উত্তর কোরিয়া-মিশর সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উত্তর কোরিয়া-মিশর সম্পর্ক
মানচিত্র Egypt এবং North Korea অবস্থান নির্দেশ করছে

মিশর

উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া-মিশর সম্পর্ক, উত্তর কোরিয়া এবং মিশর এর মাঝে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নির্দেশ করে। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ মিশরের একটি স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে। অপরদিকে মিশরের রাজধানী কায়রোতে উত্তর কোরিয়ার একটি স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

গামাল আবদেল নাসের এর সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। সেই সময় গামাল আবদেল নাসের অন্যান্য দেশের সমন্বয়ে জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) গঠন করেন। ১৯৬১ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালে মিশর সুয়েজ খাল দখল করার চেষ্টা করে এবং তা মিশরের অধীনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। উত্তর কোরিয়া মিশরের এই পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। [১] এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গঠনের সময় মিশর উত্তর কোরিয়ার সমর্থন পায় এবং ১৯৬১ সালেই উত্তর কোরিয়ার একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল মিশর সফরে যায়। দলটির মিশর সফরের উদ্দেশ্য ছিল, মিশরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন।[১]

সম্প্রতি, জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার উপর কঠোর অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মিশরের রাষ্ট্রপতি, আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেন এবং এর বিপক্ষে মত দেন। [১]

সামরিক বাহিনী[সম্পাদনা]

ইয়ম কিপুর যুদ্ধের পর মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারক উত্তর কোরিয়ার বিমান চালকদের মিশরে, মিশরের বিমান বাহিনীর সাথে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।[১]

১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, মিশরের সাবেক রাষ্ট্রপতি আনোয়ার এল-সাদাত উত্তর কোরিয়ার সাথে একটি সামরিক চুক্তি করেন। চুক্তিতে উত্তর কোরিয়ার নিকট আর-১৭ এলব্রাস মিসসাইল বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল। তবে পরবর্তীতে উত্তর কোরিয়া মিশরকে নিজস্ব মিসাইল ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করে।[১] ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়া নিজেদের প্রথম স্কুড-বি আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইলের মালিক হয়। দেশটি মিশরের কাছ থেকে এই ধরনের মিসাইলটি ক্রয় করে।[২] তবে এরপর অবশ্য উত্তর কোরিয়া নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করে। ১৯৯০ এর দশকে মিশর, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে স্কুড-সি ধরনের মিসাইল ক্রয় করে। যা ছিল উত্তর কোরিয়ার তৈরি যুদ্ধাস্ত্র।[১]

উত্তর কোরিয়া প্রধানত আফ্রিকার দেশগুলোর নিকট তাঁদের তৈরি অস্ত্র বিক্রি করে। অস্ত্র রপ্তানির এই প্রক্রিয়ায় মিশর, উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করে আসছে। উত্তর কোরিয়া, নিজেদের এই অস্ত্র রপ্তানির সময় পণ্য পরিবহনের জন্য মিশরের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে থাকে। মিশরের বন্দর নগরী পোর্ট সাইদকে এই কাজে ব্যবহার করা হয়।[১][২]

তবে পরবর্তীতে সামরিক খাতে এই দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল না। ২০১৭ সালে এক খবরে জানা যায়, মিশরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার সাথে মিশরের আর কোন সামরিক সম্পর্ক নেই। মিশর দেশটির সাথে সকল সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। [৩]

অর্থনৈতিক সম্পর্ক[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে, মিশরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ওরাসকম উত্তর কোরিয়ায় কোরিয়োলিংক স্থাপন করে। এই কোরিয়োলিংক ছিল উত্তর কোরিয়ায় স্থাপিত প্রথম ৩জি ফোন নেটওয়ার্ক।[১][৪][৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রামানি, স্যামুয়েল (আগস্ট ২৮, ২০১৭)। "The Egypt-North Korea Connection"দ্যা ডিপ্লোম্যাট 
  2. https://www.cnbc.com/2017/08/25/egypt-could-be-a-pawn-in-the-uss-north-korea-offensive.html
  3. এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) (সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭)। "Egypt's top commander says military ties with Pyongyang severed"দ্যা জাপান টাইমস। সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Yonhap quoted the South Korean Defense Ministry on Monday as saying Egypt’s Defense Minister Sedki Sobhi told his counterpart Song Young-moo that Egypt has “already severed all military ties with North Korea.” 
  4. আলা শাহিন (২ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Orascom Telecom Media Shares Jump After North Korea Announcement"ব্লুমবার্গ। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১২ 
  5. রিকস, থম্যাস ই.; কিম, ইয়োনহো (২০১৬-০৩-১৭)। "North Korea's silent hard currency source: That cellphone business with Orascom"ফরেইন পলিসি। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭