উচ্চগতির জলধারা দ্বারা কাটার যন্ত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উচ্চগতির জলধারা দ্বারা কাটার যন্ত্রের রেখাচিত্র:
১ - উচ্চচাপ জলের প্রবেশখাত
২ - উপল (চুনি বা হিরা)
৩ - ঘর্ষণকারী পদার্থ (তামড়ি / গার্নেট)
৪ - মিশ্রণ চুঙ্গি
৫ - রক্ষক আবরণ
৬ - খন্ডক জলস্তম্ভ
৭ - ধাতব লক্ষবস্তু

উচ্চগতির জলধারা দ্বারা কাটার যন্ত্র (যা ইংরেজি ভাষায় ওয়াটার জেট কাটার যা ওয়াটার জেট[১] নামেও পরিচিত) এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে উচ্চ চাপ ও গতিসম্পন্ন পানির সরু ধারা ব্যবহার করে ধাতু বা অন্যান্য বস্তুকে কাটা হয়। কাটার এই প্রক্রিয়া প্রকৃতিতে পানির দ্বারা সাধারণ ক্ষয়ের মতই, তবে অনেক ত্বরান্বিত এবং একই স্থানে নিবিষ্ট। অনেক সময় পানির সাথে ঘর্ষকপদার্থ (বালি অথবা ধাতব কণা) মিশিয়ে উচ্চ ক্ষয় (erosion) ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চগতির জলধারা দ্বারা কাটার যন্ত্র তৈরী করা হয়। এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে খুব শক্ত ধাতু থেকে শুরু করে কাগজ পর্যন্ত কাটা যায়। কাটার সময় তাপজনিত পীড়ন (থারমাল স্ট্রেস) প্রায় শূন্য হওয়াতে তাপ সংবেদনশীল বস্তুর ক্ষেত্রে এই কাটার প্রক্রিয়া অগ্রগণ্য। উচ্চপ্রযুক্তির কলকারখানা, যেমন বিমান শিল্প, জাহাজ শিল্প, গাড়ি শিল্পে এই প্রযুক্তি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালে নরম্যান ফ্র্যাঞ্জ (Norman Franz) নামক একজন 'অরণ্য প্রোকৌশলী' সর্ব প্রথম ওয়াটার জেট ব্যবহার করেন কাঠ কাটার জন্য। কিন্তু শুধু মাত্র পানি ব্যবহার করার কারণে ওয়াটার জেট কাটিং খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ১৯৭০ সালে একজন মিশরীয় ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ হাসিস (Mohamed Hashish) পানির সাথে ঘর্ষকপদার্থ (অ্যাবরেসিভ) মেশানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন এবং ওয়াটার জেট কাটিং এর জন্য একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেন। বর্তমানে অনেক ধরনের ওয়াটার জেট বাজারে রয়েছে যাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো শুধু ওয়াটার জেট, অ্যাবরেসিভ ওয়াটার জেট (পানির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে পার হবার পরে ঘর্ষকপদার্থ মেশানো হয়), স্লারি জেট (পানি নজেলে প্রবেশের আগেই ঘর্ষকপদার্থ মেশানো হয়) ও অন্যান্য।

কাটিং এর পেছনের বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

এই কাটিং প্রক্রিয়ায় প্রথমে পানিকে উচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হয়। উচ্চচাপ প্রয়োগ করা হয় তেল চালিত হাইড্রোলিক (Hydraulic drive system) যন্ত্রের সাহায্যে যাকে প্রেসার ইন্টেন্সিফায়ার বলা হয়. যেহেতু প্রয়োগকৃত চাপের পরিমাণ খুব বেশি (কোন ধাতু কাটা হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে এই চাপ ৬৫০ মেগা প্যাসকেল পর্যন্ত বা তার ও বেশি হতে পারে), তাই এই প্রেসার ইন্টেন্সিফায়ারের সিলিন্ডারের দেয়ালের পুরুত্ব খুব বেশি হয়। যেহেতু এই প্রেসার ইন্টেন্সিফায়ার একটি পজেটিভ ডিসপ্লেসমেন্ট পাম্প (যেই পাম্প শুধু সামনের দিকে তরল বা বায়বীয় পদার্থের সরন ঘটায়, পেছনের দিকে নয়) তাই এই পাম্পের তরলের প্রবাহ নিয়মিত নয়। এই অনিয়মিত পানির প্রবাহ কে নিয়মিত করতে আর একটি প্রকোষ্ঠ থাকে যেটাকে পানির দ্বিতীয় আধার বলা হয়। এই দ্বিতীয় আধারের গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, (১) এই জলাধার পানির প্রবাহকে নিয়মিত করে যা নীরবিচ্ছিন্ন ভাবে মেটাল কাটিং এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পুর্ণ; (২) অ্যাবরেসিভ ওয়াটার জেট কাটিংএ এই জলাধারের সন্মুখে ছোট ছিদ্র (Orifice) থাকে। এই ছিদ্রের ব্যাস খুব কম হওয়াতে পানি বের হতে পারেনা, ফলে দ্বিতীয় জলাধারে পানি জমতে থাকে এবং বের না হতে পারার কারণে পানির চাপ বেড়ে যেতে থাকে। ফলে এই জলাধার দ্বিতীয় প্রেসার ইন্টেন্সিফায়রের মতো কাজ করে। প্রেসার যখন খুব বেশি হয়ে যায় তখন পানি ছোট ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসতে থাকে। ফলে পানির স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রুপান্তরিত হয়। তরল গতিবিদ্যা অনুসারে যদি কোথাও যদি তরলের গতিশক্তি বেড়ে যায় তাহলে সেখানে চাপ কমে যাবে, (যেমন, কার্বুরেটর লাগানো গাড়িতে তেল ও বাতাসের মিশ্রণ পদ্ধতি, ভেঞ্চুরি মিটারের ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহের সময় ভেঞ্চুরিতে বাতাসের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে সেখানে চাপ কমে গিয়ে শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং সেই শূন্যতা পুরুন করতে তেল ভেঞ্চুরিমিটারে চলে এসে বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়),চাপ কম থাকার ফলে ঘর্ষকপদার্থ 'সঞ্চয় প্রকোষ্ঠ' থেকে বাতাসের সাথে 'মিশ্রণ প্রকোষ্ঠে' চলে আসে। মিশ্রণ প্রকোষ্ঠ চলে আসার পরে সেখানে উচ্চগতি স্বম্পন্ন পানির সাথে ঘর্ষকপদার্থ মিশে গিয়ে নজ়েলের মাধ্যমে ধাতব লক্ষবস্তুর উপর পরে। উচ্চগতি স্বম্পন্ন ঘর্ষকপদার্থ মেটালে আঘাত করলে সেখান থেকে কিছু ধাতু কেটে ফেলে। অবারিত ভাবে এই প্রবাহ যতক্ষণ চলে ততক্ষণ ধাতু কাটা হতে থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. About waterjets, ২০১০-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০২-১৩. 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]