বিষয়বস্তুতে চলুন

ওয়াচমেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ওয়াচমেন একটি কমিক বুক সীমিত সিরিজ যা ব্রিটিশ সৃজনশীল দল লেখক অ্যালান মুর, শিল্পী ডেভ গিবন্স এবং রঙের জন্য জন হিগিন্স দ্বারা রচিত। এটি ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে ডি সি কমিকস দ্বারা মাসিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরে ১৯৮৭ সালে একটি একক খণ্ডে সংগ্রহ করা হয়। এই সিরিজটি সুপারহিরো ধারা এবং কমিক বইয়ের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং আজও এটি কমিকসের একটি মৌলিক রচনা হিসেবে পরিচিত।

ওয়াচমেনের উত্থান ঘটে মুরের একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা থেকে, যেটি মূলত ডি সি কমিকসে চর্লটন কমিকস থেকে অর্জিত সুপারহিরো চরিত্রগুলির জন্য ছিল। কিন্তু মুরের প্রস্তাবিত গল্পটি এতটা বিপজ্জনক ছিল যে, এটি ভবিষ্যতের অন্যান্য গল্পগুলির জন্য অনেক চরিত্রকে অযোগ্য করে তুলত। এ কারণে, ডি সি কমিকসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ডিক জিওর্দানো মুরকে রাজি করান নতুন চরিত্র তৈরি করতে, এবং এর মাধ্যমে জন্ম হয় ওয়াচমেন। এই গল্পটি শুধুমাত্র একটি সুপারহিরো কাহিনি ছিল না, বরং এটি একটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক বিশ্লেষণও ছিল।

মুর গল্পটির মাধ্যমে সমসাময়িক উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন, সুপারহিরোদের ধারণাটি পুনরায় বিশ্লেষণ করেছেন এবং এটি স্যাটিরাইজ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক মন্তব্যও করেছেন। গল্পটির মূল ভিত্তি হলো একটি বিকল্প ইতিহাস, যেখানে ১৯৪০ এবং ১৯৬০-এর দশকে সুপারহিরোরা আবির্ভূত হয়েছিল এবং তাদের উপস্থিতি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিল। এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধ জিতেছে, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়নি, এবং রাজনৈতিকভাবে, বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে।

১৯৮৫ সালের মধ্যে, আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে, ফ্রিল্যান্স পোষাকধারী ভিজিল্যান্টরা (অর্থাৎ সুপারহিরোরা) অবৈধ হয়ে পড়েছে, এবং অন্যদিকে, বেশিরভাগ প্রাক্তন সুপারহিরোরা সরকারের অধীনে কাজ করছেন বা অবসর গ্রহণ করেছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে, একটি রহস্যময় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়, যা এক সরকারীভাবে স্পনসরকৃত সুপারহিরোর মৃত্যুতে পর্যবসিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রাক্তন সুপারহিরোদের আবার সক্রিয় করে তোলে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিকাশ ও নৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি বড় রাজনৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি করে তোলে।

গিবন্স এই সিরিজের জন্য একটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট গ্রাফিক স্টাইল ব্যবহার করেছেন। তিনি পুরো সিরিজে একটি নয়-প্যানেল গ্রিড লেআউট ব্যবহার করেছেন, যা গল্পtelling এর সময়ে একটি নির্দিষ্ট ধারা এবং ছন্দ তৈরি করে। এই লেআউটটি বিভিন্ন দৃশ্য এবং চরিত্রগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করেছে এবং পাঠকদের জন্য একটি ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। এই পদ্ধতি লেখার পাশাপাশি চিত্রায়নের মধ্যে একটি বিশেষ সমন্বয় তৈরি করেছে, যা কমিকসের পরিচিত গতিশীলতার তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং গণনা করা হয়েছে।

গিবন্সের গ্রাফিক ন্যারেটিভের মধ্যে কিছু পুনরাবৃত্তিমূলক চিহ্নও রয়েছে, যেমন একটি রক্ত-দাগযুক্ত স্মাইলি মুখ, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে ওঠে। এই প্রতীকটি শুধুমাত্র চিত্রগত নয়, এটি গল্পের মূল থিমগুলির প্রতিফলনও করে, যা নৈতিক অন্ধকার, মানবতা, এবং ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্কের অনুসন্ধান করছে। একইভাবে, এই সিরিজে একটি পরতিও আছে—কল্পনা করা একটি পাইরেট কমিক “টেইলস অফ দ্য ব্ল্যাক ফ্রেইটার,” যা গল্পটির মধ্যে পড়ে যাওয়া একটি চরিত্রের হাতে আসে। এটি শুধুমাত্র একটি বাইরের গল্প নয়, বরং এটি মূল গল্পের থিমগুলির সাথে সম্পর্কিত এবং পাঠকদের জন্য আরো গভীর বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করে।

ওয়াচমেনের গল্প কখনও কখনও অযৌক্তিকভাবে গঠিত হয়েছে, যেখানে সময়, স্থান এবং প্লট একে অপরের সাথে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্পটির উপস্থাপনা nonlinear—অর্থাৎ, এটি chronologically নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে এবং স্থান জুড়ে তার চরিত্রগুলির অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম এবং বাইরের পৃথিবীর ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে। সুতরাং, গল্পটি পাঠকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, কারণ এটি তাদের শুধুমাত্র উন্মুক্ত সাদৃশ্য এবং সংযোগ খুঁজে বের করতে নয়, বরং কখনও কখনও ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, এবং নৈতিক সঙ্কটগুলির মধ্যে মানসিক এবং দার্শনিক আলোচনা খুঁজে পেতে বাধ্য করে।

গল্পটির অতিরিক্ত বিষয়বস্তু হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল কল্পিত ডকুমেন্টগুলি, যা প্রতি সংখ্যার শেষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে ছিল ডায়েরি, সংবাদপত্রের টুকরো, অফিসিয়াল রিপোর্ট, এবং অন্যান্য মিডিয়া রেকর্ড, যা মূল কাহিনির পটভূমি এবং চরিত্রদের আরও বিস্তারিতভাবে চিত্রিত করেছে। এই উপাদানগুলি শুধু পটভূমি তৈরি করেনি, বরং এটি গল্পের ন্যারেটিভকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল, কারণ এটি গল্পের বাইরে অন্য এক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করেছিল, যা পৃথিবীটিকে আরও জটিল এবং বিস্তৃত দেখিয়েছিল।

এর মধ্যে আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল চরিত্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের মানসিক গভীরতা। প্রত্যেক চরিত্র একটি নৈতিক দ্বিধার মধ্যে থাকে, এবং তাদের পদক্ষেপগুলির ফলাফল কেবল তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং বৃহত্তর সমাজের জন্যও প্রভাব ফেলবে। রোরশাচ, ড্র Manhattan, ড্যান ড্রাইবার্গ, এবং সিল্ক স্পেক্টর—প্রত্যেকেরই নিজস্ব জীবনবোধ, নৈতিক সংকট এবং বিশ্বাস রয়েছে, যা তাদের শত্রুতা এবং মিত্রতার মধ্যে সিঙ্ক্রোনাইজড সম্পর্ক তৈরি করে। তাদের নৈতিকতা এবং আদর্শগুলো কখনও কখনও অপর্যাপ্ত, কখনও কখনও অন্ধকার, কিন্তু এই প্রকৃতিগত বিরোধগুলি তাদের সম্পর্ককে মানবিক এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

ওয়াচমেন প্রকাশিত হওয়ার পর এটি সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল এবং এটি একটি বাণিজ্যিক সফলতাও ছিল। এই সিরিজটির বৈশিষ্ট্য ছিল এর বাস্তববাদী উপস্থাপন, রাজনৈতিক থিম এবং গভীর চরিত্র বিশ্লেষণ, যা এর পাঠকদের চমকে দেয় এবং তাদের চিন্তা করার জন্য এক নতুন স্তর খুলে দেয়। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ১০০ সেরা উপন্যাসের তালিকায় এটি ১৯২৩ সালের পরের সময়ে প্রকাশিত সেরা ইংরেজি ভাষার উপন্যাস হিসেবে স্থান পেয়েছে।

প্রত্যেকের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল—কি কারণে মুর বলেন যে কমিকস "বড় হয়ে ওঠেনি"? এই প্রশ্নের উত্তরে, মুর উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি মনে করেন না যে কমিকস সত্যিই "বড় হয়েছে," বরং তারা পরিণত হয়েছে, তার মানে ছিল যে এই মাধ্যমটি বড় হওয়া নয়, বরং সেটি তার পাঠকদের মানসিক বয়সের সাথে মেলে এসেছে। এর মানে হল যে সুপারহিরো চরিত্রগুলি এখন কেবল শিশুদের জন্য নয়, বরং পুরনো পাঠকদের জন্যও পরিপূর্ণ, গভীর এবং মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

তারপরও, যতবারই এই কমিক্সটি অভিযোজন বা সিক্যুয়েল হয়েছে, মুর এই কাজগুলি নিয়ে কখনও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি চাইতেন না যে ওয়াচমেনের চরিত্রগুলি বা থিমগুলি ভবিষ্যতের কাজের জন্য ব্যবহার করা হোক, কারণ তার জন্য এটি ছিল একটি একক সৃজনশীল রচনা, যা কেবল তার সময়ের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এটি একটি পরিবর্তিত সমাজের প্রতিচ্ছবি।

কয়েকটি চেষ্টা এবং প্রচেষ্টার পর, পরিচালক জ্যাক স্নাইডারের ওয়াচমেন ফিল্মটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায়। এটি ছিল একটি বড় বাজেটের ছবি, যা কমিক বইয়ের পাঠকদের জন্য অনেক প্রত্যাশিত ছিল। এর সাথে, একটি ভিডিও গেমও মুক্তি পায়—"ওয়াচমেন: দ্য এন্ড ইজ নাই," যা সিরিজটির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

২০১২ সালে, ডিসি কমিকস "বিফোর ওয়াচমেন" নামে প্রিক্যুয়েল সিরিজ প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে "ডুমসডে ক্লক" নামে একটি সিক্যুয়েল সিরিজ প্রকাশ করা হয়, যা মূল সিরিজের গল্পের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। ২০১৯ সালে একটি টেলিভিশন সিরিজও মুক্তি পায়, যা মূল কমিকের পরে ৩৪ বছর পর ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি।

এভাবে, ওয়াচমেন আজও শুধু একটি কমিক নয়, এটি এক যুগান্তকারী সৃজনশীল রচনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা শুধু সুপারহিরো গল্পের মানে পাল্টে দিয়েছে, বরং সাহিত্য এবং দর্শনের স্তরে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।

প্রকাশের ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ওয়াচমেন, অ্যালান মুর এবং ডেভ গিবন্সের দ্বারা তৈরি একটি বিখ্যাত কমিক বই সিরিজ, যা প্রথম ১৯৮৫ সালে ডি সি স্পটলাইটের ৫০ তম বার্ষিকী বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, এটি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ১২ সংখ্যার ম্যাক্সিসিরিজ হিসেবে প্রকাশিত হয়। ওয়াচমেনের গল্প শুধুমাত্র একটি সুপারহিরো গল্প ছিল না, বরং এটি ছিল এক ধরনের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যেখানে সুপারহিরোদের চরিত্রগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল এবং তাদের মানসিকতা ও নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল। এই সিরিজটি শুধু কমিক জগতকেই না, বরং পুরো সাহিত্য জগতকেও প্রভাবিত করেছে।

প্রকাশনার ইতিহাস এবং প্রাথমিক প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

ওয়াচমেনের প্রথম প্রকাশ ছিল ১৯৮৫ সালে ডি সি স্পটলাইটের ৫০ তম বার্ষিকী সংখ্যায়, যা ছিল একটি বিশেষ সংখ্যা। পরবর্তীতে, সিরিজটি ১২ সংখ্যার ম্যাক্সিসিরিজ হিসেবে ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। প্রতি সংখ্যা ছিল ২২ পৃষ্ঠার এবং এই সময়কালে সিরিজটি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

প্রকাশনার বিশদ

[সম্পাদনা]

ওয়াচমেনের প্রথম সংখ্যা "At Midnight, All the Agents..." সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং তার পরবর্তী সংখ্যাগুলি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রতিটি সংখ্যা ছিল একটি নির্দিষ্ট নামের অধিকারী এবং প্রতিটি সংখ্যার একটি নির্দিষ্ট থিম ছিল, যা মূল গল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

নম্বর শিরোনাম প্রকাশনার তারিখ বিক্রির তারিখ রেফারেন্স
"At Midnight, All the Agents..." সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ ১৩ মে ১৯৮৬ [৫]
"Absent Friends" অক্টোবর ১৯৮৬ ১০ জুন ১৯৮৬ [৬]
"The Judge of All the Earth" নভেম্বর ১৯৮৬ ৮ জুলাই ১৯৮৬ [৭]
"Watchmaker" ডিসেম্বর ১৯৮৬ ১২ আগস্ট ১৯৮৬ [৮]
"Fearful Symmetry" জানুয়ারি ১৯৮৭ ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ [৯]
"The Abyss Gazes Also" ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ ১৪ অক্টোবর ১৯৮৬ [১০]
"A Brother to Dragons" মার্চ ১৯৮৭ ১১ নভেম্বর ১৯৮৬ [১১]
"Old Ghosts" এপ্রিল ১৯৮৭ ৯ ডিসেম্বর ১৯৮৬ [১২]
"The Darkness of Mere Being" মে ১৯৮৭ ১৩ জানুয়ারি ১৯৮৭ [১৩]
১০ "Two Riders Were Approaching..." জুলাই ১৯৮৭ ১৭ মার্চ ১৯৮৭ [১৪]
১১ "Look on My Works, Ye Mighty..." আগস্ট ১৯৮৭ ১৯ মে ১৯৮৭ [১৫]
১২ "A Stronger Loving World" অক্টোবর ১৯৮৭ ২৮ জুলাই ১৯৮৭ [১৬]

এই সিরিজটির প্রথম সংখ্যাগুলি প্রকাশিত হওয়ার পরই এটি পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করে। বিশেষ করে গল্পের গভীরতা, চরিত্রের উন্নয়ন, এবং সৃষ্টিশীলতার জন্য এটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। সিরিজটির প্রতিটি সংখ্যা ছিল একটি মৌলিক শিল্পকর্ম, এবং এর মধ্যে প্রতিটি চরিত্রের গল্প পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরা হয়। স্নিগ্ধতা এবং কঠিনতার মিশ্রণ ছিল ওয়াচমেনের মূল বৈশিষ্ট্য, যা এটিকে অন্যান্য সুপারহিরো কমিকস থেকে আলাদা করেছিল।

পুনর্মুদ্রণ এবং সংগ্রহ

[সম্পাদনা]

১৯৮৭ সালে, ওয়াচমেনকে একত্রিত করে একটি ট্রেড পেপারব্যাক হিসাবে প্রকাশ করা হয়, এবং সেটি এমন একটি মুদ্রণ যা ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত অন্তত ২৪টি পুনর্মুদ্রণ পেয়েছিল। এই ট্রেড পেপারব্যাকটির জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে এটি পাঠকদের কাছে একটি সংগ্রহযোগ্য পণ্য হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৮৮ সালে, গ্রাফিটি ডিজাইন দ্বারা একটি সীমিত সংস্করণের স্লিপকেসড হার্ডকভার প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠার বোনাস উপাদান অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ছিল মূল প্রস্তাবনা এবং কনসেপ্ট আর্ট।

২০০৫ সালে, ডি সি একটি বৃহৎ স্লিপকেসড হার্ডকভার সংস্করণ প্রকাশ করে, যা ডি সি এর অ্যাবসোলিউট এডিশন ফরম্যাটে ছিল। এই সংস্করণটি ডেভ গিবন্সের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত করা হয়েছিল, এবং এতে ছিল গ্রাফিটি ডিজাইন উপাদানগুলোসহ জন হিগিন্সের পুনঃরঙ্গিত এবং পুনঃকালার করা আর্ট। এর পর, ডিসেম্বর ২০০৫ সালে, ডি সি একটি "মিলেনিয়াম এডিশন" লাইন অংশ হিসেবে ওয়াচমেনের প্রথম সংখ্যাটি পুনর্মুদ্রণ করে, যা মূল কাভারের মূল্যের $১.৫০ এ বিক্রি হত।

বিফোর ওয়াচমেন এবং পরবর্তী সিক্যুয়েল

[সম্পাদনা]

২০১২ সালে, ডি সি "বিফোর ওয়াচমেন" নামে একটি প্রিক্যুয়েল সিরিজ প্রকাশ করে, যেখানে ৯টি মিনি সিরিজের মাধ্যমে চরিত্রগুলির পূর্ববর্তী অ্যাডভেঞ্চার দেখানো হয়েছিল। এই সিরিজটি ছিল মূল ওয়াচমেন সিরিজের আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা, এবং এটি নতুন সৃজনশীল দলগুলোর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রিক্যুয়েলগুলিতে ছিল ওয়াচমেন চরিত্রগুলির আগে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ এবং তাদের প্রথম কাহিনীগুলি।

এরপর, ২০১৬ সালে ডি সি একটি ওয়ান-শট "DC Universe: Rebirth Special" প্রকাশ করে, যেখানে ওয়াচমেনের অনেক প্রতীক এবং ভিজ্যুয়াল রেফারেন্স দেখতে পাওয়া যায়, যেমন রক্তে ভেজা স্মাইলি মুখ এবং ডক্টর ম্যানহাটান ও ওজিমানডিয়াসের মধ্যে সংলাপ, যা ওয়াচমেনের শেষ সংখ্যায় ছিল। আরও ওয়াচমেনের চিত্রকলা "DC Universe: Rebirth Special #1" দ্বিতীয় মুদ্রণেও যোগ করা হয়েছিল, যা আরও উন্নতভাবে ডক্টর ম্যানহাটানের প্রসারিত হাতকে ফুটিয়ে তোলে।

ডক্টর ম্যানহাটান এবং ডুমসডে ক্লক

[সম্পাদনা]

ডক্টর ম্যানহাটান ২০১৭ সালে একটি চার-পার্ট সিরিজ "The Button"-এ উপস্থিত হন, যা "DC Universe Rebirth" এবং ২০১১ সালের "Flashpoint" স্টোরিলাইনের সরাসরি সিক্যুয়েল ছিল। ডক্টর ম্যানহাটান পরবর্তীতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১২ পর্বের সিক্যুয়েল সিরিজ "Doomsday Clock"-এ পুনরায় আবির্ভূত হন। এই সিরিজে ডক্টর ম্যানহাটান এবং ওয়াচমেনের চরিত্রগুলি ডি সি ইউনিভার্সের অন্যান্য সুপারহিরোদের সঙ্গে যুক্ত হয়, এবং এটি মূল ওয়াচমেন সিরিজের ধারণাকে আরো গভীরভাবে অন্বেষণ করে।

ওয়াচমেন কেবল একটি কমিক বই সিরিজ ছিল না, এটি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি সুপারহিরোদের চরিত্রগুলোকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে, তাদের নৈতিকতা, মানসিকতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের উপর গভীর আলো ফেলেছিল। এর মাধ্যমে কমিকসকে শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে না দেখে, একটি গভীর সাহিত্যিক রূপ হিসেবে পরিগণিত করা শুরু হয়। ওয়াচমেন আজও একটি কাল্পনিক শিল্পকর্ম হিসেবে সারা বিশ্বের পাঠকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

পটভূমি এবং সৃষ্টির প্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

"আমি মনে করি, আমি শুধু ভাবছিলাম, 'এটা কমিক বুক শুরু করার একটি ভালো উপায় হতে পারে: একটি জনপ্রিয় সুপারহিরো মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।' যতই রহস্যটি উন্মোচিত হবে, আমরা এই সুপারহিরোর পৃথিবীর গভীরে আরো বেশি প্রবেশ করব, এবং এমন একটি বাস্তবতা প্রদর্শন করব যা সুপারহিরোর সাধারণ জনমুখী চিত্রের থেকে অনেকটাই ভিন্ন।"

—অ্যালান মুর, ওয়াচমেনের জন্য ভিত্তি সম্পর্কে

১৯৮৩ সালে, DC Comics একটি চরিত্রের সিরিজ কিনেছিল যা তারা Charlton Comics থেকে অর্জন করেছিল। ওই সময়, লেখক আলান মুর একটি গল্প লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে তিনি এমন কিছু সুপারহিরো চরিত্র ব্যবহার করতে পারতেন যেগুলি তিনি আবার নতুন করে তৈরি করতে পারেন, যেমনটি তিনি ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে তার "মিরাকলম্যান" সিরিজে করেছিলেন। মুর ভেবেছিলেন যে এমএলজে কমিক্সের "মাইটি ক্রুসেডার্স" চরিত্রগুলো এমন একটি প্রকল্পের জন্য উপলব্ধ হতে পারে, তাই তিনি একটি হত্যা রহস্যের কাহিনী তৈরি করেন, যার শুরুতে শিল্ড নামে এক চরিত্রের মৃতদেহ একটি বন্দর থেকে পাওয়া যায়। লেখক মনে করেছিলেন, এতে কোনও তফাত নেই যে তিনি কোন চরিত্রগুলো ব্যবহার করবেন, যতক্ষণ না পাঠকরা সেগুলিকে চিনতে পারবে "যাতে তারা চমকে উঠতে পারে, যখন তারা দেখতে পাবে এই চরিত্রগুলোর আসল সত্য কী"।

মুর এই ধারণা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেন, যেটি তিনি "হু কিলড দ্য পিসমেকার" নামে রাখেন এবং DC কমিক্সের ম্যানেজিং এডিটর ডিক জিওর্দানোকে এটি জমা দেন। জিওর্দানো প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করেছিলেন, তবে তিনি এই চরিত্রগুলির ব্যবহারের বিপক্ষে ছিলেন। চার্লটনের অ্যাকশন হিরো লাইনের অধিগ্রহণের পর, DC তাদের আসন্ন "ক্রাইসিস অন ইনফিনিট আর্থস" ইভেন্টের মাধ্যমে এই চরিত্রগুলোকে তাদের প্রধান সুপারহিরো ইউনিভার্সে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। মুর বলেন, "DC বুঝতে পেরেছিল যে তাদের ব্যয়বহুল চরিত্রগুলো হয়তো মারা যাবে অথবা অকার্যকর হয়ে যাবে।" এর পর, জিওর্দানো মুরকে নতুন চরিত্রগুলির সাথে তার প্রকল্পটি চালিয়ে যেতে রাজি করান, যা শুধু চার্লটন চরিত্রগুলির মত দেখতে হবে।

মুর প্রথমে বিশ্বাস করেছিলেন যে মৌলিক চরিত্রগুলি পাঠকদের জন্য আবেগগতভাবে প্রতিধ্বনিত হবে না, তবে পরে তার মন পরিবর্তন হয়। তিনি বলেছিলেন, "শেষ পর্যন্ত, আমি বুঝতে পারলাম যে যদি আমি প্রতিস্থাপন চরিত্রগুলিকে যথেষ্ট ভালোভাবে লিখি, যাতে তারা কিছু পরিচিত সুপারহিরো বৈশিষ্ট্য নিয়ে পাঠকদের কাছে আসল মনে হয়, তবে এটি কাজ করতে পারে।"

ডেভ গিবনস, ওয়াচমেনের শিল্পী, যিনি মুরের সাথে পূর্বে প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, স্মরণ করেন যে তিনি "গুজব শুনেছিলেন যে তিনি একটি নতুন মিনিসিরিজের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট লিখছেন। আমি আলানকে ফোন করি এবং বলি, আমি যা করছিলেন, তাতে অংশগ্রহণ করতে চাই" এবং মুর তাকে গল্পের রূপরেখা পাঠিয়ে দেন। গিবনস জিওর্দানোকে জানিয়েছিলেন যে তিনি মুরের প্রস্তাবিত সিরিজটি আঁকতে চান এবং মুর তার অনুমতি দেন। গিবনস প্রকল্পের সাথে জন্স হিগিন্স নামক রঙকারীকে যুক্ত করেন কারণ তিনি হিগিন্সের "অস্বাভাবিক" শৈলী পছন্দ করতেন; হিগিন্স গিবনসের কাছেই থাকতেন, যা তাদের দুজনকে "আরও মানবিক যোগাযোগ করতে সক্ষম করেছিল, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য কাজ করার চেয়ে।"

লেন উইন এই প্রকল্পে সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন, তবে জিওর্দানো তার দিক থেকে দূরে থেকে তাদের কাজের উপর নজর রাখেন। উভয় উইন এবং জিওর্দানো পরে পিছিয়ে যান এবং "তাদের পথ থেকে বেরিয়ে আসেন", যেমনটি পরবর্তীতে জিওর্দানো মন্তব্য করেছিলেন, "আলান মুরকে কি কেউ কপি-এডিট করে, ঈশ্বরের জন্য?"

প্রকল্পে কাজ শুরু হওয়ার পর, মুর এবং গিবনস একটি দিন গিবনসের বাড়িতে কাটান, যেখানে তারা চরিত্রগুলো তৈরি করতে, গল্পের পরিবেশ বিস্তারিতভাবে সাজাতে এবং তাদের প্রভাবের কথা আলোচনা করেন। তারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন সুপারম্যানের একটি "ম্যাড" প্যারোডি থেকে, যা "সুপারডুপারম্যান" নামে পরিচিত ছিল। মুর বলেন, "আমরা চাইছিলাম সুপারডুপারম্যানকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে—কমিক্যাল থেকে নাটকীয় করার জন্য।"

মুর এবং গিবনস একটি এমন গল্প তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা "পরিচিত পুরনো-ধরনের সুপারহিরোকে একেবারে নতুন একটি জগতে নিয়ে যাবে"; মুর বলেছিলেন, তার লক্ষ্য ছিল "একটি সুপারহিরো মবি ডিক তৈরি করা; এমন কিছু যা ঐতিহ্য এবং গভীরতা ধারণ করবে।"

মুর চরিত্রগুলোর নাম এবং বর্ণনা তৈরি করেন, তবে গিবনসকে তারা কীভাবে দেখতে হবে তার বিস্তারিত দিকটি নির্ধারণের অনুমতি দেন। গিবনস পরিকল্পনা করেননি চরিত্রগুলো সজাগভাবে ডিজাইন করতে, তবে তিনি "অদ্ভুত সময়ে [...] দুই বা তিন সপ্তাহ শুধু স্কেচ করতে কাটিয়েছিলেন।" গিবনস তার চরিত্রগুলো এমনভাবে ডিজাইন করেছিলেন যাতে সেগুলো আঁকতে সহজ হয়; তার প্রিয় চরিত্র ছিল "রোরশাচ", কারণ "আপনাকে কেবল একটি টুপি আঁকতে হবে। যদি আপনি একটি টুপি আঁকতে পারেন, তাহলে আপনি রোরশাচ আঁকতে পেরেছেন, শুধু তার মুখের জন্য একটি আকৃতি আঁকুন এবং কিছু কালো দাগ দিন, আর আপনি শেষ।"

মুর সিরিজটি খুব শুরুতে লিখতে শুরু করেন, যাতে DC-এর পূর্ববর্তী সীমিত সিরিজ "ক্যামেলট ৩০০০"-এ মতো প্রকাশ বিলম্ব এড়ানো যায়। যখন প্রথম সংখ্যার জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন, তখন মুর বুঝতে পারলেন "আমার কাছে শুধু ছয়টি ইস্যুর জন্য পর্যাপ্ত প্লট ছিল। আমরা ১২টির জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলাম!" তার সমাধান ছিল, সিরিজের সামগ্রিক কাহিনির পাশাপাশি চরিত্রগুলোর উৎপত্তির বিষয়ে ইস্যুগুলো বর্ণনা করা। মুর গিবনসের জন্য খুব বিস্তারিত স্ক্রিপ্ট লিখতেন। গিবনস স্মরণ করেন যে "[Watchmen-এর প্রথম সংখ্যার স্ক্রিপ্টটি ছিল, আমি মনে করি, ১০১ পৃষ্ঠার টাইপস্ক্রিপ্ট—একক সারিতে—কোনও ফাঁকা জায়গা না রেখে, এক পৃষ্ঠার বর্ণনার মধ্যে কোনো বিরতি নেই।"

স্ক্রিপ্টগুলি পাওয়ার পর, শিল্পীকে প্রতিটি পৃষ্ঠা নম্বর দিতে হয়েছিল "যদি আমি সেগুলি মেঝে থেকে পড়ে ফেলি, কারণ সেগুলি সঠিকভাবে আবার সাজাতে আমাকে দুই দিন সময় লাগবে", এবং তিনি এক পৃষ্ঠার বর্ণনা হাইলাইট করতেন। পরবর্তীতে, মুরের স্ক্রিপ্টের অধিকাংশ শেষে লেখা থাকত, "যদি এটি আপনার জন্য কাজ না করে, তাহলে যা আপনার জন্য সেরা, সেটি করুন"; তবে গিবনস মুরের নির্দেশনা অনুসরণ করে কাজ করতেন। গিবনস স্ক্রিপ্টে একমাত্র পরিবর্তন প্রস্তাব করেছিলেন – রোরশাচ দ্বারা আক্রমণ করার সময় ওজিমানডিয়াসের কথোপকথনের সংকোচন, যেহেতু তিনি মনে করেছিলেন যে, ডায়ালগটি খুব দীর্ঘ ছিল। মুর একমত হয়ে সেই দৃশ্যটি পুনরায় লিখেছিলেন।

গিবনস "Watchmen"-এর দৃশ্যের ভিজ্যুয়াল দিক উন্নত করতে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছিলেন এবং প্রায়ই ব্যাকগ্রাউন্ডের বিশদ ধারণা অন্তর্ভুক্ত করতেন যা মুর পরে এটি লক্ষ্য করেছিলেন। মুর মাঝে মাঝে বন্ধু কমিক লেখক নিল গেইম্যানকে গবেষণার প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে এবং ইস্যুতে উদ্ধৃতি দিতে যোগাযোগ করতেন।

প্রকাশের বিলম্বের সম্মুখীন হওয়ার পর, মুর ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে একথা মেনে নেন যে, বিলম্ব হবে এবং তিনি বলেছিলেন, "পঞ্চম সংখ্যা বাজারে আসার পর, আমি এখনও নবম সংখ্যাটি লিখছি।" গিবনস উল্লেখ করেছিলেন যে, বিলম্বের একটি বড় কারণ ছিল "বিভাগীভাবে" স্ক্রিপ্ট পাওয়া। গিবনস বলেছিলেন, "আমাদের গতি চতুর্থ সংখ্যা থেকে কমে গিয়েছিল; তার পর থেকে আমরা "কয়েকটি পৃষ্ঠার স্ক্রিপ্ট" কাজ করতাম এবং তারপর শেষের দিকে, তাকে ফোন করে বলতাম, 'আরও পাঠাও!' এবং তিনি আরও দুই বা তিন পৃষ্ঠা বা কখনও কখনও এক পৃষ্ঠা অথবা ছয় পৃষ্ঠা পাঠাতেন।"

প্রকল্পের শেষের দিকে, মুর বুঝতে পারলেন যে গল্পটি কিছুটা সাদৃশ্য পেয়েছে "দ্য আর্কিটেক্টস অফ ফিয়ার" নামে একটি টেলিভিশন পর্বের সাথে, যা "দ্য আউটার লিমিটস" নামক সিরিজে প্রচারিত হয়েছিল। লেখক এবং উইন (একজন সম্পাদক) শেষের দিকে গল্পটি পরিবর্তন করার জন্য আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু মুর প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উইন বলেছিলেন, "আমি তাকে বলেছিলাম, 'আরও মৌলিক হও, আলান, তোমার ক্ষমতা আছে, কিছু আলাদা করো, যা আগে কখনো করা হয়নি!' এবং সে মনে করেনি যে, এটি করতে তাকে বেশি আগ্রহী হওয়া উচিত।" তবে মুর সিরিজের শেষ ইস্যুতে "দ্য আর্কিটেক্টস অফ ফিয়ার"-এর উল্লেখ করেছিলেন।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

[সম্পাদনা]

পরিবেশনা (Setting)

ওয়াচমেন একটি বিকল্প বাস্তবতায় সেট করা, যা ১৯৮০-এর দশকের সমসাময়িক বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলে। প্রধান পার্থক্য হলো সুপারহিরোদের উপস্থিতি। এই বাস্তবতায় প্রথম পার্থক্য ঘটে ১৯৩৮ সালে। এখানে তাদের অস্তিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তব ঘটনা, যেমন ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং রিচার্ড নিক্সনের প্রেসিডেন্সির ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত এবং পরিবর্তিত করেছে। সিরিজের বাস্তবতাকে অনুসরণ করে, যদিও ওয়াচমেনের সুপারহিরোদের সাধারণত "সুপারহিরো" বলা হয়, তবে শুধুমাত্র একজন, যার নাম ডক্টর ম্যানহাটান, সুপারহিউম্যান ক্ষমতাসম্পন্ন। ১৯৭১ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ আমেরিকান বিজয়ের সাথে শেষ হয় এবং ১৯৮৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নিক্সন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন, কারণ টার্ম লিমিটস বাতিল করা হয়েছে এবং ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডাল ঘটেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আক্রমণ বাস্তবে প্রায় ছয় বছর পরে ঘটে।

কাহিনীর শুরুতে, ডক্টর ম্যানহাটানের অস্তিত্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কৌশলগত সুবিধা প্রদান করেছে, যা শীতল যুদ্ধের উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। অবশেষে, ১৯৭৭ সালের মধ্যে, সুপারহিরোরা পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে, যার ফলে তারা কীন অ্যাক্টের মাধ্যমে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হয়। যদিও বেশিরভাগ সুপারহিরোরা অবসর নিয়েছিল, ডক্টর ম্যানহাটান এবং আরেকটি সুপারহিরো, যিনি "দ্য কমিডিয়ান" নামে পরিচিত, সরকারী অনুমোদিত এজেন্ট হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। অপর এক সুপারহিরো, রোশাচ, আইন বহির্ভূতভাবে কাজ করতে থাকেন।

কাহিনী (Plot)

১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে, নিউ ইয়র্ক সিটির গোয়েন্দারা এডওয়ার্ড ব্লেকের হত্যার তদন্ত শুরু করেন। পুলিশ কোন ক্লু না পেয়ে, পোশাকধারী ভিজিলান্ট রোশাচ তদন্ত করতে শুরু করেন। রোশাচ এই হত্যার সাথে সম্পর্কিত লোকটির আসল পরিচয় "দ্য কমিডিয়ান" হিসেবে চিহ্নিত করেন, যিনি ছিলেন একটি সরকারী সুপারহিরো, যখন তিনি তার পোশাক এবং স্মাইলি-ফেস পিন ব্যাজ খুঁজে পান। রোশাচ মনে করেন যে ব্লেকের হত্যা সুপারহিরোদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, তাই তিনি তার চারজন অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মীকে সতর্ক করেন: নিরীহ উদ্ভাবক ড্যানিয়েল ড্রেইবার্গ, যিনি ছিলেন দ্বিতীয় নাইট আউল; সুপারপাওয়ার্ড এবং আবেগিকভাবে বিচ্ছিন্ন জন অস্টারম্যান, যিনি "ডক্টর ম্যানহাটান" নামে পরিচিত; ডক্টর ম্যানহাটানের প্রেমিকা লরি জুসপেকজিক, দ্বিতীয় সিল্ক স্পেকট্র; এবং অ্যাড্রিয়ান ভেইডট, যিনি একসময় "ওজিম্যান্ডিয়াস" নামে পরিচিত ছিলেন এবং এখন একজন সফল ব্যবসায়ী।

ড্রেইবার্গ, ভেইডট এবং ম্যানহাটান ব্লেকের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ড্রেইবার্গ ব্লেকের পিন ব্যাজটি তার কফিনে ফেলে দেন। পরবর্তীতে, ম্যানহাটানকে টেলিভিশনে অভিযোগ করা হয় যে তিনি তার বন্ধু এবং প্রাক্তন সহকর্মীদের ক্যান্সার সৃষ্টি করেছেন। যখন সরকার এই অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে নেয়, তখন ম্যানহাটান নিজেকে মঙ্গলে নির্বাসিত করেন। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যানহাটানকে কৌশলগত মিলিটারি সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছিল, তার চলে যাওয়ায় মানবতা রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়তে থাকে, যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। রোশাচের উদ্বেগ যথাযথ বলে প্রমাণিত হয় যখন ভেইডট একটি হত্যাচেষ্টায় প্রাণে বাঁচেন। রোশাচ নিজেই একটি প্রাক্তন সুপারভিলেন, মোলোকের হত্যার জন্য দায়ী হয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং তার আসল পরিচয় উন্মোচিত হয়।

মানবিকভাবে বিচ্ছিন্ন ম্যানহাটানের সাথে সম্পর্কের অবহেলায় এবং আর সরকারী রিটেইনারে না থাকার কারণে, জুসপেকজিক ড্রেইবার্গের সাথে থাকতে শুরু করেন। তারা একটি প্রেমে আবদ্ধ হয়ে তাদের পোশাক পরিধান করেন এবং আবার ভিজিলান্ট কাজ শুরু করেন। ড্রেইবার্গ, ভেইডটের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কিছু দিক বিশ্বাস করতে শুরু করেন এবং তারা রোশাচকে কারাগার থেকে পালিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের ব্যক্তিগত ইতিহাসে ফিরে তাকিয়ে, ম্যানহাটান জুসপেকজিকের হাতে তার মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেন। তিনি জুসপেকজিককে মঙ্গলে নিয়ে যান এবং মানবিক সম্পর্কের গুরুত্বের বিষয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। কাহিনীর মাঝামাঝি, জুসপেকজিক জানতে পারেন যে ব্লেক, যিনি একসময় তার মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন (প্রথম সিল্ক স্পেকট্র),实际上 তার জীবিত বাবা ছিলেন, যিনি তার দ্বিতীয় সম্পর্কের মাধ্যমে তাকে জন্ম দিয়েছিলেন।

পৃথিবীতে, ড্রেইবার্গ এবং রোশাচ প্রমাণ পেয়ে যান যে ভেইডট এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে। রোশাচ তার সন্দেহগুলো তার জার্নালে লিখে, যা তিনি নব্য পত্রিকা "নিউ ফ্রন্টিয়ার্সম্যান"-এ পাঠিয়ে দেন। যখন রোশাচ এবং ড্রেইবার্গ অ্যান্টার্কটিকায় ভেইডটের ব্যক্তিগত অবলম্বনে যান, ভেইডট তাদের ব্যাখ্যা করেন যে তিনি পৃথিবীকে পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে বাঁচানোর জন্য একটি ভুয়া এলিয়েন আক্রমণ এবং নিউ ইয়র্কের অর্ধেক জনসংখ্যা হত্যার পরিকল্পনা করেছেন, যা আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একত্রিত করবে। তিনি প্রকাশ করেন যে ব্লেককে হত্যা করেছিলেন যখন সে তার পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করেছিল, ম্যানহাটানের প্রাক্তন সহযোগীদের ক্যান্সার বাধ্য করিয়ে তাকে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন, নিজের জীবন রক্ষা করতে তিনি নিজের হত্যাচেষ্টাও সাজিয়েছিলেন এবং রোশাচকে মোলোকের হত্যার জন্য ফাঁসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। ভেইডটের অপ্রতিভ যুক্তি দেখে, ড্রেইবার্গ এবং রোশাচ সিদ্ধান্ত নেন তাকে থামানোর, কিন্তু ভেইডট জানিয়ে দেন যে তিনি ইতিমধ্যেই তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন।

ম্যানহাটান এবং জুসপেকজিক পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, তারা নিউ ইয়র্কে ব্যাপক ধ্বংস ও মৃত্যু দেখতে পান, যেখানে ভেইডটের ল্যাবরেটরির তৈরি একটি বৃহদাকার স্কুইড-সদৃশ প্রাণী মরা অবস্থায় শহরের মাঝখানে পড়ে আছে। ম্যানহাটান অনুভব করেন যে তার ভবিষ্যদ্বাণী ক্ষমতা অ্যান্টার্কটিকা থেকে আসা ট্যাকিওনের প্রভাবে সীমিত হয়েছে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে যান। তারা ভেইডটের যোগসাজশ আবিষ্কার করেন এবং তার সাথে মুখোমুখি হন। ভেইডট সবাইকে জানায় যে নতুন এক শত্রুর আবির্ভাব পৃথিবীকে একত্রিত করতে সাহায্য করেছে, যা বিশ্বশান্তির জন্য সবচেয়ে ভাল। রোশাচ সত্য ফাঁস করার জন্য বেরিয়ে যান, কিন্তু ম্যানহাটান তাকে থামাতে তাকে হত্যা করেন। ম্যানহাটান ভেইডটের কাছে পৌঁছান, যিনি জানতে চান, "শেষে কি আমি সঠিক কাজ করেছি?" ম্যানহাটান রহস্যময়ভাবে বলেন, "কিছুই কখনো শেষ হয় না" এবং পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। ড্রেইবার্গ এবং জুসপেকজিক নতুন পরিচয়ে গা ঢাকা দিয়ে তাদের সম্পর্ক চালিয়ে যান।

নিউ ইয়র্কে, "নিউ ফ্রন্টিয়ার্সম্যান"-এর সম্পাদক তার সহকারীকে "ক্রাঙ্ক ফাইল" থেকে কিছু পূর্ণকথা খুঁজতে বলেন, যেখানে অনেক জমা হওয়া লেখা পড়ে হয়নি। সিরিজ শেষ হয়, সহকারী যখন পত্রিকার এই জমা দেওয়া লেখা থেকে রোশাচের জার্নালটি খুঁজে বের করেন, যা জমা হওয়ার জন্য ছিল।

চরিত্র

[সম্পাদনা]

Watchmen এর চরিত্র বিশ্লেষণ

Watchmen হল একটি এমন কমিক বই যা শুধুমাত্র সুপারহিরোদের ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে চমৎকার একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে। এটি আলান মুরের একটি উজ্জ্বল সৃষ্টির কাজ, যেখানে মূলত পাঁচটি "বিপরীত দৃষ্টিকোণ" প্রকাশিত হয়। এখানে প্রতিটি চরিত্রের চরিত্রের খুঁটিনাটি ও জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে, যা পাঠকদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখে: কোন চরিত্রটি সবচেয়ে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং তার কার্যক্রম কি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য? আলান মুর এই গ্রন্থে সুপারহিরোদের জীবন ও আচরণকে অল্প স্পষ্টভাবে, তবে বাস্তবতার দিকে একটি নতুন রূপে তুলে ধরেন, যাতে তাদের চরিত্রের অন্ধকার দিকগুলোও প্রবলভাবে উন্মোচিত হয়।

মুরের এই রচনা সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সুপারহিরোদের দেখানোর উদ্দেশ্যে ছিল। সাধারণত সুপারহিরোরা যে খ্যাতি পান, সেই খ্যাতি ও দর্শন থেকে পুরোপুরি আলাদা কিছু চিন্তা প্রকাশের লক্ষ্যে এই গল্প তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যেক চরিত্রকে মানবিক ত্রুটির সঙ্গে মেলানো এবং তার পিছনের রহস্য উন্মোচন করা মুরের মূল লক্ষ্য ছিল। এই চরিত্রগুলির মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা তাদের খারাপ বা ভালের মধ্যে অন্বেষণ করে এবং পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়, তাদের মধ্যে কেমন সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখন, চলুন দেখে নিই Watchmen এর বিভিন্ন প্রধান চরিত্রের বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

ওয়াল্টার জোসেফ কোভ্যাক্স / রোরশাচ

রোরশাচ হলেন এক প্রকারের ভিজিল্যান্টে, যার মুখোশটি সাদা রঙের এবং তার মধ্যে একটি অস্পষ্ট, কিন্তু সবসময় পরিবর্তনশীল কালি ব্লটের প্যাটার্ন থাকে। তিনি আইনভঙ্গী, তবে এখনও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আলান মুর রোরশাচ চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ ডিটকোর "মিস্টার এ" এবং "দ্য কুয়েশ্চেন" চরিত্রের আদলে। এই চরিত্রের দর্শনটি হলো পৃথিবী একটি কালো এবং সাদা মানসিকতার জায়গা, যেখানে ভালো বা খারাপের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। এই ধারণার মধ্যে রোরশাচ নিজেকে একটি "মোরালি ব্ল্যাঙ্ক বিশ্বে" তার নিজস্ব আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি করার সুযোগ পান। মুর নিশ্চিত করেননি যে রোরশাচ চরিত্রটি মরবে, তবে তার শেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল যে, তার অটল অবস্থান ও কোনোরূপ আপস না করার প্রবণতা তাকে বাঁচতে দেবে না। এই বিষয়টি উন্মোচিত হয় চতুর্থ সংখ্যায়।

অ্যাড্রিয়ান ভেইট / ওজিম্যান্ডিয়াস

অ্যাড্রিয়ান ভেইট একজন প্রাক্তন সুপারহিরো, যিনি একসময় "ওজিম্যান্ডিয়াস" নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার চরিত্রের সৃষ্টি ছিল আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের চরিত্রের অনুপ্রেরণায়। এবং একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে ভেইটকে "প্রতিভাশালী" বলে বিবেচনা করা হয়। তবে, তার এই উচ্চ মানসিকতার মধ্যে তিনি বেশিরভাগ সময়ই পৃথিবীর সাধারণ মানুষের প্রতি তাচ্ছিল্য করে থাকেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে তার দৃষ্টিভঙ্গি পৃথিবীকে উন্নত করার জন্যই অপরিহার্য। কিন্তু তার এই বিশ্বাস কখনও কখনও তাকে সুপারহিরো হিসেবেও ভিলেনের পক্ষে পরিণত করে, কারণ তার উদ্দেশ্য কিছুটা অমানবিক।

ড্যানিয়েল ড্রাইবার্গ / নাইট আউল

ড্যানিয়েল ড্রাইবার্গ একসময় সক্রিয় সুপারহিরো ছিলেন এবং "নাইট আউল II" হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার চরিত্রের মূল অনুপ্রেরণা ছিল টেড কর্ডের ব্লু বিটল চরিত্রটি। ড্রাইবার্গ অনেকটা নিঃসঙ্গ এবং অবসরপ্রাপ্ত হয়ে এক ধরনের মাঝবয়সী মানুষের মতো, যা তাকে একটি অক্ষম কিন্তু আবারও তার বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ় মনোভাবসম্পন্ন চরিত্র হিসেবে দেখায়। তিনি গল্পে সঙ্গী হিসেবে রোরশাচের সাথে যুক্ত হন এবং তার থিওরী অনুসরণ করতে শুরু করেন। ড্রাইবার্গের চরিত্র হল একটি নিস্পৃহ এবং স্বাভাবিক মানুষ যাকে মাঝে মাঝে একটা নৈতিক আলোচনায় ঝুঁকে পড়তে দেখা যায়।

এডওয়ার্ড ব্লেক / দ্য কমিডিয়ান

দ্য কমিডিয়ান (এডওয়ার্ড ব্লেক) হলেন একজন সরকার অনুমোদিত সুপারহিরো যিনি ১৯৭৭ সালে কীন অ্যাক্ট পাস হওয়ার পরেও সক্রিয় থাকেন। তাঁর হত্যাকাণ্ড Watchmen গল্পের মূল ঘটনাটির সূচনা করে। তার চরিত্রটি অনেকটা গর্ডন লিডির মতো, কিন্তু তিনি আরও কঠিন এবং নিষ্ঠুর। তিনি স্রেফ একজন নিষ্ঠুর, কপট, এবং নৈতিকতা থেকে দূরে থাকা মানুষ, যিনি তার মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে কখনোই পিছপা হন না। যদিও তার কিছু কার্যক্রম দৃশ্যত ভুল, তার মধ্যে কিছু গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, যা তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে।

ড. জন অস্টারম্যান / ডক্টর ম্যানহাটান

ডক্টর ম্যানহাটান হলেন একমাত্র চরিত্র যার সুপারহিউম্যান ক্ষমতা রয়েছে। এই চরিত্রটির মূল ধারণা ছিল নুক্লিয়ার ফিজিক্সের উপর ভিত্তি করে তৈরি। জন অস্টারম্যান একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর অসীম ক্ষমতা লাভ করেন। তার ক্ষমতা অসীম, তবে মানুষের সাথে তার সম্পর্ক একেবারেই বিচ্ছিন্ন, কারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই পরমাণু বা কোয়ান্টাম স্তরের মতো: সময় বা ঘটনা তার কাছে অপেক্ষা করে না। ডক্টর ম্যানহাটান চরিত্রের মাধ্যমে মুর মানবিক সম্পর্কের গূঢ় দিকগুলো দেখাতে চেয়েছিলেন। তার শক্তি ও বিচ্ছিন্নতা তাকে অনুভূতিহীন করে তোলে, তবে এটি তাকে আরও মানবিক হতে সাহায্য করে।

লরি জুসপেকজিক / সিল্ক স্পেকট্র II

লরি সিল্ক স্পেকট্র II চরিত্রের মাধ্যমে তার মায়ের জায়গায় এসেছেন। সিল্ক স্পেকট্র II চরিত্রটি প্রথমদিকে ছিল নাইটশেড, কিন্তু আলান মুর সিল্ক স্পেকট্র II চরিত্রের মাধ্যমে একটি নতুন ধারণা তৈরি করেন। লরি একজন অত্যন্ত উদ্দীপ্ত, অনুভূতিপূর্ণ চরিত্র, যিনি যে কোনও সমস্যার মধ্যে সরাসরি প্রবেশ করতে প্রস্তুত থাকেন। তার মধ্যে মানবিকতা ও সাহসের মিশ্রণ রয়েছে। তিনি ডক্টর ম্যানহাটানের সাথে সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু তার সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের জটিলতা দেখা যায় যা তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

Watchmen একটি গভীরভাবে বিশ্লেষিত কমিক বই, যেখানে চরিত্রগুলির মধ্যে শত্রুতা ও সহানুভূতির মিশ্রণ এবং তাদের মানবিক দুর্বলতা পরিস্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই চরিত্রগুলির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কমতি, ত্রুটিপূর্ণ আচরণ এবং তাঁদের সম্পর্কের জটিলতাগুলি তাদের অত্যন্ত বাস্তবিক করে তোলে। প্রত্যেক চরিত্রের নিজস্ব দর্শন এবং তাদের মানবিক দিকগুলি একটি বৃহত্তর নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। Watchmen শুধুমাত্র একটি সুপারহিরো গল্প নয়, বরং একটি দার্শনিক রচনা যা আমাদের সমাজের চিরন্তন প্রশ্নগুলির দিকে আঙুল তোলে।

এটা অস্বীকার করার মতো কিছু নয় যে, কমিক বইয়ের জগতে সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী নামগুলোর মধ্যে "ওয়াচমেন" একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত এই কমিক সিরিজটি আলান মুর, ডেভ গিবন্স এবং টেড স্নাইডারের তৈরি একটি মাস্টারপিস যা কেবল পপ কালচারকে নয়, বরং সাহিত্য, দর্শন এবং সমাজবিজ্ঞানকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। কমিক বইয়ের সাধারণ ধারণাকে ভেঙে দিয়ে, এটি পাঠকদের সুপারহিরোদের এক নতুন এবং সমালোচনামূলক রূপ উপস্থাপন করেছে। "ওয়াচমেন" সিরিজটি শুধুমাত্র সুপারহিরোদের নিয়ে নয়, বরং সমাজ, রাজনীতি, নৈতিকতা এবং মানব অস্তিত্বের গভীর প্রশ্নগুলোকে উত্থাপন করেছে।

আলান মুরের উদ্দেশ্য এবং সিরিজের মূল ধারণা

আলান মুরের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি "বিশ্বাসযোগ্য বাস্তব দুনিয়ায়" সুপারহিরোদের উপস্থিতি কেমন হতে পারে তা বিশ্লেষণ করা। আর, সিরিজের গল্প যতটা জটিল হতে থাকে, মুর নিজে একবার বলেছেন, "ওয়াচমেন" একটি সামাজিক কাঠামোর মধ্যে সুপারম্যানের ধারণাকে বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সুপারহিরোদের সংজ্ঞা এবং তাদের কর্মকাণ্ডে যে "শক্তি" রয়েছে, তা মানব সমাজে কিভাবে এক ধরনের দুর্বৃত্ত শক্তিতে পরিণত হতে পারে, তা বোঝাতে চেয়েছিলেন। বিশেষত, যখন তিনি গল্পটি লিখছিলেন, তখন বিশ্বের বেশ কিছু বড় রাজনৈতিক ঘটনার পটভূমি ছিল, যেমন: রিগ্যান আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান, এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা। মুর বলেছিলেন যে, তিনি কখনও চাননি পাঠকদের উপর কোনো "নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিতে", বরং তিনি চান এমন একটি গল্প উপস্থাপন করতে যেখানে পাঠক নিজেই মূল্যায়ন করবে, কোন দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য।

"কেউ দেখবে না তাহলে কিভাবে?" - রোমান প্রশ্ন

"ওয়াচমেন" নামটি আসলে একটি রোমান স্যাটিরিস্ট জুভেনাল দ্বারা উত্থাপিত একটি বিখ্যাত প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেছিলেন, "Quis custodiet ipsos custodes?" বা "কে রাখবে রক্ষকদের?", যা সেই যুগের সমাজে ক্ষমতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। আলান মুর এই প্রশ্নকে সিরিজের কেন্দ্রীয় ধারণা হিসেবে ব্যবহার করেন। "ওয়াচমেন" অজানা, অদৃশ্য শক্তির মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে, যারা নিজেদেরকে সমাজের সুরক্ষক বলে দাবি করে, কিন্তু আসলে তাদের জন্যই এক ভয়াবহ বিপদ তৈরী হয়ে যায়। সুতরাং, রক্ষকদেরই যদি কেউ নজর না রাখে, তাহলে তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক দুর্নীতি, এবং মানবতার প্রতি অবজ্ঞা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে।

"ওয়াচমেন" শুধু একটি সুপারহিরো কমিক নয়, এটি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং সামাজিক মন্তব্য। এটি একদিকে যেমন আমেরিকার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করে, তেমনি ব্যক্তিগত দায়িত্ব এবং নৈতিকতার প্রতি আমাদের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সিরিজে আমরা দেখতে পাই কিভাবে প্রতিটি চরিত্রের একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংকীর্ণ আত্মবিশ্বাস তাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। এই ধারায়, আলান মুর পুরো সুপারহিরো জগতকে তার শ্রেষ্ঠ "অবক্ষয়" হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। যেগুলো সাধারণত পরিপূর্ণ, নির্ভীক এবং ন্যায়ের প্রতীক, সেগুলোকে মুর এক একটি অমানবিক, আত্মসর্বস্ব চরিত্র হিসেবে আমাদের সামনে হাজির করেন।

এছাড়া, তিনি একটি গভীর সমাজতান্ত্রিক প্রশ্ন তুলেছেন: কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সমাজের রক্ষক হতে পারে? সুপারহিরোদের জন্য নিজস্ব কিছু আদর্শ ছিল, কিন্তু এই আদর্শের পেছনে তাদের নিজস্ব স্বার্থও ছিল। তারা কি সত্যিই মানবতার উন্নতির জন্য কাজ করছিল, নাকি তাদের নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য? এর মধ্যে রয়েছে "ওজিম্যান্ডিয়াস" চরিত্রের মত কিছু চরিত্র, যারা মুষ্টিমেয় মানুষের ভালোর জন্য বৃহৎ মানবতার ক্ষতি করে। তার এই ভাবনার পেছনে রয়েছে এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা, যেখানে ক্ষমতা নেওয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং সহানুভূতি কোন জায়গায় থাকে না। এমন একটি পৃথিবী যেখানে সুপারহিরোরা হয়তো আমাদের জীবনের সর্বোত্তম অংশ হতে পারত, কিন্তু তাদের অত্যন্ত ক্ষমতাশালী অবস্থান এক ধরনের অন্ধকারে পরিণত হয়।

"ওয়াচমেন"-এর চরিত্রগুলোও একইভাবে তাদের অসামান্য ক্ষমতা এবং শক্তি সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং আদর্শগত সংকটের সম্মুখীন হয়। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব এবং মানবিক দুর্বলতা বিদ্যমান, যা তাদের পারিপার্শ্বিক জগতের সাথে সংঘর্ষে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, "রোরশাচ" চরিত্রটি মানবিক বিপর্যয়ের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি, যিনি শক্তি এবং নৈতিকতার মধ্যে নিজস্ব গাঢ় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আছেন, কিন্তু তার মধ্যে অন্যদের প্রতি কোনো সহানুভূতি বা সহমর্মিতা নেই। অপরদিকে, "ডক্টর ম্যানহাটান" তার শক্তির কারণে নিজেকে অনুভূতিহীন একটি সত্তা হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা তাকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এসব চরিত্রের মধ্যে এক ধরনের আদর্শগত সংকট বিদ্যমান, যা তাদের মনোভাব ও পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে।

"ওয়াচমেন" এর সিংহভাগ চরিত্রে আমরা দেখতে পাই, তাদের মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ এবং দায়িত্বের ভার কিভাবে সমন্বিত হচ্ছে। যেকোনো সুপারহিরো বা রক্ষক হিসেবে সমাজের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং তাদের কার্যকলাপের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সিরিজে আমরা দেখতে পাই যে, প্রত্যেকটি চরিত্রের অন্তর্নিহিত নৈতিক প্রশ্ন তাদের কাজের ফলাফলে প্রভাব ফেলে, এবং এই প্রশ্নের উত্তর প্রতিটি চরিত্রের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এইভাবে, "ওয়াচমেন" আমাদের শুধু সুপারহিরোদের ক্ষমতা নয়, বরং তাদের বিশ্বাস, দ্বন্দ্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে মানবিক সংকটের উদ্ভব হয়, তার উপরও গভীর আলোকপাত করে।

"ওয়াচমেন" কেবল একটি কমিক বই নয়, বরং এটি আমাদের মানবিক মনোবৃত্তি, ক্ষমতা, নৈতিকতা, এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে গভীর সম্পর্কের একটি রূপক। আলান মুর এর মাধ্যমে একটি নতুন ধরনের গল্প বলার চেষ্টা করেছেন, যেখানে সুপারহিরোরা শুধু তার আদর্শ এবং ক্ষমতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটি সাহিত্য এবং কমিক বইয়ের জগতে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং সুপারহিরোদের ধারণাকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করেছে। "ওয়াচমেন"-এর চরিত্রগুলোর মতোই, আমরা যদি নিজেদের সমাজ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি, তবে সম্ভবত আরো উন্নত এবং সচেতন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারব।

প্রকাশনা ও প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

ওয়াচমেনের প্রকাশনা ও গ্রহণযোগ্যতা

ওয়াচমেন প্রথম ১৯৮৫ সালের অ্যামেজিং হিরোস প্রিভিউতে প্রকাশিত হয়। মুর এবং গিবন্স যখন প্রথম তাদের সিরিজের প্রথম সংখ্যা ডি.সি. কমিকসে জমা দেন, গিবন্স স্মরণ করে বলেন, "যা মূলত আমাদের সাফল্য নিশ্চিত করেছিল তা ছিল লেখক ও শিল্পী হাওয়ার্ড চেইকিন, যিনি খুব কমই প্রশংসা করেন, তিনি এসে বলেছিলেন, ‘ডেভ, তুমি ওয়াচমেন নিয়ে যা কিছু করেছো, তা অসাধারণ!’" ১৯৮৬ সালে মুর বলেছিলেন, "ডি.সি. আমাদের পুরোপুরি সমর্থন করেছে [...] এবং সবচেয়ে গ্রাফিক অত্যধিকতা পর্যন্তও তারা সমর্থন করেছে।" ওয়াচমেন সিরিজের প্রচারের জন্য, ডি.সি. কমিক্স একটি সীমিত-edition ব্যাজ (বাটন) ডিসপ্লে কার্ড সেট প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে ছিল সিরিজের চরিত্র এবং ছবি। কমিকসের মধ্যে কমেডিয়ানের রক্তে ভেজা স্মাইলি ফেস ব্যাজের একটি অনুলিপি সহ চারটি ব্যাজের দশ হাজার সেট প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া মে ফেয়ার গেমস একটি ওয়াচমেন মডিউল তৈরি করেছিল, যা ছিল ডি.সি. হিরোস রোল-প্লেয়িং গেম সিরিজের অংশ। এই মডিউলটির জন্য মুর সহায়তা প্রদান করেছিলেন এবং এটি সিরিজের পটভূমির বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে, বিশেষ করে ১৯৬৬ সালের ঘটনাগুলি।

প্রকাশনা পর্যালোচনা

ওয়াচমেন একক সংখ্যা আকারে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সীমিত সিরিজটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিল এবং এর বিক্রি ডি.সি. কমিক্সকে কিছু সময়ের জন্য মার্ভেল কমিক্সের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ প্রদান করেছিল। সিরিজটির প্রকাশনা সূচিতে বিলম্ব হয়েছিল কারণ প্রথম তিনটি সংখ্যা তৈরি ছিল, যদিও সম্পাদক লেন উইন বিশ্বাস করছিলেন যে ছয়টি সংখ্যা সম্পূর্ণ করতে হবে। পরবর্তী সংখ্যা প্রস্তুত হতে এক মাসেরও বেশি সময় নেওয়ায় আরো বিলম্ব হয়। এক সময়ে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, যদিও ডি.সি. ১৯৮৭ সালের এপ্রিল মাসে সংখ্যা #১২ প্রকাশের জন্য নির্ধারণ করেছিল, তা জুলাই অথবা আগস্টের আগে প্রকাশিত হতে পারবে না।

সিরিজটির শেষে, একক সংখ্যাগুলিকে সংগ্রহ করে ট্রেড পেপারব্যাক আকারে প্রকাশ করা হয়। ফ্র্যাঙ্ক মিলারের ১৯৮৬ সালের ব্যাটম্যান: দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস মিনিসিরিজের সঙ্গে ওয়াচমেনও "গ্রাফিক নভেল" হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিল। "গ্রাফিক নভেল" শব্দটি কমিক বইয়ের সংগ্রহকে উপন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত করে তুলে ধরেছিল, ফলে এই ধরনের বইয়ের বিক্রি বেশি হতে থাকে। ১৯৮৭ সালে ওয়াচমেন ট্রেড বইয়ের প্রচারের মাধ্যমে বইয়ের দোকান এবং পাবলিক লাইব্রেরিতে বিশেষ শেলফ তৈরি করা শুরু হয়। এর ফলে নতুন কমিক সিরিজগুলোর জন্যও একই রকম সংগ্রহ প্রকাশের আগ্রহ সৃষ্টি হয়, যা এর বাজারের জন্য নতুন পথ প্রশস্ত করেছিল।

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা

ওয়াচমেন ব্যাপকভাবে সমালোচনামূলক প্রশংসা অর্জন করেছে, শুধু কমিকস ইন্ডাস্ট্রিতেই নয়, বাইরের দুনিয়াতেও। টাইম ম্যাগাজিনে ওয়াচমেনের প্রশংসা করে বলা হয়, "এটি একটি অসাধারণ কল্পনার কাজ, যা সায়েন্স ফিকশন, রাজনৈতিক স্যাটায়ার, অতীতের কমিকসের সচেতন প্রতিচ্ছবি এবং বর্তমান গ্রাফিক ফরম্যাটের সাহসী পুনর্গঠনকে একটি ডিসিউটোপিয়ান রহস্য গল্পে মিলিয়ে দিয়েছে।" ১৯৮৮ সালে ওয়াচমেন "অন্য রূপ" বিভাগে হুগো পুরস্কার পায়। গিবন্স বলেন, মুর তার পুরস্কারটি উল্টে গাছের নিচে রেখেছিলেন এবং এটি পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহার করতেন।

ডেভ ল্যাংফোর্ডও ওয়াচমেনের পর্যালোচনা করেছিলেন এবং লিখেছিলেন, "সুপারহিরোর আধুনিক পৌরাণিক কাহিনী তার সাধারণ বোকামি সত্ত্বেও শক্তিশালী; ওয়াচমেন সেই পৌরাণিক কাহিনীকে রক্তে ভেজা চাকতি এবং র‍্যাটচেটের মধ্যে ভেঙে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত বিখ্যাত উক্তি 'কুইস কস্টোডিয়েট ইপসোস কস্টোডেস?' দিয়ে শেষ হয়েছে।"

মালিকানা বিতর্ক

ওয়াচমেনের মালিকানা নিয়ে মতবিরোধের কারণে মুর ডি.সি. কমিকসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। মুর এবং গিবন্স তাদের কন্ট্রাক্টে একটি রিভার্শন ক্লজ রেখেছিলেন, যার ফলে ওয়াচমেনের মালিকানা প্রথমে ডি.সি.-র থাকে, তবে এক বছর ব্যবধানে যদি ডি.সি. চরিত্রগুলির ব্যবহার না করে, তাহলে তা তাদের কাছে ফিরে আসার কথা ছিল। ১৯৮৫ সালে সান ডিয়েগো কমিক-কন-এ মুর বলেছিলেন, "যেভাবে এটি কাজ করে, যদি আমি সঠিকভাবে বুঝি, তাহলে ডি.সি. চরিত্রগুলি প্রকাশের সময় ব্যবহার করবে, এবং পরে তা আমাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে আমরা স্লারপি কাপের মত পণ্য থেকে সব টাকা উপার্জন করতে পারি।" ওয়াচমেনের জন্য মুর এবং গিবন্স সিরিজের আয়ের আট শতাংশ পেয়েছিলেন। মুর ১৯৮৬ সালে আরও বলেন, "যখন ডি.সি. এক বছর ধরে চরিত্রগুলো ব্যবহার না করবে, তখন তা আমাদের হয়ে যাবে।"

এছাড়া, মুর তার মন্তব্যে বলেছেন, "ডি.সি. আমাদেরকে একটি বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করেছিল, তবে তারা যদি আমাদের স্বার্থে চরিত্রগুলো ব্যবহার করে, তবে তা তাদের মতো মনে হতে পারে। অন্যদিকে, যদি চরিত্রগুলো তাদের স্বাভাবিক জীবন অতিক্রম করে এবং ডি.সি. এগুলোর কোন ব্যবহার না করে, তবে এক বছর পর তা আমাদের হয়ে যাবে।"

১৯৮৯ সালে মুর ডি.সি. ত্যাগ করেছিলেন কারণ তিনি ওয়াচমেন এবং ভি ফর ভেনডেটা সিরিজের জন্য যে কন্ট্রাক্ট করেছিলেন তা নিয়ে তিনি অস্বস্তি অনুভব করতেন। তার মতে, রিভার্শন ক্লজগুলো প্রযোজ্য ছিল না কারণ ডি.সি. সিরিজগুলোকে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক ছিল না। ২০০৬ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, "আমি বলেছিলাম, ‘ঠিক আছে, আপনি আমাকে সফলভাবে প্রতারণা করেছেন, তাই আমি আর কখনও আপনার জন্য কাজ করব না।’"

২০০০ সালে, মুর ডি.সি. এর ওয়াচমেনের ১৫ তম বার্ষিকী হার্ডকভার প্রকাশনা এবং ডি.সি. ডিরেক্টের মাধ্যমে অ্যাকশন ফিগার সিরিজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। যদিও ডি.সি. মুরের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চেয়েছিল, মুর মনে করেছিলেন তারা তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছে না, বিশেষত তার আমেরিকা'স বেস্ট কমিকস ইম্প্রিন্টের ক্ষেত্রে। তিনি জানান, "ওয়াচমেনের ১৫ তম বার্ষিকী শুধুমাত্র ডি.সি. এর জন্য, যখন তারা ওয়াচমেনের সম্পত্তি আমাকে এবং ডেভ [গিবন্স] থেকে নিয়ে নিয়েছিল।" এর পরেই, ডি.সি. ডিরেক্ট তাদের ওয়াচমেন অ্যাকশন ফিগার সিরিজটি বাতিল করে দেয়, যদিও ২০০০ সালের সান ডিয়েগো কমিক-কন-এ কোম্পানিটি প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করেছিল।

ওয়াচমেন একটি সাহিত্যিক এবং শিল্পের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনয়ন করেছে, এবং এটি কমিক্সের ক্ষেত্রে একটি পরিপক্কতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সিরিজটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ সুপারহিরো কাহিনী ছিল না, বরং এটি দর্শকদের কাছে সুপারহিরো ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিল। এমনকি এর প্রকাশনা এবং মালিকানা নিয়ে বিতর্কও শিল্পের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, যা ভবিষ্যতের কমিকস এবং গ্রাফিক নভেলসের জন্য একটি নতুন পথে পরিচালিত করেছে।

পূর্ববর্তি প্রকল্প

[সম্পাদনা]

১৯৮৫ সালে অ্যালান মূর বলেছিলেন, যদি সীমিত সিরিজটি ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়, তবে তিনি এবং ডেভ গিবন্স সম্ভবত একটি ১২-ইস্যু প্রিক্যুয়েল সিরিজ তৈরি করবেন, যার নাম হবে "মিনুটমেন", যা কাহিনীর ১৯৪০-এর দশকের সুপারহিরো গ্রুপের উপর ভিত্তি করে লেখা হবে। ডিসি মূর এবং গিবন্সকে সিরিজটির প্রিক্যুয়েল প্রকাশের জন্য নানা সুযোগ প্রদান করেছিল, যেমন রোরশাচের জার্নাল বা দ্য কোমিডিয়ানের ভিয়েতনাম যুদ্ধের ডায়েরি, এবং আরও কিছু লেখকদের একই মহাবিশ্বে কাজ করার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। দ্য কোমিডিয়ানের ভিয়েতনাম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্পের কথা উঠেছিল, কারণ তখন "দ্য ন্যাম" সিরিজটি জনপ্রিয় ছিল, আরেকটি প্রস্তাব ছিল, গিবন্সের মতে, "নাইট আউল/রোরশাচ টিম" তৈরি করার কথা (যেমন র্যান্ডাল এবং হপকির্ক (ডিসিড)।) তবে, দুইজনেই মনে করেছিলেন যে এসব গল্প কোন দিকে এগোবে না, বিশেষত মূর দৃঢ়ভাবে এটা মেনে নিয়েছিলেন যে ডিসি যেন অন্য লেখকদের মাধ্যমে এই ধরনের গল্প তৈরির অনুমতি না দেয়।

গিবন্স মিনুটমেন সিরিজের জন্য বেশি আগ্রহী ছিলেন, কারণ এটা "সোনালী যুগের কমিক বইগুলির সরলতা ও অসংকুচিত প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ ছিল, সঙ্গে এই নাটকীয় আগ্রহ যে এটি একটি গল্প যার সমাপ্তি আগেই জানা গেছে। হয়তো, এটি দেখার জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে যে আমরা কীভাবে সেই সমাপ্তিতে পৌঁছালাম।"

২০১০ সালে, মূর "ওয়ায়ারড" ম্যাগাজিনে বলেছিলেন যে ডিসি তাকে "ওয়াচমেন" সিরিজের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যদি তিনি প্রিক্যুয়েল এবং সিক্যুয়েল প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে রাজি হন। মূর বলেন, "যদি তারা ১০ বছর আগে এটা বলত, যখন আমি তাদের কাছে সেটা চেয়েছিলাম, তবে হয়তো তখন এটা কাজ করত। তবে এখন, আমি আর 'ওয়াচমেন' চাই না। অবশ্যই, আমি সেটা ওই ধরনের শর্তে ফিরে চাই না।" ডিসি কমিকসের সহ-পাবলিশাররা, ড্যান ডিডিও এবং জিম লি, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, "ডিসি কেবলমাত্র এই আইকনিক চরিত্রগুলির পুনরায় অনুসন্ধান করবে, যদি কোনো প্রস্তাবিত নতুন গল্পের সৃজনশীল দৃষ্টি অ্যালান মূর এবং ডেভ গিবন্স দ্বারা ২৫ বছর আগে নির্ধারিত গুণমানের সাথে মিলিত হয়, এবং এর প্রথম আলোচনা অবশ্যই মূল সৃষ্টিকর্তাদের সাথে হবে।"

"ওয়াচমেন" সম্পর্কিত একাধিক গুঞ্জন শোনার পর, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিসি ঘোষণা করল যে তারা "বিফোর ওয়াচমেন" নামক সাতটি প্রিক্যুয়েল সিরিজ প্রকাশ করবে। এই সিরিজগুলিতে অংশগ্রহণকারী লেখকদের মধ্যে ছিলেন জে. মাইকেল স্ট্রাজিনস্কি, ব্রায়ান আজারেলো, ডারউইন কুক, এবং লেন ওয়েইন, এবং শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন লি বর্মেজো, জে. জি. জোনস, অ্যাডাম হিউজ, অ্যান্ডি কুবার্ট, জো কুবার্ট, এবং আমান্ডা কননার। যদিও মূর "বিফোর ওয়াচমেন"-এর সঙ্গে কোনো সম্পর্কিত ছিলেন না, গিবন্স প্রাথমিক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একটি বিবৃতি প্রদান করেছিলেন:

"মূল 'ওয়াচমেন' সিরিজটি হচ্ছে সেই সম্পূর্ণ গল্প, যা অ্যালান মূর এবং আমি বলতে চেয়েছিলাম। তবে, আমি ডিসির এই উদ্যোগের কারণগুলি বুঝি এবং যারা এতে অংশগ্রহণ করছেন তাদের আমাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছা তাদের অভিনন্দন জানাই। আশা করি, এই নতুন সংযোজনগুলি তাদের চাওয়া সফল হবে।"

ডিসি যখন "বিফোর ওয়াচমেন" প্রকাশ করার ঘোষণা দেয়, তখন এটি বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করে, বিশেষ করে অ্যালান মূরের অংশগ্রহণ না থাকার কারণে। মূর বরাবরই "ওয়াচমেন" সিরিজের সাথে তার সম্পর্কের প্রতি অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন, এবং তিনি কখনোই এই সিরিজের উপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত কিছু লিখতে বা নতুন কিছু করতে আগ্রহী ছিলেন না। তার মতে, "ওয়াচমেন" ছিল একটি সম্পূর্ণ গল্প, যা তাকে এবং গিবন্সকে বলার ছিল, এবং এর পরবর্তী কোনো কিছুর জন্য তিনি আগ্রহী ছিলেন না।

এদিকে, গিবন্স "বিফোর ওয়াচমেন"-এ তার অংশগ্রহণের প্রতি এক ধরনের সদয় মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি এই প্রকল্পের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আশা করেন যে এতে অংশগ্রহণকারী সৃষ্টিকর্তারা তাদের চাওয়া সফল হবে। তবে, গিবন্সও একমত ছিলেন যে "ওয়াচমেন" ছিল একটি সমাপ্ত গল্প, এবং এর পরবর্তী কোনো প্রিক্যুয়েল বা সিক্যুয়েল প্রয়োজন ছিল না। তবে, এই সিরিজের জনপ্রিয়তা এবং এর সংস্কৃতিতে যে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল, তা অবশ্যই ডিসির এই পদক্ষেপকে ন্যায্যতা প্রদান করেছিল।

"বিফোর ওয়াচমেন" প্রকল্পটির সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে, তবে এটি স্পষ্ট যে, এই প্রিক্যুয়েলগুলি মূল "ওয়াচমেন" গল্পের সাথে তুলনা করলে অনেকেই মনে করেন যে এতে মূল সিরিজের গুণমান বা গভীরতা নেই। অ্যালান মূরের ভাবনা ছিল, "ওয়াচমেন" একটি একক, পূর্ণাঙ্গ কাজ, যার উদ্দেশ্য ছিল সুপারহিরোদের সংস্কৃতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা। এর মাধ্যমে মূর সুপারহিরোদের আদর্শের সমালোচনা করেছিলেন এবং মানুষের প্রকৃত স্বভাব এবং তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে এক নতুন চিন্তা জন্ম দিয়েছিলেন।

ডিসির "বিফোর ওয়াচমেন" সিরিজের মাধ্যমে, যেখানে গল্পের অক্ষরগুলির অতীত এবং তাদের গঠনের পিছনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়, এটি কখনোই মূল কাহিনীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি। এর মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল, কিন্তু মূর ও গিবন্সের তৈরি "ওয়াচমেন" সিরিজের চিহ্ন যে পরিসরে ছিল, সেখানে এটি ততটা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়নি।

ধারাবাহিক কাহিনীর পরবর্তী পর্ব

[সম্পাদনা]

কমিক বুক সিক্যুয়াল: ডুমসডে ক্লক

"ওয়াচম্যান"-এর সিক্যুয়াল, "ডুমসডে ক্লক", ডিসি রিবার্থ লাইনের একটি অংশ, যা ২০১৬ সালের একক সংখ্যার "ডিসি ইউনিভার্স: রিবার্থ স্পেশাল" এবং ২০১৭ সালের ক্রসওভার "দ্য বাটন" এর ধারাবাহিকতায় তৈরি। এই দুটি ইস্যুতে ডক্টর ম্যানহাটনকে একটি ছোট ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। মিনি সিরিজটি, যা "ওয়াচম্যান"-এর ঘটনার সাত বছর পর, ১৯৯২ সালের নভেম্বর মাসে ঘটে, এবং এটি ওজিম্যান্ডিয়াসকে অনুসরণ করে যখন সে ডক্টর ম্যানহাটনকে খুঁজতে চেষ্টা করে, রেজিনাল্ড লং-এর সাথে, যিনি ওয়াল্টার কোভাক্স (রোরশ্যাক) এর উত্তরসূরি। তাঁর শান্তির পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার পর এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় তিনি সমস্যায় পড়েন।

এই সিরিজটি ২০১৭ সালের ১৪ মে প্রকাশের সময়, একটি টিজার ইমেজ প্রকাশিত হয়, যেখানে ওয়াচম্যানের ঘড়ির ১২টার স্লটে সুপারম্যানের লোগো এবং সিরিজের শিরোনামটি ওয়াচম্যানের ঐতিহ্যবাহী ফন্টে লেখা ছিল। প্রথম ইস্যুটি ২২ নভেম্বর, ২০১৭-এ প্রকাশিত হয়। সিরিজটি অনেক ডিসি চরিত্র নিয়ে গল্প বলে, তবে বিশেষভাবে সুপারম্যান এবং ডক্টর ম্যানহাটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। সুপারম্যান, যা আসলে মূল "ওয়াচম্যান" সিরিজে একটি কাল্পনিক চরিত্র হিসাবে উল্লেখিত হয়েছিল, এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। এই সিরিজটি মাল্টিভার্স কনসেপ্টের প্লট উপাদান ব্যবহার করে, যা দুটি ভিন্ন বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

লেখক জেফ জনস বলেন, "রিবার্থ"-এর মধ্যে ডক্টর ম্যানহাটনের গল্প বলার মধ্যে অনেক কিছু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এবং সুপারম্যান ও ডক্টর ম্যানহাটনের মধ্যে বিরোধপূর্ণ চরিত্রের বৈপরীত্য দেখানো তার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। সুপারম্যান, একজন এলিয়েন হলেও, মানবতার প্রতি সহানুভূতিশীল, অন্যদিকে ডক্টর ম্যানহাটন, একজন মানুষ, মানবতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি বলেছিলেন, "ডুমসডে ক্লক" তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যক্তিগত এবং সবচেয়ে মহাকাব্যিক প্রকল্প ছিল।

টেলিভিশন সিরিজ সিক্যুয়াল

হচ্ছে "ওয়াচম্যান" সিরিজের টেলিভিশন সিক্যুয়ালও। এই সিরিজটি এইচবিওতে ডেমন লিনডেলফ দ্বারা তৈরি করা হয় এবং ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর প্রথম প্রকাশিত হয়। লিনডেলফ, যিনি "ওয়াচম্যান" সিরিজের ভক্ত ছিলেন, সিরিজটিকে একটি "রিমিক্স" হিসেবে তৈরি করেছিলেন, যা গল্পের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে নতুন চরিত্র এবং কাহিনীর সংযোজন করেছিল। এর ফলে এটি সম্পূর্ণরূপে "রিবুট" হয়ে উঠেনি, বরং একটি নতুন ধরনের গল্প প্রদান করেছে। মূল কাস্টের মধ্যে রয়েছেন রেজিনা কিং, ডন জনসন, টিম ব্লেক নেলসন, ইয়াহইয়া আবদুল-মাতিন II, এবং জেরেমি আয়রন্স। টেলিভিশন শোটি ২০১৯ সালে, ওয়াচম্যান সিরিজের ৩৪ বছর পর ঘটতে শুরু করে এবং মূলত তুলসা, ওকলাহোমায় সেট করা হয়।

এটির কাহিনী এক বিশেষ সামাজিক পটভূমির মধ্যে চলতে থাকে, যেখানে প্রেসিডেন্ট রবার্ট রেডফোর্ডের উদারনৈতিক নীতির কারণে জাতিগত সহিংসতার শিকারদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি, যারা রোরশ্যাকের লেখাগুলির অনুপ্রাণিত হয়ে পুলিশদের ওপর আক্রমণ করে, যার ফলে নতুন আইন প্রবর্তিত হয়, যা পুলিশদের নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য করে এবং তাদের মাস্ক পরতে হয়। এটি নতুন ধরনের মাস্কধারী অপরাধী যোদ্ধাদের সুযোগ দেয় যারা পুলিশকে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

এখানে ডক্টর ম্যানহাটন, অ্যাড্রিয়ান ভেইট/ওজিম্যান্ডিয়াস, এবং লরী ব্লেক/সিল্ক স্পেকট্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি রয়েছে যারা শোয়ের কাহিনীতে মূল ভূমিকা পালন করে। টেলিভিশন শোটি যেমন নতুন ধারাবাহিকতার সাথে পুরোনো চরিত্রগুলির পরিণতি ও আবেগ প্রকাশ করে, তেমনি সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন জাতিগত ন্যায্যতা, পুলিশি সহিংসতা এবং গোপনীয়তার বিষয়গুলি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে ধরে।

এই টেলিভিশন সিরিজের কাহিনী, মূল "ওয়াচম্যান" সিরিজের ভাবনা ও দর্শন থেকে কিছুটা ভিন্ন হলেও, সেই একই মর্মবাণী বজায় রাখে এবং বর্তমান সমাজের কঠিন প্রশ্নগুলিকে উত্তোলন করতে কাজ করে। পরিচালক ডেমন লিনডেলফের মতে, এই সিরিজটি "ওয়াচম্যান" কমিকসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তৈরি করা হলেও, এটি একটি স্বতন্ত্র এবং আধুনিক সংস্করণ যা পুরোনো কাহিনীর নতুন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে।

"ডুমসডে ক্লক" এবং "ওয়াচম্যান" টেলিভিশন সিরিজ দুটি, প্রত্যেকেই মূল "ওয়াচম্যান" সিরিজের প্রসার এবং বিকাশ ঘটিয়েছে, তবে একে অন্যের থেকে আলাদা ও নতুন ধারায় এগিয়েছে। ডুমসডে ক্লক, যেখানে সিক্যুয়াল এবং সুপারম্যানের মতো বিভিন্ন ডিসি চরিত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, মাল্টিভার্স এবং টাইমলাইন নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন গল্প বলতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, "ওয়াচম্যান" টেলিভিশন সিরিজটি সামাজিক বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে আরও গভীরভাবে আলোচনা করেছে, যা বর্তমান সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি প্রদান করেছে।

এই দুই সিক্যুয়ালই দর্শকদের পুরোনো ধারাবাহিকতার নতুন পরিভাষা দিয়েছে এবং "ওয়াচম্যান"-এর অমূল্য কাজকে আবারও সমাজের সামনে এনেছে।

রুপান্তর

[সম্পাদনা]

কমিক বুক চলচ্চিত্রের অভিযোজন:

২০০৯ সালের "ওয়াচম্যান" চলচ্চিত্রের কথা বলা হলে, এটি দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণের প্রচেষ্টা ছিল। প্রথমে ১৯৮৬ সালে, লরেন্স গর্ডন এবং জোয়েল সিলভারের মাধ্যমে ২০th সেঞ্চুরি ফক্স এই সিরিজটির চলচ্চিত্র নির্মাণের অধিকার পায়। এরপর তারা অ্যালান মুরকে স্ক্রিনপ্লে লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, কিন্তু তিনি এতে অস্বীকৃতি জানান, ফলে স্টুডিও স্ক্রিনরাইটার স্যাম হ্যামকে নিয়োগ করে। হ্যাম কিছু পরিবর্তন করে এবং ওয়াচম্যানের জটিল সমাপ্তিকে একটি "আরও পরিচালনাযোগ্য" উপসংহারে রূপান্তরিত করেন, যা একটি হত্যা এবং সময়গত প্যারাডক্সের মাধ্যমে শেষ হয়। তবে ১৯৯১ সালে, ফক্স এই প্রকল্পটি বাতিল করে এবং এটি ওয়ার্নার ব্রস. পিকচার্সের কাছে চলে যায়।

২০০১ সালে, গর্ডন এবং লয়েড লেভিন ইউনিভার্সাল স্টুডিওসের সঙ্গে চুক্তি করে ডেভিড হেইটারকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু কিছু সৃজনশীল অমিলের কারণে, তারা ইউনিভার্সাল ছাড়ে। এরপর ২০০৪ সালে, প্যারামাউন্ট পিকচার্সে কাজ শুরু হয় এবং Darren Aronofsky পরিচালকের ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু তিনি "দ্য ফাউন্টেন" চলচ্চিত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পটি ছাড়েন এবং পরবর্তী সময়ে, পল গ্রিনগ্রাস পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, প্যারামাউন্টও প্রকল্পটি বাতিল করে।

২০০৫ সালে, গর্ডন এবং লেভিন আবারও ওয়ার্নার ব্রসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এরপর Zack Snyder-এর উপর নির্ভর করে "Watchmen" চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই সময়, সিন্ডার তার আগের কাজ ৩০০-এর মতো ওয়াচম্যানের প্রতিটি প্যানেলকে স্ক্রিপ্ট হিসেবে ব্যবহার করে। "Watchmen" চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায়, তবে এটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায় এবং বিশ্বব্যাপী ১৮৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে।

অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের অভিযোজনও হয়েছে। "Tales of the Black Freighter" নামে একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়, যা মূলত ওয়াচম্যান চলচ্চিত্রের একটি অংশ ছিল, কিন্তু বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে চলচ্চিত্র থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়। পরে এটি একটি ডিভিডি আকারে মুক্তি পায়।

এছাড়া, "Watchmen: The End Is Nigh" নামে একটি ভিডিও গেমও তৈরি হয়েছিল, যা লেন ওয়েইনের লেখা ছিল।

ডেভিড গিবন্স, যিনি ওয়াচম্যানের সৃজনশীল দলের অংশ ছিলেন, তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন, কিন্তু অ্যালান মুর তার কাজের চলচ্চিত্র অভিযোজনের জন্য কখনও সম্মতি দেননি। মুর প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তিনি কখনও স্নাইডারের চলচ্চিত্র অভিযোজন দেখতে চান না।

এছাড়া, ২০০৮ সালে "Watchmen: Motion Comic" নামে একটি কমিকের ন্যারেটেড অ্যানিমেশন সিরিজ মুক্তি পায়। ২০০৯ সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিডি সংস্করণে প্রকাশিত হয়।

অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৭ সালে নতুন একটি ঘোষণা আসে। ওয়াচম্যান কমিকের ভিত্তিতে একটি R-রেটেড অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়, যা ২০২৪ সালে মুক্তি পায়।

এরপর, "Watchmen" HBO সিরিজটি আরোভার্সের "Crisis on Infinite Earths" ক্রসওভার ইভেন্টের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। Earth-666-এ সিরিজটির একটি বিলবোর্ড দেখা যায়।

প্রভাব

[সম্পাদনা]

Watchmen একটি সফল কমিক বই। এটি কমিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে অত্যন্ত সম্মানিত এবং বেশিরভাগ সমালোচক এবং রিভিউয়ার দ্বারা এটি কমিক্সের শ্রেষ্ঠ সিরিজ এবং গ্রাফিক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়। Watchmen প্রথমে The Dark Knight Returns এর মতো গ্রাফিক উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমে গ্রাফিক উপন্যাসের প্রকাশনার শৈলী জনপ্রিয় করতে সাহায্য করেছিল। এটি এমন একটি গ্রাফিক উপন্যাস যা সর্বকালের অন্যতম সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাস হিসেবে পরিণত হয়েছে।

Time ম্যাগাজিন ২০০৫ সালে Watchmen কে তাদের "All-Time 100 Greatest Novels" তালিকায় একমাত্র গ্রাফিক উপন্যাস হিসেবে স্থান দেয়। Time এর সমালোচক লেভ গ্রসম্যান এটির সম্পর্কে বলেন, "এটি একটি হৃদয়বিদারক, রোমাঞ্চকর পড়াশোনা এবং একটি যুবা মাধ্যমের বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।" ২০০৯ সালে Time এর "Top 10 Graphic Novels" তালিকায় এটি আবার স্থান পায়, যেখানে গ্রসম্যান আরও প্রশংসা করে বলেন, "এটা এখন আর সাধারণ কথা নয় যে Watchmen সবচেয়ে বড় সুপারহিরো কমিকস যা কখনও লেখা হয়েছে—কিন্তু এটা সত্য।"

২০০৮ সালে Entertainment Weekly Watchmen কে ২৫ বছরের মধ্যে প্রকাশিত সেরা ৫০টি উপন্যাসের মধ্যে ১৩তম স্থানে স্থান দেয়। তারা এটিকে "সবচেয়ে বড় সুপারহিরো গল্প যা কখনও বলা হয়েছে এবং প্রমাণ যে কমিকস স্মার্ট, আবেগপূর্ণ এবং সাহিত্যিক মূল্যবান বর্ণনা প্রদান করতে সক্ষম।" তবে The Comics Journal Watchmen কে ২০শ শতাব্দীর ইংরেজি ভাষার সেরা ১০০টি কমিকসের মধ্যে ৯১তম স্থানে স্থান দিয়েছে।

Art of the Comic Book: An Aesthetic History গ্রন্থের লেখক রবার্ট হারভি লিখেছেন, "Watchmen এর মাধ্যমে মুর এবং গিবন্স কমিক বই মাধ্যমে একটি সুকৌশলিক গল্প বলার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন যা শুধুমাত্র কমিকসে সম্ভব ছিল।" The New York Times এর সমালোচক ডেভ ইটজকফ Watchmen এর Absolute Edition এর পর্যালোচনা করার সময় লিখেছেন, "Watchmen এর অন্ধকার উত্তরাধিকার, যা সম্ভবত মুর কখনওই চেয়েছিলেন না, সেই ডিএনএ যা আজকের সুপারহিরো কমিক বইগুলির অন্যতম মৌলিক উপাদান, তা হলো অত্যন্ত অন্ধকার গল্প এবং নির্মমতা।"

২০০৯ সালে The Wall Street Journal এর লিডিয়া মিলেট Watchmen কে অতিরিক্ত প্রশংসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, "যদিও সিরিজের 'উজ্জ্বল আঁকা প্যানেল', 'মেঘলা রং' এবং 'বহুমাত্রিক চিত্রকলা' এর জনপ্রিয়তা নিশ্চিতভাবে প্রাপ্য, কিন্তু এটি একেবারে অদ্ভুত যে একে একটি চিত্রিত সাহিত্যকথার আখ্যান হিসেবে এতটা মূল্যায়ন করা হচ্ছে, যেমন Chris Ware এর 'Acme Novelty Library' বা Edward Gorey এর রচনা।"

Watchmen ২০০৯ সালে প্রকাশিত Batman: The Dark Knight Returns এর পাশাপাশি ডিজাইনার ভিনসেন্ট কনার এর জন্য একটি প্রেরণা ছিল, যিনি Comic Sans ফন্ট তৈরি করেছিলেন।

২০০৯ সালে Brain Scan Studios একটি প্যারোডি কমিক Watchmensch প্রকাশ করে, যেখানে লেখক Rich Johnston Watchmen এর আসল চুক্তি, বর্তমান আইনি মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।

২০০৯ সালে, Watchmen সিনেমার মুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে IDW Publishing একটি প্যারোডি একক কমিক প্রকাশ করে যার নাম ছিল Whatmen?!

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে Hasslein Books Watching Time: The Unauthorized Watchmen Chronology বইটি প্রকাশ করে, যার লেখক ছিলেন Rich Handley। এই বইটি Watchmen ফ্র্যাঞ্চাইজির বিস্তারিত ইতিহাস প্রদান করে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, DC Entertainment Watchmen: Annotated নামে একটি সম্পূর্ণ অ্যানোটেটেড সাদা-কালো সংস্করণ প্রকাশ করে, যার সম্পাদক ছিলেন Leslie S. Klinger (যিনি আগে Neil Gaiman এর The Sandman এর অ্যানোটেশন করেছেন)। এই সংস্করণটি আলান মুর এর আসল স্ক্রিপ্ট এবং ডেভ গিবন্স এর সহায়তায় তৈরি করা হয়েছিল।

শেষ কথা

[সম্পাদনা]

Watchmen শুধুমাত্র একটি গ্রাফিক উপন্যাস নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মাইলফলক এবং আধুনিক কমিকসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক পরিবর্তনকারী কাজ। আলান মুর এবং ডেভ গিবন্স এর সৃষ্ট এই কমিক বইটি অনেক দিক থেকে সুপারহিরো কমিকসের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। যেখানে সুপারহিরোদের সাধারণভাবে হিরো হিসেবে চিত্রিত করা হত, সেখানে Watchmen তাদের মানবিক দুর্বলতা, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং নৈতিক সংকটগুলিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছিল। এটি শুধু সুপারহিরো কমিকসকেই বদলে দেয়নি, বরং সাহিত্য, সিনেমা এবং বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংলাপ তৈরি করেছে।

এটি সেই সময়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল, যখন কমিকস সাধারণভাবে শিশুদের জন্য একটি সহজ এবং বিনোদনমূলক মাধ্যম হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু Watchmen প্রমাণ করেছে যে কমিকসও একটি শক্তিশালী সাহিত্যিক মাধ্যম হতে পারে, যা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক দিক নিয়ে গভীর আলোচনা করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে এটি সুপারহিরো জঁরের বাইরে গিয়ে সাহিত্যিকতার শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

অন্যদিকে, Watchmen এর তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া এবং তার পরবর্তী সময়ের আলোচনাগুলি সুপারহিরো কমিকসের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। এটি অনেকগুলি ধারণা এবং ধরণের উপর প্রভাব ফেলেছে, যেমন গা dark ়, বাস্তববাদী এবং প্যরানয়েড দৃষ্টিভঙ্গি, যা পরবর্তী বছরগুলিতে বেশিরভাগ কমিকস এবং সিনেমা ধারায় দেখা গিয়েছে। তবে মুর নিজের কাজের অন্ধকার এবং নৈরাশ্যবাদী দিকগুলো নিয়ে কখনও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, তার কাজের কিছু অঙ্গীকার যেন বিপরীত পথে চলে গেছে, যেখানে সুপারহিরো কমিকস ক্রমশ আরও নির্দয় এবং সহিংস হতে শুরু করেছে।

এটি একটি জটিল পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে, যেখানে Watchmen এর আঘাতগুলি সুপারহিরো কমিকসের জন্য একটি ধ্বংসাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু তার পাশাপাশি এটি এক ধরনের মুক্তির পথও তৈরি করেছে। যেহেতু এটি এমন একটি কাজ ছিল যা কমিকসের সীমানা ভেঙে দেয়, তাই এটি শিল্পকে তার অস্তিত্বের নতুন দিকগুলি চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল। Watchmen এর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে একটি নতুন ধারার কমিকস এবং গল্প বলা শুরু হয়েছিল, যা শুধুমাত্র বিনোদন দেওয়ার জন্য নয়, বরং মানুষকে প্রশ্ন করতে, ভাবতে এবং গভীরভাবে উপলব্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করে।

Watchmen এর সাফল্য কেবল এর কাহিনী বা চরিত্রগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর নিজস্ব স্টাইল এবং কাঠামোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ডেভ গিবন্স এর চিত্রকলা এবং আলান মুর এর লেখনী সেই সময়ে অত্যন্ত অগ্রণী ছিল, যা সেই সময়কার সাধারণ ধারার থেকে একদম আলাদা ছিল। গল্পের গভীরতা, চরিত্রের মানসিক গঠন এবং তাদের নৈতিক সংকটগুলি এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছিল, যা পাঠকদের চিন্তা করতে বাধ্য করত। এছাড়া কমিকের প্রতিটি প্যানেল ছিল যেন একটি গল্পের অংশ, যা পুরো কাহিনীকে আরও বেশি আবেগময় এবং বাস্তবসম্মত করে তোলে।

এছাড়া Watchmen এর বৈশিষ্ট্য ছিল এর প্যারালাল স্টোরিটেলিং। যেখানে গল্পের ভিতরে বিভিন্ন স্তরের সাব-প্লট এবং বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন Tales of the Black Freighter বা Under the Hood। এই স্টোরিটেলিং কৌশলগুলি মুল গল্পের মধ্যে এমনভাবে মিশে গেছে, যাতে পুরো বইটিই একটি বিস্তৃত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এটি পাঠকদের আরও অনেক স্তরের মধ্যে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়, যেখানে তারা শুধুমাত্র প্রধান চরিত্রগুলির জীবনই নয়, বরং বইয়ের প্রতিটি উপাদান এবং তারা কিভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে, সেই দিকগুলোও উপলব্ধি করতে পারে।

ফলে, Watchmen শুধুমাত্র একটি কমিক বই নয়, এটি এমন একটি কাজ যা সুপারহিরোদের ঘরানাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংকট তুলে ধরেছে, এবং শিল্পমাধ্যমের জন্য এক নতুন ধারার সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, গল্প বলার জন্য কমিকস হতে পারে এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক প্রশ্নগুলি তোলার ক্ষমতা রাখে।

আজও Watchmen এর জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে, এবং এর প্রভাব আমরা কমিকস, সিনেমা, টেলিভিশন শো এবং সাহিত্যেও দেখতে পাই। এটি শুধু একটি সাহিত্যিক কীর্তি নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক পণ্যের মর্যাদা লাভ করেছে যা সাহিত্যের মতো একই স্তরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি একটি মানসিক এবং সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্ক যা ভবিষ্যতেও আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করবে।

Watchmen এর সফলতা এবং প্রভাব আধুনিক কমিকসের ভুবনে অমর হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের লেখক, শিল্পী এবং পাঠকদের জন্য একটি স্থায়ী প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

তথ্য সূত্র

[সম্পাদনা]
  • Alan Moore's Watchmen was first published by DC Comics in 1986 and is considered a cornerstone of modern graphic novels.
  • The series was written by Alan Moore, illustrated by Dave Gibbons, and colored by John Higgins.
  • The series was originally meant to feature Charlton Comics characters, but DC Comics decided to reserve them for other stories, leading to the creation of original characters like Rorschach and Ozymandias.
  • The comic explored themes of power, morality, and the nature of heroism, offering a more complex and grounded look at superheroes.
  • Watchmen was praised for its deconstruction of the superhero genre, turning traditional ideas of heroism and justice on their head.
  • The comic includes a unique narrative structure with non-linear storytelling, using detailed visual storytelling techniques.
  • The graphic novel influenced a generation of comic book creators, particularly in terms of storytelling, character complexity, and visual style.
  • It was one of the first graphic novels to receive widespread critical acclaim, proving that comics could be a serious form of literature.
  • Watchmen was included in Time magazine’s list of the 100 greatest novels of all time in 2005.
  • The comic book inspired a 2009 film adaptation directed by Zack Snyder, though it received mixed reviews from critics.
  • Tales of the Black Freighter, a subplot from the comic, was adapted into a separate animated feature in 2009.
  • The TV series Watchmen (2019), created by Damon Lindelof, serves as a continuation of the original story, set in an alternate present day.
  • The Watchmen graphic novel has been referenced as one of the greatest superhero stories ever told, frequently appearing on top graphic novel lists.
  • Watchmen's central characters, such as Rorschach, Dr. Manhattan, and Nite Owl, have become iconic symbols in the comic book industry.
  • The influence of Watchmen extends beyond comics, impacting film, television, and popular culture, continuing to inspire discussions on the representation of superheroes in media.
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Watchmen