উদ্ভিদকোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি উদ্ভিদ কোষের গঠন

উদ্ভিদকোষ, মূলত ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির। একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষ বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত-কোষ প্রাচীর,কোষ ঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস

কোষপ্রাচীর[সম্পাদনা]

কোষপ্রাচীর : উদ্ভিদকোষের[১] ক্ষেত্রে কোষপর্দার বাইরে জড় পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি পুরু প্রাচীর থাকে, একে কোষ প্রাচীর বলে। এটি সেলুলোজ দ্বারা গঠিত। প্রাণিকোষে এ ধরনের প্রাচীর[২] থাকে না। প্রাণিকোষ আবরণটি প্লাজমাপর্দা দ্বারা গঠিত। কোষের সজীব অংশকে রক্ষা করা এবং কোষএর সীমারেখা নির্দেশ করা কোষপ্রাচীরের প্রধান কাজ। উদ্ভিদকোষের কোষপ্রাচীর তিন স্তর বিশিষ্ট : প্রাথমিক প্রাচীর, গৌণ প্রাচীর, টারশিয়ারী প্রাচীর। কোষপ্রাচীরের প্রধান রাসায়নিক উপাদান সেলুলোজ যা গ্লুকোজের পলিমার। প্রাথমিক কোষপ্রাচীরে পেকটিক পদার্থ এবং গৌণ প্রাচীরে লিগনিন, সুবেরিন ইত্যাদি থাকে। এছাড়াও কোষ প্রাচীরে হেমিসেলুলোজ, প্রোটিন, লিপিড এবং প্রচুর পানি থাকে। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কোষপ্রাচীর মধ্যপর্দা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। মধ্যপর্দা পেকটিক এসিড, পেকটিন ও প্রোপেকটিন দ্বারা গঠিত। অনেক ধরনের উদ্ভিদ কোষ একটি বৃহৎ কেন্দ্রীয় ভ্যাকুওল [৩] ধারণ করে যা টনোপ্লাস্ট নামে পরিচিত ।

কোষঝিল্লি[সম্পাদনা]

কোষ প্রাচীরের ঠিক নিচে সমস্ত প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে একটি সজীব ঝিল্লি আছে।এ ঝিল্লিকে কোষ ঝিল্লি বলে।একে প্লাজামামেমব্রেন,প্লাজমালেমা,সাইটোমেমব্রেন এসব নামেও অভিহিত করা হয়।তবে বর্তমানে অনেকে একে বায়োমেমব্রেন বলতে চান।ঝিল্লিটি স্থানে স্থানে ভাজ বিশিষ্ট হতে পারে।প্রতিটি ভাজকে মাইক্রোভিলাস বলে।কোষাভ্যন্তরে অধিক প্রবিষ্ট মাইক্রোভিলাসকে বলা হয় পিনোসাইটিক ফোস্কা।

গঠন[সম্পাদনা]

সাইটোপ্লাজম[সম্পাদনা]

কোষের প্রোটোপাজমের নিউক্লিয়াসবিহীন জেলির মতো অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোষের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশিষ্ট সজীব বস্তুসমূহকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বলা হয়।

মাইটোকন্ড্রিয়া[সম্পাদনা]

(ইংরেজি: Mitochondria) এক প্রকার কোষীয় অঙ্গানু, যা সুকেন্দ্রিক কোষে পাওয়া যায়। এ অঙ্মাগানুটি ১৮৯৮ সালে বেনডা(Benda) আবিষ্কার করেন।জীবের শ্বসন কার্যে অংশগ্রহণ করা এর প্রধান কাজ।শ্বসন প্রক্রিয়ার ধাপ চারটি ;গ্লাইকোলাইসিস, অ্যাসিটাইল কো এ সৃষ্টি , ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন প্রবাহ তন্ত্র। এর প্রথম ধাপ মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটেনা। তবে দ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া গুলো মাইটোকন্ড্রিয়াতেই সম্পন্ন হয়। ক্রেবস চক্রে সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদিত হয় বলে মাইটোক‌ন্ড্রিয়াকে কোষের শ‌ক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া যায়।

প্লাস্টিড[সম্পাদনা]

প্লাস্টিড' (গ্রীক: πλαστός) হলো ঝিল্লি-আবদ্ধ অঙ্গাণু৷ এটি উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায় এবং কিছু ইউক্যারিওটিক জীবেও পাওয়া যায়। এরা এন্ডোসাইম্বিয়টিক সায়ানোব্যাকটেরিয়া হিসাবে বিবেচিত হয়৷  প্লাস্টিড আর্নস্ট হেকেল আবিষ্কার করেছিলেন এবং তিনি তার নাম দিয়েছিলেন, তবে এ.এফ.ডব্লিউ শিম্পার প্রথম স্পষ্ট সংজ্ঞা দিয়েছিলেন।

রাইবোসোম[সম্পাদনা]

রাইবোজোম জীব কোষে অবস্থিত রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা। রাইবোজোম প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রোটিনের পলিপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে। এছাড়া রাইবোজোম এ কাজে প্রয়োজনীয় এনজাইম সরবরাহ করে।  এই উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ হলো প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয় ।

গলগি বস্তু[সম্পাদনা]

সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি কতকগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট চওড়া সিস্টারনি,থলির মতো ভ্যাকুওল এবং ক্ষুদ্র ভেসিকল এর সমন্বয়ে গঠিত জটিল অঙ্গাণু হল গলগি বস্তু বা গলজি বস্তু(ইংরেজিঃ Golgi Body)।স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ সালে পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলজি বস্তু আবিষ্কার করেন।গলজি বস্তুকে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলে। গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ সালে গলগি বডি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই গলগি বডির নামকরণ করা হয় ।

নিউক্লিয়াস[সম্পাদনা]

নিউক্লিয়াস (ইংরেজি: Cell Nucleus) হল প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, পর্দাঘেরা এবং প্রায় গোলাকার অংশ।যা কোষের সব জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বলা হয় নিউক্লিয়াস ৷ এর আকৃতি গোলাকার ডিম্বাকার ও নলাকার।সিভকোষ ও লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকেনা।নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত থাকে। এটি কোষে সংঘটিত বিপাকীয় কার্যাবলীসহ সব ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। লিউয়েন হুক (Lewaen hook) সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে কোষে নিউক্লিয়াস দেখতে পান এবং এর নামকরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. VanderBeek, Laura; Law, Calvin HL; Tandan, Véd R (২০১০-০৭-২২)। "Gallstone Disease"Evidence‐Based Gastroenterology and Hepatology: 385–395। ডিওআই:10.1002/9781444314403.ch23 
  2. Keegstra, K (২০১০)। "Plant cell walls"Plant Physiology154 (2): 483–486। ডিওআই:10.1104/pp.110.161240পিএমআইডি 20921169পিএমসি 2949028অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. Raven, J.A. (১৯৮৭)। "New Phytologist"। 106 (3): 357–422। ডিওআই:10.1111/j.1469-8137.1987.tb00149.x 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]