রুক্ষ অবতরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(কঠিন অবতরণ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
একটি বিমানের রুক্ষ অবতরণের পরে ইঞ্জিন ও দেহের ক্ষতি দেখা যাচ্ছে।
একটি বিমানের রুক্ষ অবতরণের পরে ইঞ্জিন ও দেহের ক্ষতি দেখা যাচ্ছে।

রুক্ষ অবতরণ বলতে যখন কোনও বিমান (আকাশযান বা উড়োযান) কিংবা কোনও মহাকাশযান স্বাভাবিক অবতরণের তুলনায় বেশি উল্লম্ব গতিবেগ ও বলের সাথে ভূমিতে আঘাত করে, সেই ব্যাপারটিকে বোঝায়।

অবতরণ কোনও বিমান বা মহাকাশযানের উড্ডয়নের শেষ ধাপ, যখন সেটি ভূপৃষ্ঠে (বা গ্রহপৃষ্ঠে) নেমে আসে। পৃথিবীতে বিমানের ক্ষেত্রে গড় উল্লম্ব গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় ২ মিটার হয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি উল্লম্ব গতিবেগে অবতরণ করলে সেটিকে বিমান চালনাকারী কর্মীদের "রুক্ষ" হিসেবে শ্রেণীকরণ করা উচিত। তবে রুক্ষ অবতরণ করতে হবে কি না, সে ব্যাপারে বিমানচালক কর্মীবৃন্দের সুবিবেচনাই সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য, কেননা পরিমাপকৃত ত্বরণের উপর ভিত্তি করে এটি নির্ণয় করা কঠিন এবং এটি করার উপদেশ দেওয়া হয় না।[১] এর কারণ প্রকৃত উল্লম্ব ত্বরণ কখনও পরিমাপ করা হয় না।[২]

রুক্ষ অবতরণ বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, যেমন প্রতিকূল আবহাওয়া, যান্ত্রিক গোলযোগ, অতিরিক্ত ভারী বিমান, বিমানচালকের সিদ্ধান্ত কিংবা ত্রুটি, ইত্যাদি। "রুক্ষ অবতরণ" কথাটি ব্যবহার করলে পরোক্ষভাবে এটা নির্দেশ করা হয় যে বিমানচালক এখনও সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিমানের নিয়ন্ত্রণে আছেন; এর বিপরীতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভূপৃষ্ঠে বিমানের পতন হলে সেটিকে "বিমান বিধ্বস্ত হওয়া" বলে, যা এক ধরনের দুর্ঘটনা। রুক্ষ অবতরণের পরিণাম বিচিত্র হতে পারে, যেমন যাত্রীদের হালকা অস্বস্তি, বিমানের ক্ষতি, কাঠামোগত বৈকল্য, আঘাত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। যখন কোনও বিমান রুক্ষ অবতরণ করে, তখন পরবর্তী উড্ডয়নের আগে অবশ্যই সেটির সমস্ত ক্ষতি সতর্কতার সাথে পরিদর্শন করে নেওয়া আবশ্যক।[১]

যদি ঠিকমত বা সাবধানতার সাথে সম্পাদন না করা হয়, তাহলে রুক্ষ অবতরণ একটি বিমানের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। যখন কোনও বিমানের অন্তিম নিকটাগমন (Final approach) অস্থিতিশীল হয়, তখন বিমানচালনাকারী কর্মীদের অবতরণ বাতিল করে ঘুরে আসা উচিত।[৩][৪]

হেলিকপ্টার জাতীয় বিমানের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ক্ষতি বা ইঞ্জিনের ক্ষতি হলেও ঘূর্ণক পাখাগুলি (রোটর) অটুট থাকলে এবং মুক্তভাবে ঘুরতে পারলে রুক্ষ অবতরণ সম্ভব হতে পারে। স্বতঃঘূর্ণন প্রক্রিয়াতে ঘূর্ণক পাখাগুলির উপরের বায়ুপ্রবাহ সেগুলি ঘুরন্ত অবস্থায় রাখে এবং কিছু উত্তোলক বল প্রদান করে, ফলে অবতরণের সময় হেলিকপ্টার চালক সীমিত আকারে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। তবে ইঞ্জিনের শক্তিহীন এই রকমের অবতরণ সঠিকভাবে ও নিরাপদে সম্পাদন করতে হলে চালকের প্রচুর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

একটি মহাকাশযানের রুক্ষ অবতরণ হলে সাধারণত সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটতে পারে। যখন পরিকল্পিতভাবে উচ্চ গতিবেগে গ্রহপৃষ্ঠে মহাকাশযানটির অভিঘাত সম্পাদন করা হয় (যার উদ্দেশ্য অভিঘাতের পরিণাম গবেষণা করা), তখন সেই মহাকাশযানটিকে অভিঘাতক (Impactor) বলে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. RALPH MICHAEL GARBER, LAWRENCE VAN KIRK, "Conditional Inspection", Aero, Boeing (14) 
  2. Guillaume Aigoin, Characterising hard landings / EASA EOFDM Conference, 12 January 2012, page 7: "The vertical parameter is neither vertical nor an acceleration … It is the normal load factor in the aircraft reference frame is not sufficient for assessing contact severity!"
  3. Richard N. Aarons (জুন ২২, ২০১৭)। "Unstabilized Approach?"Aviation Week Network। ATSB: When In Doubt, Go Around। 
  4. "Hard landing involving an Airbus A330, 9M-MTA, Melbourne Airport, Victoria on 14 March 2015", Aviation safety investigations & reports, ATSB, ৫ এপ্রিল ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]