এডওয়ার্ড সোজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরে সোজা

এডওয়ার্ড সোজা (১৯৪০-২০১৫) একজন আত্মস্বীকৃত "নগরায়ণপন্থী" বুদ্ধিজীবী।[১] তিনি একজন উত্তরাধুনিক রাজনৈতিক ভূগোলবিদ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা অনুষদের প্রখ্যাত নগরতাত্ত্বিক। তিনি সেখানে নগর-পরিকল্পনা বিভাগের বিশেষ অধ্যাপক ছিলেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসেও অধ্যাপনা করেছেন। তিনি সাইরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথমদিকে তিনিকেনিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতেন। তিনি স্থানিক গঠন ও সামাজিক সুবিচার নিয়ে লেখালেখি করেছেন এবং বিশ্বের একজন অগ্রগণ্য স্থানতাত্ত্বিক হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন।

২০১৫ সালে তিনি ভাউতরিন লুদ পুরস্কার লাভ করেন , যা ভূগোলবিদদের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে পরিচিত। একে ভূগোলের নোবেল-ও বলা হয়।

তিনি আমেরিকান নারীবাদী সংস্কৃতিতাত্ত্বিক বেল হুকস (জন্ম ১৯৫২) এবং ফ্রেঞ্চ বুদ্ধিজীবী মিশেল ফুকো (১৯২৬-১৯৮৪) প্রদত্ত মতবাদ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সফলভাবে মার্ক্সবাদী নগরতাত্ত্বিক সমাজবিজ্ঞানী অঁরি লেফেব্রের কাজ সার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন। তাত্ত্বিক ধারণার এই সফল ব্যবহার স্থানিক তত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক ভূগোলে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদানরূপে পরিগণিত হয়। লেফেব্রের স্থানিক ত্রয়ী মাত্রা ধারণার সাথে সোজা তার নিজস্ব "তৃতীয় মাত্রা"-র ধারণার সুন্দর সমন্বয় ঘটান। প্রকৃত ও কাল্পনিক উভয় স্থানেই বিচরণ এই তৃতীয় মাত্রার।

সোজার উত্তরাধুনিক বিশ্লেষণ স্থান ও সমাজের ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। এক্ষেত্রে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর এবং তাঁর অধিবাসীদের তিনি মডেল ধরে তত্ত্ব প্রদান করেন। ২০১০ সালে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস স্থানিক সুবিচারের উপর সোজার লেখা তত্ত্বাবলি প্রকাশ করে ২০১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস তাঁর "মাই লস অ্যাঞ্জেলেস" শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করে। [২] এছাড়াও তিনি "নগর:নগরায়ণ সংস্কৃতি,প্রবণতা,প্রথা,নীতি,কর্ম" নামক তাত্ত্বিক জার্নাল প্রকাশ করেন। [১]

সোজা অ্যালেন জে স্কট, মাইকেল স্টর্পার, ফ্রেডেরিক জেমসন, ডেভিড হার্ভে ও কার্ট ইভসনের সঙ্গে কাজ করেছেন।

অধ্যাপক মুস্তাফা ডিকেস[৩],ড.ওয়াল্টার জে নিকোলস,[৪] ড.মার্ক পার্সেল[৫], ড. ডায়ানে ডেভিস[৬], ড.হুয়ান মিগুয়েল কানাই[৭] এবং ড.স্টেফানে ব্লকের[৮] ডক্টরাল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।

তৃতীয় মাত্রা[সম্পাদনা]

সোজা তৃতীয় মাত্রার ধারণা দেন। উক্ত তত্ত্ব অনুযায়ী, "সবকিছুই একত্রে অবস্থান করে; ব্যক্তিবাদ ও বস্তুবাদ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান,জ্ঞাত ও অজ্ঞাত, শরীর ও মন, সচেতন ও অবচেতন, শৃঙ্খলা ও শৃঙ্খলাবিরোধী,প্রাত্যহিক জীবন ও শেষ না হওয়া ইতিহাস, দেহ ও সংগঠন।" তিনি বলেন," এটি মানবজীবনের স্থানিকতা অনুধাবন ও পরিবর্তনের একটি অনন্য হাতিয়ার।" তিনি উত্তর-উপনিবেশিক যুগের চিন্তাবিদদের (গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, বেল হুকস,হোমি কে ভাবা ও বেল-হুকস) ধারণাকেও ব্যবহার করেছেন।

সোজার তত্ত্ব নানারকম গাণিতিক রহস্যের কুহকে আচ্ছন্ন। হোর্হে লুইস বোর্হেস-এর স্থানিক অসমতার ধারণাকে তৃতীয় মাত্রার ধারণার সাথে একীভূত করেন। তৃতীয় মাত্রা যাবতীয় সব ধারণার অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রসারণ বললে অত্যুক্তি হবে না। তিনি বলেন,"প্রতিটি সাংস্কৃতিক কাঠামোই সংকরায়ণের মধ্য দিয়ে যায়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী সংকরায়ণে যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত, সেগুলোকে পুনঃপুন প্রতিস্থাপনই এর বৈশিষ্ট্য। অর্থ ও প্রতিনিধিত্বের এক নতুন আলোচনা এতে প্রত্যহ পরিস্ফুট হয়। [৯]

লস অ্যাঞ্জেলেসের জন্য সোজার রূপকল্প[সম্পাদনা]

সোজা লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের জন্য ছয়টি রূপকল্প প্রদান করেন। এগুলো হলো:

(১)"ফ্লেক্সিসিটি"- শিল্পের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া,যা শুধু উচ্চমানের প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হবে না।

(২)কসমোপলিস- বিশ্বায়ন সংস্কৃতির প্রাধান্য।

(৩)এক্সোপলিস- শহরের প্রাচীন অবকাঠামোর বিলুপ্তি ও অধিক নগরায়ণ

(৪)মেট্রোপোলারিটি- অসমতা,সামাজিক বিভক্তিকরণ ও মতপার্থক্যের জন্য নতুন বিতর্কচর্চার সূত্রপাত।

(৫)"আবদ্ধ দ্বীপপুঞ্জ"- অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি শহর,অধিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা

(৬) সিমসিটি-পরাবাস্তবতার উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বৈদ্যুতিক নগরী।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]