কম্বোডিয়ায় স্বাস্থ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কম্বোডিয়ায় স্বাস্থ্যের গুণগত মান এর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির পাশাপাশি বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার প্রতি কম্বোডিয়ান সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকার রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সহায়তাযর ফলে কম্বোডিয়া ১৯৮০ এর দশক থেকে জনস্বাস্থ্য সেবায় বড় এবং ধারাবাহিক উন্নতি দেখাতে পেরেছে পাশাপাশি এর গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৯৯০ এর দশকে কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য সংস্কার এর ফলে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছে এবং এটি কম্বোডিয়াকে জাতিসংঘের নির্ধারিত মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পথ তৈরি করে দিয়েছে। [১] এরকম একটি উদাহরণ হলো কম্বোডিয়ান হেলথ ইক্যুইটি ফান্ড,যা মূলত দেশটি নিজের অর্থায়নে পরিচালনা করে, এটি তৈরি হয়েছিল ২০০০ সালে ২০ মিলিয়ন দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে । এই তহবিল,কোনও রোগীর সাথে আসা প্রত্যেকের জন্য প্রতিদিনের ভাতা এমনকি ভ্রমণ ব্যয়ের অর্থও প্রদান করে থাকে, এর ফলে কম্বোডিয়ানদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বেরে গেছে যারা অন্যথায় কোনও ধরনের চিকিৎসা সেবা নিতে পারে না। [২] সংস্কারের ফলে, মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে, ২০১০ সালে গড় আয়ু ছিল ৬২.৫ বছর, যা ১৯৮০ সালের থেকে ১.৬ গুণ বেড়েছে।

কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে প্রচলিত অনেক ব্যাধির সাথে লড়াই করছে। এছাড়াও, শিশুদের অপুষ্টি দীর্ঘকাল ধরে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ১৯৯৮ সালে এইচআইভি একটি বর্ধনশীল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছিলো, তবে বর্তমানে মহামারীটি প্রায় কমে গেছে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

কম্বোডিয়া ১৯৫৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, কিন্তু স্বশাসনের রাস্তাটি খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৭ সালে, কম্বোডিয়ান গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে পরের দশকটি কম্বোডিয়া এবং কম্বোডিয়ার জনগণের জন্য সর্বনাশা আকার ধারণ করে। পরবর্তিতে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়ায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ অভিযান শুরু করে, যা গৃহযুদ্ধকে আরও উত্তেজিত করেছিল এবং এর ফলে দেশের অর্ধ পূর্বাঞ্চল, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষি এবং অবকাঠামোগত সম্পদ ধ্বংস হয়েছিল। ১৯৭০ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি অভ্যুত্থান কম্বোডিয়ান রাজা নরদোম সিহানুকের সরকারকে নামিয়ে আনে এবং খেমার প্রজাতন্ত্র নামে একটি অস্থায়ী সামরিক প্রজাতন্ত্রের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গৃহযুদ্ধের অগ্রগতির সাথে সাথে শেষ অবধি ১৯৭৫ সালে খমের রুজ এর মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীকালে একটি অভ্যন্তরীণ গণহত্যা শুরু হয়, যা দেশটির অর্থনীতি ও রাজধানী শহরটিকে আরও ধ্বংস করে দেয়, বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা চালানো হয় এবং দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, যার ফলে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল মোট যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২১%। ১৯৮৯ সালের দিকে খমের রুজ এর পরিসমাপ্তি ঘটে এবং জাতিসংঘ একটি জাতীয় নির্বাচন এর আয়োজন করে যা অসংখ্য উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারী সংস্থাগুলি (এনজিও) সমর্থন করে। যা দেশটির পুনর্গঠনে ব্যাপক সহায়তা করেছিল।

আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বোডিয়া আর সামরিক সংঘাতের দেশ নয়, কারণ ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। নতুন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সময়কালে দেশটি উল্লেখযোগ্য এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে, তবে একটি অত্যন্ত বঞ্চিত ভিত্তি থেকে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, কম্বোডিয়া প্রতি বছর ৭% (৭ শতাংশ) এরও বেশি জিডিপি বৃদ্ধির হার এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। ২০১২ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার জনগনের মাথাপিছু জিডিপি ৯৪৪ ডলার এ পৌঁছেছে, এবং মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে কম্বোডিয়া মাথাপিছু জিডিপি ৯৪৪ ডলার অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। [৩] যদিও অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আয়ের সুষম বণ্টন হয়নি। আয়ের বেশিরভাগ অংশ একচেটিয়াভাবে শহুরে জনগোষ্ঠীতে বিতরণ করা হয়েছে। [৩]

স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানুষের মধ্যে অব্যাহত রয়েছে, যা গ্রামীণ এবং শহুরে জনগণের মধ্যে বেশি বিদ্যমান। ২০১০ সালের সিডিএইচএসের তথ্য অনুসারে, ৫ বছরের এর কম বয়সী গ্রামীণ অঞ্চলে বাস করা শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টিজনিত বা তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণের হার দ্বিগুণেরও বেশি ছিল শহর অঞ্চলে বসবাস করা শিশুদের তুলনায় ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cambodia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে. Embassyofcambodia.org.nz. Retrieved on June 20, 2011.
  2. Frank Bliss (২১ অক্টোবর ২০১৮)। "Free access for the extremely poor"D+C, development and cooperation। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  3. World Bank (২০১৪a)। "World development indicators"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৯