উইকিপিডিয়া:উইকিপত্রিকা/দেয়ালিকা/ফাল্গুন ১৪৩১
উইকিবসন্ত: পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা
এক্ষেত্রে আরও যোগাযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা আমাদের প্রচারণা বাড়াতে পারি। কেবল অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা বা অন্য কোন প্রতিযোগিতায় প্রচারণা করা বা সেই প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধি করার বিষয়টি আমাদের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে থাকে না; উদ্দেশ্য থাকে উইকিমিডিয়ার মুক্ত জ্ঞানের আন্দোলনকে সবার সামনে তুলে ধরা। কিন্তু সামগ্রিক আন্দোলনকে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে আমরা এইসব প্রতিযোগিতাকালীন প্রচারণায় উইকিপিডিয়ার প্রতিযোগিতার প্রচারণার পাশাপাশি আমাদের আন্দোলন কি? ও এর ভিত্তিতে উইকিপিডিয়া কি হিসেবে কাজ করে? উইকিপিডিয়া কীভাবে কাজ করে? সেই বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারছি না। শুধু প্রতিযোগিতার প্রচারণা নয়, বরং এর সাথে সাথে অল্প করে হলেও আমাদের এর মাধ্যমে উইকিমিডিয়ার সামগ্রিক আন্দোলনের বিষয়টাকে সবাইকে বুঝিয়ে বলার কাজটা হাতে নিতে হবে।
শীতের আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলতে আসে ফাল্গুন। গত সংখ্যায় তো খাত্তাব হাসানের লেখা উইকিরস "শীতকালে যেসব কারণে উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা নিষিদ্ধ করা উচিত" পড়লেন। কিন্তু সেই লেখাটা কথার কথা ছিল বলে তো এড়িয়ে যাওয়া না। সে যতই রসের কথা হোক। উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা কি নিষিদ্ধ করা যায়? কি সাংঘাতিক প্রস্তাব! কিন্তু কথার কথা হলেও তো কথাগুলো শেষ করা চাই, যে কথাটা বলা বাকি আছে সে কথাটা বলা চাই।
শীতকালের পরে আসে বসন্তকাল। সেই বসন্তের মাস হলো ফাল্গুনের মাস। ফাল্গুন মানে নতুন করে শুরু করা, শীতের জরাজীর্ণতাকে মুছে ফেলা। ফাগুনে নতুন রঙ ধরে বলেই প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও নতুন করে শুরু করার উদ্যম পাই। নতুন করে শুরুর যে উদ্যম আছে, তাতে সব কাজের যোগফল দ্বিগুণ হয়। প্রকৃতির অনুকূল প্রাণবন্ত পরিবেশ কি আমাদের কর্মোদ্যমে মাতিয়ে রাখে না?
কিন্তু ফাল্গুনের বন্দনার সাথে উইকিপিডিয়ার কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে; সম্পর্ক থাকেই। অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় ফাল্গুন মাসে উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধের প্রণেতা বা মানোন্নয়নকারীদের আনাগোনা থাকে বেশি। তাদের সম্পাদনার হারই শুধু বাড়ে না, এর সাথে তাদের ক্ষুরধার মেধার মানসম্পন্ন লেখনীও যোগ হয়।
তো এর পেছনে কারণ কী?
অনেক কারণই হয়তো আছে। তবে শুরুটা ২০১৭ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারিতে। প্রথম বারের মতো আয়োজিত হয় বাংলা উইকিপিডিয়া নিবন্ধ প্রতিযোগিতা। দুই মাসব্যাপী এই আয়োজনে নিবন্ধ তৈরি হয় ৫০৬ টি। ২১১ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে এই আয়োজনের প্রথম সংস্করণের সাফল্যের পরে ধারাবাহিকভাবে এটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত তৈরি হয়।
২০১৮ সালের সংস্করণে নিবন্ধ তৈরি হয় ৩৩৮ টি। এর মধ্যে ১৬৯ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়। উইকিপিডিয়ায় বিদ্যমান নিবন্ধের মান আশানুরূপ না হওয়ায় নতুন নিবন্ধ তৈরির পাশাপাশি নিবন্ধ মানোন্নয়নে মনোযোগী হতে ঐ বছরের ১ জুলাই থেকে নিবন্ধ মানোন্নয়ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা শুরু করা যায়নি।
২০১৯ সালের আয়োজন অবশ্য জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে নিবন্ধ তৈরি হয়েছিল ৭৪৮ টি নিবন্ধ। এর মধ্যে ৩২৮ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়।
২০২০ সালে বাংলা উইকিপিডিয়ার এক লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক স্পর্শ তরান্বিত করতে অবশ্য ফেব্রুয়ারির বদলে বছরের শেষার্ধে লক্ষ্য এবার লক্ষ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল।
২০২১ সাল থেকে আয়োজকরা বাংলা উইকিপিডিয়ার বিদ্যমান নিবন্ধের মানোন্নয়নকে গুরুত্ব দেন। সে বছর থেকে প্রতিযোগিতাটি অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা নামে আয়োজিত হতে থাকে। এই সংস্করণে ১৫৭ টি নিবন্ধ মানোন্নয়ন করা হয়। এর মধ্যে ১১৪ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়। ৭৫ জন জমাদানকারীর ৪১ জনের অন্তত একটি নিবন্ধ গৃহীত হয়। সংখ্যার বিচারে মানোন্নয়নকৃত নিবন্ধের সংখ্যা কম হলেও মানোন্নয়নের ধারা সৃষ্টিতে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল বলে মনে করি। তবে অনেক মানোন্নয়নকৃত নিবন্ধ একেবারে শুরুর পর্যায় থেকে ব্যবহারকারীরা মানসম্মত অবস্থায় এনেছেন— এমন নজিরই ছিল বেশি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া আয়োজনটি নিবন্ধ মানোন্নয়নকারীদের সুবিধার্থে ও সম্পাদনার মান ভালো করতে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ জুড়ে হওয়া আয়োজনে পূর্বের ধারা বজায় থাকে। সেখানে ২০৫ টি নিবন্ধ মানোন্নয়ন করা হয়। যার মধ্যে ১০৮ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়।
২০২৩ সালের আয়োজন ২০২১ সালের মতো করে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করতে হয়। এ সংস্করণে ২০০ টি নিবন্ধ মানোন্নয়ন করা হয়। এর মধ্যে ৯৭ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়। জমাদানকারীদের মধ্যে ৪৩ জনের অন্তত একটি নিবন্ধ গৃহীত হয়।
অর্থাৎ, প্রথম ৩ বছর নতুন নিবন্ধ তৈরি ও এর পরের ৩ বছর নিবন্ধসমূহের মানোন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়।
সর্বশেষ সংস্করণ ২০২৪ সালের আয়োজনটি আবারও নিবন্ধ সৃষ্টির ধারায় ফিরে আসে। এখানে ৪৬০ টি নিবন্ধ জমা পড়ে। যার মধ্যে ৩৩০ টি নিবন্ধ পর্যালোচনা শেষে গৃহীত হয়। জমাদানকারীদের মধ্যে ৪৩ জনের অন্তত একটি নিবন্ধ গৃহীত হয়।
এই মাসে চলমান ২০২৫ সালের সংস্করণেও নিবন্ধ সৃষ্টির ধারায় প্রতিযোগিতাটির আয়োজন অব্যাহত আছে।
যেহেতু এই প্রতিযোগিতার মাসকে উইকিপিডিয়ার নিবন্ধের মান বাড়িয়ে দিচ্ছে ও উইকিমিডিয়া আন্দোলন কে বেগবান করছে, তাই এটাকে তো উইকিবসন্ত বলাই যায়! নাকি?
অনেক ভূমিকা করা গেল। অবশ্য যে প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরতে চাই, তার প্রেক্ষাপটটা তুলে ধরেই একটা প্রস্তাবনা দেয়া চাই।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় মানসম্মত নিবন্ধ সংখ্যা এবং নিয়মিত ভালো অবদান রাখেন এখন ব্যবহারকারী দুটোরই অভাব রয়েছে। আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার পাশাপাশি এখানে মুক্ত জ্ঞানের আন্দোলন সবার কাছে পৌঁছাতে না পারার একটা দায় আছে। এজন্য আমাদের এই উইকিবসন্তের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসছি। কিভাবে ব্যবহারকারীদের নিয়মিত অবদান রাখতে উৎসাহিত করা যায় তা আমাদের ভাবতে হবে। ২০২৩ সালে অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সম্মিলনে মাসুম আল হাসান রকি অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার আদ্যোপান্ত শীর্ষক একক উপস্থাপনায় এই সামগ্রিক ব্যাপারটি তুলে ধরেছিলেন। সেই উপস্থাপনার উপর আলোচনায় উপস্থিত উইকিমিডিয়ানরা অংশ নিয়ে তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছিলেন। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নিবন্ধ সৃজন প্রতিযোগিতা এবং বছরের শেষ ভাগে একটি নিবন্ধ মানোন্নয়ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রাথমিক আলোচনা হয়। এই আলোচনার প্রাথমিক সিদ্ধান্তকে নতুন ব্যবহারকারীদের বছরজুড়ে নিয়মিত হবার উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা ফলপ্রসূ করার উপায় হিসেবে উল্লেখ করেন কেউ কেউ।
তবে বাস্তবে ২০২৩ সালের শেষভাগে উইকিপিডিয়া এশীয় মাস আয়োজিত হওয়া ও ২০২৪ সালের শেষে বাংলা উইকিসম্মেলন আয়োজনের মহাব্যস্ততায় বছরের শেষ ভাগে নিবন্ধ মানোন্নয়ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্তটিকে আর বাস্তবে রুপ দেয়া যায়নি। কিন্তু বাংলা উইকিপিডিয়ায় মানসম্মত নিবন্ধ সংখ্যায় বাড়ানো ও নিবন্ধ মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি আমাদের আন্দোলনকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে হবে। তাই আমাদেরকে পেছনের আলোচনা আর সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই আলোচনাটা স্মরণ করতে ও আলোচনার ধারাটা চালু রাখতেই আসলে এই লেখা।
এক্ষেত্রে আলোচনার শুরুতে বলব, উইকিবসন্ত বা মাতৃভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া এই ধারাবাহিক আয়োজনকে নিয়ামক হিসেবে দেখতে চাই। আমাদের এই আয়োজনে প্রতিবছর অনেক নতুন ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হয়। অনেকে এই আয়োজনের সংবাদ পেয়ে নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধন করে। এর পরে তাদের অনেকেই নিজেকে যোগ্য উইকিপিডিয়ান ও উইকিমিডিয়ার অনলাইন ও অফলাইন আন্দোলনের একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় সামগ্রিক ফলাফল ইতিবাচকতার ধারায় উঠে আসছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আন্দোলনের মূল বিষয়কে সবার কাছে পরিচিত করার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না, সীমিত থেকে যাচ্ছে। তাই নিবন্ধ মানোন্নয়নের বিচারেই শুধু নয়; বরং সামগ্রিক আন্দোলনের প্রসারের উপায়গুলোও আমাদের ভাবনায় রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে আরও যোগাযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা আমাদের প্রচারণা বাড়াতে পারি। কেবল অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা বা অন্য কোন প্রতিযোগিতায় প্রচারণা করা বা সেই প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধি করার বিষয়টি আমাদের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে থাকে না; উদ্দেশ্য থাকে উইকিমিডিয়ার মুক্ত জ্ঞানের আন্দোলনকে সবার সামনে তুলে ধরা। কিন্তু সামগ্রিক আন্দোলনকে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে আমরা এইসব প্রতিযোগিতাকালীন প্রচারণায় উইকিপিডিয়ার প্রতিযোগিতার প্রচারণার পাশাপাশি আমাদের আন্দোলন কি? ও এর ভিত্তিতে উইকিপিডিয়া কি হিসেবে কাজ করে? উইকিপিডিয়া কীভাবে কাজ করে? সেই বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারছি না। শুধু প্রতিযোগিতার প্রচারণা নয়, বরং এর সাথে সাথে অল্প করে হলেও আমাদের এর মাধ্যমে উইকিমিডিয়ার সামগ্রিক আন্দোলনের বিষয়টাকে সবাইকে বুঝিয়ে বলার কাজটা হাতে নিতে হবে।
আয়োজকরা বেশ দক্ষতার সাথে প্রতিযোগিতা-পরবর্তী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে আসছেন। সামগ্রিক সমাজ-বাস্তবতার আলোচনায় উইকিপিডিয়া সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে যে ধারণা রয়েছে তার একটা ধারণা ব্যবহারকারীদের থেকে নেয়া যেতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু আয়োজনে এসব আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে, এই আয়োজনে আমাদের আন্দোলনের অফলাইন কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন অবদানকারীদের ধারণা দেয়া যেতে পারে। আয়োজনে উপস্থিত ব্যবহারকারীদের নিয়ে অফলাইন কার্যক্রম করা যেতে পারে স্বল্প পরিসরে। এছাড়া তাদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে, যাতে তারা উচ্চতর অবদান রাখতে পারেন। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহায়ক প্রাথমিক পর্যায়ের গ্যাজেট সম্পর্কে সহজে অবদান রাখার পথ দেখানো যেতে পারে। অফলাইন পুরস্কারের গুগল ফরমে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আয়োজনের ইমেইল পাঠানোর অনুমতি নেয়া যেতে পারে। উইকিপিডিয়ার মেইলিং লিস্ট (বা প্রয়োজনে আয়োজন ভিত্তিক মেইলিং লিস্ট তৈরি করে) ভবিষ্যৎ আয়োজন সম্পর্কে সবাইকে জানানোর পাশাপাশি উইকিমিডিয়া আন্দোলন কীভাবে কাজ করে তার ব্যাপারে জানানো যেতে পারে। এতে আগ্রহীরা এটি থেকে উইকিমিডিয়ার বিভিন্ন খোঁজ খবর নিতে পারেন ও এর গুরুত্ব বোঝার জন্য আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন।
সামগ্রিক কর্মপদ্ধতির বিভিন্ন প্রস্তাব আসুক। এধরনের প্রতিযোগিতাগুলো সমন্বিতভাবে আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলনের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলা অসম্ভব নয় বলে মনে করি।
উইকিপিডিয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে লিখুন
ফয়সাল বিন দারুল। বাংলা উইকিপিডিয়ার আজাকি ব্যবস্থাপক বলা যায়। ইতোমধ্যেই ৫০ হাজার সম্পাদনা পার করে ফেলেছেন। এছাড়া তার তৈরীকৃত আজাকি ও ভালো নিবন্ধের সংখ্যা একশতের বেশি। উইকিপত্রিকার সম্পাদক দলের প্রধান খাত্তাব হাসান এবার এই আজাকি ও ভালো নিবন্ধ প্রণেতার সাক্ষাৎকার নিতে সচেষ্ট হন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়েছিল জানুয়ারির ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে।
খাত্তাব হাসান: আসসালামু আলাইকুম ভাই। আমি খাত্তাব হাসান, উইকিপত্রিকা সম্পাদকদলের একজন। আপনাকে যদিও আমি চিনি, কিন্তু উইকিপত্রিকার জন্য আপনার পরিচয়টা জানাবেন।
ফয়সাল বিন দারুল: আমি ফয়সাল বিন দারুল। এই নামেই আমি উইকিপিডিয়াতে পরিচিত।
খাত্তাব হাসান: আচ্ছা। উইকিপিডিয়ায় যাত্রা শুরুর ব্যাপারে বলুন, এই ব্যাপারে বিশেষ স্মৃতি রয়েছে কী?
ফয়সাল বিন দারুল: আমার শুরু হয়েছিল ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে। আমার উইকিপিডিয়াতে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে, তবে সেটা ছিল আইপি দিয়ে। আমি দীর্ঘদিন আইপি দিয়েই কাজ করেছি। তবে আমার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করেছি ২০১৯ সালে। বাংলা উইকিপিডিয়ায় আমার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে। সেজন্য আমি এই দিনটা কখনো ভুলিনা।
এই ব্যাপারে বিশেষ স্মৃতি যেটা বলা যায়, আমি শুরু করেছিলাম আমার একটা প্রজেক্ট নিয়ে। আমাদের দেশের স্টেডিয়াম নিয়ে আমি একটা প্রজেক্ট করছিলাম, যাতে জেলা, উপজেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে ৮৬+ স্টেডিয়ামের অবকাঠামো এবং অবস্থা, স্ট্যাটাস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছিলাম। তো সেগুলোর তথ্য বাংলা উইকিপিডিয়ায় কীভাবে এসেছে এবং আছে, সেটা দেখার জন্য উইকিপিডিয়ায় আসলাম। তো ২০১৯ সাল ছিল, দেখলাম নিবন্ধগুলির অবস্থা খুবই তথৈবচ। তখন ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে হাত লাগাই। আর আমি নিজে ফুটবল ভক্ত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ফুটবল মূলত পেশাদার যুগে প্রবেশ করে। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় এগুলো ছিল না। এসব কারণে আমি উইকিপিডিয়ায় লেখা শুরু করলাম।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বোধহয় আমার প্রথম অবদান ছিল। আমি বাংলা উইকিপিডিয়ায় এসে প্রথমেই নিবন্ধ তৈরি করা শুরু করিনি, সম্প্রসারণ শুরু করি। আগে কয়দিন হাত পাকিয়ে নিয়েছি। এছাড়া আরেকটা বিষয় আছে। যখন আমার ১৭-১৮টা নিবন্ধ সম্প্রসারণ শেষ, এর দেখলাম- আমাদের যে প্রিয় গানগুলি আছে, নব্বই-আশির দশকের.. বাংলা সিনেমার… হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস বা ওরে দিল দরিয়ারে; এগুলা নিয়ে আমাদের উইকিপিডিয়ায় কিছুই নেই। কিন্তু এগুলো তো কিংবদন্তি গান। ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় তাদের কোন ব্যান্ড কবে ফর্ম করেছে, গ্যারেজে ফর্ম করেছে নাকি কোনো স্টেজে ফর্ম হয়েছে; সেই তথ্য পর্যন্ত আছে। আর আমাদের এই কিংবদন্তি গানগুলোর ইনফরমেশন থাকবেনা কেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, আমি ইংরেজিতেই লিখবো, কিন্তু আমার কিছু কলিগ আছেন, যারা তাদের ভাষায় উইকিপিডিয়ায় আগে ইনফরমেশনগুলি দেন। সোজাকথা, তাদের ভাষার প্রতি তাদের একটা দায়িত্বজ্ঞানবোধ আছে। আমার মনে হয়েছে, হোয়াই নট মি। বাংলাভাষা তো ব্যবহারের দিক দিয়ে ষষ্ঠতম। অথচ আমি যখন রেজিস্ট্রেশন করি, তখন বোধহয় নিবন্ধ ছিল আটষট্টি হাজার। তাই আমার মনে হলো, আমি বোধহয় সময় দিতে পারবো। আমি ওরে দিল দরিয়ারে লিখলাম এবং ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনার জন্য দিলাম। নকিব ভাই ওটা পর্যালোচনা করে দিলেন। ওটা আমার প্রথম ভালো নিবন্ধ।
একদিন মতিঝিল থেকে বাসে করে আমি মিরপুরে আসতেছিলাম। দেখলাম, একজন আমার পাশে বসেই একজন একটা গান সার্চ করে আমার লেখা উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলটা পড়তেছে। তখন আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে যে, যাইহোক! কেউ পড়ে তাহলে। তারমানে লিখতেছি পাঠকদের জন্য। আগে তো প্রথমদিকে আমার মনে হতো, আমি আমার নিজের জন্য লিখতেছি।
খাত্তাব হাসান: আপনি আজাকি নিয়ে কাজ করেন। আপনি কীভাবে এই বিষয়ে আগ্রহী হলেন?
ফয়সাল বিন দারুল: খেয়াল করলে দেখবেন, আমার ১৫-১৬টা ভালো নিবন্ধ আছে; যার মধ্যে ৬টাই হচ্ছে মৌলিক নিবন্ধ। যখন আমার প্রথম একটা নিবন্ধ ভালো নিবন্ধ হলো, ওরে দিল দরিয়ারে; তখন ভালো নিবন্ধ হওয়ার পরে সেখানে একটা অপশন থাকে যে, আজাকিতে মনোনয়ন দিন। সেখান থেকে আমি প্রথম আজাকিতে মনোনয়ন দেই। বিষয়টা দেখি, কীভাবে কী করতে হয় না করতে হয়। আবার নাজমুস সাকিব ভাই একবার আমাকে মেইল করে বললেন যে, আপনি যে নিবন্ধগুলি লিখছেন; সেগুলিতে প্রচুর ইন্টারেস্টিং ইনফরমেশন আছে। এগুলি আজাকিতে দিন। তখন আমি দেওয়া শুরু করি। ওরে দীল দরিয়া নিয়ে আমি কনফিউজ হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, ওখানে পাঁচটার মত তথ্য দেয়ার মত ছিল। কিন্তু একটার বেশি তো দেয়া সম্ভব না। পরে যাইহোক একটা বেছে দিলাম।
২০২০ সাল বোধহয়, তখন আজাকি ততোটা এক্টিভ না। প্রায় ৯০-৮০টার মধ্যে পড়ে ছিল। তখন পর্যন্ত আমার আজাকি ৬টা মনোনয়ন হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া যেহেতু মানুষ প্রধান পাতার আজাকি থেকে গিয়ে নিবন্ধগুলি পড়তেছে, তাই এটা নিয়ে সামান্য কাজ করছিলাম। তখন একদিন আফতাব ভাই আমাকে প্রস্তাব দিলেন যে, আপনি তো বিষয়টা দেখছেন। আপনি দায়িত্বটা নিয়ে নেন। এমনকি আফতাব ভাইই আমাকে প্রথমে ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় আমার আলাপ পাতায় বার্তা দিয়েছিলেন যে, আপনি বাংলা উইকিপিডিয়ায় লেখা শুরু করেন। এখানে নিবন্ধ অনেক কম আছে। তো আমি ২০২১ এর জুন থেকে এখন পর্যন্ত আজাকি আর ভালো নিবন্ধগুলি দেখছি। আমার ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনা আর ভালো নিবন্ধের সংখ্যা বোধহয় ফিফটি ফিফটি। আমাদের এখানে ভালো কিছু সম্পাদক আছেন। যেমন- অর্ণব ভাই বা মহীন ভাই; উনারা খুব ফোকাসড। তারা যখন কোনো একটি বিষয় নিয়ে শুরু করেন, তখন তারা ঐ বিষয়ে প্রায় সবগুলি বিষয়ে কাজ করতে থাকেন।
খাত্তাব হাসান: আপনি ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় তো পুরাতন বেশ। কিন্তু বাংলা উইকিপিডিয়ায় আসার পরে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন কিনা।
ফয়সাল বিন দারুল: আমি যখন প্রথমদিকে ও প্রিয়া তুমি কোথায় চলচ্চিত্র লেখি, তখন কিছু শাকিবিয়ান আমার সাথে সম্পাদনা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে বলছিল, এটা ওভাবে কেনো, এভাবে কেনো। এমনকি উইকিপিডিয়ায় অনেকে শাকিব খান সম্পর্কিত বিভিন্ন নিবন্ধ লিখে, যেগুলিতে পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে যায়। উইকিপিডিয়ায় তো এমন হওয়া উচিত না। এছাড়া আমি তেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি।
খাত্তাব হাসান: আপনার নাম যে আপনি বাংলা উইকিপিডিয়াতে ইথিওপিয়ার আমহারীয় ভাষায়, ইথিওপিয়ার ভাষা পর্যন্ত কীভাবে গেলেন?
ফয়সাল বিন দারুল: আমহারীয় ভাষাটা হচ্ছে পৃথিবীর অনেক পুরাতন ভাষা। পাশাপাশি ইথিওপিয়া কখনো কারুর উপনিবেশ হয়নি। সেজন্য দেখা যাচ্ছে যে, তাদের সভ্যতাটা একদম বিশুদ্ধ ছিল। আমাদের কাছাকাছির দিকে তামিল ভাষা অনেক পুরাতন। আমার পুরাতন ভাষা নিয়ে অনেক আগের কিছু কাজ ছিল। তাই আমি জানি বিষয়গুলি। সেজন্য আমি এটা ব্যবহার করেছি।
খাত্তাব হাসান: আজাকি ও ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনা নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে বলুন।
ফয়সাল বিন দারুল: আজাকি নিবন্ধ যখন আমি পর্যালোচনা করি, তখন বাংলা উইকিপিডিয়ার নিখুঁত মানদণ্ড আমি ফলো করি। আর ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনার সিস্টেম তো আলাদা। সেটাও ফলো করা হয়। সাধারণত যদি কোনো নিবন্ধ অসম্পূর্ণ থাকে, তাহলে সেটা আমি আজাকিতে গ্রহণ করিনা। আমি এই ব্যাপারে একটু কঠোর। আর কঠোর হওয়ার কারণও আছে, কারণ বিষয়টা প্রথম পাতায় যাচ্ছে। প্রথম পাতায় যেই বিষয়বস্তু যাবে, সেটি প্রিমিয়াম বিষয়বস্তু হওয়া উচিত। এটা নিয়ে আমার কিছু অবজার্বেশনও আছে। যেমন- অসমীয়া বা গুজরাতি উইকিপিডিয়ায় দেখবেন, তাদের আজাকির তথ্য কোনো নিবন্ধে নেই, এমনিতেই বসিয়ে রেখেছে। অথবা, নিবন্ধে গেলে আপনি তথ্যটি পাবেন না। সেই অপেক্ষা আমাদের উইকিপিডিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী, স্থানীয় উইকিগুলির চেয়ে। যদিও এখন মাসে একবার বা দুইবার করে আজাকির কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
এছাড়া কিছু বিশেষ আজাকির কাজও করে থাকি। যেমন- আগামীকাল ২৭শে জানুয়ারি বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্মদিন; সেই উপলক্ষ্যে একটি আজাকি হবে। তারপর নববর্ষের সময় একটা থাকে, বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বরে একটা করার পরিকল্পনা আছে; কিন্তু আমি ভালো কনটেন্ট পাইনি। এর আগে একবার ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে একবার আজাকি করেছিলাম। অনেকে দেখা যায়, নিখুঁত নিবন্ধের নীতিমালা ফলো করেননা। কোনোমতে একটি নিবন্ধ লিখে সেটাকে আজাকিতে দিয়ে দেন। ধরে নিয়েছে যে, একজন পর্যালোচক যেহেতু আছে সে ঠিক করে নিবে। আমি আসলে চাই এদিক দিয়ে এসে লোকজন একটু পরিশ্রম করুক, তার হাতের যশটা বাড়ুক। তো পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আমার একটাই সাজেশন, সেটা হচ্ছে- আপনারা ভালোমত দেখে পড়ে এটাকে মনোনয়ন দিন। কারণ এটা প্রধান পাতায় যাচ্ছে। যেহেতু, আমাদের কাজের সাথে আমাদের ভাষার দায়বদ্ধতা আছে, তাই প্রধান পাতায় যেনো এমন কন্টেন্ট না যায় যে, কেউ কথা বলতে পারে।
যেকোনো ভাবে আমার ১০৭টা আজাকি হয়ে গিয়েছে। আমার চেয়েও বেশি আজাকিবিশিষ্ট লোকও আছেন। সম্ভবত তানভির ভাই বা বেলায়েত ভাই ১২৬+ আজাকি রয়েছে। আমি আবার দেখা গেলো, কেউ দশটা আজাকি করেছে, তাকে দশটার জন্য পদক দেই। এরকম ২৫, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এরকম আছে। আফতাব ভাই আমাকে বাংলার জন্য পদক বানিয়ে দিয়েছেন। মেহেদী আবেদিন এ ব্যাপারে বেশ সক্রিয়। মাঝখানে ওয়াইস আল ক্বরনীও বেশ সক্রিয় ছিলেন। তিনিও বেশ ফোকাসড ছিলেন, উনি শুধু দেওবন্দি নিয়েই কাজ করেছিলেন। উনার ফাইনাল আউটপুট হচ্ছে, উনি মেইবি একটা চমৎকার পোর্টালও বানিয়েছেন।
খাত্তাব হাসান: ভবিষ্যতে বাংলা উইকিপিডিয়ায় আর নতুন কি কি করে যেতে চান বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? যেভাবে অবদান রাখছেন সেভাবে চালিয়ে যেতে চান নাকি ব্যতিক্রম কোনো পরিকল্পনা আছে।
ফয়সাল বিন দারুল: বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্য আমার হাতে এক-দেড়শ মৌলিক নিবন্ধের সূত্র আছে। আমি এগুলো লিখে আসলে শেষ করতে পারছিনা। আমি এগুলো লিখে শেষ করবো এবং আমার নিবন্ধের সংখ্যা এক হাজার নিবন্ধ পার করবো। আর আজাকিতে কাজ করতে করতে আজাকিগুলির সংস্থান করার জন্য কাজ করেছি যে, আজাকিগুলি একবার তো প্রধান পাতায় এলো, তারপর এর স্থান কোথায় হবে। তো আমি দেখলাম, যদি আজাকির বিষয় অনুযায়ী প্রবেশদ্বার থাকে, সেখানে গিয়ে জমা হয়। এটা করতে গিয়ে আমি চিকিৎসা, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, হিন্দুধর্ম, বাংলাদেশসহ অনেকগুলি প্রবেশদ্বার আমাকে উন্নত করতে হয়েছে। আমি আজাকিগুলি সেখানে সংস্থান করে দিয়েছি। এই ফাঁকে দেখা গেলো আমার নিজেরও চারটা প্রবেশদ্বার হয়ে গিয়েছে। চিত্রকর্ম, জলদস্যুতা, মিয়ানমার আর মালদ্বীপের প্রবেশদ্বার আমি দেখি। মিয়ানমারেরটা আমার একদম ফ্রেশ বানানো। আর আমার মালদ্বীপের প্রবেশদ্বার দেখে একজন মালদ্বীপীয় উইকিপিডিয়ান আমারটা দেখে ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় তৈরি করেছে। সার্ক দেশগুলির প্রবেশদ্বারগুলি নিয়েও কাজ করেছি। হয়ত আমি ভবিষ্যতে এসব প্রবেশদ্বারগুলি নিয়ে কিছু কাজ করবো। এখন একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে। অমর একুশেতে যেসব নিবন্ধ উত্তীর্ণ হয়, সেগুলি বেশ বিশদ হয়। এগুলো কোনো বিষয়ভিত্তিক প্রবেশদ্বারে যাওয়ার জন্য খুব ভালো। আমি সেখান থেকে বাছাই করি। যেমন, এখন নারী ও লোকগাথা এটা নিয়ে কাজ করেছি।
খাত্তাব হাসান: আপনি কিছুদিন আগেই পঞ্চাশ হাজার সম্পাদনা পার করেছেন। বিষয়টিকে আপনি কতটুকু গুরুত্ব দেন এবং বিষয়টা নিয়ে আপনার আবেগের কিছু আছে কিনা।
ফয়সাল বিন দারুল: দেখতে দেখতে পঞ্চাশ হাজার হয়ে গিয়েছে। এটা একটা মাইলফলক। আমি দেখি, অন্যরা অনেক কাজ করছে। কিন্তু আমি প্রথমে টার্গেট করেছিলাম যে, আমি শুধু মৌলিক নিবন্ধই লিখবো। আমি মৌলিক নিবন্ধ লেখাকে বেশি গুরুত্ব দেই। আমার কথা হচ্ছে, প্রথমে আপনি বাংলা উইকিপিডিয়ায় বিষয়টি লিখেন, তারপর অন্য উইকিতে নিয়ে যান। কিন্তু ইংরেজি থেকেই একমাত্র আমদানি করবেন। আমি নিজেও করি, তবে আমার এক-তৃতীয়াংশ নিবন্ধ মৌলিক।
খাত্তাব হাসান: কিছুদিন আগে সাজিদ রেজা করিম ভাই উইকিপিডিয়ার আলোচনাসভায় ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনা চক্র নামে একটা প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে আপনার কী মত।
ফয়সাল বিন দারুল: বিষয়টা ইতিবাচক। আমরা হয়ত প্যানেল করতে পারি, যারা অভিজ্ঞ তারা এখানে কাজ করবেন। আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে, আমরা ধারাবাহিক অবদান রাখছিনা। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, যে ভালো নিবন্ধ লিখছে লিখছে, লিখে শুধু জমা দিচ্ছে। ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় দেখা যায়, ব্যাকলগ ম্যানেজ করার জন্য টিম থাকে, পিন করার জন্য টিম থাকে, আমাদের ওরকম প্যানেল করা যায়। আরেকটা কাজ করা যায়, যেটা আমি চিন্তা করেছি, প্রশাসকরা যদি মাসে অন্তত একটা ভালো নিবন্ধ পর্যালোচনা করেন, তাহলে বছরে বারোটা পর্যালোচনা সম্পন্ন করা যায়। তবে দেখা যায়, যেমন- উইকিপিডিয়া ইসলাম নাম অনেকগুলি, কিন্তু কাজ করেন না কেউ। এমন প্যানেল করলে উপকার হবেনা। আমাদের এমন ফোকাসড টিম দরকার, যারা অলরেডি স্যাটিসফাইড। অনেক সম্পাদনা হয়েছে, অনেক ভালো নিবন্ধ লিখে ফেলেছি। আমি এখন একটু এখানে সময় দেই। এমন লোক পেলে বাংলা উইকিপিডিয়ার উপকার হতো।
খাত্তাব হাসান: উইকিপিডিয়ানদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান কিনা।
ফয়সাল বিন দারুল: উইকিপিডিয়ানদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা পাঠকদের জন্য লিখেন। অথেন্টিক ইনফরমেশন দেয়ার চেষ্টা করেন। বায়াসনেস যেন না থাকে, এমন ইনপুট করবেন। এবং বাংলা ভাষার জন্য লিখবেন, ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে লিখবেন। তাহলে আপনি যেই টপিকেই লিখেন না কেনো, আপনার কাজ ভালো হবে।
খাত্তাব হাসান: সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ফয়সাল বিন দারুল: আপনাকেও ধন্যবাদ।
শুদ্ধ বানানে উইকিপিডিয়া
বানান নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন চর্চা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ক্ষেত্রে গৃহীত বাংলা একাডেমির প্রমিত ভাষার বাংলা বানানের নিয়ম এমন চর্চার একটি অন্যতম উদাহরণ। এর উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে "শুদ্ধ বানানে উইকিপিডিয়া"।
অংক নাকি অঙ্ক? পুরষ্কার নাকি পুরস্কার? প্রাণীবিদ্যা নাকি প্রাণিবিদ্যা?
প্রায় সময় এই ধরনের শব্দের বানান নিয়ে মাথা ঘুরপাক খায়। কোনটি সঠিক, কোনটি ভুল, দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই। আপাত দৃষ্টিতে দুইটিই সঠিক মনে হলেও মনে সন্দেহ জাগে, আদতেই কি বানান দুইটিই শুদ্ধ?
সত্যি কথা বলতে গেলে, কোনটি সঠিক তা বলার কোনো উপায় নেই, বরং তার চেয়ে শব্দ দুইটিই প্রচলিত বলে বলা যায়। কিন্তু এরপরও আমরা, প্রধানত বাংলাদেশীরা আমাদের লেখার শুদ্ধতা বজায় রাখতে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত গৃহীত শব্দই ব্যবহার করি।
অর্থাৎ, একই শব্দের অধিক বানান প্রচলিত থাকতে পারে, তবে বাংলা একাডেমি নিয়মানুযায়ী একটি শব্দই (বিশেষ ক্ষেত্রে একাধিক) শুদ্ধ বলে গণ্য করা হয়।
কিন্তু আমাদের কি আসলেই এভাবে শব্দের শুদ্ধ বানানটি জানা জরুরি? দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা যায়, বানান হয়তো তেমন একটি পার্থক্য বা সমস্যা তৈরি করে না। তবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন দাপ্তরিক কাজে, বাংলা শব্দের শুদ্ধ বানান জেনে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়াও, নিজ মাতৃভাষাকে চেনা আর শুদ্ধ করা তো আমাদেরই দায়িত্ব।
তা যা হোক, অন্যান্য জায়গার মতো উইকিপিডিয়ার মাঝেও একই ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। নিবন্ধে বাংলা বানানের বেশ ভুল শব্দ (আক্ষরিক অর্থে, বাংলা একাডেমির গৃহীত শব্দ নয় এমন) পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে ভূল ভুল শব্দের বানান লেখতেই ভুল করে বসেন। আমি চাই, উইকিপিডিয়া যেহেতু একটি অন্যতম বড় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বস্ত একটি প্ল্যাটফর্ম, তাই বাংলা বানানের শুদ্ধ জ্ঞান রেখে সকলকে নিবন্ধ সম্পাদনা করা এবং অশুদ্ধ বানান শুদ্ধ করা উচিত।
এই প্রতিবেদনে প্রচলিত শব্দের শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বানানের একটি উদাহরণসহ বাংলার শুদ্ধ বানান লেখার কয়েকটি সাধারণ কিন্তু প্রয়োজনীয় নিয়ম উল্লেখ করেছি। এই নিয়মসমূহ বাংলা একাডেমি হতে প্রদত্ত। আশা করি, এই লেখা পড়ে সম্পাদক বাংলা বানানের শুদ্ধতার দিকে নজর দিবেন এবং এতে উইকিপিডিয়ায় বাংলা শব্দের শুদ্ধতা বজায় থাকবে!
- দায়ীত্ব - সঠিক নয়
- দায়িত্ব - সঠিক
- নিয়ম: সংস্কৃত ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সেগুলো ই-কার হয়ে যাবে। (দায়ী + ত্ব = দায়িত্ব)
- অহঙ্কার - সঠিক নয়
- অহংকার - সঠিক
- নিয়ম: সংস্কৃত কোনো শব্দের সন্ধির ক্ষেত্রে ক, খ, গ, ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ এর স্থানে অনুস্বার ব্যবহার করতে হবে।
- অংক - সঠিক নয়
- অঙ্ক - সঠিক
- নিয়ম: নিয়ম ২ এ যদি সন্ধির সময় পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ পরের পদের ক, খ, গ, ঘ এর সাথে সন্ধিবদ্ধ না হয়, তবে ঙ এর স্থানে অনুস্বার হবে না।
- কর্ম্য - সঠিক নয়
- কর্ম - সঠিক
- নিয়ম: রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব লেখা যাবে না।
- আরবী - সঠিক নয়
- আরবি - সঠিক
- নিয়ম: সকল অতৎসম শব্দে ই-কার এবং ঈ-কারের মধ্যে ই-কার ব্যবহৃত হবে।
- এসিড - সঠিক নয়
- অ্যাসিড - সঠিক
- নিয়ম: বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে এ বা এ-কার বুঝাতে হলে সবসময় অ্যা ব্যবহৃত হবে।
- ছোট (আকার) - সঠিক নয়
- ছোটো (আকার) - সঠিক
- নিয়ম: শব্দের শেষে অ-ধ্বনি থাকলে সেটি ও-কার দিয়ে লেখা হবে।
উপরের নিয়মটি অনেকেই বেশ ভুল করেন। এই নিয়মের যুক্তি হলো, আমরা কাল (উচ্চারণঃ কাল্) বুঝাতে সময় এবং কাল (উচ্চারণঃ কালো) বোঝাতে অন্ধকার বুঝিয়ে থাকি। তাই, শব্দের অর্থের যাতে ঝামেলা না হয়, তাই কাল (উচ্চারণঃ কালো) এর পরিবর্তে কালো ব্যবহৃত হয়।
- রঙ - সঠিক নয়
- রং - সঠিক
- নিয়ম: শব্দের শেষে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সাধারণত অনুস্বার ব্যবহৃত হয়।
- ষ্টেশন - সঠিক নয়
- স্টেশন - সঠিক
- নিয়ম: বিদেশি শব্দে "ষ" বর্জনীয়।
- ভালোদিন - সঠিক নয়
- ভালো দিন - সঠিক
- নিয়ম: বিশেষ্য ও বিশেষণ পৃথক শব্দ হিসেবে বসবে।
- পুরষ্কার - সঠিক নয়
- পুরস্কার - সঠিক
- নিয়ম: র-ধ্বনির পর অ, আ ধ্বনির পরে "স" ধ্বনি ব্যবহৃত হয়। তবে, অ, আ ধ্বনি ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে "ষ" ব্যবহৃত হতে পারে।
- কৃপন - সঠিক নয়
- কৃপণ - সঠিক
- নিয়ম: ঋ, র, ষ এর পরে "ণ" বসে।
- অপরাহ্ন - সঠিক নয়
- অপরাহ্ণ - সঠিক
- নিয়ম: প্র, পরা, পূর্ব, অপর এর পরে অহ্ন থাকলে সেটি "ন" হতে "ণ" হবে।
সতর্কতা: ণ এর নিয়ম বা ণত্ব বিধান শুধু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য!
প্রজেক্ট ২০২৫ বনাম উইকিপিডিয়া
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, প্রজেক্ট ২০২৫-এর পরিকল্পনাকারীরা উইকিপিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সম্পাদকদের শনাক্ত ও লক্ষ্যবস্তু করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই প্রচেষ্টার পেছনে অত্যাধুনিক নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং হ্যাক হওয়া তথ্যভান্ডার থেকে সংগৃহীত ডেটার আশ্রয় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুক্ত জ্ঞান প্রসারের জন্য বিশ্বব্যাপী নির্ভরযোগ্য মাধ্যম উইকিপিডিয়ায় এই ধরনের তৎপরতা শুধু এর নিরপেক্ষতা ও স্বাধীন সম্পাদনার নীতির ওপর আঘাত হানবে না, বরং এটি সমগ্র প্ল্যাটফর্মের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
এ ধরনের পরিকল্পনা শুধু উইকিপিডিয়ার জন্য নয়, বরং স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সম্পাদক বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিবন্ধ তৈরি ও সম্পাদনা করেন, যা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে তারা হয়রানি, নজরদারি এমনকি সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারেন। যদি প্রজেক্ট ২০২৫-এর অন্তর্ভুক্ত গোষ্ঠীগুলো এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও অপব্যবহার করে, তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘনই হবে না, বরং মুক্ত জ্ঞানের প্রসারে কাজ করা ব্যক্তিদের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তাই, এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় উইকিপিডিয়া সম্প্রদায়ের উচিত ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা জোরদার করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা।
প্রজেক্ট ২০২৫ মূলত একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক নীতি কাঠামো, যা নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় রক্ষণশীল মতাদর্শকে শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হলেও, এর প্রভাব শুধু দেশটির নীতিনির্ধারণেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী মুক্ত জ্ঞানচর্চার সম্প্রদায়ের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো সরকার, প্রশাসন, শিক্ষা, গবেষণা এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নীতিমালা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা। এর অংশ হিসেবে, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্ত ও নিরপেক্ষ তথ্যপ্রবাহ ব্যাহত করার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে কার্যকর হওয়ার জন্য পরিকল্পিত, তবে আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বে তথ্যের প্রবাহ সীমানাহীন হওয়ায় এর প্রভাব আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে, উইকিপিডিয়ার মতো মুক্ত জ্ঞানভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরপেক্ষতা, স্বাধীন সম্পাদনার সুযোগ এবং স্বেচ্ছাসেবী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার উপর নিশ্চিতভাবেই এই প্রকল্পের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে।
এমনকি সম্প্রতি পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রজেক্ট ২০২৫-এর কিছু পরিকল্পনাকারী উইকিপিডিয়ার নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদককে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছে। এর মূল কারণ হতে পারে উইকিপিডিয়ার কঠোর নিরপেক্ষতার নীতিমালা, যা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা আদর্শিক গোষ্ঠীর পক্ষে তথ্য বিকৃত করার অনুমতি দেয় না। প্রজেক্ট ২০২৫-এর সমর্থকদের দাবি, উইকিপিডিয়া তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। কিন্তু আপনারা জানেন, উইকিপিডিয়ার সমস্ত তথ্য যাচাইযোগ্য ও নিরপেক্ষতার নীতির অধীন, যা নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে নয়।
উইকিপিডিয়া সম্পাদকদের শনাক্ত করতে নানান কৌশল অবলম্বন করতে পারে বলে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু পদ্ধতি খুবই বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে। যেমন, আধুনিক ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে উইকিপিডিয়া সম্পাদকদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হতে পারে। যদি কোনো সম্পাদক তাদের ছবি অনলাইনে প্রকাশ করে থাকে, তবে সেই ছবির মাধ্যমে তাদের প্রকৃত পরিচয় জানা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অনলাইন পরিষেবার ডেটাবেস লিক হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত ছিল। এসব লিক হওয়া তথ্য ব্যবহার করে উইকিপিডিয়া সম্পাদকদের আসল পরিচয় জানার চেষ্টা করতে পারে।
যদি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে থাকে, তাহলে উইকিপিডিয়া সম্পাদকদের ইমেইলে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিশিং লিংক পাঠিয়ে তাদের লগইন তথ্য চুরি করতে পারে। একবার তারা কারও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে, তাদের প্রকৃত পরিচয় বের করা সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া উইকিপিডিয়াতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সকফার্ম তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য একাধিক সম্পাদনা করতে পারে এবং গোপনে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধু নির্দিষ্ট সম্পাদকদের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি উইকিপিডিয়ার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার জন্যও বড় ধরনের হুমকি। উইকিপিডিয়া মুক্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে গঠিত, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অবদান রাখতে পারে। তবে যদি সম্পাদকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে অনেকে মুক্তভাবে সম্পাদনা করতে ভয় পাবে। এর ফলে অনেক সম্পাদক উইকিপিডিয়া থেকে সরে আসতে পারে। আর নিরপেক্ষ তথ্যের বিকৃতি যে ঘটবে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পাশাপাশি উইকিপিডিয়াকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা অন্যান্যদের জন্যও সহজসাধ্য হয়ে যাবে।
সেজন্য উইকিপিডিয়ার সম্পাদকগণ যারা বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখেন বা অনুবাদ করেন, তারা প্রয়োজনে আইপি বাধামুক্ত অধিকার গ্রহণ করে সম্পাদনা করার সময় ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা (২এফএ) সক্রিয় করে রাখবেন। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ইমেইল, বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য যতটা সম্ভব গোপন রাখুন। সন্দেহজনক বা খুবই আনন্দের কোনো ইমেইল বা বার্তা পেলে সতর্ক থাকুন।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝা উচিত এবং পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিকল্পক্ষেত্রে সম্পাদকদের আইনি সহায়তা পাওয়ার পথ নিশ্চিত করা উচিত। কারণ, প্রজেক্ট ২০২৫-এর পরিকল্পনার এই দিকটি শুধু উইকিপিডিয়া সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং মুক্ত জ্ঞানচর্চার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি। উইকিপিডিয়ার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে সম্পাদকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ের সচেতনতা ও সক্রিয়তা অপরিহার্য।
উইকিপিডিয়ায় নিজেকে রাখুন সুরক্ষিত
মনে রাখতে হবে, অনলাইন জগত হচ্ছে সমুদ্রের স্রোতের মতো। কখনো এই স্রোত আপনার প্রতিকূলে থাকতে পারে, আবার কখনো অনুকূলে থাকতে পারে। কিন্তু এসবের ভীড়ে নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়ালে রাখতে হবে নিজেকেই।
উইকিপিডিয়া বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। উইকিপিডিয়া থেকে অনেক কিছু জানা যায়, জানানো যায়। তাই আমরা আগ্রহের বশে উইকিপিডিয়ায় একাউন্ট খুলে বা আইপি থেকে লিখি ও পাতা তৈরি করি। অনলাইন জগত হচ্ছে সমুদ্রের মতো। এখানে হটাৎ করেই আপনি প্রশংসার পাত্র হতে পারেন, জনপ্রিয় হয়ে যেতে পারেন। আবার হটাৎ করেই আপনার জনপ্রিয়তা কোন এক কারণে নেমে গিয়ে আপনাকে বিতর্কের পাত্র বানিয়ে দিতে পারে। খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে একটা কথা আছে। এর পাশাপাশি আরও একটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ: পরিচিতির পাশাপাশি নিরাপত্তা ইস্যু সামনে চলে আসে। আর তাই নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটা ভেবে রাখতে হবে সব সময়। উইকিপিডিয়া জগত এর ব্যতিক্রম নয়।
কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক,
- ধরা গেলো জনৈক উইকিপিডিয়ান তার দেশের ইতিহাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে নিবন্ধ তৈরি করলো। ট্রেন্ডের সাথে প্রাসঙ্গিক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখার জন্য পাতাটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এতে করে নিবন্ধের লেখকের নাম কোনভাবে ঘটনাক্রমে ভাইরাল হয়ে যায়। এভাবে উইকিপিডিয়ান দেশে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে বা সেলিব্রিটিতে পরিণত হয়ে যান।
- এরপর একই উইকিপিডিয়ান ধর্মের একটি ভালো টপিক নিয়ে লিখেন। মূলত উইকিপিডিয়ার নিরপেক্ষতা নীতি মেনে লেখার ফলে তিনি নিবন্ধে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ নিয়ে লিখতে পারলেন না বরং পাতাটিতে কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ টপিক নিয়ে যা বলেছেন তা নির্ভরযোগ্য উৎসের ভিত্তিতে বক্তার নাম সহ হুবুহু তুলে ধরেন। কিন্তু ব্যাপারটি একটি প্রভাবশালী ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অসন্তোষের কারণ হয় এবং উইকিপিডিয়ার নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞাত না হয়ে সেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিবন্ধের লেখককে দোষারোপ করতে থাকেন। এতে করে উইকিপিডিয়ান সমালোচিত হোন এবং তার পরিবেশে থাকা ব্যক্তিদের উপর এর প্রভাব পড়ে।
- এরপর সেই উইকিপিডিয়ান এক রাজনৈতিক ব্যক্তির নিবন্ধ হালনাগাদের সময় তাকে কোন এক নির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার কারণে সম্প্রতি কারাগারে আটক করার খবর যুক্ত করে দেন। নিরপেক্ষতা নীতির ফলে উইকিপিডিয়ান লিখেন যে “অমুক কর্মে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করা হয়”। কিন্তু সেই রাজনীতিবিদের সমর্থকরা লেখা পড়ে ধরে নেন যে লেখক তাদের নেতাকে অমুক কর্মে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ সত্য দাবি করেছেন যা প্রকৃতপক্ষে ভুল ধারণা। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে সমর্থকরা উইকিপিডিয়ানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি প্রদান শুরু করে এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখাতে থাকে। এতে করে জনৈক উইকিপিডিয়ান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন।
এগুলো সবই কাল্পনিক দৃশ্য, কিন্তু নিজের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা না করলে অনেক উইকিপিডিয়ানের এভাবে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যাকাউন্ট ইস্যু
হয়তো আপনি নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়, এলাকা, রাজনৈতিক ঘটনা, দেশ, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে উইকিপিডিয়ায় লিখছেন। উইকিপিডিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী মাঝেমধ্যে সত্যের উপরে সূত্রের যাচাইযোগ্যতাকে স্থান দিতে হয় এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতে হয়; অর্থাৎ লেখার সময় আপনি কারো পক্ষ নিয়ে লিখতে পারবেন না (এখানে এটা ব্যাপার নয় যে কোন পক্ষ ভালো বা খারাপ)। কিন্তু প্রত্যেক পক্ষেই কিছু লোক থাকে যারা ব্যাপারটা নিয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারে। তারা উইকিপিডিয়ার লেখাগুলো বদলে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে কিংবা আপত্তি জানাতে পারে। এসব পরিস্থিতি কখনো মারাত্মক পর্যায়ে রূপ নিতে পারে। আমরা কখনো দেখেছি যে কেউ কেউ এসব কারণে উইকিপিডিয়ানদের সমালোচনা, গালিগালাজ, ক্ষতি করার হুমকি, এমনকি মামলা করার হুমকিও দিয়েছে। তাই এসব ক্ষেত্রে ভালো সমাধান হতে পারে ছদ্মনামে উইকিপিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ করা। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনার কোন তথ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ না পায়। আপনি উইকিপিডিয়ান কিংবা আপনার অ্যাকাউন্ট বা অ্যাকাউন্ট দ্বারা সৃষ্ট নিবন্ধ/সম্পাদনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা কারো কাছে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে দেখবেন আপনি বিপদমুক্ত থাকতে পারছেন। কিন্তু প্রশ্ন চলে আসে যে যদি আপনি আগেভাগে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন তাহলে কি হবে। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি: আপনি নাম কতটা ইউনিক, আপনার ব্যবহারকারী পাতায় নিজের ব্যাপারে কতটুকু তথ্য প্রকাশ করেছেন, অন্যান্য উইকিপিডিয়ান বা অনলাইনের মানুষগুলো আপনার ব্যাপারে কতটুকু জানেন। এসব বিবেচনায় ঝুঁকি বিবেচনা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি দেখেন যে আপনার নামের মতো অনেক মানুষ দেশে আছে, ব্যবহারকারী পাতায় বেশি তথ্য প্রকাশ করেন নি, অনলাইনে বা উইকিপিডিয়ানদের কাছে নিজের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য শেয়ার করেননি বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেননি তাহলে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু উলটো হলে আপনাকে অ্যাকাউন্ট পরিত্যাগ করে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট বানাতে হতে পারে। অথবা আপনি চাইলে ঝুঁকিপূর্ণ নিবন্ধে সম্পাদনা করা বা ঝুঁকিপূর্ণ পাতা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।
এখন হয়তো ভাবতে পারেন যে অ্যাকাউন্ট ছাড়া উইকিপিডিয়ায় লিখলে কি হবে। প্রতিটি নিবন্ধের এন্ট্রিতে কারা কারা কবে সম্পাদনা করেছেন দেখা যায়। পাশাপাশি নিবন্ধে কি লিখেছেন বা পরিবর্তন করেছেন সেটাও দেখা যায়। অ্যাকাউন্ট ছাড়া নিবন্ধে লিখলে আপনার ব্যবহারকারী নাম তথা অ্যাকাউন্টের ইউজারনেমের বদলে আইপি ঠিকানা চলে আসবে। তাতে আপনার লোকেশন ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে শোনা যাচ্ছে অ্যাকাউন্ট ছাড়া সম্পাদনা করলে ভবিষ্যতে আইপি ঠিকানার বদলে ব্যাচ নম্বর দেখা যাবে। ব্যাচ নম্বর হচ্ছে একটি বছরে কারা কারা অনিবন্ধিত ব্যক্তি হিসেবে সম্পাদনা করছেন তাদের জন্য প্রদত্ত কোড। তাই ব্যাচ নম্বর প্রচলিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে আইপি থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পাদনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু হোক আইপি থেকে বা নিজের প্রকৃত নামের ইউজারনেম যুক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে, যদি আপনি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পাদনা করে ফেলেন সেটা লুকিয়ে ফেলা বা হাইডের অনুরোধ করে উইকিপিডিয়ার এডমিন বা প্রশাসকদের ইমেইল করতে পারেন বিশেষ অপশন ব্যবহার করে। কেউ দেখে ফেলার আগে এডমিন আপনার তথ্য এন্ট্রি থেকে লুকিয়ে ফেললে ঝুঁকি থাকবেনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
আরও বেশ কিছু কারণে উইকিপিডিয়ায় একজন বিপদে পড়তে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় কিছু ব্যক্তি আলাপ পাতায় উইকিপিডিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে ফেসবুক আইডি বা ফোন নম্বর চেয়ে বসে। যারা এভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাইবে তারা অনেক ক্ষেত্রে পেইড মার্কেটার হতে পারেন। এরা চাইবে টাকার বিনিময়ে আপনাকে দিয়ে এমন কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির নিবন্ধ লেখাতে যা অনেক সময় উইকিপিডিয়ার নীতিমালায় অনুল্লেখযোগ্য হতে পারে।
উইকিপিডিয়ায় না জানিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিবন্ধ লিখলে আপনি ব্লক হতে পারেন। জানিয়ে অর্থের বিনিময়ে লেখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম আছে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরাও উইকিপিডিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এদের থেকে দূরে থাকাটাই ভালো কেননা তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনার শখের ব্যাপারে লেখা কিংবা ইউজার পেজ তথা ব্যবহারকারী পাতার লিংক শেয়ার না করা এসব ক্ষেত্রে ভালো সমাধান। অফ-উইকির ইভেন্টে তোলা ছবির প্রসঙ্গ এখানে আনা উচিত। আপনি যদি উইকিপিডিয়ায় নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান তাহলে ভালো হবে ইভেন্টের তোলা কোন ছবিতে নিজের চেহারা থাকলে তা আপলোড না করার অনুরোধ করা। উইকিপিডিয়ায় পরিচয় রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অথবা আপনি চাইলে আপলোডারদের ছবিগুলোতে নিজের নাম ও ইউজারনেম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন যে আপনার ইউজারনেম আসল নামের হুবহু বা কাছাকাছি হলে এই পদ্ধতি কাজে নাও আসতে পারে।
বুঝে শুনে কাজ করুন
অনেক সময় নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য মানুষদের নীতিমালা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হতে পারে৷ কিছু ক্ষেত্রে চুপ করে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ, বিশেষ করে যখন অপরপক্ষ বুঝতে চাওয়ার মানসিকতা নিয়ে উইকিপিডিয়ায় আসেন না। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে বোঝানোর চেষ্টা করা সমস্যার সমাধান এবং বিভ্রান্তি থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে। যদি দেখেন কোন নিবন্ধের একটি নির্দিষ্ট তথ্য কোন ব্যক্তির ক্ষোভের কারণ হয়েছে এবং তিনি কোন কথা না শুনে বারবার সেই তথ্য মুছে ফেলছেন, এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিরাপদ মনে হলে তার আলাপ পাতায় বুঝিয়ে বলতে পারেন। অনেক ব্যক্তি আছেন উইকিপিডিয়ায় নতুন এসেছেন এবং আলাপ পাতায় যে একে অপরকে বার্তা দেওয়া যায় তা জানেন না। তাই এসব ক্ষেত্রে বিশেষ অপশন ব্যবহার করে তাকে ইমেইল পাঠাতে পারেন, কিন্তু মনে রাখবেন যে বিশেষ অপশন দিয়ে ইমেইল পাঠালে আপনার ইমেইল ঠিকানা ব্যক্তি জেনে যাবেন। সুতরাং বুঝে শুনে ইমেইল পাঠাতে হবে। অনেক ছোট ইস্যু ভুল বোঝাবুঝির কারণে বড় ইস্যুতে পরিণত হয়, এসব পরিস্থিতিতে বুঝিয়ে বলার কোন বিকল্প নেই।
উইকিপিডিয়া বা সহপ্রকল্পগুলোতে সম্পাদনার অভ্যাস আপনার পরিচয় ফাঁস করে দিতে অনেকাংশে ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিজের অভ্যাসের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা জরুরি। আপনার অ্যাকাউন্ট ছদ্মনামে না খুলে থাকলে (এমনকি ছদ্মনামে হয়ে থাকলেও) আপনি কোন নিবন্ধে সম্পাদনা করছেন, কি ধরনের ও শিরোনামে নিবন্ধ সৃষ্টি করছেন বা কোন স্থানের ছবি উইকিমিডিয়া কমন্সে বেশি বেশি আপলোড করছেন – এগুলো অভ্যাসবশত কারণে আপনার পরিচয় উন্মোচনের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে বা প্রকাশ করে দিতে সাহায্য করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাই উইকিপিডিয়ায় কাজের অভ্যাসের প্রতি নজর রাখতে হবে।
শেষ প্রচেষ্টা
তবে প্রশ্ন চলে আসে যে এসবের পরেও যদি আপনার তথ্য কোনভাবে ফাঁস হয়ে যায় তাহলে কি করবেন? এই ক্ষেত্রে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সবাই যেন দেখতে না পারে সেজন্য প্রাইভেট করে দিতে পারেন। আপনার কোন বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধব থাকলে তাদের ব্যাপারটা বুঝিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন যাতে করে তারা সবাইকে বুঝিয়ে শান্ত করতে পারেন। কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সিরিয়াস কিছু হওয়ার চরম সম্ভাবনা থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিন। আগের বলেছি যে কিছু ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাটা ভালো। এতে করে সুবিধা হচ্ছে মানুষ পরে শান্ত হয়ে যেতে পারে বা সময়ের সাথে সাথে ভুল বোঝাবুঝি মিটেও যেতে পারে। আবার ধরুন যেভাবে সময়ের সাথে সাথে আপনি অনলাইনে বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে নিরাপত্তার সমস্যায় পড়েছেন সেভাবে পরে ভালো কোন কাজের জন্য মানুষের কাছে প্রশংসার পাত্র হয়ে আবার আগের অবস্থান ফিরে পেতে পারেন।
শেষ কথা
আর এসবের চেয়েও বড় কথা হচ্ছে “আপনি সবাইকে খুশি রাখতে পারবেন না”। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নীতিমালার আলোকে লিখলেও আপনি কোন না কোন পক্ষ বা গোষ্ঠীর কিংবা ব্যক্তির বিষেদাগারের শিকার হতেই পারেন। এসব পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বেশি না হলে এড়িয়ে চলুন এবং ভয় দূর করে সামনে এগিয়ে যান। মনে রাখতে হবে, অনলাইন জগত হচ্ছে সমুদ্রের স্রোতের মতো। কখনো এই স্রোত আপনার প্রতিকূলে থাকতে পারে, আবার কখনো অনুকূলে থাকতে পারে। কিন্তু এসবের ভীড়ে নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়ালে রাখতে হবে নিজেকেই।
জানুয়ারির শীর্ষ দশ
বাংলা উইকিপিডিয়া বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ মুক্ত জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে ক্রমাগত উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে তথ্যসমৃদ্ধ ও নির্ভুল নিবন্ধ তৈরি, সম্প্রসারণ এবং সংস্কার করে চলেছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মাসের তুলনায় কিছুটা ধীরগতি সম্পন্ন হলেও, বাংলা উইকিপিডিয়ায় তথ্যসমৃদ্ধ নতুন নিবন্ধ সংযোজন, বিদ্যমান নিবন্ধের মানোন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এ মাসে বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ সম্পাদনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভিজ্ঞ ও নতুন উভয় সম্পাদকই উইকিপিডিয়ার সমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলা উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা কার্যক্রম, নতুন নিবন্ধ তৈরি, শীর্ষ সম্পাদকদের অবদান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো।
সর্বাধিক সম্পাদিত শীর্ষ দশ নিবন্ধের তালিকা
জানুয়ারি মাসে বাংলা উইকিপিডিয়ায় কিছু নিবন্ধ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে এবং তুলনামূলক বেশি সম্পাদনা পেয়েছে। নিচে সর্বাধিক সম্পাদিত নিবন্ধগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ–ভারত চুক্তি, ১৯৭১ নিবন্ধটি ২৭৭টি সম্পাদনা নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, যা ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে ব্যাপকভাবে সম্পাদিত হয়েছে। এছাড়া অর্থনীতি শব্দকোষ, ২০২৫ খো খো বিশ্বকাপ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইহুদি পরকালবিদ্যা নিবন্ধগুলিও যথেষ্ট পরিমাণে সম্পাদিত হয়েছে, যা বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছে।
| ক্রম | নিবন্ধের নাম | সম্পাদনার সংখ্যা |
|---|---|---|
| ১ | বাংলাদেশ–ভারত চুক্তি, ১৯৭১ | ২৭৭ |
| ২ | অর্থনীতি শব্দকোষ | ১২৩ |
| ৩ | ২০২৫ খো খো বিশ্বকাপ | ১১৯ |
| ৪ | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় | ১১৮ |
| ৫ | ইহুদি পরকালবিদ্যা | ১১৪ |
| ৬ | শরিফুল হক ডালিম | ১০৪ |
| ৭ | আমজনতার দল | ১০২ |
| ৮ | উত্তরবঙ্গ প্রদেশ | ৯৯ |
| ৯ | বাঁকুড়া জিলা স্কুল | ৯৭ |
| ১০ | ২০২৫ আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপ | ৮৮ |
শীর্ষ দশ সর্বাধিক নিবন্ধ প্রণেতার তালিকা
নতুন নিবন্ধ তৈরি উইকিপিডিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। জানুয়ারি মাসে বেশ কিছু অভিজ্ঞ ও নতুন সম্পাদক বাংলা উইকিপিডিয়ায় নতুন নিবন্ধ সংযোজন করেছেন, যা বাংলা ভাষায় মুক্ত জ্ঞানের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কুউ পুলক ৭৫টি নিবন্ধ তৈরি করে শীর্ষ স্থানে রয়েছেন, যা তার নিবেদিতপ্রাণ সম্পাদনা কার্যক্রমের প্রতিফলন। এছাড়া তুহিন, জিসি রায়, ওয়ারাকা সাকি এবং বাধন সিআর-এর মতো সম্পাদকরাও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন নিবন্ধ তৈরি করেছেন, যা বাংলা উইকিপিডিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে নিবন্ধের সংখ্যা দিয়ে কারুর অবদান যাচাই করা উচিত নয়।
| ক্রম | ব্যবহারকারী নাম | মোট নিবন্ধ |
|---|---|---|
| ১ | কুউ পুলক | ৭৫ |
| ২ | Tuhin | ৭০ |
| ৩ | Gc Ray | ৫৪ |
| ৪ | Waraka Saki | ৩৪ |
| ৫ | BadhonCR | ৩৩ |
| ৬ | Md Mobashir Hossain | ৩২ |
| ৭ | Matj560 | ৩২ |
| ৮ | Nahian | ২৬ |
| ৯ | Sakib8785 | ২১ |
| ১০ | Saadi095 | ১৮ |
শীর্ষ দশ সর্বাধিক সম্পাদনাকারী ব্যবহারকারী
বাংলা উইকিপিডিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে প্রতিদিনকার সম্পাদনাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। জানুয়ারি মাসে যেসব ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি সম্পাদনা করেছেন, তাদের তালিকা নিচে প্রদান করা হয়েছে। নাহিয়ান ৭৭৫৬টি সম্পাদনা করে শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন, যা তার টহলদারিতা ও সক্রিয়তার পরিচয় বহন করে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুউ পুলক ৫৬০০টি সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া আহমেদ রেজা খান, তুহিন এবং ফয়সাল বিন দারুলসহ অন্যান্য সক্রিয় সম্পাদকরাও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সম্পাদনা করেছেন, যা উইকিপিডিয়ার মানোন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। তবে কেবলই সম্পাদনা সংখ্যা দিয়ে কারুর অবদান যাচাই করা উচিত নয়।
| ক্রম | ব্যবহারকারী | সম্পাদনা সংখ্যা |
|---|---|---|
| ১ | Nahian | ৭৭৫৬ |
| ২ | কুউ পুলক | ৫৬০০ |
| ৩ | Ahmed Reza Khan | ২৯৭২ |
| ৪ | Tuhin | ২৬৭১ |
| ৫ | FaysaLBinDaruL | ২০৯২ |
| ৬ | Gc Ray | ১৭২৬ |
| ৭ | Mehedi Abedin | ১৬৩১ |
| ৮ | MS Sakib | ১৪৫৯ |
| ৯ | Sbb1413 | ১৪০২ |
| ১০ | BadhonCR | ১০৭৮ |
শীর্ষ দশ প্রশাসকদের অ্যাকশনের পরিসংখ্যান
উইকিপিডিয়ার প্রশাসকগণ সম্পাদনা তদারকি, ধ্বংসপ্রবণতা প্রতিরোধ এবং নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। জানুয়ারি মাসেও প্রশাসকরা নিষ্ঠার সঙ্গে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। নিচে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের শীর্ষ দশ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। শাকিল ভাই ৪০০টি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন, যার মধ্যে অপসারণ, পুনর্বহাল, বাধাদান এবং ব্যবহারকারী অধিকার পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ফেরদৌস, ইয়াহিয়া, রিয়াজ, ঐশিক ভাইসহ অন্যান্য প্রশাসকরাও বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
| ক্রম | নাম | দল | মোট | অপ | অ.পু. | পু | বাধা | বা.র | সুর | অরক্ষা | অধিকার | একী. | আমদানি | ছাকনি |
|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ১ | MdsShakil | ৪০০ | ৩৪২ | ৪ | ৫ | ৩১ | ০ | ৬ | ০ | ৩ | ০ | ৬ | ৩ | |
| ২ | Ferdous | ৩২২ | ৩১৫ | ০ | ০ | ০ | ০ | ৬ | ০ | ০ | ০ | ১ | ০ | |
| ৩ | Yahya | ২৭৫ | ২১২ | ৫ | ৫ | ৩৬ | ১ | ৩ | ৪ | ৩ | ১ | ১ | ৪ | |
| ৪ | RiazACU | ২৪১ | ১১৬ | ১০৭ | ২ | ১৫ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | |
| ৫ | Aishik Rehman | ১৯৩ | ১৮৫ | ০ | ৪ | ৪ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | |
| ৬ | Moheen | ১৭২ | ১৭১ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | |
| ৭ | NahidSultan | ১৪৪ | ১১৭ | ০ | ০ | ১৩ | ০ | ২ | ০ | ২ | ০ | ০ | ১০ | |
| ৮ | Suvray | ৯৬ | ৯১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ৫ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | |
| ৯ | RockyMasum | ৯৪ | ৯৪ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | |
| ১০ | আফতাবুজ্জামান | ৮৩ | ৭৩ | ৪ | ২ | ০ | ০ | ২ | ০ | ১ | ০ | ০ | ১ | |
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে কিছুটা ধীর গতির হলেও, এটি একটি কার্যকর মাস ছিল। নতুন নিবন্ধ সংযোজন, বিদ্যমান নিবন্ধের মানোন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতি পরিচালিত হয়েছে। সম্পাদকেরা ধীরগতির মধ্যেও উইকিপিডিয়ার তথ্যসম্ভার সমৃদ্ধ করতে অব্যাহতভাবে কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে আরও কার্যকরী সম্পাদনা ও নতুন সম্পাদকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলা উইকিপিডিয়া আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
একুশে পদক পেলেন সম্প্রদায়ের দুই অংশীদার
একুশে পদক পেলেন বাংলা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ের দুই অংশীদার
২০ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার "একুশে পদক" পেলেন উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সভাপতি শাবাব মুস্তাফা এবং উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের নির্বাহী পরিষদ সদস্য তানবিন ইসলাম সিয়াম। উক্ত দিনে দুজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে এই পদক দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলা ভাষার সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ডের জন্য মেহদী হাসান খান ও তার দলের অংশ হিসেবে শাবাব মুস্তাফা ও তানবিন ইসলাম সিয়াম পেয়েছেন এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। এর আগে অভ্র কিবোর্ডের জন্য একুশে পদকের প্রাপক হিসেবে মেহদী হাসান খানকে মনোনীত করা হলে পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। তবে মেহদীকে পুরস্কার প্রদানে সরকার তার অবস্থান অপরিবর্তিত রাখলে মেহদী তার টিমের ৩ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করলে সরকার তালিকা সংশোধন করে মেহদী সহ অভ্র টিমের ৪ জনকে একুশে পদকের প্রাপক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রাপকদের মধ্যে উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ের দুই জন অভ্র কিবোর্ড ডেভেলপে অবদান রেখেছেন। তানবিন ইসলাম সিয়াম অভ্রের দুটি ফন্ট "সিয়াম রুপালি" ও "কালপুরুষ" ফন্ট তৈরিতে অবদান রাখেন। আর অন্যদিকে শাবাব মুস্তাফা সাপোর্ট ফোরামের মডারেটর হিসেবে ব্যবহারকারীদের অভ্র কিবোর্ডের নিয়ে সমস্যার কথা ডেভেলপারদের কাছে তুলে ধরতেন।
অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৫
বরাবরের মতো এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে বাংলা উইকিপিডিয়ার আকর্ষণ "অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৫"। ভাষার মাসে অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিযোগীদের উইকিপিডিয়ার প্রতি উৎসাহিত করা ও উন্নতমানের কনটেন্ট বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এবার প্রতিযোগিতাটি সারা মাসব্যাপী ধরে চলবে।
প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতার পাতার রাখা তালিকা থেকে পছন্দের নিবন্ধ অনুবাদ করে জমা দেওয়ার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করছেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিযোগিতার জন্য ৭১ জন প্রতিযোগী মোট ২৪৯টি নিবন্ধ অনুবাদ করে জমা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন পর্যালোচক প্রায় অর্ধেক নিবন্ধ পর্যালোচনা করেছেন। প্রতিযোগিতা শেষে শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগীদের অবস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্কের গিফট ভাউচার বা সমমূল্যের পুরস্কারের সাথে মুদ্রিত সনদ এবং যারা অন্তত একটি নিবন্ধ প্রতিযোগিতায় জমা দিয়েছেন তাদের সবাইকে ডিজিটাল সনদ দেওয়া হবে।
উদযাপিত হল বাংলা উইকিপিডিয়া দিবস

২৭ জানুয়ারিতে বাংলা উইকিপিডিয়ার ২১তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা, নেত্রকোণা ও দিনাজপুরে আড্ডার আয়োজন করা হয়। ঢাকায় আর কে হান্নানের সমন্বয়ে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের কার্যালয়ে বিকালে সম্প্রদায়ের ১৩ জনের উপস্থিতিতে আড্ডার আয়োজন করা হয়। আড্ডা শেষে কেক কাটা ও সবার মাঝে পিজা বিতরনের মাধ্যমে আয়োজন সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
নেত্রকোণা শহরের জেলা গণগ্রন্থাগারে আলোচনা ও জন্মদিন উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়া দিবস পালিত হয়। একইভাবে দিনাজপুরের সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা উইকিপিডিয়া দিবস উপলক্ষে অনুপ সাদির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পাশাপাশি রংপুর বিভাগে বাংলা উইকিপিডিয়ার কার্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারির ইভেন্ট

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে বেশ কিছু ইভেন্টের। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সকাল ১০টায় ২০২৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে অভ্র টিমের একুশে পদক প্রাপ্তদের সাথে উইকিমিডিয়ানদের একটি আড্ডার আয়োজন করা হয় যা দুই ঘন্টা যাবত স্থায়ী ছিল।
এছাড়া প্রতিবছরের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিকালে ঢাকার বইমেলা প্রাঙ্গন, রাজশাহীর প্যারিস রোডে ও চাঁদপুরের আউটার স্টেডিয়ামের বইমেলা প্রাঙ্গনে বাংলা উইকিপিডিয়ার সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে বিশেষ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় নতুন প্রশাসক

৯ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা উইকিপিডিয়ার নতুন প্রশাসক নির্বাচিত হলেন নিরীক্ষক, রোলব্যাকার এবং ফাইল স্থানান্তরকারী মো. সাদমান ছাকিব। ৩ ফেব্রুয়ারিতে উইকিপিডিয়ান ছাকিব প্রশাসক হওয়ার আবেদন করেন। ৬ দিন ধরে চলা আবেদন পাতায় ভোটাভুটিতে ২৭ ব্যবহারকারীর সম্মতির পর ব্যুরোক্র্যাট তানভির রহমান প্রশাসক হওয়ার আবেদন সফল ঘোষণা করে বন্ধ করেন এবং আবেদন অনুসারে ছাকিবের অ্যাকাউন্টে প্রশাসক অধিকার যুক্ত করেন। মো. সাদমান ছাকিব বাংলা উইকিপিডিয়ায় ২০ জানুয়ারি ২০২০ সালে যোগ দেন। ছাকিব উইকিমিডিয়া জগতে একাধিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে উইকিপিডিয়ায় উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১, উইকি লাভস উইমেন দক্ষিণ এশিয়া ২০২১, উইকিউক্তিতে উক্তি প্রতিযোগিতা ২০২৪ এবং উইকিবইয়ে উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ প্রথম স্থান অধিকার করে। পাঁচ বছরের অবদানযাত্রায় তিনি প্রায় ৪৬,০০০+ সম্পাদনা করেছেন এবং ৮২৫+ নিবন্ধ সৃষ্টি করেছেন। তার মনোনীত তিনটি নিবন্ধ ভালো নিবন্ধ এবং একটি তালিকা নির্বাচিত তালিকা বিভাগে স্থান পেয়েছে। প্রশাসক হয়ে কেমন লাগছে – এমন প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় ছাকিব জানিয়েছেন যে তিনি প্রশাসক সম্পর্কিত কাজকর্ম গুছিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব উপভোগ করছেন।
