃতি খোদিত করা হত[৫]

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানবজাতি সুদৃশ্য কাচের পাত্র তৈরির জন্য "কোর ফরমেশন" পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং প্রয়োগ শুরু করে, এই পদ্ধতি অনুসারে প্রথমে বালি ও কাঁদার জলমিশ্রিত মণ্ডকে একটি ধাতব রডের উপর প্রলেপন করে তাকে মনমতো আকার দিয়ে পাত্রের মূল কাঠামো (যাকে বলা হয় কোর) প্রস্তুত করা হয়। বালি ও কাঁদার মিশ্রণটিকে শুকিয়ে নেওয়ার পর ছেনি জাতীয় যন্ত্রের সাহায্যে মূল কাঠামোটিকে ঘষে তাকে সুদৃঢ় ও খুঁতবিহীন করা হয়। এই মূল কাঠামোটিকে আগুনের তাপে উত্তপ্ত করা হয় বালি ও কাঁদার মধ্যে মিশ্রিত জৈববস্তুর বাষ্পীভবনের জন্য। তারপর উত্তপ্ত মূল কাঠামো বা "কোর"-কে ধীরে ধীরে গলিত তরল কাচের মধ্যে ডুবিয়ে কেন্দ্রবর্তী ধাতব রডের সাহায্যে নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরিয়ে মূল কাঠামোর উপরে গলিত কাচের প্রলেপন করা হয়। কখনো বিকল্পভাবে গলিত কাচ ব্যবহার না করে উত্তপ্ত কোরের চতুর্দিকে কাচের গুড়ো প্রলেপন করে তাকে উত্তপ্ত করা হয় এবং কাচের গুড়ো তরল হয়ে যাওয়ার পর পুনর্বার উত্তপ্ত করে কাচের গুড়োর প্রলেপ লাগানো হয় ও উত্তপ্ত করা হয়। বারবার এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে মূল কাঠামোর উপর গলিত কাচের স্তর তৈরী করা হয় যার আকৃতি ভিতরের মূল কাঠামোর প্রায় অনুরূপ।

গলিত কাচের স্তর গঠনের পর সম্পূর্ণ কাঠামোটিকে কোনো সমতল পাথরের চাই বা তদনুরূপ সমান পৃষ্ঠতলের উপর আবর্তিত করে গলন্ত কাচের উপরিতল কে নিখুঁত মসৃন আকার দেওয়া হয। এর পরবর্তী পদক্ষেপে অক্সাইড এর সংমিশ্রনে তৈরী এক বিশেষ প্রকার রঙিন গলিত কাচের মিশ্রণ এবং একটি সুচালো বস্তুর সাহায্যে সম্পূর্ণ আকৃতির চারদিকে সর্পিলাকার সুতোর ন্যায় রঙিন তরল কাচের নকশা করা হয় ও পুনরায় সম্পূর্ণ কাঠামোটি উত্তপ্ত করার পর ছুঁচালো যন্ত্রের সাহায্যে রঙিন গলিত কাচের নকশার উপর বিভিন্ন অলংকরণ করা হয়। পুনরায় সম্পূর্ণ আকৃতিকে সমতল পৃষ্ঠের উপর আবর্তিত করা হয় যাতে রঙিন কাচের অলংকরণ পাত্রের উপর মসৃণভাবে বসে যায় এবং সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। পুনরায় কাঠোমোটিকে উত্তপ্ত করে সন্নার সাহায্যে পাত্রের উপরিতল সামান্য চিপে পাত্রের মুখ গঠন করা হয়। পাত্রের তলের উপর নির্দিষ্ট স্থানে সামান্য গলিত কাচের প্রলেপ লাগিয়ে সন্নার সাহায্যে তাকে হাতলের আকৃতি দেওয়া হয়। কেন্দ্রের রডটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হওয়ার পর তাকে কাঠামো থেকে ধীরে ধীরে সাবধানে বের করে আনা হয় যাতে মূল আকৃতির কোনোপ্রকার বিকৃতি না ঘটে। এরপর মূল কাঠামোর ভেতরের বালি ও কাঁদার মিশ্রণকে সাবধানে ছেঁচে আকৃতির ভেতর থেকে সম্পূর্ণভাবে বের করা হয়। পাত্রের মধ্যভাগ থেকে সম্পূর্ণরূপে বালি-কাঁদার মিশ্রণ বের করে নেওয়ার পর একটি সুগঠিত সুদৃশ্য কাচের পাত্র প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়।

আধুনিক যুগেও কোর ফরমেশন পদ্ধতির সাহায্যে কাচের পাত্র এবং পুতি তৈরী হয় কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে অনেক আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।

[[টার্নিউ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

জেলা জাদুঘরে স্থিত আঠারো শতকের গোড়ার দিকের একটি কাচের পেয়ালা.[৬]]] খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতক অবধি পশ্চিম এশিয়া, ক্রিট এবং ইজিপ্টে কাচ শিল্পের ব্যাপক প্রসার হয়। মাইসেনিয়ান গ্রীক শব্দ কু-ওয়া-ন-ওয়া-কো-আই, -এর অর্থ "লাপিস লাজুলি এবং কাচের শ্রমিক" (লিনিয়ার বি সিলেবিক লিপিতে লিখিত)। [৭][৮][৯][n ২][n ৩]

ধারণা করা হয় যে  কাচ তৈরির কাচামাল এবং কাচ প্রস্তুতকরণের প্রণালী প্রস্তুতকারী দেশ ও শিল্পীদের মধ্যে অত্যন্ত গোপনে রাখা হত। অন্যান্য অঞ্চলের কাচশিল্পীরা তাই নির্ভর করতেন আমদানিকৃত কাচের উপর। ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকের বিপর্যয় কাচ উৎপাদনে ঘাটতির উদ্রেক করে। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে বর্ণহীন কাচ প্রস্তুত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন হয় এবং পুনরায় কাচশিল্পের উত্থান হয় তার পূর্ববর্তী উৎপাদন স্থল, সিরিয়া এবং সাইপ্রাস-এ।

কাচ প্রস্তুতকরণের সর্বপ্রাচীন যে নথি পাওয়া গেছে তা খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০ -এর সময়কালীন। এই নথি কিউনিফর্ম লিপিতে একটি মাটির ট্যাবলেটের উপর খোদিত। এই ট্যাবলেট আসিরিয়ান রাজা আশুরবানিপালের গ্রন্থাগার থেকে পাওয়া যায়। মিশরে কাচ শিল্পের পুনরুত্থান এবং পুনপ্রসার  শুরু হয় পিটলেমিক-আলেকজান্দ্রিয়াতে। হেলেনিস্টিক যুগে কাচ তৈরির আরো নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। টেবিল টপ ইত্যাদি বৃহৎ আকৃতির পণ্য প্রস্তুতিতে কাচের ব্যবহার শুরু হয়। এই সময়ে কাচশিল্পের বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়। পঙ্কিল গলিত (সপূর্ণ তরলীকৃত নয়) কাচ কোনো বিশেষ আকৃতির ছাঁচের উপর ডেলা পাকিয়ে কাচের প্লেট ইত্যাদি বস্তু তৈরী হতো। 'মিল্লেফিওরি' (যার অর্থ 'হাজার পুষ্প') সেই সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য  কৌশল যেখানে বিভিন্ন রঙের কাচ টুকরো করে কেটে সেই টুকরোগুলির সাহায্যে 'মোজাইক' জাতীয় প্রভাব তৈরী করা হত। এই সময়কালেই বর্ণযুক্ত ও বর্ণহীন কাচ মূল্যবান হতে শুরু করে এবং কাচে এই রঙের প্রভাব ফুটিয়ে তোলার কৌশলের উপর আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা শুরু হয়[১২]

প্লিনি দ্য এল্ডারের মতে, ফিনিসীয় ব্যবসায়ীরা বেলুস নদীর স্থানে প্রথম কাচ প্রস্তুতকারী কৌশলের সন্ধান পায়। জর্জিয়াস অ্যাগ্রোগোলা তার "ডি রে মেটালিকায়" এমনই এক প্রথাগত আবিষ্কার কাহিনীর বর্ণনা করেছেন। সেই কিংবদন্তি অনুসারে নাইট্রিয়াম বহনকারী এক বাণিজ্যপোত একদিন স্থলদেশে পৌঁছে বিশ্রামের জন্য এক উপযুক্ত স্থানে নোঙ্গর ফেলেন। জাহাজের বণিক ও ব্যবসায়ীরা সমুদ্রতীরে নিজেদের আহার প্রস্তুত করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু রন্ধনের সময়  খাবার বানানোর পাত্রকে স্থিরভাবে আগুনের উপর বসানোর জন্য তারা কোনো উপযুক্ত পাথরের সন্ধান না পেয়ে সেই কাজের জন্য জাহাজে বহনকারী নাইট্রিয়ামের ডেলা ব্যবহার করেন। এই নাইট্রিয়াম সমুদ্রতীরের বালির সাথে বিক্রিয়া করে এক স্বচ্ছ তরল জাতীয় পদার্থের জন্ম দেয় এবং এভাবেই কাচের আবিষ্কার হয়[১৩]। এই নথিভুক্ত লেখনী প্রধানত কাচ উৎপাদনে রোমানদের অভিজ্ঞতা এবং কৌশলের প্রতিফলন। রোমান সাম্রাজ্যভুক্ত অঞ্চলে সহজলভ্য সাদা সিলিকা তার বিশুদ্ধতার জন্য কাচ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার হত। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সিরো-জুডিয়ান উপকূলে "গ্লাস-ব্লোয়িং" -এর কৌশল আবিষ্কার হয় যা কাচশিল্পে বিপ্লব আনে। সম্পূর্ণ রোমান সাম্রাজ্যে কাচের তৈরী বস্তু ও পণ্যের ব্যবহার  বহুল বৃদ্ধি পায়। মৃতপাত্রের তুলনায় কাচের পাত্রের মূল্য অনেক কম এবং সস্তা হয়ে পরে। রোমান সাম্রাজ্যে কাচের এই বহুল ব্যবহারের জন্য কাচ একপ্রকার 'রোমান প্লাষ্টিক' -এ পরিণত হয়। আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রস্তুত কাচপাত্র সারা রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পরে। ১০০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ার সার্কায় গ্লাস-ব্লোয়িং কৌশলের সাহায্যে এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডের প্রবর্তনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার কাচ, যাকে 'ক্লিয়ার গ্লাস' বলে সম্বোধন করা হত , তার উদ্ভাবন হয়। অতঃপর রোমানরা তাদের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যেও কাচের ব্যবহার শুরু করে। দুর্বল অপটিক্যাল গুণাবলীর "কাস্ট গ্লাস" এর তৈরী সুদৃশ্য জানালা তৎকালীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং হারকিউলেনিয়াম ও পম্পেইয়ের বিলাসবহুল প্রাসাদের শোভা বর্ধন করত। পরবর্তী এক হাজার বছর ধরে কাচ তৈরী এবং কাচ শিল্পের প্রচার অব্যাহত থাকে এবং সম্পূর্ণ দক্ষিণ ইউরোপ এবং তার দূরবর্তী বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে।

বিবিধ সংস্কৃতিতে কাচ[সম্পাদনা]

ইরান[সম্পাদনা]

পারস্যে সর্বপ্রথম কাচের তৈরী বস্তু হিসাবে ব্রোঞ্জ যুগের অন্তিমকালীন (১৬০০ খ্রিস্টপূর্ব) পুতির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্বিক চার্লস বার্নি আজেরবাইজান-ইরানিয়ার দিনখাহ টেপে প্রত্নস্থলে খননকার্যের সময় এই পুতির সন্ধান পান। ফরাসি প্রত্নতাত্বিকরা ইরানের "চোঘা জানবিল" নামক এলামাইট যুগের প্রত্নস্থল থেকে "গ্লাস টিউব" বা সরু কাচনলের সন্ধান পান।

উত্তর ইরানের টেপে হাসানলু এবং মারলিক টেপের প্রত্নস্থল থেকে মোসাইক কাচের পানপাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যা সম্ভবত লৌহযুগের। এই পানপত্রগুলি মেসোপটেমিয়ার কাচের পাত্রের অনুরূপ। সুসা অঞ্চলেও এলামাইট যুগের কাচের পানপাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। আজেরবাইজান এবং কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে অ্যাকিমেনিড যুগের সুর্মাযুক্ত কাচনলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এইসময়ে প্রস্তুত কাচপাত্র সাধারণত বর্ণহীন এবং চাকচিক্যবিহীন হত। সেলিউসিড এবং পার্থিয়ান যুগের শেষদিকে গ্রীক এবং রোমান কৌশলের প্রচলন হয়। সাসানিয়ান আমলে কাচের পাত্রগুলি ছিল স্থানীয় বিশেষ কারুকৃতি দ্বারা সুসজ্জিত করা হত[১৪]

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতবর্ষের হস্তিনাপুর অঞ্চলে চালিওলিথিক যুগের কাচের বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে[১৫] । সিন্ধুসভ্যতার সর্বাধিক পুরাতন কাচের নমুনা হিসাবে হরপ্পার প্রত্নস্থল থেকে বাদামি বর্ণের কাচের একটি মালার খোঁজ পাওয়া যায় যা খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ শতকের এবং সমস্ত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রাচীনতম কাচের নিদর্শন[৩][১৬]। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০-৩০০ শতকের সময়কালীন পুরাতত্ব স্থল থেকে যে কাচের নমুনার সন্ধান পাওয়া গেছে তা সমস্তই প্রায় একবর্ণের[৩]

শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বিনয় পিটকের মতো গ্রন্থে কাচের উল্লেখ রয়েছে, যা বোঝায় যে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের সময়কাল থেকেই ভারতবর্ষ কাচ নামক বস্তুটির সাথে পরিচিত ছিল[১৫]। বিড, সিরকাপ এবং সিরসুখেও কাচের বস্তু পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর সমকালীন[১৭]। কিন্তু কাচের ব্যাপক ব্যবহারের প্রথম অবিসংবাদিত প্রমাণ পাওয়া যায় তক্ষশীলার ধ্বংসাবশেষ(খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) থেকে, যেখানে কাচের চুরি, পুতির মালা, কাচের টাইল ইত্যাদি বহুল পরিমানে খুঁজে পাওয়া যায়[১৫]। মনে করা হয় কাচ তৈরির প্রক্রিয়া পশ্চিম এশিয়া থেকে এই অঞ্চলে প্রচলিত হয়[১৭]

উত্তর প্রদেশের কোপিয়া নামক স্থানে প্রথম স্থানীয় উদ্যোগে কাচ প্রস্তুতি শুরু হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যকালীন সময়ের কাচের নমুনা এখানে পাওয়া গেছে[১৮]। মনে করা হয় ভারতে শুরুর দিকে যে কাচ প্রস্তুতির কৌশল চালু ছিল তা একান্তই স্থানীয় কারণ ব্যাবিলনীয়, রোমান এবং চীনা কাচের রাসায়নিক গঠনের সঙ্গে এর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে[১৭]। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় অলঙ্কার ও আভূষণ প্রস্তুতির জন্য কাচের ব্যবহার শুরু হয়[১৫]। গ্রিক-রোমান বিশ্বের সাথে যোগাযোগের ফলে ভারতীয় কাচ শিল্পে আরও নতুন কৌশল যুক্ত হয় এবং সময়ের সাথে ভারতীয় কারিগররা কাচের ছাঁচনির্মাণ, সাজসজ্জা এবং রঙ করার বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করেন[১৫]। সাতবাহন রাজাদের সময়কালে মিশ্র যৌগিক কাচের তৈরী সবুজ ও হলুদ বর্ণের কাচের বস্তু তৈরী করা হত[১৯]

চীন[সম্পাদনা]

রাজা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ন্যানুর সমাধি থেকে পাওয়া খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর নীল কাচের ফলক

চিনে সিরামিক এবং ধাতুর কাজের তুলনায় শিল্প ও ভাস্কর্যে কাচের ভূমিকা ছিল পার্শবর্তী[২০] । চীনের প্রাচীনতম কাচের নমুনাগুলো ওয়ারিং সাম্রাজ্যের  সময়কালের (৪৭৫ খ্রিঃ পূঃ -২২১ খ্রিঃ পূঃ), এগুলি সংখ্যায় বিরল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষণের জন্য সীমাবদ্ধ।

মেসোপটেমিয়া, মিশর এবং ভারতের সংস্কৃতির তুলনায় চিনে কাচশিল্পের বিকাশ বিলম্বে ঘটে[২১] । চীনদেশে প্রথম কাচের আমদানি শুরু হয় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমদিকে এবং আমদানিকৃত পণ্যগুলি ছিল রং-বেরঙের চক্ষুর ন্যায় নকশা যুক্ত পুতির মালা[২২] ।এই আমদানিকৃত পুতির মালা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় শিল্পীরা চিনদেশীয় কাচের পুতির মালা তৈরী করে। হান রাজবংশের সময়(২০৬ খ্রিঃ পূঃ- ২২০ খ্রিস্টাব্দ), কাচের বৈচিত্র্যযুক্ত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এইসময়ে কাচ ঢালাইয়ের প্রবর্তনের ফলে ছাঁচের উপর ভিত্তি করে তৈরী কাচের বস্তু, যেমন বাই-ডিস্ক(একপ্রকার চৈনিক গোলাকৃতি চাকতি)এবং অন্যান্য ধার্মিক কাজে ব্যবহৃত শিল্পকর্ম তৈরির প্রক্রিয়ায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়[২১]। ওয়ারিং স্টেটস এবং হ্যান সময়কালের তৈরী চীনের স্থানীয় কাচের বস্তু এবং তৎকালীন আমদানিকৃত কাচের বস্তুর রাসায়নিক গঠনে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় অঞ্চলে প্রস্তুত কাচে উচ্চ মাত্রার বেরিয়াম অক্সাইড এবং সিসার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা পশ্চিম এশিয়া এবং মেসোপটেমিয়ার সোডা-চুন-সিলিকা থেকে প্রস্তুত কাচের থেকে পৃথক[২৩]। হান রাজবংশের শেষ দিকে(২২০ খ্রিঃ), সীসা-বেরিয়াম কাচের ব্যবহার হ্রাস পায় যা ৪র্থ এবং ৫ম শতাব্দীতে পুনরায় শুরু হয়[২৪] । তৎকালীন সাহিত্য সূত্রগুলিও খ্রিস্টীয় ৫ম শতকের সময় কাচ তৈরির কথা উল্লেখ করেছে[২৫]

রোম[সম্পাদনা]

রোমান[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] কাচ

রোমান কাচের উদ্ভাবন শুরু হয় হেলেনিস্টিক যুগ থেকে এবং এই সময়কালের শুরুর দিকে রঙিন ঢালাই কাচ বা 'কাস্ট গ্লাস' উৎপাদনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হত । রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ জুড়ে তৎকালীন বহু কাচের নমুনা পাওয়া গেছে[২৬] যা গৃহকার্যে, কবরস্থানে[২৭] এবং বিভিন্ন শিল্পে [২৮] ব্যবহার হত। প্রাথমিকভাবে কাচের ব্যবহার হত কাচের সুদৃশ্য পাত্র প্রস্তুতিতে এবং তার সাথে মোসাইক টালি ও জানলার কাচের নির্মাণও হত। ১ম খ্রিস্টাব্দে কাচশিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নতি হয় ও গ্লাস ব্লোয়িং প্রযুক্তির প্রচলনের সাথে বর্ণহীন বা 'একোয়া' কাচের ব্যবহার আধিপত্য স্থাপন করে। রোমান সাম্রাজ্যের পৃথক পৃথক ভৌগোলিকৰ স্হানে কাচের উৎপাদন শুরু হয়[২৯][৩০] এবং ১ম খ্রিস্টাব্দ শেষ হওয়ার আগেই আলেকজান্দ্রিয়া[৩১] ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাচ একটি সহজলভ্য দৈনিক ব্যবহার্য বস্তু হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

ইসলামিক বিশ্ব[সম্পাদনা]

প্রাক-ইসলামিক সংস্কৃতির, বিশেষ করে পারস্যের সাসানিয়ার কাচের সাফল্য অব্যাহত রেখে ইসলামিক দেশগুলি কাচশিল্পের বিকাশের পথে অগ্রসর হয়। আরব কবি আল বুহাতুরি (৮২০-৯৭৭) তৎকালীন কাচের স্বচ্ছতার বর্ণনা করে লিখেছেন, "এই কাচের রং কাচের আঁধারকে এমনভাবে আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিশিয়ে লুকিয়ে রাখে যে মনে হয় কোনো অবলম্বন ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে"[৩২]। অষ্টম শতাব্দীতে ফারসি-আরব রসায়নবিদ জবির ইবনে হাইয়েন তার "কিতাব আল-দুরআ আল-মাকুনুনা(গোপন মুক্তার নথি)" -তে বর্ণময় কাচ প্রস্তুতির ৪৬ রকম পদ্ধতির বর্ণনা করেছেন এবং এই বইয়ের পরবর্তী প্রকাশনগুলিতে অতিরিক্ত ১২ টি পদ্ধতি যোগ করেছিলেন[৩৩]। একাদশ শতাব্দীর মধ্যে ইসলামিক স্পেনে স্বচ্ছ ও পারদর্শী কাচের আয়না তৈরি শুরু হয়।

মধ্যযুগীয় ইউরোপ[সম্পাদনা]

ষোড়শ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] শতাব্দীর ঘষা কাচের জানলা

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে উত্তর ইউরোপে স্বতন্ত্র কাচ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভূত হয়েছিল, এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির কারিগরদের দ্বারা শৈল্পিক কাচের উদ্ভাবন হয়। বাইজেন্টাইন কাচ রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যকে পূর্বের দেশগুলিতে বিকশিত করেছিল। সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দীর কাচের বস্তুর নমুনা ভেনিসের নিকটবর্তী তুরস্কেলো দ্বীপে পাওয়া গেছে। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, উত্তর ইউরোপে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হয়েছিল যখন কাচ প্রস্তুতিতে সাদা নুড়ি এবং পোড়া গাছপালা থেকে উৎপাদিত সোডাভস্মের বদলে আরো সহজলভ্য কাঠের ছাই থেকে পাওয়া পটাশের ব্যবহার শুরু হয়। এই সময় থেকেই উত্তর ইউরোপের কাচের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের (যেখানে কাচ তৈরির প্রণালীতে সোডা ব্যবহার হত) কাচের বিশেষ পার্থক্য দেখা যায়[৩৪]

বারো শতক অবধি ঘষা কাচ (ধাতু ও অন্যান্য ঔষধি মিশ্রিত করে এই বিশেষ ধরনের কাচ প্রস্তুত করা হত), তেমন জনপ্রিয় ছিলনা, কিন্তু তার পরবর্তী সময়কালে রোমান শিল্প, বিশেষ করে গথিক শিল্পে এর জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। একাদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে একটি বিশেষ চোঙাকৃতি পাত্রের নলের মধ্যে ফু দিয়ে কাচের পাতলা পাত তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন হয়। ১৩ শতকের ভেনিসেও এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় অবধি 'ক্রাউন গ্লাস' -এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। মধ্যযুগের শেষের দিকে উত্তর ইউরোপের গৃহকার্যে ব্যবহৃত কাচের পাত্রগুলি 'ফরেস্ট গ্লাস ' নামে প্রচলিত ছিল।

অ্যাংলো-স্যাক্সন[সম্পাদনা]

ইংল্যান্ডে বিভিন্ন স্থানে পূরাতাত্বিক উৎখনন-এর সময়, প্রাচীন জনবসতি অঞ্চল এবং পুরাতন কবরস্থান থেকে এংলো-স্যাক্সন কাচের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বিশেষ ধরনের এংলো-স্যাক্সন কাচ, কাচের পাত্র তৈরী, পুতি তৈরী এবং জানলার কাচ থেকে শুরু করে বিবিধ ক্ষেত্রে, এমনকি অলংকার প্রস্তুতিতেও ব্যবহার হত[৩৫][৩৬][৩৭]। খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীতে ব্রিটেন থেকে রোম আলাদা হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কাচের ব্যবহারেও যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে[৩৮]। রোমানো-ব্রিটিশ প্রত্নস্থলগুলি খননের ফলে প্রচুর পরিমাণে কাচের নমুনা পাওয়া গেছে তবে এর বিপরীতে, ৫ম শতাব্দী এবং পরবর্তী সময়ে অ্যাংলো-স্যাকসন প্রত্নস্থলগুলি থেকে প্রাপ্ত নমুনার সংখ্যায় পূর্বের তুলনায় নিতান্তই কম[৩৮]। যেসকল পরিপূর্ণ কাচের পাত্র এবং কাচের পুতির মালার নমুনা খুঁজে পাওয়া গেছিলো তার সিংহভাগ এসেছে ৫ম শতকের পূর্ববর্তী প্রত্নস্থলগুলি থেকে, কিন্তু ৭ম শতাব্দীর শেষের দিকে কাচশিল্পের পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় যখন মৃতব্যক্তিকে কবর দেওয়ার অনুষ্ঠানে কাচের তৈরী বস্তু ব্যবহার হতে শুরু করে। ৭ম শতাব্দীতে খ্রিষ্টধর্মের উত্থানকালে বিভিন্ন চার্চ এবং ধর্মীয় আবাস্থলের নির্মাণকার্যে (বিশেষত জানলায়) কাচের ব্যবহার শুরু হয়[৩৮][৩৯]। কয়েকটি তৎকালীন এংলো স্যাক্সন ধর্মীয় নথিতে কাচ প্রস্তুতির প্রণালীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে[৩৮][৩৯][৪০][৪১]

মুরানো[সম্পাদনা]

কাচশিল্পে মুরানোর প্রতিপত্তি শুরু হয় যখন ভিনিশিয়ান প্রজাতন্ত্রের কারণে শহরবাসীদের আশঙ্কা হয় যে শহরের বেশিরভাগ কাঠের বিল্ডিং পুড়িয়ে ফেলা হতে পারে এবং সেই কারণে কাচ প্রস্তুতকারীরা ১২৯১ সালে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলি মুরানোতে স্থানান্তরিত করে। শীঘ্রই কাচশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা মুরানোর স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠে।

১৪ শতকে মূল্যবান ইতালীয় কাচ প্রস্তুতির কেন্দ্র ছিল মুরানোর দ্বীপ এবং কাচশিল্পের অনেক নতুন কৌশল এইস্থানে উদ্ভাবন হয়। কাচের তৈজসপত্র ও দর্পনের লাভজনক রপ্তানিতে  এই স্থান সুপরিচিত ছিল। সোডাভস্মের সাথে স্থানীয় কোয়ার্টজ নুড়ি, খাঁটি সিলিকা, সূক্ষ্ম পরিষ্কার বালির ব্যবহার ভেনিসিয়ান মুরানোর কাচকে অন্যান্য কাচের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট দিয়েছিলো এবং ভেনিসিওরা এই কাচের ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করে। উত্তম গুণমান সম্পন্ন কাচের প্রস্তুতি ভেনিসিয়দের বাড়তি বাণিজ্যিক সুবিধা দেয় । আধুনিক যুগেও মুরানোর কাচ প্রস্তুতির অনেক কৌশল ব্যবহৃত হয়।[৪২]

বোহেমিয়া[সম্পাদনা]

বোহেমিয়ার খোদাই করা রুবি গ্লাস (১৯শতক)

বোহেমিয়ান কাচ অথবা বোহেমিয়ান স্ফটিক একপ্রকার অলংকরণযুক্ত কাচ যা বোহেমিয়া ও সিলেসিয়া(যা বর্তমানে সাজেক প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত)অঞ্চলে প্রস্তুত হত[৪৩] । পুরাতাত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় যে ১২৫০ শতকের কাছাকাছি সময়ে উত্তর বোহেমিয়ার লুসাটিয়ান পর্বতশৃঙ্খল অঞ্চলে সেদেশের সবচেয়ে প্রাচীন কাচ প্রস্তুতির কারখানা ছিল। বোহেমিয়ার কাঁচ তৈরির সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য পুরাতাত্বিক স্থলগুলি হলো স্কালাইস (জার্মান: ল্যাঞ্জেনো), কামেনিকো (জার্মান: স্টেইনচেনাও) এবং নোভা বোর (জার্মান: হাইডা)। নোভা বোর এবং কামেনিকোর কাচের সংগ্রহশালায় ১৬০০ শতকের কাচের বস্তু সংগৃহিত আছে। ১৬৮৫-১৭৫০ শতক অবধি 'বারোক' প্রক্রিয়ায় কাচ প্রস্তুতিতে এই অঞ্চল প্রসিদ্ধ ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে মনিকার ক্যাসপার লেহম্যান, যিনি প্রাগের সম্রাট রুডল্ফের অধীনে কাজ করতেন, তিনি তামা ও ব্রোঞ্জের চাকার সাহায্যে রত্নখোদাই পদ্ধতির প্রচলন কাচশিল্পে অভিযোজিত করেন।

আধুনিক কাচ উৎপাদন[সম্পাদনা]

নতুন প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

জর্জ রাভেনসক্রফ্টের কাচের নমুনা

কাচ উৎপাদনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক কৌশল হল গলিত কাচে লেডঅক্সাইড যুক্ত করা; যা কাচের গুণমান উন্নত করে এবং এই নতুন উপায়ে প্রস্তুত কাচ চুল্লি জ্বালানী হিসাবে সমুদ্র-কয়লা ব্যবহার করে সহজেই গলানো সম্ভব। এই নতুন কৌশলের সাহায্যে কাঁচের কার্যকারিতার সময় আর নিপুনতা উভয়ই বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়া ১৬৭৪ সালে জর্জ রাভেনসক্রফ্ট প্রথম আবিষ্কার করেন যিনি প্রথম ব্যবসায়িক শিল্পক্ষেত্রে স্ফটিক কাচের প্রস্তুতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাঁচের বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটাতে প্রয়োজনীয় সাংস্কৃতিক এবং আর্থিক সংস্থান ছিল রাভেনস্ক্রফ্টের এবং তার প্রচেষ্টার ফলে  আঠারো ও উনিশ শতকে কাঁচ প্রস্তুতকারক দেশের তালিকায় ইংল্যান্ড ভেনিস কে পিছনে ফেলে দেয়। ভেনিসিয় স্ফটিকের বিকল্প সন্ধান করতে তিনি চকমকি পাথরকে সিলিকার উৎস হিসাবে ব্যবহার করেন তবে এই প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন কাচে মসৃণতার বদলে রুক্ষতা ও ফাটলের আভাস দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে কিছু পরিমান পটাস ফ্লাক্সের বদলে লেড অক্সাইড ব্যবহার করে এই খুঁত সহজেই কাটিয়ে ওঠা গেল[৪৪] । রাভেনসক্রফ্টকে কাঁচ প্রস্তুতির জন্য প্রতিরক্ষামূলক পেটেন্ট দেওয়া হয় এবং তার কাচ উৎপাদনের কারখানা সেভয় থেকে হেনলি-অন-টেমস -এ প্রতিস্থাপিত হয়[৪৫]। পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ছিল ১৯৬৯ সাল এবং তার মধ্যে তিনি ইংল্যান্ডে সাতাশটি কাঁচ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপিত করেছিলেন যেগুলি সাফল্যের সঙ্গে ফ্লিন্ট কাচ উৎপাদন এবং পুরো ইউরোপে রফতানি করে। তার প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এতটাই ছিল যে ১৭৪৬ সালে, ব্রিটিশ সরকার তাতে লাভজনক কর আরোপ করেছিল। নির্মাতারা এর কারণে কাচে দুর্লভ সিসার পরিমান না কমিয়ে এক উত্তম উপায় বের করলেন। তারা সুসজ্জিত কিন্তু অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র এবং আরো সূক্ষ নতুন ধরনের কাচ তৈরী শুরু করলেন যা আজকে আবগারি কাচ হিসাবে পরিচিত[৪৬] । ১৮৪৫ সালে কাঁচ প্রস্তুতকারক সংস্থার উপর লাগানো শিল্পকর নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়।

ইংল্যান্ডে ১৬২০ সালে কাচ শিল্পে 'ব্লন প্লেট' পদ্ধতি প্রয়োগে কাচের আয়না, কোচ প্লেট ইত্যাদি প্রস্তুতির কথা জানা যায়। লুই লুকাস ডি নেহৌ এবং এ. থেভার্ট ফ্রান্সে ১৬৮৮ সালে 'পালিশ প্লেট গ্লাস' পদ্ধতির উন্নয়ন করেন। এই আবিষ্কারের আগে, মিরর প্লেটগুলি, "শিট" কাচ থেকে তৈরি হত এবং তারা আকারে সীমিত ছিল। দে নেহৌ লোহার টেবিলের উপরে গলিত তরল কাচ ঢেলে দিয়ে খুব সহজেই প্রচুর পরিমানে গ্লাস প্লেটস উৎপাদন করতে সক্ষম হন[৪৭]। ১৭৭৩ সালে রাভেনহিডে বসবাসকারী ব্রিটিশরাও এই পদ্ধতির অনুসরণ করেন। ১৮০০ শতকের কাছাকাছি সময়ে পলিশিং পদ্ধতির শিল্পায়ন হয় ও তার সাথে কাচ শিল্পে স্টিম ইঞ্জিনের স্টিম প্রচলন হয় যা ঘষা কাচকে চূর্ণ করতে ও পালিশ করতে ব্যবহার করা হত।

শিল্প উৎপাদন[সম্পাদনা]

ক্রিস্টাল প্যালেস, নির্মাণের জন্য প্রধান উপাদান হিসাবে কাছ ব্যবহার করা প্রথম বিল্ডিংগুলির মধ্যে একটি।

স্থাপত্যশিল্পে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রথম কাচের ব্যবহার দেখা যায় ১৮৫১ সালে যখন স্থপতি জোসেফ প্যাক্সটন  'গ্রেট এক্সিবিশন' নামক প্রদর্শনীর জন্য সুদৃশ্য ক্রিস্টাল প্যালেসের নির্মাণ করেন। প্যাক্সটনের সুদৃশ্য, ভব্য নির্মাণ স্থাপত্যশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং স্থাপত্যশিল্পে কাচের ব্যবহারের জন্য অন্যান্য স্থপতিদের আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করে । ১৮৩২ সালে ব্রিটিশ ক্রাউন গ্লাস কোম্পানি (চান্স ব্রাদার্স) বিখ্যাত ফরাসি কাচশিল্পী জর্জেস বন্টেম্পসের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিট গ্লাস তৈরীতে সিলিন্ডার পদ্ধতির গ্রহণ ও ব্যবহার শুরু করে। এই পদ্ধতিতে শিট গ্লাস তৈরির জন্য প্রথমে কাচের দীর্ঘ চোঙের মধ্যে ফু দেওয়ার পর দৈর্ঘ্য বরাবর কেটে দেওয়া হত এবং উত্তপ্ত করার পূর্বে একটি ঢালাই টেবিলের উপর রেখে তাকে চ্যাপ্টা করা হত। এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত কাচকে 'শিট গ্লাস' বলা হত কারণ ঢালাই লোহার টেবিলের উপর কাচ রেখে একটি বেলনের সাহায্যে তাকে সমতল পাতের ন্যায় আকার দেওয়া হত। পাতটি নরম থাকাকালীন সেটি একটি তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত চুল্লির খোলা মুখে ঠেলে দেওয়া হত এবং তারপর সিস্টেমে যুক্ত কয়েকটি বেলনের সাহায্যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হত[৪৮]। জেমস হার্টলি ১৮৪৭ সালে রোলড প্লেট পদ্ধতি চালু করেছিলেন। তখনকার দিনে রেল স্টেশনের বিস্তৃত কাচের ছাদ তৈরী করতে এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত কাচ ব্যবহার হত।

১৮৪৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার হেনরি বেসমের স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাচ প্রস্তুতির জন্য এক প্রাথমিক পদ্ধতির প্রচলন করেন এবং তাতে পেটেণ্ট নেন। এই প্রণালীতে বেলনের সাহায্যে সমতল কাচের এক অবিরাম শৃঙ্খল রচনা করা হত। কিন্তু এই পদ্ধতি ছিল খরচসাপেক্ষ যেহেতু উৎপাদিত কাচ পুনরায় পালিশ করার দরকার হত এবং এই কারণের জন্য পরবর্তীকালে বিনিয়োগকারী রবার্ট লুকাস চান্স (চান্স ব্রাদার্সদের একজন) এই পদ্ধতি বর্জন করেন। বেসমের ১৮৪৩ সালে ফ্লোট গ্লাস তৈরির এক প্রাথমিক পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন যেখানে তরল টিনের মধ্যে কাচ ঢালা হত।

১৮৮৭ সালে ইয়র্কশায়ার কাস্টলফোর্ডে অ্যাশলে ফার্ম কাচের ব্যাপক উৎপাদনকে বিকশিত করে। এর আধা-স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এক ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কাচের বোতল প্রস্তুতিতে সক্ষম ছিল, যা পুরোনো উৎপাদন প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক বেশি গতিসম্পন্ন[৪৯] । চান্স ব্রাদার্স ১৮৮৮ সালে 'মেশিন রোলড প্যাটার্নেড গ্লাস' পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন[৫০]

১৮৯৮ সালে, পিলকিংটন ওয়্যার্ড কাস্ট গ্লাস আবিষ্কার করেছিলেন, যেখানে কাঁচকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য একটি শক্তিশালী ইস্পাত-তারের জালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কাচকে অনেকে ভুল করে "জর্জিয়ান তারযুক্ত কাচ" -এর সঙ্গে একই গোত্রে ফেলে দেন কিন্তু এর উদ্ভাবন জর্জিয়ান যুগের অনেক পরে[৫১]। 'মেশিন ড্রন সিলিন্ডার' কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং এটি ছিল জানলার কাচ অলংকরণের প্রথম যান্ত্রিক পদ্ধতি। এটি ১৯১০ সাল থেকে পিলকিংটন দ্বারা যুক্তরাজ্যে লাইসেন্সের আওতায় তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে, পিলকিংটন "পলিশ প্লেট" প্রক্রিয়ার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন যাতে ডাবল গ্রিন্ডিং (দু বার চূর্ণ করা) পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কাচের গুণমান আরও উন্নত করা হয়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পিলকিংটন ব্রাদার্সের স্যার অ্যালাস্টার পিলকিংটন এবং কেনেথ বাইকারস্টাফ কাচশিল্পের বৈপ্লবিক 'ফ্লোট গ্লাস' প্রক্রিয়ার বিকাশ করেছিলেন, যাতে প্রথমবার বাণিজ্যিক সফলতার সাথে, গলিত 'টিন বাথ' -এর উপর মাধ্যাকর্ষণের সাহায্যে নিরঙ্কুশ তরল কাচ প্রবাহিত করে, কাচের এক অবিরাম শৃঙ্খল রচনা করা সম্ভব হয়েছিল[৫২]। এই পদ্ধতিতে তৈরী কাচের পাতের সর্বত্র সমান পুরুতা এবং পাতটি অভিন্ন সমতল পৃষ্ঠযুক্ত হয়। আধুনিককালে কাচের জানলা এই ফ্লোট গ্লাস দিয়েই নির্মিত হয়। ফ্লোট গ্লাস প্রক্রিয়া বেশিরভাগ সময় সোডা-লাইম কাঁচ (যা সমচেয়ে বেশি বাজারে প্রচলিত) প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয়, তবে তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে বিশেষ বোরোসিলিকেট[৫৩] এবং ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে কাচও ফ্লোট গ্লাস প্রক্রিয়া ব্যবহার করে উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়ার সাফল্যের কারণ হলো বাথে নির্দিষ্ট পরিমাণযুক্ত গলিত কাচের প্রয়োগ যা তার নিজস্ব ওজনের কারণে আপনাআপনি সমতল আকার ধারণ করে[৫৪]। ১৯৬০ সালে প্রথমবার ফ্লোট কাচের সম্পূর্ণ লাভজনক বিক্রয় অর্জিত হয়।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. True glazing over a ceramic body was not used until many centuries after the production of the first glass.
  2. Found on the MY Oi 701, MY Oi 702, MY Oi 703 and MY Oi 704 tablets; the least damaged, as far as this word is concerned, is MY Oi 703.[১০]
  3. Cf. κύανος.[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Glass making may have begun in Egypt, not Mesopotamia Artifacts from Iraq site show less sophisticated technique, color palette"। ২০১৬-১১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-২৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Glass Online: The History of Glass"। এপ্রিল ১৫, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-২৯ 
  3. Gowlett, J.A.J. (১৯৯৭)। High Definition Archaeology: Threads Through the Past। Routledge। আইএসবিএন 0-415-18429-0 
  4. These early examples are drawn from Christine Lilyquist (১৯৯৩)। "Granulation and Glass: Chronological and Stylistic Investigations at Selected Sites, ca. 2500-1400 B.C.E."। Bulletin of the American Schools of Oriental Research। 290/291 (290): 29–94। জেস্টোর 1357319 
  5. Wilde, H. "Technologische Innovationen im 2. Jahrtausend v. Chr. Zur Verwendung und Verbreitung neuer Werkstoffe im ostmediterranen Raum". GOF IV, Bd 44, Wiesbaden 2003, 25–26.
  6. "Kielich (flet) z herbami "Pogoń" i "Szreniawa""muzea.malopolska.pl (Polish ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪ 
  7. "The Linear B word ku-wa-no-wo-ko"Palaeolexicon. Word study tool for ancient languages 
  8. Wilde, H. "Technologische Innovationen im 2. Jahrtausend v. Chr. Zur Verwendung und Verbreitung neuer Werkstoffe im ostmediterranen Raum". GOF IV, Bd 44, Wiesbaden 2003, 25–26 আইএসবিএন ৩-৪৪৭-০৪৭৮১-X
  9. McCray, W. Patrick (2007) Prehistory and history of glassmaking technology, American Ceramic Society, আইএসবিএন ১-৫৭৪৯৮-০৪১-৬
  10. "MY Oi 701 (63)"  "MY Oi 702 (64)"  "MY Oi 703 (64)"  "MY Oi 704 (64)"  "Database of Mycenaean at Oslo DĀMOS: publisher: University of Oslo"। ৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২০ 
  11. κύανος. Liddell, Henry George; Scott, Robert; পারসিয়াস প্রজেক্টে এ গ্রিক–ইংলিশ লেক্সিকন.
  12. Douglas, R. W. (১৯৭২)। A history of glassmaking। Henley-on-Thames: G T Foulis & Co Ltd। আইএসবিএন 0-85429-117-2 
  13. Agricola, Georgius, De re metallica, translated by Herbert Clark Hoover and Lou Henry Hoover, Dover Publishing. De Re Metallica Trans. by Hoover Online Version ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে Page 586 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুন ২০১৪ তারিখে. Retrieved September 12, 2007
  14. Ṣāliḥʹvand, Navīd (২০১৫)। Tārīkhchah-i shīshah va shīshahʹgarī : ẓurūf-i shīshahʹī dawrah-i Ashkānī, majmūʻah-i Mūzih-i Millī va Mūzih-i Riz̤ā ʻAbbāsī [The history of glass and glass making : glass vessels of Arsacid era in the collections of Iran National Museum and Reza Abbasi Museum] (Persian ভাষায়) (Chāp-i avval সংস্করণ)। [Tihrān]: Samīrā। আইএসবিএন 9789648955491ওসিএলসি 933388489 
  15. Ghosh, Amalananda (১৯৯০)। An Encyclopaedia of Indian Archaeology। BRILL। আইএসবিএন 90-04-09262-5 
  16. "The Ancient Indus Valley" (পিডিএফ)। ৩০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২০ 
  17. D.M., Bose, সম্পাদক (১৯৭১)। A Concise History of Science in India। Indian National Science Academy। পৃষ্ঠা 15আইএসবিএন 8173716196 
  18. Kanungo, Alok K.; Brill, Robert H. (জানুয়ারি ২০০৯)। "Kopia, India's First Glassmaking Site: Dating and Chemical Analysis"Journal of Glass Studies51: 11–25। 
  19. Ghosh, Amalananda (১৯৯০)। "Ornaments, Gems etc. (Ch. 10)"। An Encyclopaedia of Indian Archaeology। BRILL। আইএসবিএন 90-04-09262-5 
  20. Braghin, C. (2002) "Introduction" pp. XI-XIV in Braghin, C. (ed) Chinese Glass. Archaeological studies on the uses and social contest of glass artefacts from the Warring States to the Northern Song Period (fifth century B.C. to twelfth century A.D.). আইএসবিএন ৮৮২২২৫১৬২৮.
  21. Pinder-Wilson, R. (1991) "The Islamic lands and China" p. 140 in Tait, H. (ed) Five thousand years of glass. University of Pennsylvania Press.
  22. Braghin, C. (2002) "Polychrome and monochrome glass of the Warring States and Han periods" p. 6 in Braghin, C. (ed) Chinese Glass. Archaeological studies on the uses and social contest of glass artefacts from the Warring States to the Northern Song Period (fifth century B.C. to twelfth century A.D.). আইএসবিএন ৮৮২২২৫১৬২৮
  23. Kerr, R. and Wood, N. (2004) "Part XII: Ceramic technology" pp. 474–477 in Science and Civilisation in China. Volume 5, Chemistry and Chemical Technology. Cambridge University Press. আইএসবিএন ০৫২১৮৩৮৩৩৯
  24. An Jiayao (2002) "Polychrome and monochrome glass of the Warring States and Han periods" pp. 45–46 in Braghin, C. (ed) Chinese Glass. Archaeological studies on the uses and social contest of glass artefacts from the Warring States to the Northern Song Period (fifth century B.C. to twelfth century A.D.). আইএসবিএন ৮৮২২২৫১৬২৮.
  25. Jenyns, R. (1981) Chinese Art III: Textiles, Glass and Painting on Glass. Phaidon Press
  26. Whitehouse, David; Glass, Corning Museum of (মে ২০০৪)। Roman Glass in the Corning Museum of Glass। Hudson Hills। আইএসবিএন 9780872901551 
  27. The Art Journal। Virtue and Company। ১৮৮৮। 
  28. The Glass Industry। Ashlee Publishing Company। ১৯২০। 
  29. Fleming, S. J., 1999. Roman Glass; reflections on cultural change. Philadelphia, University of Pennsylvania Museum of Archaeology and Anthropology.
  30. Stern, E. M. (১৯৯৯)। "Roman Glassblowing in a Cultural Context"। American Journal of Archaeology103 (3): 441–484। জেস্টোর 506970ডিওআই:10.2307/506970 
  31. Toner, J. P. (2009) Popular culture in ancient Rome. আইএসবিএন ০-৭৪৫৬-৪৩১০-৮. p. 19
  32. Hassan, Ahmad Y, Assessment of Kitab al-Durra al-Maknuna ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-০৭-১৫ তারিখে, History of Science and Technology in Islam.
  33. Hassan, Ahmad Y. The Manufacture of Coloured Glass ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-১১-১৬ তারিখে, History of Science and Technology in Islam.
  34. Donny L. Hamilton। "Glass Conservation"। Conservation Research Laboratory, Texas A&M University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২১ 
  35. Bayley, J. (2000). "Glass-working in Early Medieval England" pp. 137–142 in Price, J. Glass in Britain and Ireland AD 350–1100. London: British Museum Occasional paper 127. আইএসবিএন ০৮৬১৫৯১২৭৫
  36. Bimson M. and Freestone, I.C. (2000). "Analysis of some glass from Anglo-Saxon Jewellery" pp. 137–142 in Price, J. Glass in Britain and Ireland AD 350–1100. London: British Museum Occasional paper 127. আইএসবিএন ০৮৬১৫৯১২৭৫
  37. Bimson, M. (1978) "Coloured glass and millefiori in the Sutton Hoo Ship Burial". In Annales du 7e congrès international d'etude historique du verre: Berlin, Leipzig, 15–21 August 1977: Liège: Editions du Secretariat Général.
  38. Evison, V. I. (2000). "Glass vessels in England, 400–1100 CE" pp. 47–104 in Price, J. Glass in Britain and Ireland AD 350–1100. London: British Museum Occasional paper 127. আইএসবিএন ০৮৬১৫৯১২৭৫
  39. Heyworth, M. (1992) "Evidence for early medieval glass-working in north-western Europe" pp. 169–174 in S. Jennings and A. Vince (eds) Medieval Europe 1992: Volume 3 Technology and Innovation. York: Medieval Europe 1992
  40. Ecclesiastical: Of or relating to a church or to an established religion.
  41. Harden, D. B. (১৯৭৮)। "Anglo-Saxon and later Medieval glass in Britain: Some recent developments" (পিডিএফ)Medieval Archaeology22: 1–24। 
  42. Georg Agricola De Natura Fossilium, Textbook of Mineralogy, M.C. Bandy, J. Bandy, Mineralogical Society of America, 1955, p. 111 Section on Murano Glass, De Natura Fossilium ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে. Retrieved 2007-09-12.
  43. inc, Encyclopaedia Britannica (১৯৯২)। The New Encyclopaedia Britannica। Encyclopaedia Britannica। আইএসবিএন 9780852295533 
  44. Newton, Roy G.; Sandra Davison (১৯৮৯)। Conservation of Glass। Butterworth – Heinemann Series in Conservation and Museology। London: Butterworthsআইএসবিএন 0-408-10623-9 
  45. MacLeod, Christine (১৯৮৭)। "Accident or Design? George Ravenscroft's Patent and the Invention of Lead-Crystal Glass"Technology and Culture28 (4): 776–803। জেস্টোর 3105182ডিওআই:10.2307/3105182 
  46. Hurst-Vose, Ruth (১৯৮০)। Glass। Collins Archaeology। London: Collinsআইএসবিএন 0-00-211379-1 
  47. Encyclopædia Britannica 11th edition (1911)
  48. Bontemps on Glassmaking: the Guide du Verrier of Georges Bontemps, translated by Michael Cable (2008). Society of Glass Technology. আইএসবিএন ০৯০০৬৮২৬০৪
  49. Buch Polak, Ada (১৯৭৫)। Glass: its tradition and its makersবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Putnam। পৃষ্ঠা 169 
  50. "Chance Brothers and Co"। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১৭ 
  51. Practical Building Conservation: Glass and glazing। Ashgate Publishing। ২০১১। পৃষ্ঠা 468। আইএসবিএন 9780754645573 
  52. Pilkington, L. A. B. (১৯৬৯)। "Review Lecture. The Float Glass Process"। Proceedings of the Royal Society of London. Series A, Mathematical and Physical Sciences। The Royal Society। 314 (1516): 1–25। জেস্টোর 2416528ডিওআই:10.1098/rspa.1969.0212বিবকোড:1969RSPSA.314....1P 
  53. "Borosilikatglas BOROFLOAT®" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মে ২০০৯ তারিখে. SCHOTT AG.
  54. Bickerstaff, Kenneth and Pilkington, Lionel A B টেমপ্লেট:US Patent "Manufacture of flat glass". Priority date December 10, 1953