কল্পতরু সেনগুপ্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কল্পতরু সেনগুপ্ত
জন্ম১৬ এপ্রিল, ১৯১৬
মৃত্যু২০ জুন, ২০০৩
পেশাসাংবাদিকতা
প্রতিষ্ঠানভারতের কমিউনিস্ট পার্টি
আন্দোলনকলকাতার শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন

কল্পতরু সেনগুপ্ত (১৬ এপ্রিল, ১৯১৬ — ২০ জুন, ২০০৩) একজন বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী, সাম্যবাদী কর্মী ও সাহিত্যিক।

স্বাধীনতা আন্দোলন[সম্পাদনা]

কল্পতরু সেনগুপ্তের পিতা সতীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত নিজেও বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। ১৯২১ সালে রেলওয়ে ধর্মঘটে যোগদান করে চাকরি ছেড়ে আসাম চলে যান তিনি। পুত্র কল্পতরু নোয়াখালী জেলায় স্কুলে পড়ার সময়েই রাজনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংস্পর্শে আসেন। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ এবং জেলাব্যাপী সরকারি দমন নীতির মধ্যে কল্পতরুর ছাত্রজীবন স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়নি। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি চট্টগ্রাম বিদ্রোহে যোগ দেন। গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৩৪ সালে। মুক্তি পেয়ে আবার বি সি এল আইনে কারাবরণ করেন। বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি।[১][২]

কমিউনিস্ট পার্টিতে[সম্পাদনা]

জেলে থাকার সময় মার্কসবাদ নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং মুক্তি পেয়ে ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। পার্টির কাজে আসামে যান ও বদরপুর শহরে রেল শ্রমিক ও কমিউনিস্ট পার্টি সংগঠন গড়ে তোলার জন্যে পরিশ্রম করতেন। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সম্পাদক ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তাকে আসাম থেকে বহিষ্কার করলে তিনি চট্টগ্রাম চলে যান ও একবছর সেখানে বন্দীজীবন যাপন করতে হয়। ১৯৩৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কবি ওহীদুল আলমের সহযোগিতায় তিনি চট্টগ্রাম প্রগতি লেখক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সম্পাদক হন এবং ১৯৫১ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে স্বাধীনতার পরেও পূর্ব পাকিস্তানে তাকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত আত্মগোপন করে থাকতে হয়। এই সময় সাম্প্রদায়িক দল আ্নসার বাহিনী তাকে খুঁজে পায় এক চা বাগানে এবং মারাত্মকভাবে মারধোর করে, এর ফলে পঙ্গু হয়ে যান এই বিপ্লবী। ৬ মাস পরে চিকিৎসার জন্যে কলকাতা আসেন। তার স্ত্রীও সেইসময় জেলবন্দী ছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে। কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। এ সূত্রে মুজফ্‌ফর আহ্‌মেদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়।

সাংবাদিকতা[সম্পাদনা]

কলকাতায় এসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র স্বাধীনতা পত্রিকায় যোগ দেন। বসুমতী পত্রিকায় সাংবাদিকের কাজ করার সময় কর্মী সংগঠন করার অপরাধে তার চাকরি যায় ১৯৭০ সালে। নন্দন, সত্যযুগ ইত্যাদি পত্রিকায় কাজ করেছেন। সাংবাদিক ও সুলেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছাড়াও তিনি পরিচিত ছিলেন একজন নজরুল বিশেষজ্ঞ রূপে।[৩] তিনি বিশ্বাস করতেন যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অনুসরণ করতে গেলে কাজী নজরুল ইসলামের ভাবাদর্শ অনুশীলন করার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। জীবনের শেষ ত্রিশ বছর তিনি নজরুলের সাহিত্য এবং নজরুল গীতি চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। পশ্চিমবঙ্গে নজরুল একাডেমি গড়ে তোলায় তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পরবর্তীতে নজরুল সংক্রান্ত গবেষণার জন্য তিনি বহুবার বাংলাদেশে যান। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক ২০০১ সালে নজরুল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।[১]

সাহিত্য[সম্পাদনা]

তিনি বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তার কয়েকটি গ্রন্থ হলো, চাঁদের দেশে মানুষ, ফ্যাসিজম কীভাবে আসে, নজরুল গীতি অন্বেষা, জনগণের কবি নজরুল ইসলাম, উদাসী-ভৈরব, দেশপ্রেমিকের রোজনামচা, ভারতে সাম্রাজ্যবাদী গোয়েন্দা চক্র, স্ফুলিঙ্গ থেকে বহ্নি শিখা, মুজফফর আহমদ। আত্মজীবনী মূলক রচনা ‘স্মৃতির সময় সময়ের স্মৃতি’র জন্যে তিনি পুরষ্কৃত হন।[২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

কল্পতরু সেনগুপ্ত মারা যান ২০ জুন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ডা. বরুণ কুমার আচার্য (১৭.০৪.২০১৬)। "কমরেড কল্পতরু সেনগুপ্ত শততম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন"। আলোর কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ০৭.০২.২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. দ্বিতীয় খন্ডের সংযোজন, অঞ্জলি বসু (২০০৭)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ১৩। 
  3. পঙ্কজ সাহা (২৯ মে ২০১৬)। "নজরুল সত্যিই যেন জ্যৈষ্ঠের ঝড়"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ০৭.০২.১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)