কাও শিংচিয়েন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কাও শিংচিয়েন
জন্ম (1940-01-04) ৪ জানুয়ারি ১৯৪০ (বয়স ৮৪)
কানচৌ, চিয়াংশি, চীন
পেশাপ্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সমালোচক, অনুবাদক, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক,চিত্রকর
ভাষাচীনা[১]
নাগরিকত্বচীন (১৯৪০-১৯৯৮)
ফ্রান্স (১৯৯৮ - )
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানBeijing Foreign Studies University
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
২০০০

কাও শিংচিয়েন[টীকা ১] (চীনা: 高行健; ফিনিন: Gāo Xíngjiàn; জন্ম জানুয়ারি ৪, ১৯৪০) একজন চীনা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক এবং অনুবাদক। তিনি ২০০০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[২] সাহিত্য রচনা ছাড়াও অনুবাদক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি প্রধানত স্যামুয়েল বেকেট এবং ইউজিন আয়নেস্কোর রচনাসমূহ চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

কাও শিংচিয়েন ১৯৪০ সালের জানুয়ারি ৪ তারিখে চীনের চিয়াংশি প্রদেশের কানচৌ (ফিনিন Ganzhou) অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। এখানেই তার শিক্ষাজীবনের সূত্রপাত। তবে তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। ১৯৭৯ সালে লেখালেখি শুরু করেন। একই সাথে তিনি চীনের সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি অ্যা প্রিলিমিনারি ডিসকাশন অফ দ্য আর্ট অফ মডার্ন ফিকশন লিখে সমসাময়িক লেখক ও সমালোচক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। ১৯৮৬ সালে তার বিখ্যাত বই দ্য আদার শোর প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির সংক্রমণের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এতে তিনি চীন সরকারের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। তাকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা দেখা দেয়।

একই সময় তার ফুসফুসের ক্যান্সার হয়েছে বলে ডাক্তারী পরীক্ষায় ইঙ্গিত করা হয় যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। একই সঙ্গে পুলিশী ঝামেলা এড়াতে এবং ক্যান্সার হয়েছে বলে জীবনের আশা একরকম ত্যাগ করেই তিনি এক অনির্দিষ্ট ও নিরুদ্দেশ যাত্রায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ইয়াংজি নদীর কূল ধরে হেঁটে চলেন। একে তার জীবনের মহান অডিসি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ হেন অনিশ্চিত অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে তার পুনর্জন্ম হয়েছিল; তিনি জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষে পরিণত হন। এই অডিসিতে তিনি ১৫,০০০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এই অভিযানে চীনের বিভিন্ন প্রত্যন্ত স্থানের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে তার পরিচয় ঘটে। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তীতে তিনি একটি ভ্রমণকাহিনী ও স্মৃতিচারণমূলক উপন্যাস রচনা করেন যার নাম সোউল মাউন্টেইন (এই উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ আত্মাপর্বত নামে প্রকাশিত হচ্ছে)।

একটি চাইনিজ বইয়ের প্রচ্ছদে কাও শিংচিয়েনের ছবি

ভ্রমণ শেষে তিনি আবার সক্রিয় লেখালেখি শুরু করেন।

তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে চীন সরকারের ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে তনি ফিউজিটিভ নামে একটি প্রেমের গল্প লিখেন যা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশের সাথে সাথে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি (persona non grata) ঘোষণা করা হয় যার কারণে তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। চীন ছেড়ে তিনি ফ্রান্সে চলে যান। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি নিয়মত ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করছেন। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের নাগরিকত্বও লাভ করেন।

তিনি মূলত নাটক রচনাতেই বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তার আগে চীনে মূলত নৃত্যনাট্যের ঐতিহ্যগত কাঠামো অনুসরণ করা হতো। তিনিই প্রথম এ ধরনের নৃত্যনাট্যে সংলাপ সংযোজন করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • নোবেল পুরস্কার: কাও শিংচিয়েনের রচনাসমূহের সুয়েডীয় অনুবাদ করেন ভাষাবিদ ইয়োরান মাল্মকুইস্ত (Göran Malmqvist)। এই অনুবাদকই মূলত তার নোবেল প্রাপ্তিতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি যে নোবেল পেয়েছেন তা জানানোর ১০ দিন আগেই শিংচিয়েন তার সুয়েডীয় প্রকাশক পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু এতেও ইয়োরান মাল্মকুইস্ত নোবেল পুরস্কার বিষয়ে কোন তথ্য ফাঁস করতে রাজি হননি। চীনের সংবাদ ও রাষ্ট্রীয় মাধ্যম তার সম্বন্ধে প্রায় নীরবই রয়েছে। অবশ্য ২০০১ সালে Yangcheng Evening News নামক একটি চীনা সংবাদ মাধ্যম তার নোবেল প্রাপ্তির সমালোচনা করেছে।
  • শভালিয়ে দ্য লর্দ্র দেজার এ দে লেত্র - ১৯৯২ সালে ফরাসি সরকার কর্তৃক প্রদত্ব।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. এই ম্যান্ডারিন চীনা ব্যক্তিনাম বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ম্যান্ডারিন চীনা শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Nobel Prize in Literature 2000"। Nobelprize। অক্টোবর ৭, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০১০ 
  2. "The Nobel Prize for Literature 2000"Nobelprize.orgThe Nobel Prize in Literature for 2000 goes to the Chinese writer Gao Xingjian "for an œuvre of universal validity, bitter insights and linguistic ingenuity, which has opened new paths for the Chinese novel and drama". 
  • গাও সিংজিয়ান - নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকরা - আবুল বাশার ফিরোজ; ঐতিহ্য; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০১