কলম্বো জাতীয় জাদুঘর
জাদুঘরের সম্মুখভাগ, ২০২০ | |
| স্থাপিত | ১ জানুয়ারি ১৮৭৭ |
|---|---|
| অবস্থান | কলম্বো, শ্রীলঙ্কা |
| স্থানাঙ্ক | ৬°৫৪′৩৬″ উত্তর ৭৯°৫১′৩৯″ পূর্ব / ৬.৯১০০০° উত্তর ৭৯.৮৬০৮৩° পূর্ব |
| প্রতিষ্ঠাতা | উইলিয়াম হেনরি গ্রেগরি |
| ওয়েবসাইট | museum |
কলম্বো জাতীয় জাদুঘর বা শ্রীলঙ্কা জাতীয় জাদুঘর হলো কলম্বোতে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার সর্ববৃহৎ জাদুঘর। জাদুঘরটি ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যান্ডীয় সম্রাটদের ব্যবহার্য নিদর্শন ছাড়াও শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনাবলি জাদুঘরে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হয়।[১][২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
১৮৭৭ সালের ১ জানুয়ারি “কলম্বো জাদুঘর” নামে এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন সিলনের ব্রিটিশ গভর্নর স্যার উইলিয়াম হেনরি গ্রেগরি এর প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] ১৮৭২ সালে গভর্নর হিসেবে উইলিয়াম হেনরি গ্রেগরির যোগদানের পরপরই রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অব শ্রীলঙ্কা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানায়। এই উদ্যোগ কিঞ্চিৎ বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও এক বছরের মাথায় দেশটির আইন পরিষদের অনুমোদন লাভ করে। সরকারের গণপূর্ত বিভাগের সরকারি স্থপতি জেমস জর্জ স্মিথার (১৮৩৩–১৯১০)[৩] ইতালীয় স্থাপত্যশৈলীতে একটি নতুন স্থাপনার নকশা প্রস্তুত করেন। ১৮৭৬ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় এবং এর পরবর্তী বছর জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়।
স্যার রাজিক ফরিদের পিতামহ আরাসি মারিকার ওরফে ওয়াপচি মারিকারের[৩] (১৮২৯–১৯২৫, ১০৬০ সালে শ্রীলঙ্কায় আগত শেখ ফরিদ পরিবারের বংশধর) অধীনে ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ওয়াপচি মারিকার কলম্বোর জেনারেল পোস্ট অফিস, শুল্ক ভবন, পেট্টার টাউন হল, গালে ফেস হোটেল, ভিক্টোরিয়া আর্কেড, ফিনলে মোয়ার ভবন, কলম্বো দুর্গের ঘণ্টাঘর, ব্যাটেনবার্গ ব্যাটারিসহ শ্রীলঙ্কায় অদ্যাবধি দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে বাজারের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত পেট্টার পুরনো টাউন হল তৎকালীন খরচে ৬৮৯ পাউন্ড স্টার্লিং মূল্যের চুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছিল।
১৮৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে গভর্নর গ্রেগরি নবনির্মিত ভবনে কলম্বো জাদুঘরের কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই আনুষ্ঠানিকতায় মুসলিমসহ বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে গভর্নর ওয়াপচি মারিকারের কাছে এই কাজের বিনিময় হিসেবে কী চান, তা জানতে আগ্রহ পোষণ করেন। জাদুঘরে কাঠের কারুকাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সূত্রধর এসএম পেরেরার কাছেও একই প্রশ্ন করেন। পেরেরার চাহিদা অনুযায়ী গভর্নর তাকে স্থানীয় খেতাবে ভূষিত করেন। অন্যদিকে মারিকার মুসলিমদের জুমুআর কথা স্মরণে রেখে শুক্রবার জাদুঘর বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন৷ গভর্নর সেটি মঞ্জুর করেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলেও পরবর্তীতে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই জাদুঘর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়।[৪]
কান্ডির সর্বশেষ রাজার সিংহাসন জাদুঘরে তোলার সময় শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডি. এস. সেনানায়েকে শুধু সেই শুক্রবারের জন্য জাদুঘর খোলা রাখতে ওয়াপচি মারিকারের নাতি স্যার রাজিক ফরিদের সম্মতি গ্রহণ করেছিলেন।


১৮৭৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দেশের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ইতিহাসের নিদর্শন প্রদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ড. আর্থার উইলি ও ড. জোসেফ পিয়ারসনের অধীনে আরও বিভিন্ন শাখায় নিদর্শন যুক্ত করা হয়। ড. পিইপি ডেরানিয়াগালা, ড. পিএইচডিএইচ ডি সিলভা ও সিরিনিমাল লাকদুসিংহের সময়ে জাদুঘরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটি প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর ও অপর একটি মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এই ভবনগুলো জাদুঘরের গ্রন্থাগার এবং জাতি ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা ও নিদর্শনসামগ্রী প্রদর্শন সুবিধাকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
১৯৪০-এর পরবর্তী উন্নয়ন
[সম্পাদনা]পিইপি ডেরানিয়াগালার সময়ে কলম্বো জাদুঘরকে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা প্রদান করা হয়। তিনি জাফনা, ক্যান্ডি ও রত্নাপুরায় শাখা জাদুঘর স্থাপন করেন। ১৯৪২ সালে ৩১ নং আইনের মাধ্যমে জাতীয় জাদুঘর অধিদপ্তর নামে সম্পূর্ণ একটি সরকারি কার্যালয়ই স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে জাতীয় জাদুঘরের মোট নয়টি শাখা, বিদ্যালয়ভিত্তিক বিজ্ঞান প্রকল্প ও একটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর কার্যকর রয়েছে।
জাদুঘরে ব্রিটিশ জাদুঘরে রক্ষিত মানবশরীরের তিন-চতুর্থাংশ আকারের বোধিসত্ত্ব তারার মূর্তির একটি অনুলিপি সংরক্ষিত আছে।[৫] ব্রিটিশ সরকার থেকে ফেরত পাওয়া ক্যান্ডির রাজাদের মুকুট ও সিংহাসন জাদুঘরের সংগ্রহশালায় যুক্ত করা হয়। জাদুঘরের নিচের তলার প্রদর্শনীকক্ষের নিদর্শনসমূহ কালপরিক্রমায় সাজানো হয়েছে। অন্যদিকে উপরের তলায় নিদর্শনসমূহ বিষয়বস্তু অনুসারে সাজানো আছে।
১৮৭৭ সালের ১ জানুয়ারি জাদুঘর-সংলগ্ন একটি গ্রন্থাগারও স্থাপন করা হয়। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রাচ্যদেশীয় (অরিয়েন্টাল) গ্রন্থাগার কলম্বো জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগারের সাথে একীভূত করা হয়। তখন থেকে গ্রন্থাগারটি ১৩০ বছরের অধিক সময়ে স্থানীয় প্রকাশনার একটি কেন্দ্রীয় সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে। গ্রন্থাগারটি শ্রীলঙ্কার প্রথম আইনিভাবে স্বীকৃত পুস্তক জমাদান কেন্দ্র। অনানুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থাগারটি শ্রীলঙ্কার জাতীয় গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিত। গ্রন্থাগারটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শ্রীলঙ্কা, প্রাচ্যতত্ত্ব ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন পুস্তক সংগ্রহে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

১৯৮২ সালে ড. থেলমা গুণবর্ধন কলম্বো জাতীয় জাদুঘরের প্রথম মহিলা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন।[৬] ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।[৭]
১৯৭২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক পান্ডুলা আন্দাগামা জাদুঘরের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহকারী পরিচালক ছিলেন।[৮]
জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার
[সম্পাদনা]১৮৭৭ সালের ১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রাচ্যদেশীয় গ্রন্থাগারকে জাদুঘরের সাথে একীভূত করে কলম্বো জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৮৫ সাল থেকে আইন অনুসারে দেশটিতে প্রকাশিত সকল বই ও নথির একটি অনুলিপি জাদুঘর গ্রন্থাগারে জমা রাখা বাধ্যতামূলক।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ICTA & National Museum launch Sri Lanka museums mobile app" (ইংরেজি ভাষায়)। লঙ্কা বিজনেস অনলাইন। ১৫ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ সিলভা, ধনঞ্জানি (২২ মার্চ ২০০৯)। "Swords and fire power add to new-look museum"। দ্য সানডে টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭।
- 1 2 3 জয়বর্ধন, ইশারা (১২ অক্টোবর ২০১৭)। "Magnificent historical haven"। ডেইলি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ "Museum opening hours" (ইংরেজি ভাষায়)। জাতীয় জাদুঘর অধিদপ্তর, শ্রীলঙ্কা। ৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২৫।
- ↑ "The female as Cult Object in Buddhism"। ডিজিটাল লাইব্রেরি (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ পেরেরা, জনক। "National museum: looking back 130 years"। অবজার্ভার অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৮।
- ↑ স্যালি, রিহান্না (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "National Museum: Window into the past"। সানডে অবজার্ভার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৮।
- ↑ "From a quiet love affair to wedding bells"। সানডে অবজারভার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০২১।