বিষয়বস্তুতে চলুন

এ. জে. ক্রোনিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এ. জে. ক্রোনিন
১৯৩৯ সালে ক্রোনিন
১৯৩৯ সালে ক্রোনিন
স্থানীয় নাম
A. J. Cronin
জন্মআর্চিবল্ড জোসেফ ক্রোনিন
(১৮৯৬-০৭-১৯)১৯ জুলাই ১৮৯৬
কার্ডরস, ডানবার্টনশায়ার,[] স্কটল্যান্ড
মৃত্যু৬ জানুয়ারি ১৯৮১(1981-01-06) (বয়স ৮৪)
মঁত্রো, সুইজারল্যান্ড
সমাধিস্থলসিমেতিয়ের দ্য লা তুর-দ্য-পে, লা তুর-দ্য-পে, ভো, সুইজারল্যান্ড
পেশা
দাম্পত্যসঙ্গীঅ্যাগনেস গিবসন (বি. ১৯২১)
সন্তান৩, ভিনসেন্টপ্যাট্রিক-সহ

আর্চিবল্ড জোসেফ ক্রোনিন (১৯ জুলাই ১৮৯৬ – ৬ জানুয়ারি ১৯৮১) একজন স্কটিশ চিকিৎসকঔপন্যাসিক[] তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস দ্য সিটাডেল (১৯৩৭)। এটি ওয়েলসের খনির নিকটবর্তী গ্রামের এক স্কটিশ চিকিৎসকের গল্প যিনি সাফল্য লাভের জন্য লন্ডনে আসেন, কিন্তু সেখানে কয়েকজন চিকিৎসকের নীতি বিসর্জন ও অযোগ্যতা দেখে তার মোহমুক্তি ঘটে।[] তার আরেকটি বহুল বিক্রীত উপন্যাস হল দ্য স্টারস লুক ডাউন। দুটি উপন্যাসকেই চলচ্চিত্রে রূপ দান করা হয়। এছাড়া তার রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল হ্যাটার্স ক্যাসল, দ্য কিজ অব দ্য কিংডমদ্য গ্রিন ইয়ার্স[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

ক্রোনিন ১৮৯৬ সালের ১৯শে জুলাই স্কটল্যান্ডের ডানবার্টনশায়ারের কার্ডরসের জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা জেসি ক্রোনিন (জন্ম: মন্টগামারি) প্রেসবাইটেরিয়ান এবং পিতা প্যাট্রিক ক্রোনিন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। ক্রোনিনের পিতামহ ওয়েন ক্রোনিন আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি আরমাগ থেকে স্কটল্যান্ডে আসেন এবং আলেকজান্দ্রিয়ায় কাঁচ ও চীনামাটি ব্যবসায় করতেন। তিনি ১৮৭০ সালে তার বংশনাম ক্রোনোগি থেকে পরিবর্তন করে ক্রোনিন রাখেন। ক্রোনিনের মাতামহ আর্চিবল্ড মন্টগামারি টুপির ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার ডামবার্টনে একটি দোকান ছিল। ক্রোনিনের পিতামাতা তাদের বিবাহের পর হেলেঞ্জবরায় চলে যান। ক্রোনিন সেখানে গ্র্যান্ট স্ট্রিট স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার যখন সাত বছর বয়স তখন তার ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট ও বাণিজ্যিক ভ্রমণকারী পিতা যক্ষায় মারা যান। তিনি ও তার মাতা ডামবার্টনে তার নানাবাড়িতে চলে আসেন এবং পরবর্তীকালে তার মাতা গ্লাসগোতে গণস্বাস্থ্য পরিদর্শক হন।

ক্রোনিন ডামবার্টন অ্যাকাডেমিতে[] অধ্যয়নকালীন একাধিক লেখনী প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করেন এবং দারুণ অ্যাথলেট ও ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি দক্ষ গলফার ছিলেন এবং আজীবন এই খেলা উপভোগ করতেন।[] তিনি স্যামন মাছ ধরতে ভালোবাসতেন।

ক্রোনিনের পরিবার এরপর গ্লাসগোর ইয়র্কহিলে চলে যান এবং সেখানে তিনি সেন্ট আলয়সিয়াস কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রথম একাদশে ফুটবল খেলতেন এবং এই অভিজ্ঞতা তিনি তার উপন্যাস দ্য মিনস্ট্রেল বয়-এ লিপিবদ্ধ করেন। তার পরিবারের সিদ্ধান্ত ছিল তাকে গির্জায় যোগদান করতে হবে কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে, ক্রোনিন দ্বিতীয়টি বাছাই করেন যা "এই দুইটির মধ্যে কম মন্দ"।[] তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য ১৯১৪ সালে কার্নেগি বৃত্তি লাভ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে রাজকীয় নৌবাহিনীতে যোগদানের ফলে ১৯১৬-১৯১৭ সালে তার অধ্যয়নে বিগ্ন ঘটে,[] ফলে তিনি ১৯১৯ সালে এমবিসিএইচবি ডিগ্রির সর্বোচ্চ সম্মাননা নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এই বছরের শেষভাগে তিনি একটি জাহাজের চিকিৎসক হিসেবে ভারত সফর করেন। ক্রোনিন ১৯২৩ সালে গণস্বাস্থ্যে ডিপ্লোমা ও ১৯২৪ সালে রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্সের সদস্যপদসহ একাধিক যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব মেডিসিন অর্জন করেন, যার সন্দর্ভের শিরোনাম ছিল "দ্য হিস্ট্রি অব অ্যানোরিজম"।

সাহিত্যজীবন

[সম্পাদনা]
১৯৩১ সালে এ. জে. ক্রোনিন

১৯৩০ সালে ক্রোনিন ক্ষুদ্রান্ত্রের আলসারে আক্রান্ত হন এবং তাকে ছয় মাস সম্পূর্ণ বিশ্রাম করতে বলা হয়। লোখ ফিনার নিকটবর্তী ডালচেনা ফার্মে বিশ্রামরত অবস্থায় তিনি তার আজীবন লালিত উপন্যাস লেখার ইচ্ছার পূর্ণতা দিতে সক্ষম হন, যিনি এর পূর্বে "ব্যবস্থাপত্র ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র" ভিন্ন অন্য কিছু লিখেননি।[] ডালচেনা ফার্ম থেকে তিনি ডামবার্টনে তার প্রথম উপন্যাস লেখার পটভূমি নিয়ে গবেষণা করতে যান। তিনি ডামবার্টন লাইব্রেরি থেকে নথি সংগ্রহ করেন, যেখানে এখনও তার অনুরোধকৃত চিঠি সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি তিন মাসের মধ্যে তার প্রথম উপন্যাস হ্যাটার্স ক্যাসল রচনা করেন এবং গোলানৎস এটি প্রকাশ করতে সম্মত হয়। গোলানৎস একমাত্র প্রকাশনী যেখানে তিনি এই পাণ্ডুলিপি জমা করেছিলেন। তার স্ত্রী প্রকাশকদের একটি তালিকা থেকে এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটিকে পিন করেছিলেন।[] উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন এই ধারণায় আবিষ্ট একজন স্কটিশ টুপি প্রস্তুতকারীর গল্প নিয়ে রচিত বইটি ব্রিটেনে সফলতা লাভ করে।[১০] যার ফলে একজন সফল লেখক হিসেবে তার সাহিত্য জীবন শুরু হয়। এরপর তিনি আর চিকিৎসা অঙ্গনে ফিরে যাননি।[]

ক্রোনিনের চতুর্থ উপন্যাস দ্য স্টার্স লুক ডাউন (১৯৩৫) ১৯০৩ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের খনি শ্রমিকদের বিভিন্ন সামাজিক অবিচার এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী খনি শ্রমিকের সংসদ সদস্য হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরে। এই বইটি দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক পাঠকমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন।[১০] তার পরবর্তী উপন্যাস দ্য সিটাডেল (১৯৩৭) সামাজিক বাধ্যবাধকতার সাথে বৈজ্ঞানিক সততার ভারসাম্য রক্ষার্থে একজন ডাক্তারের সংগ্রামের গল্প, যা সেই সময়ে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসকদের অসমতা ও অযোগ্যতা প্রকাশ করে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। এই উপন্যাসে ক্রোনিন ডাক্তারদের লোভী ও দুরভিসন্ধি অনুশীলনের পরিবর্তে বিনামূল্যে গণস্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কথা বলেন।[] তার অন্যতম জনপ্রিয় বই হল দ্য কিজ অব দ্য কিংডম (১৯৪২), এটি চীনে একটি রোমান ক্যাথলিক মিসনারিকে নিয়ে রচিত। ক্রোনিনের পরবর্তী উপন্যাসগুলো হল দ্য গ্রিন ইয়ার্স (১৯৪৪), শ্যানন্‌স ওয়ে (১৯৪৮), দ্য জুডাস ট্রি (১৯৬১) ও আ সং অব সিক্সপেন্স (১৯৬৪)।[১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Before 16 May 1975 Cardross was in Dunbartonshire
  2. "AJ Cronin"। University of Glasgow। ১৮ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "A.J. Cronin: Biography on Undiscovered Scotland"www.undiscoveredscotland.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৩ 
  4. "All about the doctor turned novelist whose heart always remained in Scotland"The National (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৩ 
  5. লিউকোনেন, পেত্রি। "A. J. Cronin"Books and Writers (kirjasto.sci.fi)। ফিনল্যান্ড: কুসানকস্কি পাবলিক লাইব্রেরি। ২৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. ম্যাকফারসন, হ্যামিশ (৩ জানুয়ারি ২০২১)। "AJ Cronin: The doctor turned novelist whose heart always remained in Scotland"দ্য ন্যাশনাল। গ্লাসগো। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  7. Peter Haining (1994) On Call with Doctor Finlay. London: Boxtree Limited. আইএসবিএন ১৮৫২৮৩৪৭১৪
  8. "A.J. Cronin: Biography on Undiscovered Scotland"আনডিসকভার্ড স্কটল্যান্ড। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  9. এ. জে. ক্রোনিন, Adventures in Two Worlds। বস্টন: লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি, ১৯৫২, পৃষ্ঠা ২৬১-২৬২।
  10. "A.J. Cronin | Scottish novelist, physician, playwright"এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]