কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটি
কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটি (কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটি ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স, জার্মান:কাইসার-ভিলহেল্ম-গেসেলশাফট জুর ফোরডেরাং ডার উইজেনশাফটেন) একটি জার্মান বৈজ্ঞানিক সমিতি ছিল, যেটি জার্মান সাম্রাজ্যে ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এর কার্যক্রম ম্যাক্স প্লাংক সোসাইটি সম্পন্ন করে। কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটি অনেকগুলো সংগঠনের কার্যক্রমের প্রধান প্রাণকেন্দ্র ছিল। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও অনেক রকম গবেষণা কার্যক্রম এখানে পরিচালিত হত।
সংবিধান
[সম্পাদনা]কাইসার ভিলহেল্ম গেসেলশাফট ১৯১১ সালে জার্মানিতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ধারণা জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, যেগুলো বিজ্ঞানের প্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহবান জানানো হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন-ভাল্টার বোটে, পিটার ডিবাই, ফ্রিৎস হেবার,আলবার্ট আইনস্টাইন ও অটো হান। এছাড়াও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়।
জার্মানির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং জার্মান বিজ্ঞান সমিতি (নটগেমেইনশাফট ডার ডিউশেন উইসেনশাফট) এগুলোর মধ্যে ছিল অন্যতম।
বাহ্যিক উৎসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রকফেলার ফাউন্ডেশন। প্রতি বছর এটি শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের জন্য এক বছর মেয়াদী বৃত্তি প্রদান করত। এর মধ্যে অনেক ছাত্রই জার্মানিতে পড়াশোনা করত। [১]
কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটির অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ত্র গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রিৎস হেবারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা সম্মুখসমরে প্রয়োগের জন্য বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের সূচনা করেন।[২] বিষাক্ত গ্যাসের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কাইজার ভিলহেল্ম সোসাইটির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্লিনভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গটিঙেন শহরে অবস্থিত বায়ুগতিবিদ্যা ইনস্টিটিউটে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতে শুরু করে। ১৯৪৫ সালের ১৪ এপ্রিল অ্যালবার্ট ভোগলারের আত্মহত্যার পরে এনর্স্ট টেলেশো সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ম্যাক্স প্লাংক মাগদেবুর্গ থেকে গটিঙেন শহরে আগমন করেন। প্লাংক ১৬ মে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যতদিন পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদ নতুন সভাপতি বাছাই না করে, ততদিন পর্যন্ত প্লাংকের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। পরিচালনা পর্ষদ অটো হান-কে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করে। মিত্রশক্তি অটো হানকে আটকে রেখেছিল। হান প্রথমে দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করলেও মুক্তি পাওয়ার তিন মাস পরে বাকিদের পীড়াপীড়িতে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যালয় সংস্থাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
হলোকাস্ট
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বামপন্থী ও বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তদের উপর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা হলোকাস্ট নামে পরিচিত। এই হলোকাস্টের সঙ্গে কাইসার ভিলহেল্ম সোসাইটির উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা রয়েছে।[৩] এর অধীনস্থ প্রত্নতাত্ত্বিক ও মানব বংশগতিবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সদস্যদের (বিশেষত অটমার ভন ভারশুসার) আউশভিটজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুবরণ করা ইহুদিদের দেহ কিংবা দেহের খণ্ডিত অংশ প্রদান করা হত। তাঁরা এসব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যবহার করতেন।[২] তাঁর ছাত্র ড.জোসেফ মেঙ্গেলে অনেক সময় গবেষণার কাজে ভারশুসারকে "মানব গিনিপিগ" সরবরাহ করতেন। ভারশুসার যমজ পরীক্ষায় অন্যতম বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ইহুদি যমজদের চোখের রং কিংবা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভারশুসার বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। যখন আমেরিকান সেনাবাহিনী ইনস্টিটিউট-টি ঘিরে ফেলে, তখন এর সভাপতি নাৎসি সমর্থক ও শিল্পপতি অ্যালবার্ট ভোগলার আত্মহত্যা করেন। [২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ গ https://www.mpg.de/195494/Kaiser_Wilhelm_Society
- ↑ https://www.jstor.org/stable/23332180