কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু
লেখকমহাশ্বেতা দেবী
দেশভারত
ভাষাবাংলা
ধরনউপন্যাস
প্রকাশককরুণা প্রকাশনী, কলকাতা
প্রকাশনার তারিখ
১৯৬৭
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)

কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু হল মহাশ্বেতা দেবীর লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে[১] চতুষ্পর্ণা পত্রিকায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।[২] চুয়াড় কল্হন কীভাবে নাম ভাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণ বন্দ্যঘটী গাঞি সেজে অভয়ামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিল, তা-ই এই উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য।[৩] অধ্যাপক অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, "সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাস কতো দায়িত্বশীল ও পরিণত হয়ে উঠেছে, তার অন্যতম নিদর্শন মহাশ্বেতা দেবীর অসাধারণ উপন্যাস ‘কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু’ (১৯৬৭)।"[৪]

কাহিনি-সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু উপন্যাসের প্রেক্ষাপট খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর রাঢ়বাংলা, বিশেষত মেদিনীপুর অঞ্চল। কবিখ্যাতিপ্রত্যাশী অরণ্যচারী চুয়াড় যুবক কল্হন ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ‘বন্দ্যঘটী গাঞি’ নামে অভয়ামঙ্গল কাব্য রচনায় ইচ্ছুক হয়। চুয়াড়-দলপতি তাকে নিষেধ করে বলেন, "হা দেখ্, তু চুয়াড় হঞে জন্মেছিস, চুয়াড় হঞে জন্ম কাটাবি, ই কথাটা তুর কপালে লিখা আছে। আলা মালা করলে তুর বুড়া আঙ্গুল ছেদে দিব জানলি? চুয়াড়ের পোঞার অত লড়ত চড়ত লাই জানলি?" কল্হন সে নিষেধবাক্য অগ্রাহ্য করে। ভীমাদল রাজ্যের রাজা গর্গবল্লভ ‘কবি বন্দ্যঘটী গাঞি’-বেশী কল্হনকে অভয়ামঙ্গল পাঁচালি রচনার জন্য নিষ্কর জমি ও মানপত্র দিলেন, রাজমন্ত্রী মাধবাচার্য নিজ কন্যা ফুল্লরাকে সঁপে দিলেন কল্হনের হাতে। সেই মুহুর্তে রাজসভায় চুয়াড়বৃন্দের মুখে কল্হনের প্রকৃত পরিচয় ঘোষিত হয়, "বাম্ভোন কেও লও হে, উ ছেলা চুয়াড়, দলছাড়া, সমাজছাড়া, বাম্ভোন হতে পয়াসী, তা এখন আমাদের রাজা মর‍্যাছে। উর তুল্য পুরুষ সমাজে লাই, উটিকে দাও আমরা রাজা করব।" আত্মপক্ষ সমর্থনে কল্হন বলে, "পৈতে পরলে তোমার পৌত্রের দ্বিতীয় জন্ম হয়, সে দ্বিজ হয়। দ্বিজ সেই যার দু’বার জন্ম হয়। পাখপক্ষীকে, নাগ-নাগিনীকে ত তোমরা প্রথমে ডিম হয়ে জন্মায় বোলে দূষ না? মুক্তাকেও শুধাও না আগে কেন জন্মালি? আমি চুয়াড় নয়, আমি কবি বন্দ্যঘটী গাঞি, অভয়াসেবক, এ পরিচয়ে আমার দ্বিতীয় জন্ম, সেটি কি তোমরা কেড়ে নিতে পার?" ক্ষিপ্ত গর্গরাজা মৃত্যুদণ্ড দিলেন কল্হনকে, "তুহ্মার পাপের পারাপার লাই হে! তুমি বাম্ভোন হঞে বঞ্চনা করেছ ই-জন্যে গলে তপ্ত তামার যজ্ঞসূত্র পরতে হবে। তা বাদে দিন দেখে তোহ্মায় দলন-হাতীর পায়ের নিচে ফেলাব।" এ কথা শুনে কল্হনের বুকে কথা বলে ওঠে তার জন্মজন্মান্তরের সংস্কার, "সে ত্যেজে যাবে তার মিত্যু হাতীর পায়ের লিচে। ই শাসনটো পালকাপ্য মুনির। ইয়ার ছাড় ছোড় লাই।" পরে কারাগার থেকে পালায় কল্হন। কিন্তু নিস্তার পায় না রাজার সেনার হাত থেকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কালের প্রতিমা, পৃ. ১৯০
  2. "মহাশ্বেতা: তথ্যপঞ্জি", মহাশ্বেতা দেবী অমনিবাস, পৃ. ৬১৪
  3. কালের প্রতিমা, পৃ. ১৯৩
  4. কালের প্রতিমা, পৃ. ২৩১

উল্লেখপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • মহাশ্বেতা দেবী, সংকলক: অজয় গুপ্ত, মহাশ্বেতা দেবী অমনিবাস, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৪ সংস্করণ
  • অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর: ১৯২৩-১৯৯৭, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ

টেমপ্লেট:মহাশ্বেতা দেবী