মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(এম.আর সিদ্দিকী থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এম আর সিদ্দিকী
প্রথম রাষ্ট্রদূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রমেক্সিকো
কাজের মেয়াদ
১৯৭১ (প্রবাসী সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা)
কাজের মেয়াদ
১৯৭৫ – ১৯৭৮
রাষ্ট্রপতিশেখ মুজিবুর রহমান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৫-০৩-০১)১ মার্চ ১৯২৫
সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম জেলা, বাংলাদেশ
মৃত্যু৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২(1992-02-06) (বয়স ৬৬)
ঢাকা, বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলআওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীবেগম লতিফা সিদ্দকী
সন্তানফয়সাল সিদ্দিকী, কামাল সিদ্দিকী, শামছ সিদ্দিকী, আমের সিদ্দিকী ও ওমর সিদ্দিকী

মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (১ মার্চ ১৯২৫ - ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২) পূর্ব পাকিস্তানবাংলাদেশের উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ও কূটনীতিক ছিলেন। তিনি ১৯৬০ এর দশকে বেশ কয়েকটি উৎপাদন ও অর্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ সংগঠিত করেছিলেন এবং প্রবাসে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি নবগঠিত রাজ্যে বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী হন এবং আমেরিকামেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত হন। [১]

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

সিদ্দিকী ১৯২৫ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে (তদানীন্তন পূর্ব বাংলা, এখন বাংলাদেশ ) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীর ছেলে। সীতাকুণ্ডে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতের কলকাতা হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তারপর তিনি একটি ডিগ্রী নিতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় গমন করেন এবং ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন । তিনি রয়েল ইকোনমিক সোসাইটি এবং রয়েল স্ট্যাটিস্টিকস সোসাইটি উভয়েরই সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। [১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মোস্তাফিজুর রহমান একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ১৯৬২ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো একে খান জুট মিলস লিমিটেড, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (বর্তমানে সাধারন বিমা কর্পোরেশনের অংশ), এসকেএম জুট মিলস লিমিটেড, ন্যাশনাল মোটরস লিমিটেড, ক্রিসেন্ট মোটরস লিমিটেড, থেরাপিউটিক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিডকো লিমিটেড (ট্রেডিং বিভাগ), সিডকো লিমিটেড (গার্মেন্টস বিভাগ), ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড, পূর্বের স্পনসর ডিরেক্টর, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড (প্রথম পূর্ব পাকিস্তানি ব্যাংক, বর্তমানে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড), আল-বারাকাহ ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। [১]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং এর কোষাধ্যক্ষ হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি আবার পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম -২ আসন থেকে বাংলাদেশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। [১]

জেলা আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রামের সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সভাপতি হিসেবে সিদ্দিকী কালুরঘাটের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচটি জেলা এবং বরিশাল ও ফরিদপুর জেলা নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চলের (কমান্ড) চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকারের সমর্থন লবি করার জন্য নির্বাসিত সরকারের দূত হিসাবে তাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় প্রেরণ করা হয়। [২][৩]

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। [৪] ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ দূত হিসাবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং পাকিস্তান থেকে আটকা পড়া বাংলাদেশীদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে তদবির করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২১ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে [৫] ও জুলাই ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। [৬][৭] ১৯৮০ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। [১]

সামাজিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

এমআর সিদ্দিকী তার সামাজিক কাজের জন্যও পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চট্টগ্রাম লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি হওয়ার পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে লায়ন্স আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে যখন চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে (হালিশহর, কাট্টলী এবং সীতাকুণ্ড) এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত হচ্ছিল, তখন তার নেতৃত্বে একটি বিশাল ত্রাণ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যার জন্য তাকে "দ্য লায়ন্স হিউম্যানিস্টিটিভ অ্যাওয়ার্ড" দেওয়া হয়েছিল। লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালে খ্যাতিমান, এবং সম্মানসূচক "আন্তর্জাতিক কাউন্সেলর" হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ১৯৬২ সালে একটি পৃথক অস্থায়ী লায়ন জেলা ৩০৫ ই (পাকিস্তান) গঠন করা হয় এবং তাকে প্রথম জেলাশাসক নির্বাচিত করা হয়। [১]

১৯৬৬ সালে সিদ্দিকী "চট্টগ্রাম লায়ন ফাউন্ডেশন" গঠন করেন, এটি সিংহবাদের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় ফাউন্ডেশন। চট্টগ্রাম লায়নস চক্ষু হাসপাতাল (১৯৯৩ সালের ৫ জানুয়ারী সিদ্দিকীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ইন্দো-পাক উপমহাদেশের লায়নদের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে, আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন এবং লায়নস চক্ষু হাসপাতাল ১৯৮৩ সালে পুনরায় সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে সিদ্দিকী আবার লায়ন্স ক্লাবগুলি সংগঠিত করার নেতৃত্ব নেন। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ৩১৫ই জেলার জেলাশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তার বন্ধু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদকে সাথে নিয়ে তিনি পুনরায় সংগঠিত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে নতুন ক্লাব গঠন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত "১৭ তম আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া লায়ন্স আন্তর্জাতিক ফোরাম" এর ফোরামের চেয়ারম্যান ছিলেন। [১]

অন্যান্য সংস্থা[সম্পাদনা]

লায়ন্স ছাড়াও তিনি ওআইএসসিএর (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) সভাপতি, আন্ডার-প্রিভিলেজড চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের (ইউসিইপি) চেয়ারম্যান এবং সীতাকুণ্ডের কুমিরার লতিফা সিদ্দিকী বালিকা কলেজ ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি পাকিস্তান বীমা সমিতি, মহানগর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ আউশ শিল্প সমিতি সমিতির সভাপতিত্ব সহ বিভিন্ন ধরনের সংগঠন ও সংস্থায় অনেক নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাপান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের গভর্নর ছিলেন, যা তিনি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিলেন। [১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সিদ্দিকী ১৯৯২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৬৭ বছর বয়সে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মারা যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (২০১২)। "সিদ্দিকী, এম.আর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. Bangladesh। Embassy of Bangladesh.। ১৯৭১। 
  3. Sukumāra Biśvāsa (২০০৫)। Bangladesh Liberation War, Mujibnagar Government Documents, 1971। Mowla Brothers। পৃষ্ঠা 258। আইএসবিএন 978-984-410-434-1 
  4. Boster, Davis (২৪ জুলাই ১৯৭৫)। "Biographic Information on Mustafizur Rahman Siddiqi"WikiLeaksWikiLeaks cable: 1975DACCA03598_b। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৬ 
  5. Diplomatic List। Department of State। ১৯৭৮। পৃষ্ঠা iv। 
  6. "Bangladesh Mission / Washington, DC | Vanderbilt Television News Archive"tvnews.vanderbilt.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২১ 
  7. "India-Pakistan War | Vanderbilt Television News Archive"tvnews.vanderbilt.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২১