বিষয়বস্তুতে চলুন

কঙ্গো নদী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কঙ্গো নদী
জায়ার নদী
কিসাঙ্গানির নিকটে নকঙ্গো নদী, কঙ্গো
কঙ্গো নদীর ড্রেনেজ বেসিন
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
উৎসলুয়ালাবা নদী
 • অবস্থানবয়োমা জলপ্রপাত
 • উচ্চতা১,৫৯০ মি (৫,২২০ ফু)
মোহনাআটলান্টিক মহাসাগর
 • স্থানাঙ্ক
০৬°০৪′২৭″ দক্ষিণ ১২°২৬′৫৯.৯৯″ পূর্ব / ৬.০৭৪১৭° দক্ষিণ ১২.৪৪৯৯৯৭২° পূর্ব / -6.07417; 12.4499972
দৈর্ঘ্য৪,৭০০ কিমি (২,৯০০ মা)
অববাহিকার আকার৪০,১৪,৫০০ কিমি (১৫,৫০,০০০ মা)[]
প্রস্থ 
 • সর্বনিম্ন২০০ মি (৬৬০ ফু) (নিম্ন কঙ্গো); ১,৪৪০ মি (৪,৭২০ ফু) (মধ্য কঙ্গো)[][][]
 • সর্বোচ্চ১৯,০০০ মি (৬২,০০০ ফু) (মুখ)
গভীরতা 
 • গড়১২ মি (৩৯ ফু) থেকে৭৫ মি (২৪৬ ফু) (নিম্ন কঙ্গো); ৫ মি (১৬ ফু) থেকে২২ মি (৭২ ফু) (মধ্য কঙ্গো)[][][]
 • সর্বোচ্চ২১৯.৫ মি (৭২০ ফু) (নিম্ন কঙ্গো); ৫০ মি (১৬০ ফু) (মধ্য কঙ্গো)[][][]
নিষ্কাশন 
 • অবস্থানআটলান্টিক মহাসাগর (নিকট মুখ)
 • গড়৪১,২০০ মি/সে (১৪,৫০,০০০ ঘনফুট/সে)[]
 • সর্বনিম্ন২৩,০০০ মি/সে (৮,১০,০০০ ঘনফুট/সে)[]
 • সর্বোচ্চ৭৫,০০০ মি/সে (২৬,০০,০০০ ঘনফুট/সে)[]
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য
উপনদী 
 • বামেলুবুদি, লোমামি, লুলোঙ্গা, ইকেলেম্বা, রুকি, কাসাই , ইঙ্কিসি
 • ডানেলুফিরা, লুভুয়া, লুকুগা, লুয়ামা, এলিলা, উলিন্দি, লোওয়া, মাইকো, ইতিম্বিরি, মঙ্গলা, উবাঙ্গি, সংঘা নদী, লেফিনি

কঙ্গো নদী ( কঙ্গো: Nzâdi Kôngo, ফরাসি: Fleuve Congo, পর্তুগিজ: Rio Congo), যা পূর্বে জায়ার নদী নামে পরিচিত ছিল– হলো নীল নদের পর আফ্রিকার ২য় দীর্ঘতম নদী। একইসাথে পানি প্রবাহের পরিমাণের দিক থেকে আমাজনের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। সেই সাথে এটি বিশ্বের গভীরতম নথিভুক্ত নদী। এর পরিমাপকৃত গভীরতা প্রায় ২১৯.৫ মি (৭২০ ফু)।[] কঙ্গো-লুয়ালাবা-চাম্বেশি নদী ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত এই নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৪,৭০০ কিমি (২,৯২০ মা) এবং এর মাধ্যমে এটি বিশ্বের নবম দীর্ঘতম নদী হয়েছে। চাম্বেশি হল লুয়ালাবা নদীর একটি উপনদী এবং লুয়ালাবা হল বয়োমা জলপ্রপাতের উজানের দিকে কঙ্গো নদীর নাম , যা ১,৮০০ কিমি (১,১২০ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রধান উপ-নদী লুয়ালাবা বরাবর পরিমাপ করা হলে কঙ্গো নদীর মোট দৈর্ঘ্য হয় ৪,৩৭০ কিমি (২,৭১৫ মা)। এটিই একমাত্র প্রধান নদী, যা নিরক্ষরেখাকে দুবার অতিক্রম করে।[] কঙ্গো অববাহিকাের মোট আয়তন প্রায় ৪০,০০,০০০ কিমি (১৫,০০,০০০ মা), যা সমগ্র আফ্রিকার ভূমির ১৩%।

কঙ্গো নদীতে সূর্যোদয়।

কঙ্গো নামের উৎপত্তি হয়েছে কঙ্গো রাজ্য থেকে। রাজ্যটি একসময় নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ছিল। রাজ্যটির নামকরণ করা হয়েছিল আদিবাসী বান্টু কঙ্গোদের নাম থেকে। ১৭ শতকে তারা "এসিকংগো" নামে পরিচিত।[] কঙ্গো রাজ্যের দক্ষিণে অনুরূপ নামের কাকঙ্গো রাজ্য ছিল, যেটি ১৫৩৫ সালে উল্লিখিত হয়েছিল। আব্রাহাম অরটেলিয়াস তার ১৫৬৪ সালের বিশ্ব মানচিত্রে নদীর মোহনায় অবস্থিত শহর হিসাবে "মানিকঙ্গো" চিহ্নিত করেছিলেন।[] কঙ্গোতে উপজাতীয় নামগুলো সম্ভবত একটি জনসমাবেশ বা উপজাতি সমাবেশের একটি শব্দ থেকে এসেছে। কঙ্গো জনগণের আধুনিক নাম বা বাকঙ্গো ২০ শতকের গোড়ার দিকে চালু হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জাইরে নামটি পর্তুগিজ একটি nzere থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি ("নদী"), nzadi o nzere ("নদী নদীকে গিলে খাচ্ছে ") এর সংক্ষিপ্ত রূও।[] ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে নদীটি জাইরে নামে পরিচিত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজি ব্যবহারে কঙ্গো ধীরে ধীরে জাইরেকে প্রতিস্থাপিত করেছে বলে মনে হয় এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে কঙ্গো শব্দটিই ছিল এই অঞ্চলের জন্য পছন্দের ইংরেজি নাম। তবুও বাসিন্দাদের দ্বারা ব্যবহৃত নাম হিসাবে জহির বা জাইরে উল্লেখ খুবই সাধারণ ছিল। [১০] গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে এই নদীর নামেই। একইভাবে ১৯৬০ সালে বেলজিয়ান কঙ্গো থেকে স্বাধীনতা লাভ করা পূর্ববর্তী কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নামও এই নদী থেকে রাখা হয়। ১৯৭১-১৯৯৭ সময়কালে জায়ার প্রজাতন্ত্রের নামও ফরাসি এবং পর্তুগিজ ভাষায় এই নদীর নামের নামে রাখা হয়েছিল।

অববাহিকা ও গতিপথ

[সম্পাদনা]
পুল মালেবো এবং এমবামুর উজানের অর্ধেক দিয়ে কঙ্গো নদীর পশ্চিম থেকে বায়বীয় দৃশ্য

কঙ্গোর নিষ্কাশন অববাহিকা ৪০,১৪,৫০০ কিমি (১৫,৫০,০০০ মা) জুড়ে রয়েছে।[] এটি ভারতের চেয়েও বড় এলাকা। কঙ্গোর মোহনার নিঃসরণ ২৩,০০০ থেকে ৭৫,০০০ মি/সে (৮,১০,০০০ থেকে ২৬,৫০,০০০ ঘনফুট/সে) পর্যন্ত হয়ে থাকে। গড় পরিমাণ হচ্ছে ৪১,০০০ মি/সে (১৪,০০,০০০ ঘনফুট/সে)।[] নদীটি আটলান্টিক মহাসাগরে বার্ষিক ৮৬ মিলিয়ন টন স্থগিত পলি এবং অতিরিক্ত ৬% বেডলোড পরিবহন করে।[১১]

কঙ্গো নদী এবং এর উপনদীগুলো কঙ্গো রেইনফরেস্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইনফরেস্টের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট এলাকা।

আমাজনের পর এই নদীটির একইসাথে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম নিষ্কাশন অববাহিকা রয়েছে। এছাড়াও এটি বিশ্বের গভীরতম নদীগুলোর মধ্যে একটি। এর গভীরতা ২২০ মি (৭২০ ফু)-এর বেশি।[][১২] কারণ এর নিষ্কাশন অববাহিকা নিরক্ষরেখার উত্তর এবং দক্ষিণ উভয় অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এর প্রবাহ স্থিতিশীল। কারণ উক্ত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বছরের যেকোনও সময়ে নদীর অন্তত একটি অংশে বর্ষাকাল থাকে।[১৩]

কঙ্গোর উৎস হল পূর্ব আফ্রিকান রিফ্টের উচ্চভূমি এবং পর্বতমালা। সেইসাথে তাংগানিকা হ্রদ এবং মুয়েরু হ্রদ লুয়ালাবা নদীর পানির যোগান দেয়। এটি পরে বয়োমা জলপ্রপাতের নীচে কঙ্গো নদীতে পরিণত হয়। জাম্বিয়ার চাম্বেশি নদীকে সাধারণত কঙ্গোর উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যেমনটি নীল নদের মতো দীর্ঘতম উপনদী ব্যবহার করার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত প্রথা অনুসারে করা হয়।

কঙ্গো সাধারণত বয়োমা জলপ্রপাতের ঠিক নীচে কিসাঙ্গানি থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। তারপর ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বেঁকে যায়। এমবান্দাকার পাশ দিয়ে এটি উবাঙ্গি নদীর সাথে মিলিত হয় এবং পুল মালেবোতে (স্ট্যানলি পুল) চলে যায়। কিনশাসা (পূর্বে লিওপোল্ডভিল) এবং ব্রাজাভিলে শহরদুটি পুলের নদীর দুই দিকে অবস্থিত। সেখানে নদীটি সরু হয়ে গিয়ে গভীর গিরিখাতে (সম্মিলিতভাবে লিভিংস্টোন জলপ্রপাত নামে পরিচিত), মাতাদি এবং বোমার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বেশ কয়েকটি ছানি দ্বারা মুয়ান্ডায় সমুদ্রে পতিত হয়।

নিম্ন কঙ্গো বিরাট নদীটির 'নিম্ন' অংশ গঠন করে; এটি আটলান্টিক উপকূলে নদীর মোহনা থেকে ব্রাজাভিল ও কিনশাসার যমজ রাজধানী পর্যন্ত নদীর অংশ। নদীর এই অংশে বাম বা দক্ষিণ দিকে দুটি উল্লেখযোগ্য উপনদী রয়েছে। কুইলু নদীটি অ্যাঙ্গোলান সীমান্তের কাছে পাহাড়ে উৎপন্ন হয়েছে এবং মাতাদি থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উজানে কঙ্গোতে প্রবেশ করেছে। অন্যটি হচ্ছে ইনকিসি নদী। এটি অ্যাঙ্গোলার উইজ প্রদেশ থেকে উত্তর দিকে যমজ রাজধানী থেকে প্রায় ৮০ কিমি দূরে জোঙ্গোতে কঙ্গোর সাথে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ঢলের কারণে, বিশেষ করে লিভিংস্টোন জলপ্রপাতের কারণে, নদীর এই অংশটি নদীর বোট দ্বারা অবিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয় না।

উপনদী

[সম্পাদনা]
চিহ্নিত দেশ সহ কঙ্গো নদীর গতিপথ এবং নিষ্কাশন অববাহিকা
টপোগ্রাফি শেডিং সহ কঙ্গো নদীর গতিপথ এবং নিষ্কাশন অববাহিকা

প্রধান নদী এবং উপনদীগুলো হল (উজানের মুখ থেকে ক্রমানুসারে সাজানো):

বাম উপনদী ডান উপনদী দৈর্ঘ্য (কিমি) অববাহিকাের আকার (কিমি²) গড় প্রবাহ (mi/s)
নিম্ন কঙ্গো

(কিনশাসাতে নদীর মুখ)

ম'পোজো ১৭০ ৭৯
কুইলু ২৮৪ ৬,৫০০ ৮৯
ইনকিসি ৩৯২ ১৩,৫০০ ২৯১
জুয়ে ১৭৫ ৬,২২৫ ১৫৮
মধ্য কঙ্গো

(কিনশাসা থেকে বয়োমা জলপ্রপাত)

এনসেলে ১৯৩ ৪,৫০০ ৭৭
লুফিমি ২৫০ ১১,৫০০ ১৯৯
কসাই ২,১৫৩ ৮৮৪,৩৭০ ১১,৬০০
লেফিনি ১৪,০০০ ৪২৩
এনকেনি ৮,০০০ ২৪৯
আলিমা ৫০০ ২১,০৩০ ৭০০
লিকুয়ালা ৬১৫ ৬৯,৮০০ ১,০৫৩
সংঘ ১,৩৯৫ ১৯১,৯৫৩ ২,৪৭১
ইরেবু ৩৫ ৭,৩৮০ ১০৬
উবাঙ্গি ২,২৯৯ ৬৫১,৯১৮ ৫,৯৩৬
রুকি ১,২০০ ১৭৩,৭৯০ ৪,৫০০
ইকেলেম্বা ৩৪৫ ১২,৫১০ ২২২
লুলোঙ্গা ৭০৫ ৭৬,৯৫০ ২,০৪০
মোঙ্গালা ৫৯০ ৫২,২০০ ৭০৯
ইতিম্বিরি ৫৩৫ ৫০,৪৯০ ৭৭৩
আরুইমি ১,২৮৭ ১১৬,১০০ ২,২০০
লোমামি ১,৭৯৮ ১০৯,০৮০ ২,০৬২
লিন্ডি ৬০০ ৬০,৩০০ ১,২০০
উচ্চ কঙ্গো

(লুয়ালাবা; বয়োমা জলপ্রপাত থেকে উজানে)

মাইকো ৩১৯
লিলো ১৯২
রুইকি ১২৬
লিলো ৯৩
লোয়া ৬০০ ৪৯,৫৯০ ১,৬২৫
উলিন্দি ৬৯০ ৩০,২৪০ ৯০২
কাসুকু ১৭৬
আম্বে ৬৮
এলিলা ৬৭০ ২৭,৩৬০ ৬৭৮
লুইকি ৫৯
লুবুতু ৫৭
কুন্ডা ৪১
লুয়ামা ৩২০ ২৫,০০০ ২২১
লুকুগা ৩৫০ ২৭১,৫৮০ ২৭১
লুভিডজো ২৪০ ৭০
লুভুয়া ৩৭৩ ২৬৫,২৬০ ৬০০
কালুমেন-গঙ্গো ৬৭
লোভোই ১৮৬
লুফিরা ৫৯০ ৫১,৪৮০ ৫০২
লুবুদি ৩৭০ ২৭,৫০০ ১৯২

[১৪][১৫][১৬][১৭]

লোয়ার কঙ্গো (নদীর মুখ থেকে কিনশাসা) কিনশাসার ভাটিতে, কলা নদীর মুখ থেকে, কয়েকটি প্রধান উপনদী রয়েছে।

  • ম'পোজো (বামে)
  • কুইলু (বাম)
  • ইনকিসি (বাম)
  • জুয়ে (ডানে)

মধ্য কঙ্গো (কিনশাসা থেকে বয়োমা জলপ্রপাত)

  • কোয়া-কাসাই (বাম)
    • ফিমি
      • লুকেনি
    • কোয়াঙ্গো
      • কুইলু
    • শঙ্কুর
  • আলিমা (ডানে)
  • লিকুয়ালা - মোসাকা (ডানে)
  • সংঘ (ডানে)
    • Kadéï (৫৭০ কিমি, ৪১,০০০ কিমি², ৪৬৬ মি³/s)
  • উবাঙ্গি (ডানে)
    • এমবোমউ
    • উলে
  • শুয়াপা বা রুকি (বাম)
  • লুলঙ্গা (বাম)
    • লোপোরি
    • মারিঙ্গা
  • মঙ্গলা (ডানে)
  • ইতিমবিরি (ডানে)
  • আরুইমি (ডানে)
  • লোমামি (বাম)
  • লিন্ডি (ডানে)

উচ্চ কঙ্গো (লুয়ালাবা ; বয়োমা জলপ্রপাত থেকে উজানে)

  • লোওয়া (ডান)
  • উলিন্দি (ডানে)
  • এলিলা (ডানে)
  • লুয়ামা (ডানে)
  • লুকুগা (ডান)
  • লুভুয়া (ডানে)
    • লুয়াপুলা (৭৪০ কিমি, ১৭৩,৩৮৬ কিমি², ৭৪১ মি³/s)
      • চাম্বেশি (৫০০ কিমি, ৪৪,৪২৭ কিমি², ১৮৫ মি³/s)

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

[সম্পাদনা]
এমবান্দাকা শহরটি কঙ্গো নদীর তীরে একটি ব্যস্ত বন্দর।
মালুকুতে কঙ্গো নদী।

যদিও লিভিংস্টোন জলপ্রপাত সমুদ্র থেকে এই নদীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। তবে এর উজানে প্রায় সমগ্র কঙ্গো অংশে, বিশেষ করে কিনশাসা এবং কিসাঙ্গানির মধ্যে সহজেই নৌ-চলাচলযোগ্য। বড় নদী স্টিমারগুলো বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত নদীতে কাজ করত।[কখন?] কঙ্গো নদী এখনও খুব কম রাস্তা বা রেলপথযুক্ত দেশে যোগাযোগের একমাত্র উপায়। রেলওয়ে এখন তিনটি প্রধান জলপ্রপাতকে বাইপাস করে এবং মধ্য আফ্রিকার বেশিরভাগ বাণিজ্য নদী বরাবর চলে। পরিবাহিত বাণিজ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে তামা, পাম তেল (কার্নেল হিসাবে), চিনি, কফিতুলা[১৮]

জলবিদ্যুৎ

[সম্পাদনা]

কঙ্গো নদী আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী নদী। বর্ষাকালে এই নদীর মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫০,০০০ ঘনমিটার (১৮,০০,০০০ ঘনফুট) পানি আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবাহিত হয়। কঙ্গো নদী এবং এর উপনদীগুলোর ক্ষেত্রে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ প্রচুর। বিজ্ঞানীরা গণনা করেছেন যে, সমগ্র কঙ্গো অববাহিকা বিশ্বব্যাপী জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার ১৩ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। এটি সাব-সাহারান আফ্রিকার সমস্ত বিদ্যুৎ চাহিদার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।[১৯]

বর্তমানে কঙ্গো অববাহিকাে প্রায় ৪০টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। কিনশাসার প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২০ মা) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইঙ্গা বাঁধ হচ্ছে বৃহত্তম বাঁধ। প্রথম বাঁধ নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল।[২০] পরিকল্পনায় (মূলত ধারণা করা হয়েছিল) পাঁচটি বাঁধ নির্মাণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৪,৫০০ মেগাওয়াট (মেগাওয়াট) হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ইঙ্গা ১ এবং ইঙ্গা ২ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুটি সম্মিলিত ভাবে ১,৭৭৬ মেগাওয়াট উৎপাদন করে।[১৯]

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি এসকল বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নতি এবং একটি নতুন জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে উৎপাদন সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব ঘোষণা করে। প্রকল্পটি সুবিধার সর্বোচ্চ আউটপুট ৪০ গিগাওয়াট (৫,৪০,০০,০০০ অশ্বশক্তি) নিয়ে আসবে।[২১] তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই নতুন জলবিদ্যুৎ বাঁধের ফলে নদীতে বসবাসকারী অনেক মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।[২২]

প্রাকৃতিক ইতিহাস

[সম্পাদনা]
কিনশাসার কাছে লিভিংস্টোন জলপ্রপাত (লোয়ার কঙ্গো নদীপ্রপাতস) এর শুরু

কঙ্গো নদীর বর্তমান গতিপথ প্লাইস্টোসিনের সময় ১.৫ থেকে ২ মিলিয়ন বছর বিপির মধ্যে গঠিত হয়েছিল।[২৩] সম্ভবত এই সময়কালে কঙ্গো নদী এরর অনেক উপনদীগুলো সংলগ্ন নদী অববাহিকা থেকে সরে এসে কঙ্গো নদীতে পতিত হয় বা কঙ্গো নদী তাদের গ্রাস করে। এর মধ্যে চারি নদী ব্যবস্থা থেকে উয়েলে এবং উপরের উবাঙ্গি[২৪] এবং জাম্বেজি নদী ব্যবস্থা থেকে উজানের কাসাই নদীর বেশ কয়েকটি উপনদীগুলোর পাশাপাশি চাম্বেশি নদী[২৫] অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২৬]

কঙ্গোর গঠনের ফলে বোনোবো এবং সাধারণ শিম্পাঞ্জিকে তাদের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে অ্যালোপ্যাট্রিক স্পেসিফিকেশন হতে পারে।[২৭] বোনোবো এই অঞ্চলের আর্দ্র বনাঞ্চলে স্থানীয়। একইসাথে অন্যান্য আইকনিক প্রজাতি যেমন অ্যালেন'স সোয়াম্প বানর, ড্রাইস বানর, জলজ জেনেট, ওকাপি এবং কঙ্গো ময়ূরও এখানকার স্থানীয় প্রজাতি।[২৮]

জলজ জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে, কঙ্গো নদীর অববাহিকায় একটি অত্যন্ত উচ্চ প্রজাতিগত সমৃদ্ধি রয়েছে এবং স্থানীয় প্রজাতিগুলোর সর্বাধিক পরিচিত ঘনত্বের মধ্যে রয়েছে।[২৯] ২০০৯-এর হিসাব অনুযায়ী কঙ্গো নদীর অববাহিকা থেকে প্রায় ৮০০টি মাছের প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে (তাঙ্গানিকা হ্রদ গণনা করা হচ্ছে না। কারণ এটি কঙ্গো নদীর সাথে সংযুক্ত হলেও পরিবেশগতভাবে খুব আলাদা)।[৩০] কিন্তু নদীটির একটি বড় অংশ কার্যত অপার্যালোচিত রয়ে গেছে।[৩১] উদাহরণস্বরূপ, প্রায় বেলজিয়ামের সমান আকারের সালঙ্গা জাতীয় উদ্যানের অংশটি থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্তও নমুনা করা হয়নি।[৩২] কঙ্গো নদী অববাহিকা থেকে নিয়মিত নতুন মাছের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায় এবং অনেক অবর্ণিত প্রজাতি বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করা সম্ভব হয়।[৩৩]

কঙ্গোতে এখন পর্যন্ত যে কোনও আফ্রিকান নদী ব্যবস্থার সর্বোচ্চ বৈচিত্র্য রয়েছে। তুলনামূলক হিসেবে পরবর্তী সমৃদ্ধ নদী নাইজার, ভোল্টা এবং নীল নদে যথাক্রমে প্রায় ২৪০, ১৪০ এবং ১৩০ প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে।[৩০][৩৪] কঙ্গো অববাহিকার অঞ্চলগুলোর মধ্যে নদীর নদীপ্রপাত, গভীর নদী, জলাভূমি এবং হ্রদের মতো বিশাল পরিবেশগত পার্থক্যের কারণে নদীটিকে একক বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করার পরিবর্তে প্রায়ই একাধিক বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এই বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে, লিভিংস্টোন জলপ্রপাতের ছানির ৩০০ টিরও বেশি মাছের প্রজাতি রয়েছে,[৩৫] যার মধ্যে প্রায় ৮০ টি স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে।[২২] অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে (কাসাই নদী অববাহিকায়) ২০০ টিরও বেশি মাছের প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ স্থানীয় প্রজাতি।[৩৬]

অন্তত নদীর কিছু অংশে) প্রভাবশালী মাছ পরিবারগুলো হচ্ছে - সাইপ্রিনিডে (কার্প/সাইপ্রিনিড, যেমন ল্যাবেও সিম্পসোনি), মরমিরিডি (হাতি মাছ), অ্যালেস্টিডি (আফ্রিকান টেট্রাস), মোচোকিডে (স্কেকার ক্যাটফিশ), এবং সিচলিডি (সিচলিড)।[৩৭] নদীর আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে বিশাল ও অত্যন্ত মাংসাশী দৈত্যাকার টাইগারফিশ। আরও তিনটি অস্বাভাবিক স্থানীয় প্রজাতি হলো: সাদা (রঞ্জকবিহীন) ও অন্ধ ল্যামপ্রোলগাস লেথপস, যা পৃষ্ঠের নীচে ১৬০ মিটার (৫২০ ফু) গভীরে বসবাস করে বলে মনে করা হয়ঃ;[২২] হেটেরোক্রোমিস মাল্টিডেনস, যা অন্যান্য আফ্রিকান সিচলিডের তুলনায় আমেরিকার সিচলিডের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত;[৩৮] এবং মধ্য আফ্রিকার একমাত্র গুহামাছ কেকোবারবাস গির্টিসি[৩৯] এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য স্থানীয় ব্যাঙ ও শামুক।[৩৭][৪০] নদীতে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ বাঁধের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং এর ফলে অনেক স্থানীয় প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।[২২]

বেশ কয়েকটি প্রজাতির কচ্ছপ এবং সরু-পাতলা কুমির, নীলনদীয় কুমির এবং বামন কুমির কঙ্গো নদীর অববাহিকায় স্থানীয়। আফ্রিকান মানাটিরা নদীর নিম্ন অংশে বাস করে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রাক-ঔপনিবেশিক ইতিহাস

[সম্পাদনা]
কঙ্গো মোহনার ১৭ শতকের মানচিত্র
আফ্রিকার এই ১৮৫৩ সালের মানচিত্রে, অবশিষ্ট অনাবিষ্কৃত অঞ্চলটি মূলত কঙ্গো অববাহিকাের সাথে মিলে যায়

সমগ্র কঙ্গো অববাহিকা বান্টু জনগোষ্ঠীর আবাস্থল। তারা আবার কয়েকশ জাতিগত গোষ্ঠীতে বিভক্ত। বান্টুর বিস্তার প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে মধ্য কঙ্গো এবং প্রথম শতাব্দীর মধ্যে উচ্চ কঙ্গোতে পৌঁছেছিল বলে অনুমান করা হয়। বান্টু অভিবাসনের ফলে বাস্তুচ্যুত আদিবাসীদের অবশিষ্টাংশ, উবাঙ্গিয়ান ফিলামের পিগমি/অবাতোয়ারা, কঙ্গো অববাহিকাের প্রত্যন্ত বনাঞ্চলে রয়ে যায়।

১৪ শতকের শেষের দিকে কঙ্গো নদীর বাম তীরে এমপেম্বা কাসি এবং এমবাটা রাজ্যের একীভূতকরণ করার মাধ্যমে কঙ্গো রাজ্য গঠিত হয়েছিল। নদী বরাবর এর আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ আধুনিক কঙ্গো সেন্ট্রাল প্রদেশের সাথে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৪৮২ সালে (সম্ভবত ১৪৮২ সালের আগস্টে) পর্তুগিজ অভিযাত্রী ডিয়োগো কাও নদীর মোহনা আবিষ্কার করার পর কঙ্গোতে ইউরোপীয় অন্বেষণ শুরু হয়েছিল। স্থানটিকে তিনি শার্ক পয়েন্টে নির্মিত একটি পাদ্রাও বা পাথরের স্তম্ভ (এখনও বিদ্যমান, তবে কেবল ভগ্নাংশ) দ্বারা চিহ্নিত করেছিলেন। কাও অল্প দূরত্বের জন্য নদীতে যাত্রা করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি কঙ্গো রাজ্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। নদীর সম্পূর্ণ গতিপথ আধুনিক যুগের প্রথম দিকে অজানা ছিল।[৪১]

উচ্চ কঙ্গো অববাহিকা আলবার্টিন রিফটের পশ্চিমে বিস্তৃত। ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত কঙ্গোর সাথে এর সংযোগ অজানা ছিল। কঙ্গো অববাহিকার একদম উত্তর-পূর্বে ১৫ এবং ১৮ শতকের মধ্যবর্তী কোনো সময়ে দক্ষিণ লুও ভাষী আলুর জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের দ্বারা নীল-নদের উচ্চ অববাহিকার মানুষদের সম্প্রসারণের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছিল। ফ্রান্সিসকো দে লেসারদা জাম্বেজি নদীকে অনুসরণ করে ১৭৯৬ সালে কঙ্গো অববাহিকার (উপরের লুয়াপুলা অববাহিকায় কাজেম্বে) সবচেয়ে উপরের অংশে পৌঁছান।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে আরব দাস বাণিজ্যের মাধ্যমে উচ্চ কঙ্গো নদীতে প্রথমবার পৌঁছানো যায়। নিয়াংওয়ে শহরটি ১৮৬০ সালের দিকে দাসদের একটি ফাঁড়ি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ডেভিড লিভিংস্টোন হচ্ছেন প্রথম ইউরোপীয়, যিনি ১৮৭১ সালের মার্চ মাসে নিয়াংওয়েতে পৌঁছেছিলেন। লিভিংস্টোন প্রস্তাব করেছিলেন, লুয়ালাবা নীল নদের সাথে সংযুক্ত। তিনি তা প্রমাণ করার চেষ্টাও করেছিলেন। তবে ১৫ জুলাই তিনি নিয়াংওয়েতে আরব দাসদের দ্বারা প্রায় ৪০০ আফ্রিকানদের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা তাকে নীল নদের উত্স খুঁজে বের করার মিশন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাকে খুব আতঙ্কিত করে। ফলে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করে তাঙ্গানিকা হ্রদে ফিরে আসেন।[৪২][৪৩]

প্রাথমিক ইউরোপীয় উপনিবেশ

[সম্পাদনা]
হেনরি এম স্ট্যানলি অ্যাডভান্স কলামের অফিসারদের সাথে, কায়রো, ১৮৯০। বাম থেকে: ড. থমাস হেজেল পার্কে, রবার্ট এইচ. নেলসন, হেনরি এম. স্ট্যানলি, উইলিয়াম জি. সিঁড়ি এবং আর্থার জেএম জেফসন
টমাস ভিনকোটের কঙ্গো নদীর রূপক।[৪৪]

১৮৭৬-৭৭ সালের হেনরি মর্টন স্ট্যানলির অভিযানের আগ পর্যন্ত ইউরোপীয়রা পূর্ব বা পশ্চিম দিক থেকে কঙ্গো অববাহিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পৌঁছায়নি। সেই সময়ে আফ্রিকার ইউরোপীয় অন্বেষণের শেষ উন্মুক্ত প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি ছিল লুয়ালাবা নদী নীল নদ (লিভিংস্টোনের তত্ত্ব), কঙ্গো[৪৫] এমনকি নাইজার নদীরও উপনদী কিনা। ১৮৭৪ সালে অর্থায়ন পাওয়ার পর স্ট্যানলির প্রথম ট্রান্স-আফ্রিকা অনুসন্ধান শুরু করেন। তিনি জাঞ্জিবার থেকে অভিযান শুরু করে ১৮৭৬ সালের ১৭ অক্টোবরে লুয়ালাবাতে পৌঁছান। স্থলপথে ভ্রমণ করে তিনি ন্যাংওয়েতে পৌঁছান। অঞ্চলটি ছিল নরখাদক উপজাতি সমন্বিত একটি আইনহীন এলাকার কেন্দ্র. পাশাপাশি এলাকাটি টিপ্পু‌ টিপের দাস-ব্যবসার ভিত্তি অঞ্চল ছিল। স্ট্যানলি পরবর্তী ১৫০ কিলোমিটার (৯০ মাইল) বা তারও বেশি দূরত্ব অতিক্রমের ক্ষেত্রে ৯০ দিন তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য টিপু টিপ থেকে একটি বাহিনী ভাড়া করতে সক্ষম হন।

দলটি ঘন মাটিম্বা বনের মধ্য দিয়ে ওভারল্যান্ডে নিয়াংওয়ে ছেড়ে চলে যায়। ১৯ নভেম্বর তারা আবার লুয়ালাবায় পৌঁছায়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়া খুব কষ্টকর হওয়ায় টিপ্পু‌ টিপ ২৮ ডিসেম্বরে স্ট্যানলিকে একা রেখে আট শিশু এবং ১৬ জন মহিলা সহ ১৪৩ জনের দল নিয়ে উল্টো পথে ফিরে যায়। তাদের কাছে ছিল ২৩টি নৌকা। স্থানীয় উপজাতিগুলোর মধ্যে নরখাদক ওয়েনিয়া উপজাতির সাথে সাথে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। স্ট্যানলি নদীতে মোট ৩২ টি বন্ধুত্বহীন বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ রাস্তা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করলেও ছোটোখাটো কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে। উপজাতিরা তখন অধিক সতর্ক ছিল। কারণ বহিরাগতসাথে সাথে তাদের একমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল দাস ব্যবসায়ীদের সাথে।

১৮৭৭ সালের ৬ ই জানুয়ারিতে ৬৪০ কিলোমিটার (৪০০ মা) অতিক্রম করার পরে, তারা বয়োমা জলপ্রপাত (কিছু সময়ের জন্য স্ট্যানলি জলপ্রপাত নামে পরিচিত ছিল) পৌঁছায়। সেখানে ১০০ কিলোমিটার (৬০ মা) বিস্তৃত সাতটি ছানি ছিল। সেগুলোকে তাদের স্থলপথ অতিক্রম করতে হয়েছিল। জলপ্রপাতের শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে তাদের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগেছিল। এখানে স্ট্যানলি জানতে পেরেছিলেন, নদীটিকে ইকুতা ইয়াকঙ্গো বলা হয়।[৪৬] এর মাধ্যমে তিনি নিজের দাবি প্রমাণ করেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি কঙ্গোতে পৌঁছান এবং লুয়ালাবা নীল নদের উপনদী নয়।

এই এলাকা থেকেই স্থানীয় উপজাতিরা আর নরখাদক ছিল না।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] কিন্তু দৃশ্যত পর্তুগিজ প্রভাবের ফলে তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রায় চার সপ্তাহ এবং ১,৯০০ কিলোমিটার (১,২০০ মা) অতিক্রম করার পরে তিনি স্ট্যানলি পুলে (বর্তমানে পুল মালেবো) পৌঁছান। এখানেই বর্তমান সময়ের শহর কিনশাসা এবং ব্রাজাভিলের অবস্থান। আরও নিচের দিকে ছিল লিভিংস্টোন জলপ্রপাত, (লিভিংস্টোন কখনই কঙ্গোতে ছিল না বলে এটির ভুল নামকরণ করা হয়েছে)। এটি ৩২টি জলপ্রপাত এবং নদীপ্রপাতের একটি সিরিজ, যা ৩৫০ কিলোমিটারের উপরে ২৭০ মিটার (৯০০ ফু) উচ্চতা পরিবর্তন করে। ১৫ মার্চ তারা জলপ্রপাতের স্থানে অবতরণ শুরু করে। এটি শেষ করতে তাদের পাঁচ মাস সময় লেগেছিল এবং অসংখ্য মানুষ এরই মধ্যে তাদের জীবন হারিয়েছে I ইসানগিল জলপ্রপাত (পাদদেশের পাঁচটি জলপ্রপাত) থেকে তারা নৌকা এবং লেডি অ্যালিসকে সৈকত করে এবং স্থলপথে বোমার পর্তুগিজ ফাঁড়ির দিকে লক্ষ্য রেখে নদী ছেড়ে চলে যায়।

৩ আগস্টে তারা এনসাডা গ্রামে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্ট্যানলি চারজনকে চিঠি দিয়ে বোমার কাছে পাঠিয়ে তার ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবার চেয়েছিলেন। ৭ আগস্টে তাদের জন্য ত্রাণ আসে। লিভারপুল ট্রেডিং ফার্ম হ্যাটন অ্যান্ড কুকসনের প্রতিনিধি তাদের কাছে সাহায্য পাঠায়। ১৮৭৪ সালে ১২ নভেম্বরে জাঞ্জিবার ছেড়ে যাওয়ার ১,০০১ দিন পরে ৯ আগস্টে তারা বোমায় পৌঁছায়। সেই দলে তখন ১০৮ জন ছিল। এদের মধ্যে ভ্রমণের সময় জন্ম নেওয়া তিনটি শিশু ছিল। সম্ভবত (স্ট্যানলির নিজস্ব প্রকাশনাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিসংখ্যান দেয়), তিনি রোগ, ক্ষুধা, ডুবে যাওয়া, হত্যা এবং ছেড়ে আসার মাধ্যমে মোট ১৩২ জন ভ্রমণসঙ্গী হারিয়েছিলেন।[৪৭]

১৮৮১ সালে স্ট্যানলি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে কিনশাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বেলজিয়ামের দ্বিতীয় লিওপোল্ডের সম্মানে তিনি লিওপোল্ডভিলের নামকরণ করেছিলেন। কঙ্গো অববাহিকা ১৮৮৫ সালে কঙ্গো ফ্রি স্টেট হিসাবে দ্বিতীয় লিওপোল্ড কর্তৃক ব্যক্তিগতভাবে দাবি করা হয়েছিল। এই অঞ্চলটিকে বেলজিয়ান কঙ্গো বলা না হওয়া পর্যন্ত কঙ্গো ফ্রি স্টেটে অনেক নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  • কঙ্গো নদীর ক্রসিংয়ের তালিকা
  • ২০২১ কঙ্গো নদীর বিপর্যয়

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bossche, J.P. vanden; G. M. Bernacsek (১৯৯০)। Source Book for the Inland Fishery Resources of Africa, Volume 1। Food and Agriculture Organization of the United Nations। পৃষ্ঠা 338–339। আইএসবিএন 978-92-5-102983-1। ২০১৬-০৪-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৭ 
  2. "Discharge and Other Hydraulic Measurements for Characterizing the Hydraulics of Lower Congo River"। ২০০৯। 
  3. "Velocity Mapping in the Lower Congo River: A First Look at the Unique Bathymetry and Hydrodynamics of Bulu Reach, West Central Africa"। ২০০৯। 
  4. "Multi-threaded Congo River channel hydraulics: Field-based characterisation and representation in hydrodynamic models" (পিডিএফ)। ২০২০। 
  5. Oberg, Kevin (জুলাই ২০০৮)। "Discharge and Other Hydraulic Measurements for Characterizing the Hydraulics of Lower Congo River, July 2008" (পিডিএফ)। U.S. Geological Survey। ২০১১-১০-১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৪ 
  6. Forbath, Peter. The River Congo (1979), p. 6. "Not until it crosses the Equator will it at last turn away from this misleading course and, describing a remarkable counter-clockwise arc first to the west and then to the southwest, flow back across the Equator and on down to the Atlantic.
    In this the Congo is exceptional. No other major river in the world crosses the Equator even once, let alone twice."
  7. Anderson, David (২০০০)। Africa's Urban Past। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 9780852557617। ২০১৭-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০৪ 
  8. Manikongo was properly the title of the kings of Kongo; their capital was at the site of modern M'banza-Kongo, capital of Angola's northwestern Zaire Province. Ortelius had no knowledge of the orography of Africa and drew fictitious courses for its rivers; his Congo upstream of its estuary turns sharply south, flowing through what would correspond to Angola and Botswana.
  9. Peter Forbath (১৯৭৭)। The River Congo। পৃষ্ঠা 19 
  10. James Barbot (১৭৪৬)। An Abstract of a Voyage to Congo River, Or the Zair and to Cabinde in the Year 1700  James Hingston Tuckey (১৮১৮)। Narrative of an Expedition to Explore the River Zaire, Usually Called the Congo, in South Africa, in 1816। ২০১৮-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১১  John Purdy (১৮২২)। Memoir, Descriptive and Explanatory, to Accompany the New Chart of the Ethiopic Or Southern Atlantic Ocean। পৃষ্ঠা 112। 
  11. Hanibal Lemma, and colleagues (২০১৯)। "Bedload transport measurements in the Gilgel Abay River, Lake Tana Basin, Ethiopia (Table 7)": 123968। ডিওআই:10.1016/j.jhydrol.2019.123968 
  12. "Monster Fish of the Congo"National Geographic Channel। ২০০৯। ২০১০-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. The Congo River ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-১০-২০ তারিখে. Rainforests.mongabay.com. Retrieved on 2011-11-29.
  14. "Satellite-based estimates of surface water dynamics in the Congo River Basin (HAL)"। ২০১৭। 
  15. "Rivers Network"। ২০২০। 
  16. "Topographic maps" 
  17. "Comission Internationale du Bassin Congo-Oubangui-Sangha (CICOS)"। ২০১৪। 
  18. "DR Congo – AFRICAN FINE COFFEES ASSOCIATION (AFCA)" (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ অক্টোবর ২০১৬। ২৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৪ 
  19. Alain Nubourgh, Belgian Technical Cooperation (BTC) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-০৯-০২ তারিখে. Weetlogs.scilogs.be (2010-04-27). Retrieved on 2011-11-29.
  20. Showers, Kate B. (২০১১-০৯-০১)। "Electrifying Africa: An Environmental History with Policy Implications" (ইংরেজি ভাষায়): 193–221। আইএসএসএন 1468-0467ডিওআই:10.1111/j.1468-0467.2011.00373.x 
  21. Vasagar, Jeevan (২০০৫-০২-২৫)। "Could a $50bn plan to tame this mighty river bring electricity to all of Africa?"World news। London: The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-৩০ 
  22. Norlander, Britt (২০ এপ্রিল ২০০৯)। "Rough waters: one of the world's most turbulent rivers is home to a wide array of fish species. Now, large dams are threatening their future"। Science World। ৮ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  23. Leonard C. Beadle (১৯৮১)। The inland waters of tropical Africa: an introduction to tropical limnology। Longman। পৃষ্ঠা 475। আইএসবিএন 978-0-582-46341-7। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১১  "It is hypothesized that in the late Pliocene or early Pleistocene, a coastal Lower Guinean river captured Malebo Pool, connecting the previously interior Congo Basin to the ocean." Thieme et al., Freshwater Ecoregions of Africa and Madagascar: A Conservation Assessment Ecoregions Assessments, Island Press, 2005, p. 297 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১২-২৪ তারিখে.
  24. Cooper, John E. and Hull, Gordon; Gorilla Pathology and Health: With a Catalogue of Preserved Materials, p. 371 আইএসবিএন ৯৭৮০১২৮০২০৩৯৫
  25. Skelton, P.H. 1994. ‘Diversity and distribution of freshwater fishes in East and Southern Africa’, in Biological diversity in African fresh and brackish water fishes, Symposium Paradi(G.G. Teugels, J.F. Guégan, and J.J. Albaret, editors), pp. 95–131. Annals of the Royal Central African Museum (Zoology) No. 275.
  26. Gupta, Avijit (editor); Large Rivers: Geomorphology and Management, p. 327 আইএসবিএন ৯৭৮০৪৭০৮৪৯৮৭৩
  27. Caswell JL, Mallick S, Richter DJ (২০০৮)। "Analysis of chimpanzee history based on genome sequence alignments": e1000057। ডিওআই:10.1371/journal.pgen.1000057পিএমআইডি 18421364পিএমসি 2278377অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  28. Kingdon, Jonathan (১৯৯৭)। The Kingdon Guide to African Mammals। Academic Press Limited। আইএসবিএন 978-0-1240-8355-4 
  29. Dickman, Kyle (২০০৯-১১-০৩)। "Evolution in the Deepest River in the World"Science & Nature। Smithsonian Magazine। ২০১১-১১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০৪ 
  30. Frans Witte; Martien J. P. van Oijen (২০০৯)। "Fish Fauna of the Nile"। The Nile। Springer। পৃষ্ঠা 647–675। আইএসবিএন 978-1-4020-9725-6 
  31. Freshwater Ecoregions of the World (2008). Sudanic Congo – Oubangi. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-১০-০৫ তারিখে Accessed 2 May 2011.
  32. Schliewen, U.K.; M.L.J. Stiassny (২০০৬)। "A new species of Nanochromis (Teleostei: Cichlidae) from Lake Mai Ndombe, central Congo Basin, Democratic Republic of Congo": 33–46। ডিওআই:10.11646/zootaxa.1169.1.2 
  33. Schwarzer, J.; B. Misof (২০১১)। "Speciation within genomic networks: a case study based on Steatocranus cichlids of the lower Congo rapids": 138–148। ডিওআই:10.1111/j.1420-9101.2011.02409.xঅবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 22070232 
  34. "Fish Ecology in Tropical Streams"। Tropical Stream Ecology। Academic Press। ২০০৮। পৃষ্ঠা 107–146। আইএসবিএন 978-0-12-088449-0 
  35. Weisberger, Mindy (১২ জানুয়ারি ২০২০)। "Dying Fish Revealed Congo Is World's Deepest River"livescience.com। LiveScience। ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০২০ 
  36. Freshwater Ecoregions of the World (2008). Kasai. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-১০-০৫ তারিখে Accessed 2 May 2011.
  37. Freshwater Ecoregions of the World (2008). Upper Lualaba. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-১০-০৫ তারিখে Accessed 2 May 2011.
  38. Kullander, S.O. (1998). A phylogeny and classification of the South American Cichlidae (Teleostei: Perciformes). pp. 461–498 in Malabarba, L., et al. (eds.), Phylogeny and Classification of Neotropical Fishes, Porto Alegre.
  39. Subterranean fishes of the world। ২০০৬। আইএসবিএন 978-2-9527084-0-1 
  40. Freshwater Ecoregions of the World (2008). Lower Congo Rapids. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-১০-০৫ তারিখে Accessed 2 May 2011.
  41. The Dieppe maps of the mid-16th century show the Congo only as a minor river while having the Nile run throughout the continent, rising in Southern Africa. The same interpretation is in essence still found in Jan Blaeu's Atlas Maior of 1660. Jacques Bellin's map of the Congo in Histoire Generale Des Voyages by Antoine François Prévost (1754) shows awareness of the river reaching further inland, to the provinces of Sundi and Pango, but has no detailed knowledge of its course.
  42. Livingstone, David (2012). Livingstone's 1871 Field Diary. A Multispectral Critical Edition. UCLA Digital Library: Los Angeles, CA. Available <http://livingstone.library.ucla.edu/1871diary/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-০৯-০৫ তারিখে>
  43. See also Jeal, Tim (1973). Livingstone. New Haven, CT: Yale University Press. Pp. 331–335.
  44. Brussels, Monument to Congo pionniers, 50th Jubileum Park.
  45. Jeal, 2007 pp. 188–219.
  46. Jeal, 2007 p. 199; February 7, 1877,
  47. Jeal, 2007 p. 217. Stanley, Henry M. (১৯৮৮)। Through the Dark Continent। Dover Publications। পৃষ্ঠা 432 pages। আইএসবিএন 978-0-486-25667-2 

সাধারণ সূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]