ওয়ালিদ বিন ইবরাহিম আল ইবরাহিম
ওয়ালিদ বিন ইব্রাহিম আল ইব্রাহিম (আরবি: وليد بن إبراهيم آل إبراهيم ওয়ালিদ বিন ইব্রাহিম আল ইব্রাহিম) (জন্ম ১৯৬২) একজন সৌদি ব্যবসায়ী এবং মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার (এমবিসি গ্রুপ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।[১]
২০১৮ সালে সৌদি সরকার এমবিসির ৬০ শতাংশ মালিকানা অধিগ্রহণ করে, এবং বাকি ৪০ শতাংশ আল ইব্রাহিমের হাতে থাকে।[২] এমবিসি গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আল ইব্রাহিম তার অংশীদারিত্ব ধরে রাখবেন এবং চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ২০১৮ সালের ২৯ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছেন।[২]
সৌদি সরকারের এমবিসির মালিকানা গ্রহণের ঘটনাটি আসে সেই প্রেক্ষাপটে, যখন ২০১৭ সালে এমবিসির মালিক ও পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্যকে রিয়াদে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় এবং তাদের রিটজ-কার্লটনে আটক রাখা হয়। এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় বহু বছর ধরে সৌদি যুবরাজের এমবিসি কিনে নেওয়ার প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে। ৮৩ দিন পর কোম্পানির প্রধান মালিক ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিম মুক্তি পান।[৩] আরাবিয়ান বিজনেস এক প্রতিবেদনে জানায়, এমবিসির এক "জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা" বলেন যে ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিম নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।[৪]
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]ওয়ালিদ আল ইব্রাহিম ১৯৬২ সালে সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন।[৫][৬][৭] তার আটজন ভাই রয়েছে।[৮] তার দুই বড় ভাই, আবদুলআজিজ ও খালেদ, যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।[৯] তার এক বোন, মাহা আল ইব্রাহিম, ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা ও বিমান উপমন্ত্রীর স্ত্রী — আব্দুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, যিনি রাজা ফাহদের পূর্ণভাই। তার তৃতীয় বোন, মোহদি আল ইব্রাহিম, ছিলেন সৌদি উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী খালেদ আল আংগারীর স্ত্রী।[১০][১১]
আল ইব্রাহিম ১৯৮০-এর দশকে ওরেগন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন[১২][১৩] এবং সেখানেই তার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।[১৪]
ব্যবসায়িক কার্যক্রম
[সম্পাদনা]এআরএভিশন
[সম্পাদনা]বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর আল ইব্রাহিম সৌদি আরবে এআরএ প্রোডাকশনস অ্যান্ড টেলিভিশন স্টুডিওস (এআরএভিশন) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম মিডিয়া উদ্যোগ।[১৪] পরে এর নাম হয় এআরএ গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল, যা একটি মিডিয়া কনগ্লোমারেট হয়ে ওঠে এবং আরব বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রেডিও ও টেলিভিশন সম্প্রচার করে।[১৫]
১৯৯৫ সালে এআরএভিশন রিয়াদে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবের বড় শহরগুলোতে ওয়্যারলেস কেবল পরিষেবা দেওয়ার জন্য একচেটিয়া লাইসেন্স পায়। ফলে এটি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর বিষয়বস্তু সম্প্রচারের আগে পর্যালোচনা করতে পারত।[১৬]
মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং কোম্পানি (এমবিসি)
[সম্পাদনা]১৯৯১ সালে লন্ডনে আল ইব্রাহিম ও প্রয়াত ব্যবসায়ী সালেহ কামেল এমবিসি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল প্রথম স্বাধীন আরবি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল।[১২][১৭] কোম্পানিটি সৌদি রাজপরিবারের মতাদর্শ প্রচার করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল।[১৬][১৮] এটি এআরএভিশনের অংশ ছিল।[১৫]
১৯৯২ সালে এমবিসি তৎকালীন দেউলিয়া ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই) কিনে নেয়, যাতে তাদের সংবাদ সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ে।[১৯]
এরপর এমবিসি ২, এমবিসি ৩, এমবিসি ৪-এর মতো সিনেমা ও আরবি সিরিজভিত্তিক চ্যানেল চালু করে। পরবর্তীতে এমবিসি পারস্য ও এমবিসি অ্যাকশন নামে আরও দুটি চ্যানেল চালু হয়। এমবিসি বলিউড চালু হয় ২০১৩ সালে।[১৪][১৬]
২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আল ইব্রাহিম আল জাজিরা-র বিকল্প হিসেবে আল আরাবিয়া চালু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এটিকে সিএনএন-এর মতো একটি শান্ত, পেশাদার ও নিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
যদিও আল ইব্রাহিমকে এমবিসি-র মালিক হিসেবে চেনা হয়, এমবিসি-র ৫০% লাভ পেতেন বাদশাহ ফাহদ-এর কনিষ্ঠ পুত্র আবদুল আজিজ বিন ফাহদ। তিনি চ্যানেলগুলোর আদর্শিক দিক ও লাভের অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন।[২০]
অন্যান্য
[সম্পাদনা]১৯৯০-এর দশকে আল ইব্রাহিম ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই)-এর শেয়ারহোল্ডার ও বোর্ড সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে পর্যন্ত ইউপিআই বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।[২১]
পারিবারিক বিনিয়োগ
[সম্পাদনা]১৯৯০ সালে তাঁর ভাই আবদুল আজিজ আল ইব্রাহিম ও খালিদ আল ইব্রাহিম-এর সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[২২] ধারণা করা হয়, বোয়িং ও রোলস-রয়েসের প্রতিনিধিত্ব করে তাঁরা এই সম্পদ অর্জন করেন। তাঁদের সম্পদ ১৯৯১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তাঁদের বিনিয়োগ ছিল মারিনা ডেল রে (লস অ্যাঞ্জেলস), ডিজনি ওয়ার্ল্ড-এর পাশে একটি সম্পত্তি, মায়ো ক্লিনিক-এর পাশে একটি হোটেল এবং অরল্যান্ডোতে রিয়েল এস্টেট।[২৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Waleed bin Ibrahim Al Ibrahim"। Global Competitiveness Forum। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ ক খ Katie Paul। "Chairman of Saudi media group MBC allowed to travel to Dubai"। Reuters। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৮।
- ↑ Hubbard, Ben (২৬ জানুয়ারি ২০১৮)। "Saudi Arabia Frees Media Mogul, but His Company's Fate Remains a Mystery"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Saudi Arabia to seize controlling stake in broadcaster MBC"।
- ↑ "Waleed Al Ibrahim"। Media Ownership Monitor Egypt। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "GCC's Most Admired Executives 2009"। Arabian Business। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।
- ↑ Samantha Shapiro (২ জানুয়ারি ২০০৫)। "The War Inside the Arab Newsroom"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।
- ↑ David Pallister; Richard Norton-Taylor; Owen Bowcott (৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮)। "Rolls Royce in firing line on Saudi deal"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।
- ↑ "The Billionaires 1991"। Fortune। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।
- ↑ "HH Princess Al Jawhara bint Ibrahim"। King Abdulaziz University। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১২।
- ↑ Baria Alamuddin (৭ মে ২০০৪)। "Princess Al Jawhara Ibrahim Al Ibrahim in her first interview"। Ain Al Yaqeen। Al Hayat। ২১ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১২।
- ↑ ক খ J. E. Peterson (২০০৩)। Historical Dictionary of Saudi Arabia (২য় সংস্করণ)। Lanham, MD: Scarecrow Press। পৃষ্ঠা ৬৮। আইএসবিএন 9780810827806।
- ↑ Kai Ryssdal (১২ মার্চ ২০০৮)। "A talk with Middle East media mogul"। Marketplace। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ ক খ গ "Sheikh Waleed al Ibrahim"। Arabian Business। মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।
- ↑ ক খ Mamoun Fandy (জানুয়ারি ১৯৯৯)। "Saudi Opposition between Globalization and Localization"। Comparative Studies in Society and History। 41 (1): 124–147। এসটুসিআইডি 143775443। জেস্টোর 179251। ডিওআই:10.1017/s0010417599001899।
- ↑ ক খ গ Naomi Sakr (২০০১)। "Whys and wherefores of satellite channel ownership"। Satellite Realms: Transnational Television, Globalization and the Middle East।
- ↑ "The money factories: the making of the new media barons"। Video Age International। ১ অক্টোবর ১৯৯৬। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৩।
- ↑ Edmund Ghareeb (Summer ২০০০)। "New Media and the Information Revolution in the Arab World: An Assessment"। The Middle East Journal। 54 (3): 402। জেস্টোর 4329508।
- ↑ Youssef M. Ibrahim (২৯ জুন ১৯৯২)। "Saudis Pursue Media Acquisitions, Gaining Influence in the Arab World"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১২।
- ↑ "Ideological and Ownership Trends in the Saudi Media"। Cablegate। ১১ মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১২।
- ↑ Allan Wolper (২৪ এপ্রিল ১৯৯৯)। "UPI Looks for Way out of Massive Debt"। Editor & Publisher: 8।
- ↑ "The billionaires 1990"। CNN/Fortune। ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১২।
- ↑ Steve Coll (৩১ মার্চ ২০০৮)। "We all worship the same God October 1984 to February 1985"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১২।