উইলিংডন দ্বীপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উইলিংডন দ্বীপ দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচি শহরের অনতিদূরে অবস্থিত ভারতের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপ। বর্তমান উইলিংডন দ্বীপের সম্পূর্ণ অংশই ভেম্বনাড় হ্রদের কোচির নিকটস্থ অংশে তুলনামূলকভাবে ছোট একটি প্রাকৃতিক দ্বীপে ড্রেজিং করা পলিমাটির স্তর ফেলে নির্মাণ করা হয়। উইলিংডন দ্বীপটি কোচি বন্দরের মূল দ্বীপ হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই দ্বীপে রয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর কোচি নেভাল বেস (দক্ষিণী নৌ কমান্ড), প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশন, কোচি ন্যায়-আদালত কাস্টম হাউস [১] এবং ভারতীয় কৃষিবিদ্যা গবেষণা পরিষদের একটি নির্বাচনী একক হিসাবে একটি কেন্দ্রীয় মৎস্যচাষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

দ্বীপটিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে বন্দর সংক্রান্ত কোচিন পোর্ট ট্রাস্ট-এর সদর দপ্তর[২] (যা কোচি বন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে), শুল্ক বিভাগ এবং দুই ডজনের অধিক আমদানী-রপ্তানীকারক অফিস, গুদামঘর ও বেশ কিছু হোটেল এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র রয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ধারণা[সম্পাদনা]

স্যার রবার্ট ব্রিস্টো কোচিতে একটি নতুন বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করেন। লর্ড উইলিংডন তাকে নিযুক্ত করেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী গভর্নরের দ্বারস্থ হন।গভর্নরের সম্মতিতে ভারতের পশ্চিম উপকূলে কোচিতে একটি নতুন বন্দর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নির্মাণ[সম্পাদনা]

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আধুনিক পদ্ধতিতে কোচিতে বন্দর নির্মাণের সময়ে ভেম্বনাড় হ্রদে একটি ছোট দ্বীপের ওপর পলি ও ড্রেজিং করা মাটি ফেলে ঐ নতুন বন্দরের দাপপ্তরিক কাজের জন্য নতুন একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরী করেন৷ ভারতের ভাইসরয় এবং স্বয়ং এই পরিকল্পনার অনুমোদক স্যার লর্ড উইলিংডনের নাম অনুসারে নতুন দ্বীপটির নাম করণ করা হয়। [৩] মূল অভিবক্তা এবং প্রযুক্তিবিদ রবার্ট ব্রিস্টো এই দ্বীপে নির্মিত প্রথম অট্টালিকার মালিক হন।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ৯ই মার্চ বিব্বি লাইনের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান আসে এই দ্বীপে৷ মালাবার হোটেল নামে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি হোটেল নির্মাণ করা হয় যা আহত যাত্রীদের বিশ্রামের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর পূর্বেই বন্দর এর সমস্ত পূর্ব পরিকল্পিত কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। মূল্যবান পরিকাঠামো বজায় রাখতে এবং যুদ্ধের সময় সমস্ত প্রকার পরিবহন অব্যাহত রাখতে মূল ভূখণ্ডের সহিত একটি গভীর জাহাজঘাটা, একটি রেল উড়ালপুল এবং একটি সড়ক উড়ালপুল দিয়ে এই দ্বীপটিকে যুক্ত করা হয়। [৩] দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বেন্দুরুতি দ্বীপে একটি নৌ সেনা বাহিনীর ছাউনি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীকালে যুদ্ধ সমাপ্ত হলে জাপানি অনুপ্রবেশ আটকানোর জন্য এখানে একটি নৌযান অবতরণ ক্ষেত্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে যাত্রীদের জন্য একটি জেটি, একটি শুল্ক ভবন এবং সন্নিকটে হোটেল নির্মাণ করা হয়।

উইলিংডন দ্বীপে অবস্থিত মালাবারি হোটেল বিবান্ত থেকে দৃশ্য

ব্রিটিশ সৈন্য দ্বারা ব্যবহার[সম্পাদনা]

রয়্যাল এয়ার ফোর্স খুব দ্রুত এবং বিস্তারের সাথে এই অকর্ষিত ভূমির উপর নিজেদের সুবিধামতো একটি বৃহত্তর বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করেন। [৩] ধীরে ধীরে কৃত্রিম দ্বীপটি একটি উঠতি সৈন্য ঘাঁটিতে পরিণত হতে থাকে। যুদ্ধ সময়কালীন সৈনিকদের থাকার জন্য এলাকার হোটেল একাধিক কোয়ার্টার দিলে পরিবর্তে এই নির্মাণের পাশেই একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলা হয়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের পয়লা অক্টোবর এর মালিকানা রয়্যাল এয়ার ফোর্স থেকে রয়াল নেভির ওপর বর্তিত হয় এবং এইচএমএস গরুড় নামকরণ করা হয়। এটি ১৮০ উড়ানযান ধারণক্ষমতা যুক্ত রয়েল নেভি এয়ারক্রাফট রিপেয়ার ইয়ার্ডে পরিণত হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল তারিখে এটি বন্ধ হয়ে যায়। [৪] একটি নতুন ডাকঘর, হোটেল ও অফিসের মাঝে একটি মুক্ত স্নান তথা সন্তরণ কক্ষ এবং একটি ব্যাংকিং সিস্টেম দ্বীপের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পূর্ণ করে।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত[সম্পাদনা]

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা লাভের পর পরিবহন চক্রকেন্দ্রের ওপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ হাস পায় ও ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। [৩] স্বল্প সময়ব্যাপী ঔপনিবেশিক ভোগ দখলের সময়েই দ্বীপটি সর্বাধিক 1 মিলিয়ন টন মাল বহনের ক্ষমতা অর্জন করে, ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। [৩] দ্বীপে অবস্থিত বিমানঘাঁটির যথা সম্ভব উন্নয়ন করে শহরের অন্যতম উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত সেনা এবং সাধারণ বিমানবন্দরে পরিণত হয়। ২৫ কিলোমাটার উত্তর-পূর্বে কোচি শহরের নিকট নেদুম্বাসেরিতে একটি নতুন বিমানবন্দর স্থাপিত হলে এই দ্বীপের বিমানবন্দরটির যাত্রীবিভাগ বন্ধ করে দিয়ে সেনাবিভাগটিই শুরু কার্যকর রাখা হয়৷[৫] বিমানবন্দরটি নৌসেনা ঘাঁটির আইএনএস গরুড় বিমান ঘাঁটিতে পরিণত হয়। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দ্বীপটির বাকি ফাঁকা অংশ অন্যান্যভাবে কাজে লাগানো শুরু হয়। পরে ব্রিটিশদের তৈরি এই পুরোনো অট্টালিকা সংবলিত অঞ্চল কোচি মহানগরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে।

ভারতের বড় বড় নৌ বন্দর গুলির মধ্যে কোচিন একটি, যা উইলিংডন দ্বীপকে বৈশিষ্ট্যময় করে তোলে। দ্বীপটি মূল ভূখণ্ডের সাথে সড়ক এবং রেল উভয় পথেই বেন্দুরুতি উড়ালপুলের দ্বারা যুক্ত। [৩] দ্বীপটিতে দুটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যথা - মাট্টঞ্চেরি হল্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং কোচিন হারবার টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশন৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর দক্ষিণী নৌ কমান্ডের সদর দপ্তরটি এই দ্বীপে অবস্থিত৷ কোচিন শিপইয়ার্ড[৬] এই দ্বীপের নিকটেই অবস্থিত৷ এটি একটি বৃহত্তম পর্যটনস্থলও৷ এই দ্বীপটিতে বহু খালাসকারী প্রতিনিধির দপ্তর ও হোটেল রয়েছে৷

এগুলি ছাড়া দ্বীপটিতে রয়েছে একটি শুষ্ক পোতাশ্রয়, একটি দমকল স্টেশন, একটি সেচ খামার, একটি হাসপাতাল[৭] এবং একাধিক উপাসনালয়৷ দ্য পোর্ট হেল্থ অর্গানাইজেশন দ্বীপটির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় বজায় রেখে দ্বীপে বাইরে থেকে আসা সংক্রমণ যোগ্য রোগ প্রতিহত করতে তৎপর।[৮] এখানে বিমানবন্দরের অনতিদূরে অবস্থিত ভারত সরকারের পর্যটক তথ্যসংগ্রহ বিভাগের কোচিন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে। দ্বীপটি আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্র। এখানে একাধিক সংখ্যায় বিপণন অফিস, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা, পর্যটন এজেন্সি, উপহার সামগ্রীর দোকান ও বহু সংখ্যায় গুদামঘর রয়েছে। কোচিনবন্দর এবং শুল্ক দফতরের বহু কর্মচারী বাস করে এখানে। বসবাসরত এবং নৌবাহিনী সেনাদের পরিবারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বীপটিতে পাঁচটি বিদ্যালয় এবং একটি শিশু বিদ্যালয় রয়েছে। ওই পাঁচটি বিদ্যালয় এর মধ্যে তিনটিই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://www.cochincustoms.nic.in/
  2. "Cochin Port Trust, Kerala, India"www.cochinport.com 
  3. "Willingdon Island"। ২০১০-০৩-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০৮ 
  4. Chatterji, Adhar Kumar (1985). Naval aviation: a world history. Allied. p. 151.
  5. cial.aero/
  6. cochinshipyard.com/
  7. http://cochinport.gov.in/index.php?opt=medicalservices&sub=26&tab=1
  8. http://www.porthealthcochin.org