উইকিপিডিয়া:উইকিপত্রিকা/দেয়ালিকা
আগামীর পথে বাংলা উইকিপত্রিকা
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক...
যাক পুরাতন স্মৃতি যাক ভুলে যাওয়া গীতি
অশ্রু বাষ্প সুদূরে মিলাক।
পুরাতন জীর্ণতাকে ভাসিয়ে নিয়ে নতুন বর্ষের বার্তা নিয়ে আবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে আরও একটি বাংলা নববর্ষ – ১৪৩২। পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব, আত্মপরিচয়ের উৎসব। নববর্ষ কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টানো নয়, এ যেন এক নতুন সংকল্প নেয়ার উপলক্ষ; অতীতের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, ভবিষ্যতের দিকে নতুন উদ্যমে যাত্রার সূচনা করা। এই নতুনের আবাহন আমাদের মূল মন্ত্রের সাথেই তো মিলে যায় – জ্ঞানের নিরন্তর নবায়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবজাতির জ্ঞানভান্ডারকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করার প্রয়াস।
একদম শৈশবের দিন হিসেবে চারটি সংখ্যা দিয়েই প্রথম বর্ষটি পূর্ণ হলো আমাদের ‘উইকিপত্রিকা’-র। গত ১৪৩১ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণের শেষ আর পৌষের শুরুতে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সাময়িকীর। কত দ্বিধা, কত সংশয় ছিল শুরুতে! আমাদের কি এই ধরনের প্রকাশনা নিয়ে কাজ করা উচিত হবে? সম্প্রদায়ের সদস্যরা কি এটিকে আপন করে নেবেন? প্রশ্নগুলো নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মনে পথচলা শুরু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট যে, বাংলা উইকিপিডিয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদের কথা বলার একটি স্থান, পরস্পরের সাথে যুক্ত করা, তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া, চলমান প্রকল্প ও সম্পাদনা কার্যক্রমের খবর সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া, উইকিগুলির নীতিমালা ও কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করা আর এই সম্মিলিত যাত্রার আনন্দ ও চ্যালেঞ্জগুলোকে নথিভুক্ত করা।
চারটি সংখ্যা পেরিয়ে আজ আমরা পঞ্চম সংখ্যার দ্বারপ্রান্তে। প্রতিটি সংখ্যার পর আমরা চেষ্টা করেছি কিছুটা থমকে দাঁড়াতে, ভাবতে – কী করা হলো, কী করা যেত, সামনে কী করণীয়? এই চার মাসে উইকিপত্রিকা তার শৈশব পেরিয়ে যেতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করেছি উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যেমন – পরিসংখ্যান, বিভিন্ন এডিটাথন, নতুন মাইলফলক অর্জন, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ইত্যাদি খবর তুলে ধরতে। এই পথচলায় যেমন পেয়েছি স্বেচ্ছাসেবকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও লেখা, তেমনই কখনো কখনো মুখোমুখি হয়েছি লেখা সংগ্রহ বা নিয়মিত প্রকাশের চ্যালেঞ্জের। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো সম্প্রদায়ের ভালোবাসা ও স্বীকৃতি। আশা করছি, উইকিপত্রিকা বাংলা উইকি সম্প্রদায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
নববর্ষের এই শুভক্ষণে, কেবল অতীত রোমন্থন নয়, ভবিষ্যতের দিকে তাকানোও জরুরী। উইকিপত্রিকাকে আমরা কীভাবে আরও উন্নত, আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি, এই বিষয়ে আমরা সবসময়ই কিছু না কিছু পরিকল্পনা করতে থাকি। আমরা মাসিক সাময়িকী হিসেবে উইকিপত্রিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। কিন্তু আমরা যেহেতু সবাইই স্বেচ্ছাসেবী, তাই লেখা আদায় করার জন্য আমরা বাণিজ্যিক পথে তো আর হাঁটতে পারছিনা। সেজন্য আমাদের নিয়মিত প্রকাশনার জন্য দুই পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। প্রথম সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কিছু লেখা নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্যই নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন- আমি পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করবো। আমরা গত মাসে নতুন উইকিপিডিয়ান মোবাশশির ভাইকে সংবাদের বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যদি এরপরও যেকোনো সমস্যার কারণে পাঁচটির কম লেখা জমা পড়ে, তাহলে সেই সংখ্যাটি প্রকাশিত হবেনা। এর পরিবর্তে পরবর্তী সংখ্যা দুই মাসের নামে প্রকাশিত হবে। যেমন- ভাদ্র-আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। লেখাটাই হচ্ছে একটি সাময়িকীর প্রাণ, যদি লেখা না পাওয়া যায়, তাহলে প্রাণশক্তি শেষ হয়ে গেলো যেন।
আমরা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কেবল সংবাদ বা প্রতিবেদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অভিজ্ঞ উইকিমিডিয়ানদের সাক্ষাৎকার, উইকিমিডিয়া সম্পাদনার কৌশল ও টিউটোরিয়াল, অন্যান্য সহপ্রকল্পের পরিচিতি, নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণমূলক লেখা, এমনকি উইকি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতিচারণমূলক রচনা অন্তর্ভুক্ত করবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাক্ষাৎকার ব্যতীত বাকি কোনো বিষয়েই আমরা তেমন কাজ দেখতে পাইনি। আমরা এই কাজগুলি বের করার জন্য কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আগ্রহী লেখকরা এসব বিষয়ে লিখে উইকিপত্রিকাকে স্বর্ণমণ্ডিত করতে পারেন।
সম্পাদকদলের অগ্রজ মেহেদী আবেদীন ভাইয়ের পরামর্শ ছিল, কখনো প্রকাশ না হওয়া 'পাঠকের মতামত' চালু করার, যেটার বিকল্প তো আমরা শুরুতেই তৈরি করেছিলাম। কিন্তু কাজ এগুতে পারিনি। প্রয়োজনে 'প্রশ্নোত্তর' বা 'নতুনদের জন্য পরামর্শ' নামে চালু করার পরামর্শও ছিল। আমরা পাঠকের মতামতের জন্য একটি টেমপ্লেট তৈরি করা ও খোলা ঝাঁপি আরও সার্বজনীন করার পরিকল্পনা করছি।
আমরা গত ১৪৩১ বর্ষের সবগুলো সংখ্যার কলামগুলির উপর কাজ করছি যে, সাময়িকীর বার্ষিক পিডিএফ একটি সংস্করণ আমরা উন্মোচিত করবো। তবে ডিজাইন ও অন্যান্য কাজের জন্য পিছিয়ে আছে। এই বিষয়টি আর্কাইভ হিসেবে কাজ করতে নিয়ামক হবে বলে আশাবাদী। আর যেসব পাঠক নিত্যকার পত্রিকা বা সাময়িকী পড়ে অভ্যস্ত; তাদেরকে সেই স্বাদ সামান্যতম হলেও আস্বাদন করাতে পারবো বলে আশাবাদী। পরবর্তী বছর থেকে বিষয়টি নিয়মিত করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।
আমরা উইকিমিডিয়ানরা নতুন এই বছরে আমাদের অ-উইকিপত্রিকার কাজগুলিকেও সাজিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারি। যারা ছোট প্রকল্পগুলি নিয়ে কাজ করছেন, তারা উন্নত বিষয়বস্তুর সংযোজন, এডিটাথন, সম্পাদকদের আগ্রহী করার কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আরও বিস্তর ভাবতে পারেন। আমাদের উইকিবইয়ে এডিটাথন ছাড়া সাধারণত সম্পাদনা হয় না। কিন্তু বাংলায় পাঠকদের খুব একটা অভাব নেই যারা লেখালেখি পছন্দ করেন; তাদেরকে কীভাবে আকর্ষিত করা যেতে পারে- সেটা আমাদের চিন্তা করা উচিত। উইকিউক্তি আর উইকিভ্রমণের যাত্রা তো গত একটি বছর মোটামুটি তরান্বিতই দেখা গেল; এবার সক্রিয়তার যাত্রা চলমান থাকলেই হয়। যারা উইকিপিডিয়া আর উইকিসংকলনে কাজ করছেন; তারা সামনের বছরে কীভাবে এই দুইটি প্রকল্পকে আরও উন্নত ও গভীর প্রকল্প হিসেবে প্রমাণ করা যায়; সেই নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। আর কিছু উইকিমিডিয়ানকে দেখছি, নতুন প্রকল্পকে নিয়েও তারা আগ্রহী। আমি আনন্দিত যে, তারা উইকিবিশ্ববিদ্যালয় ও উইকিসংবাদের মত প্রকল্প; যেগুলির বাংলা সংস্করণ এখনো উন্মোচিত হয়নি, উন্মোচিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নতুন বছরটি আমাদের সামনে কাজকে নতুনভাবে গুছিয়ে নেয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। আসুন, নববর্ষের এই উদ্দীপনাকে সঙ্গী করে আমরা বাংলা উইকির প্রকল্পগুলোকে কেবল কলেবরের দিক থেকেই নয়, গুণগত মানের দিক থেকেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করি। উইকিপত্রিকা থাকুক সেই যাত্রার বিশ্বস্ত সঙ্গী, থাকুক আপনাদের কথা বলার মুক্তমঞ্চ। প্রত্যেক উইকিমিডিয়ানের সক্রিয় অংশগ্রহণ, মূল্যবান পরামর্শ ও গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের চলার পথের দিশা দেখাবে।
হাতি, ঘোড়া, রাণী শেষ! এবার চেকমেট!
দাবা অনেকেরই পছন্দের খেলা। আমি ছোটকাল থেকেই এই খেলার খ-টাও বুঝতে পারি না। ওহ দুঃখিত, কীভাবে শত্রুকে মারতে হয়, ঘোড়া কয় ঘর আগাতে পেছাতে পারে, অনলাইন গেমসগুলির দয়ায় সেই খ-এর জ্ঞানটুকু আছে। কিন্তু আমার এক বন্ধু, তার চেকমেট বলাটা খুব পছন্দের ছিল। সে দাবা খেলতে পছন্দ করতো, কিন্তু দেখা গেল দাবাড়ু আমাদের বন্ধুমহলে সে একাই; তাই খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা। কিন্তু সে যেকোনো জায়গায় জিতে গেলেই কথাটা বলতো, চেকমেট দোস্ত! আবার বলতো, হাতি, ঘোড়া, রাণী সব শেষ! এবার চেকমেট! আমি কর্মব্যস্ততায় দাবার নামও বোধহয় ভুলতে বসেছিলাম। সেদিন আমাদের ডেভেলপার উইকিমিডিয়ান মারুফ ভাই একটা দলবদ্ধ আলোচনায় একটা সরঞ্জাম তৈরির সংবাদ দিলেন: “চেকমেট”। আমি ভাবলাম, প্রোগ্রামার মানুষ বোধহয় কোনো গেম ডেভেলপ করছেন। জিজ্ঞেস করতেই চাচ্ছিলাম, এখানে কি টিউটোরিয়ালসহ দাবা খেলা যাবে কিনা। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে না কী যেন শাঁকচুন্নি না মেছো ভূতের অদৃশ্য ভয়ে যেন প্রশ্নটা করা হয়নি। এর আগেই মারুফ ভাই বা অন্য যেকেউ বিষয়টা বিস্তর বুঝিয়ে বললেন।
আমাদের উইকি প্রকল্পগুলিতে যেই এডিটাথন বা প্রতিযোগিতাগুলি হয়, সেগুলি পরিচালনার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ফাউন্টেন নামে একটা সরঞ্জাম ব্যবহার করে এসেছি। এশীয় মাসের প্রতিযোগিতা থেকেই বোধহয় এই সরঞ্জামের শুরু। সরঞ্জামটি বানিয়েছিলেন প্রোগ্রামার ও রুশ উইকিপিডিয়ান লে লয়। ফাউন্টেন উইকিপিডিয়া এডিটাথন বা প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রক্রিয়াটিকে একদম সহজ করে দেয়। এই সরঞ্জামে অংশগ্রহণকারীরা সহজেই তাদের নিবন্ধ জমা দেয়া শুরু করেন এবং বিচারকরাও সহজেই নিবন্ধগুলো মূল্যায়ন করেন। এর মাধ্যমে আয়োজকেরা প্রতিযোগিতার অগ্রগতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পান, যা তাদের প্রতিযোগিতাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পরবর্তীতে ফাউন্টেন সরঞ্জামটির হালনাগাদকৃত সংস্করণে বিজয়ীদের বার্তা এবং পদক পাঠানোর মতো অতিরিক্ত কাজগুলিও সহজ করে দেয়। সেজন্য আমরা প্রতিযোগিতার আয়োজকরা ফাউন্টেনের উপর প্রায় নির্ভর ছিলাম।
কিন্তু কয়েকটা ক্ষেত্রে ফাউন্টেনের ধারণা তেমন কার্যকর ছিল না। একটি বিষয় ছিল, সেখানে স্বয়ংক্রিয় ফলাফল তৈরির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নাম্বার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল তৈরি করা যেতো না। এছাড়া কিছু ফলাফলে শব্দসংখ্যা বা বাইটসংখ্যার উপর ফলাফল প্রকাশ করতে হতো যার ব্যবস্থা ছিল না। এসব কারণে, যিনি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন, তাকে সব তথ্য খুঁজে বের করে ম্যানুয়ালি ফলাফল প্রকাশ করতে হতো, যা ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ কাজ। আবার ব্যবহারকারীর আলাপ পাতায় সরাসরি কোনোকিছু মন্তব্য করা যেত না। ফলে ব্যবহারকারীকে তা ভুল সম্পর্কে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ তেমন ছিল না বললেই চলে। এছাড়া ফাউন্টেনে একইসাথে এখাধিক নিবন্ধ জমা দেওয়ার ও কোনো ব্যবস্থা ছিল না, যা অনেক সময় প্রতিযোগীর জন্য বিড়ম্বনার কারণ হতো। এছাড়া ফাউন্টেনে নিবন্ধগুলো সাজানো হতো মূলত ব্যবহারকারী অনুযায়ী। কিন্তু এতে বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকতো। যেমন- কোনো বিচারক জানে যে, অমুক ভালো ব্যবহারকারী; তাই সে শুধু তার নিবন্ধগুলি বিচার করলো অথবা অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর নিবন্ধ পর্যালোচনার সময় না পড়েই তা অ্যাপ্রুভ করে দিলো।
গত দুয়েক বছর যাবতই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন সরঞ্জাম তৈরির আলাপ চলছিল। তো মারুফ ভাই এই বিষয়টির দায়িত্ব নিতে মনস্থির করেন এবং আমাদেরকে “চেকমেট” উপহার দেন। উপরের বিষয়গুলি সমাধান করে চেকমেট তৈরির সময় মারুফ ভাই ফাউন্টেনের প্রায় সব সুবিধাদির পাশাপাশি আরও অনেক নতুন ও কার্যকর বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছেন, যা একে আরও আধুনিক, ব্যবহারবান্ধব এবং কাস্টমাইজ যোগ্য করেছে। এর মূলপাতাটি একটি কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ডের মতো, যেখানে ব্যবহারকারীরা লগইন করার পর সহজেই চলমান কিংবা আসন্ন এডিটাথনের তালিকা দেখতে পারেন এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় পেজগুলিতে দ্রুত প্রবেশ করতে পারবেন। তথ্য অনুসন্ধান পাতার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক, প্রকল্পভিত্তিক, সময়ভিত্তিক, কী দিয়ে বা হোস্টের তথ্য দিয়ে এডিটাথন খুঁজে বের করতে পারবেন। একইসাথে, আয়োজকরাও তাঁদের প্রতিযোগিতা বা এডিটাথনের অগ্রগতি দেখাশোনা করতে পারবেন।
চেকমেটের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর টেমপ্লেট পাতা, যেখানে আয়োজকরা নিজস্ব নিয়মনীতি ও মূল্যায়ন কাঠামো অনুসারে টেমপ্লেট তৈরি ও কাস্টমাইজ করতে পারবেন। ফলে প্রতিটি এডিটাথনের জন্য আলাদা গাইডলাইন দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এডিটাথন পাতায় গিয়ে অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি নিবন্ধ জমা দিতে পারেন এবং বিচারকরাও সহজেই সেই নিবন্ধগুলো মূল্যায়ন করে ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন এবং শেষপর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পাতা তৈরির ব্যবস্থাও রয়েছে। ড্যাশবোর্ডে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পরিসংখ্যান, যেমন: অংশগ্রহণের হার, জমা পড়া নিবন্ধের সংখ্যা ইত্যাদি দেখা যায়, যা আয়োজকদের বিশ্লেষণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। এবারের বাংলা রমজান এডিটাথন চেকমেটের সাহায্যে পর্যালোচিত হচ্ছে। এছাড়া, পরবর্তী বাংলা এডিটাথনগুলিও হয়ত এই ধারাবাহিকতা রাখবে। আশা করা যায়, চেকমেট শুধু ফাউন্টেনের বিকল্প নয় বরং আমাদের উইকি-প্রতিযোগিতাগুলিকে আরও সংগঠিত ও গতিশীল করে তুলবে।
অনেক বন্ধুকে আমি সরাসরি উইকিপিডিয়ায় যুক্ত করেছি
উইকিপত্রিকার প্রতি সংখ্যায় উইকিপিডিয়ার একজন অবদানকারীকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমাদের এবারের সাক্ষাৎকারে আছেন সৈয়দ মুহাম্মাদ ইশতিয়াক মাহফুজ আব্দুল্লাহ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহ-সম্পাদক মেহেদী আবেদীন।
সহ-সম্পাদক: আপনার উইকিমিডিয়া জগতে আসার গল্পটা বিশদে বলুন।
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি প্রথম উল্লেখযোগ্যভাবে উইকিমিডিয়ার সান্নিধ্যে আসি। আমি তখন বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র। সে সময় আমাদের স্কুলে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। আমি সাধারণত কোন প্রতিযোগিতা মিস করি না। এ প্রতিযোগিতাতেও তাই অংশ নিলাম। উল্লেখ্য, এ অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী হয় বিটিসিএল ভবনে। এ পুরস্কার স্বয়ং তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রদান করতেন (সে সময় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছিল, তাই তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকতেন)।
যেহেতু অন্যান্য প্রতিযোগিতার তুলনায় এ প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অনেক বেশি, তাই আমি বিস্তর তথ্যানুসন্ধান করে রচনা জমা দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম। হাতে খুব বেশি দিন সময় ছিল না। এমতাবস্থায় বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য উইকিপিডিয়ার তুলনায় কোনো কিছুই আমার কাছে উত্তম বিকল্প মনে হলো না। তাই উইকিপিডিয়া হতে তথ্যানুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিলাম।
যে ব্যক্তিকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, উইকিপিডিয়ায় সেই ব্যক্তির নিবন্ধ পড়ে বিস্মিত হলাম। কতটা সাজিয়ে-গুছিয়ে সবকিছু লেখা! (অভিজ্ঞ উইকিপিডিয়ান হিসেবে এখন জানি, এটা নির্বাচিত নিবন্ধ হওয়ায় এতটা সুন্দর, তথ্যবহুল এবং বিন্যস্ত। কিন্তু তখন তো আর জানতাম না!)
সে সময় আমি ভারতীয় টেলিভিশন ধারাবাহিক সিআইডির মারাত্মক ফ্যান ছিলাম। বলতে গেলে ডাইহার্ড ফ্যান (এখনো অবশ্য ডাইহার্ড ফ্যান, তবে কিছু ইস্যুর কারণে নিজ ইচ্ছায় আমি বাধ্য হয়েই সিআইডি দেখা ছেড়েছি আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে)।
যা বলছিলাম। সুলিখিত নিবন্ধটি দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। সিআইডি নিয়েও তাই ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। সিআইডি নিয়ে নিবন্ধও পেলাম। সিআইডির তিন মুখ্য চরিত্র, সিনিয়র ইন্সপেক্টর অভিজিৎ, এসিপি প্রদ্যুমান ও সিনিয়র ইন্সপেক্টর দয়া চরিত্রে অভিনয়কারী তিন অভিনেতার নামে নিবন্ধ খুঁজি। শেষোক্ত দুই জন অর্থাৎ এসিপি প্রদ্যুমান চরিত্রে অভিনয়কারী শিবাজী সত্যম ও সিনিয়র ইন্সপেক্টর দয়া চরিত্রে অভিনয়কারী দয়ানন্দ শেঠির নামে নিবন্ধও খুঁজে পাই। কিন্তু সিআইডিতে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র অভিজিৎ-এর চরিত্রে অভিনয়কারী আদিত্য শ্রীবাস্তবের নিবন্ধ খুঁজে পেলাম না। এই দুই জন ব্যতীত সিআইডির অন্যান্য কিছু অভিনেতার নামেও নিবন্ধ খুঁজে পেলাম। কিন্তু অভিজিৎ চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি, তার নামে নিবন্ধ পেলাম না। তখন একটু রাগ হলাম, উইকিপিডিয়ায় অভিজিৎ-এর তুলনায় তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনেতাদের নামে নিবন্ধ আছে, অথচ অভিজিৎ-এর চরিত্রাভিনেতার নামে নিবন্ধ নেই! উইকিপিডিয়ার সাথে প্রথম উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচয় সেদিনই।
এরপর সিআইডি নিয়ে উইকিপিডিয়ায় আরো ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করি। অনেক সময়ই ভুল দেখলে সংশোধন করতে চাইতাম, তাই সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করতাম। কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করার পর অ্যাকাউন্ট খুলতে বলতো এবং বলতো, অ্যাকাউন্ট না দিলে আইপি অ্যাড্রেস প্রদর্শিত হবে। আইপি অ্যাড্রেস প্রদর্শিত হয়ে যাবে - এই ভয়ে আর সম্পাদনা করতাম না, বের হয়ে আসতাম। আবার অ্যাকাউন্ট খুলতেও ইচ্ছে করতো না। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখেও এরকম একটি ভুল আমার দৃষ্টিগোচর হয়। বিরক্ত হয়ে এবার ভাবলাম, অ্যাকাউন্ট খুললেই ফেলি এবার। সম্পাদনা না করলে আর চলছে না! আমার প্রিয় সিরিয়ালের নিবন্ধে এসব ভুল থাকা মানা যাচ্ছে না। সেই থেকে শুরু।
আমার প্রথম নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ৪ জুনে আমার প্রিয় অভিনেতা আদিত্য শ্রীবাস্তবের নামে যে নিবন্ধ নেই, তা কিন্তু আমি ভুলে যাইনি! ২০২১ সালের ৩০ মার্চ থেকেই নিবন্ধটি লেখা শুরু করি। দীর্ঘ দুই মাস পরিশ্রম করে ইংরেজি হতে বাংলায় অনুবাদ করে নিবন্ধটি প্রকাশে সক্ষম হই। আমার নিবন্ধটি উল্লেখযোগ্য ছিল, তাই ডিলিট হয়নি। (এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সাড়ে ছয়শোর বেশি নিবন্ধ লিখলেও আমার একটি মাত্র নিবন্ধ অপসারিত হয়েছে এখন পর্যন্ত। সেটি হলো উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধ, যা যান্ত্রিকতার জন্য অপসারিত হয়। আমি ঐ নিবন্ধ কিছুদিনের মধ্যেই সঠিক পর্যায়ে আনার চিন্তা করছিলাম, কিন্তু {{কাজ চলছে}} ট্যাগ যোগ করতে ভুলে যাই। ফলে নিবন্ধটি অপসারণ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়, এবং তা মুছে দেয়া হয়। আরেকটি নিবন্ধ ডিলিট করা হয়েছিল, কিন্তু সেটিকে আসলে আমি পুনঃনির্দেশনা পাতা হিসেবে তৈরি করেছিলাম। ফলে প্রশাসকের কাছে নিবন্ধটি ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করলে তা ফিরিয়ে দেয়া হয়, ফলে আমি সেটিকে পুনঃনির্দেশিত করে রাখি।) আমার দ্বিতীয় নিবন্ধও ছিল সিআইডি নিয়েই। সিনিয়র ইন্সপেক্টর অভিজিৎ চরিত্রটি নিয়ে আমি নিবন্ধ তৈরি করি। এভাবে আমার উইকিপিডিয়ার সাথে পথচলা শুরু হয়।
তবে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখা শুরু করি ২০২২-এ অনুষ্ঠিত অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার পর। মো. সাদমান ছাকিব ভাই আমাকে সে সময় অনেক সহযোগিতা করেছিলেন (এবং আমার নিবন্ধগুলো গ্রহণের আগে অনেক প্যারা দিয়েছেন, যেই প্যারা আজও মনে পড়ে!) এবং আমাকে উইকি কমিউনিটিতে যুক্ত করেন। ফলে আমি উইকিপিডিয়ায় এর পর থেকে একের পর এক নিবন্ধ সৃষ্টি ও সম্পাদনা চালিয়ে যেতে থাকি। (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ নামে অ্যাকাউন্ট খুলি। তিন বছরেরও বেশি সময় এই অ্যাকাউন্ট দিয়ে সম্পাদনার পর ব্যক্তিগত কারণে এ অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে দেই এবং Ishtiak Abdullah নামে অ্যাকাউন্ট খুলি। এখনো প্রধানত সেই অ্যাকাউন্ট দিয়ে সম্পাদনা করছি)।
সহ-সম্পাদক: প্রথমে কি কি সমস্যা আর বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং সেগুলো কিভাবে সমাধান করেছেন? এসব ক্ষেত্রে মেন্টরদের ভূমিকা কেমন ছিল?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: দেখুন, প্রথম প্রথম অন্যান্য নবাগত ব্যবহারকারীরা অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হলেও আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি। তাই আমার কোন সমস্যাই সে সময় সমাধান করা লাগেনি। তাই সে সময় কোন ক্ষেত্রে মেন্টরদের কোন ভূমিকাই রাখা লাগেনি (আমার কোন মেন্টরের সাথেই তখন পরিচয় ছিল না, যতটা মনে পড়ে ২০২২-এর আগে উইকিপিডিয়া বা এর সহ-প্রকল্পে সম্পাদনা করেন এমন কাউকেই আমি তখন অন-উইকি বা অফ-উইকি কোন ভাবেই চিনতাম না)। তবে আমি যখন আমার প্রথম নিবন্ধ লিখছিলাম তখন আমি আইপি বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম, যা আমার নিবন্ধ লেখার কাজকে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। আমার মেন্টরদের কথা যদি বলি, উইকিপিডিয়ার এই দীর্ঘ পথচলায় আমার মেন্টর হিসেবে আছেন তিনজন। আমার প্রধান মেন্টর ছিলেন মো. সাদমান ছাকিব ভাই। অন্যান্য মেন্টর দুজন হলেন মুহাম্মদ ইয়াহিয়া ভাই এবং শাকিল হোসেন ভাই। প্রধানত তারাই আমাকে এই দীর্ঘ পথ চলায় সহায়তা করেছেন, যদিও শুরু থেকে আমি তাদের সাহায্য পাইনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হতে আমি মো. সাদমান সাকিবের সংস্পর্শে আসি এবং তারও অনেক পরে মুহাম্মদ ইয়াহিয়া ভাই এবং শাকিল হোসেন ভাইদের সংস্পর্শে আসি। ২০২১ সালের শুরু হতে ২০২২ সালে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত পথচলাটা আমি একাই চলেছি। মো. সাদমান ছাকিব ভাইয়ের ক্রেডিট মূলত এখানে যে, তিনি আমাকে উইকি কমিউনিটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং নিবন্ধের মানের সাথে কোনরকম আপস না করতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু উইকির বেসিক শেখা থেকে শুরু করে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমি একাই পথ চলেছি। মুহাম্মদ ইয়াহিয়া ভাই এবং শাকিল হোসেন ভাইয়ের সংস্পর্শে আসি আরো পরে। নিবন্ধ সম্পাদনা করতে গিয়ে যে কোন সময় কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হলে আমি তাদের দ্বারস্থ হতাম। এ কারণে আমি এই তিনজনকে আমার মেন্টর হিসেবে মান্য করি। এখনো আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে এই তিনজনের একজনকে জিজ্ঞেস করি বা সমাধান চাই। মজার ব্যাপার হলো এটা যে, আমার মেন্টর তিনজনই উইকিপিডিয়ার প্রশাসক। আমার প্রধান মেন্টর একজন প্রশাসক এবং আমার বাকি দুজন মেন্টর শুধুমাত্র বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসকই নন, বরং তারা উইকিমিডিয়ার স্টুয়ার্ড! এরকম অভিজ্ঞ ও দক্ষ মেন্টরদের সান্নিধ্যে আমি উইকিমিডিয়ার সহ-প্রকল্পগুলোয় সম্পাদনা করেছি এবং করছি।
সহ-সম্পাদক: তাহলে কি বলা যায় যে অভিজ্ঞ মেন্টর দক্ষ সম্পাদক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে? সেক্ষেত্রে কি নতুন সম্পাদক সৃষ্টি করতে অভিজ্ঞ মেন্টরদের মূল্যবান সময় দেওয়ার ভূমিকা প্রয়োজন?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: অবশ্যই। কোয়ালিটি মেন্টর অবশ্যই একজন ব্যবহারকারীকে দক্ষ ব্যবহারকারী হতে সাহায্য করবে। আমি নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার মেন্টরশিপ প্রোগ্রামকে আমি স্বাগত জানাই। তবে এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমতি আছে। আশা করি মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা এই কমতির জায়গাগুলি কাটিয়ে উঠবেন।
সহ-সম্পাদক: আচ্ছা। আপনি তো মাসখানেক আগে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা বলুন। ওই সাক্ষাৎকার ভাইরাল হওয়ার পরে কি কেউ আপনার থেকে উইকিপিডিয়ায় কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: হ্যাঁ, আসলে সংখ্যাটা বরং বলা যায় প্রচুর এবং সংখ্যাটা আরো বাড়বে। এখনো আমার অনেক বন্ধুরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে কিভাবে উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখব বা কিভাবে উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখা শুরু করব? আমার অনেক বন্ধুকে আমি সরাসরি উইকিপিডিয়ায় যুক্ত করেছি।
সহ-সম্পাদক: কাজের ক্ষেত্রে আপনি অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন কার্যক্রমকে কতটা গুরুত্ব দেন?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: আমি নিজে অন উইকিতে যতটা সক্রিয়, অফ উইকিতেও ততটাই সক্রিয়। আমি মনে করি, এই মুক্ত জ্ঞানভাণ্ডার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে অন-উইকি কার্যক্রম এবং উইকিমিডিয়া আন্দোলনকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখে অফ-উইকি কার্যক্রম। আপনি যদি উইকিমিডিয়াকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চান, তা হলে অফ-উইকি কার্যক্রমের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সম্পাদনাসভা ও মিটআপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উইকিমিডিয়া আন্দোলনকে পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিতে আমি কাজ করছি। আপনি যদি পুরো পৃথিবীর দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় উইকিপিডিয়া বা এর সহ-প্রকল্পে সম্পাদনা করা শুরু করে। অনেক কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে উইকিপিডিয়া বা এর সহ-প্রকল্প সম্পাদনা করার উপর কোর্স ক্রেডিট থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম সংস্কৃতি এখনো প্রচলিত হয়নি। অবশ্য বুয়েটে এর আগে একবার এরকম কার্যক্রম হয়েছিল কিন্তু সেটার উপর কোনো কোর্স ক্রেডিট ছিল না। আমি যদি ভুল না করি, তাহলে পুরো বিশ্বে হাজারের উপর উইকি ক্লাব আছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন উইকি ক্লাব চালু নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ব্যাপার। বাংলাদেশ অনেক দিক দিয়ে পুরো দুনিয়া থেকে পিছিয়ে আছে, এটাও তার অন্যতম। আর এই জিনিসটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারিনি যে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণা নিয়ে চলছে। নতুন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিষ্ঠানে উইকি ক্লাব চালু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্সের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক উইকিমিডিয়া সম্পাদনার উপর ভিত্তি করে কোর্স ক্রেডিট দেয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশ এখনো পুরাতন দিনেই পড়ে আছে। আমি মনে করি ছাত্র অবস্থায় উইকিমিডিয়া আন্দোলনের সাথে জড়িত হওয়া উত্তম। একজন ছাত্র যেভাবে পড়াশোনা সামলে তার অবসর সময়ে উইকিপিডিয়া বা এর সহ-প্রকল্প গুলোতে অবদান রাখতে পারে, একজন পেশাজীবী কখনোই তার পেশা সামলে সেভাবে উইকিপিডিয়া বা এর সহ-প্রকল্পগুলোতে অবদান রাখতে পারবেন না। ছাত্রদের কাছে উইকিমিডিয়া আন্দোলন পৌঁছে দিতে অফ-উইকিতে কাজ করাটা বেশি জরুরী। তাই আমি সেদিকেই এখন মনোযোগ দিচ্ছি।
সহ-সম্পাদক: বাস্তব জীবনের সাথে উইকি জীবনের সময় ম্যানেজ করে নিতে অসুবিধা হয়না?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: আমি উইকিপিডিয়াকেও বাস্তব জীবনের অংশ হিসেবে মনে করি। তবে যদি নন-উইকি জীবনের কথা বলেন, তাহলে বলি উইকিমিডিয়া সামলে নন-উইকি জীবনে সময় দিতে এখন পর্যন্ত বড় কোন অসুবিধা হয়নি। অফ-উইকির ক্ষেত্রে যদি বলি, আমি জীবনে শুধুমাত্র একবারই উইকিমিডিয়ার ইভেন্টের চেয়ে নন-উইকি কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। ২০২৪ সালে নটরডেম গণিত ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত নটরডেম গণিত উৎসবের একজন আয়োজক ছিলাম। নটরডেম গণিত উৎসবের দ্বিতীয় দিনই উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর পুরস্কার বিতরণী চলছিল। যেহেতু আমি ঐ গণিত উৎসবের একজন আয়োজক ছিলাম, তাই আমি সেদিন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি।
সহ-সম্পাদক: সামনেই তো পহেলা বৈশাখ। উইকিপিডিয়া বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কিত তথ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আপনার মতে বাংলা উইকিপিডিয়া আরো কিভাবে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বড় পরিসরে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে পারে?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন সংস্কৃতির লোক বাস করে। তাদের সংস্কৃতি, জীবন আচার ইত্যাদি সম্বন্ধে সহজে জ্ঞান অর্জন করতে হলে উইকিপিডিয়ার মত প্লাটফর্মের বিকল্প নেই। শুধু উইকিপিডিয়া নয়, এর সহ-প্রকল্পগুলোও এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া উইকিমিডিয়া প্রকল্পগুলোর ইংরেজি সংস্করণগুলোতে প্রায় প্রত্যেক দেশের উইকিমিডিয়া অবদানকারীরাই তাদের নিজ দেশ, নিজ জাতি, নিজ সংস্কৃতি, নিজ ঐতিহ্য ইত্যাদি বিষয়ে অবদান রাখে। উইকিমিডিয়া প্রকল্পগুলোর ইংরেজি সংস্করণগুলো থেকে সেগুলো বাংলায় অনুবাদ করা প্রয়োজন এবং যেগুলো এখন হালনাগাদ করা নেই সেগুলো হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এভাবে বাংলা উইকিপিডিয়া বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আরো বড় পরিসরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
সহ-সম্পাদক: উইকিপত্রিকার কথা তো জানেন। কেমন লাগে উইকিপত্রিকা?
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: বাংলা উইকিপিডিয়া সম্প্রদায়ের একটি অসাধারণ উদ্যোগ হল উইকিপত্রিকা। এটা ভাবতেই ভালো লাগে যে আমি এ পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায়ই প্রদায়ক হিসেবে অবদান রেখেছিলাম। আরো ভালো লাগার বিষয় হল যে বাংলা উইকিসম্মেলন ২০২৪ থেকে এটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার পরিকল্পনায় আমার খুব কম হলেও অংশ ছিল। একদম শুরু থেকেই প্রদায়ক হিসেবে যুক্ত আছি, যুক্ত আছি পাঠক হিসেবেও। উইকিপত্রিকায় প্রকাশিত এখন পর্যন্ত অনেক লেখাই অসাধারণ। বিশেষ করে সম্পাদক খাত্তাব হাসান ভাই কর্তৃক প্রথম সংখ্যায় লিখিত 'উইকি তারকা সম্মেলন' শীর্ষক ভ্রমণ নিবন্ধটি আমি যে কতবার পড়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। উইকিপত্রিকার সবচেয়ে ভালো লাগে যেদিকটা, সেটা হচ্ছে খাত্তাব ভাইয়ের হিউমার সেন্সযুক্ত সম্পাদনা। আমি নিজে হিউমার খুব বেশি পরিমাণেই পছন্দ করি। এছাড়াও উইকিমিডিয়া পরিসংখ্যান, সংবাদ ইত্যাদি খুব ভালো লাগে।
সহ-সম্পাদক: বাংলা উইকিপিডিয়ায় আপনার বর্তমান কাজগুলো নিয়ে কিছু জানান।
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: বাংলা উইকিপিডিয়ায় বর্তমানে আমি রমজান এডিটাথনে কাজ করছি। এখন আপাতত স্পেসিফিক কোন লক্ষ্য নেই। তবে যদি উইকিমিডিয়া প্রকল্পগুলোর কথা বলেন, তাহলে বলবো আমার লক্ষ্য ছিল যে উইকিসংবাদকে জুন মাসের মধ্যে ইনকিউবেটর থেকে বের করা। আলহামদুলিল্লাহ সেই কাজে আমি মোটামুটি সফল এখন পর্যন্ত এবং এখন কার্যক্রম এমন পর্যায়ে আছে যে, যদি আমি নাও থাকি বা আমি যদি এই কার্যক্রমে বাধাও দিতে চাই তাও থামানো সম্ভব না। কেননা উইকিসংবাদে আমার সাথে একগুচ্ছ উদ্যমী উইকিসাংবাদিক যোগ দিয়েছেন। তারা উইকিসংবাদকে এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আমার ধারণা জুন মাস নয়, এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যেই উইকিসংবাদ ইনকিউবেটর থেকে বের হবে।
সহ-সম্পাদক: উইকিমিডিয়ানদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ: উইকিমিডিয়া অবদানকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমাদের ভাষা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। কিন্তু আমাদের বাংলা উইকিপিডিয়া ও এর সহ-প্রকল্পগুলো এখনো অনেক ভাষা থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলা উইকিপিডিয়ার অবস্থান আরো ঊর্ধ্বে উন্নীত করতে হবে। তবে সব সময়ই মানসম্পন্ন অবদান রাখতে হবে, কোয়ালিটির সাথে কোন আপোষ নয়। এছাড়াও আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উইকি ক্লাব নেই। আপনারা যারা অভিজ্ঞ উইকিমিডিয়ান আছেন, তারা তাদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও উইকি ক্লাবের কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। যে সকল দেশে উইকিমিডিয়া প্রকল্পসমূহ আমাদের থেকে অনেক উন্নত, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের দেশে উইকি ক্লাবের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই দেশে বেশি বেশি উইকিমিডিয়া ক্লাব চালু করার বিকল্প নেই। এভাবে মুক্ত জ্ঞান ছড়ানোর ধারাবাহিকতা আপনি প্রজন্ম হতে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে পারেন। আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুজরা যখন আপনাকে দেখে উইকিমিডিয়ার সম্পাদনায় অনুপ্রাণিত হবে, আশা করি সেটি আপনার জন্য অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয় হবে। বিশ্বব্যাপী মুক্ত জ্ঞানের সম্প্রসারণে আপনি সক্রিয়ভাবে অবদানের ধারা বজায় রাখবেন, এটাই কাম্য। আশা করি, আমরা সম্মিলিতভাবে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য জ্ঞানভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিতে সক্ষম হবো।
সহ-সম্পাদক: ধন্যবাদ সাক্ষাৎকারের জন্য।
গল্পে গল্পে বাংলার প্রেমে উইকি ২০২৫-এর কিছু ছবি
হয়ে গেল এই বছরের বাংলার প্রেমে উইকি। এবারের আয়োজনে প্রতিযোগীরা বাংলার পাখিদের ছবি তুলে আপলোড করেছে। মোট ১৭২৫টি ছবি জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে মুগ্ধ করার মতো অনেক ছবি আছে। সেগুলোর মধ্যে সহ-সম্পাদকের চোখে পড়েছে এমন কিছু ছবি মজাদার ক্যাপশন ও আলোচনাসহ দেওয়া হল।
সুন্দর রক্তচক্ষু
– আরে, আপনার চেহারা এত ইউনিক! এত সুন্দর হলেন কিভাবে? আপনার এই সৌন্দর্যের রহস্য কি?
– আরে ভাই বুঝেন না কেন, মেকাপ করছি, মেকাপ।
পাখিটির নাম “রক্তচক্ষু”। ছবিটি ৯ এপ্রিলে আপলোড করেছেন শ্রেষ্ঠ সরকার। নিকন ডি৭৫০০ মডেলের ক্যামেরায় তোলা এই সুন্দর রক্তচক্ষুর শরীর পুরোটা না হলেও সুন্দর ও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
লড়াকু পাখি
– চল ভাই নাচি!
– কিরে ব্রো, আজ এভাবে নাচছিস যে?
– শীত চলে গেছে। বসন্ত এসে গেছে। সামনে আবার পহেলা বৈশাখ। সেই খুশিতে তো নাচতেই হবে।
– ঠিকই বলেছিস, চল একসাথে নাচি।
পাখিগুলোর নাম গোবক। নিকন ডি৭১০০ ক্যামেরায় এই পাখিগুলোর ছবি অপু জামান আপলোড করেছেন ১০ এপ্রিলে। দুটি পাখির দুষ্টুমির ছলে করা লড়াইয়ের ছবি উনি সুস্পষ্টভাবে তুলে আবহমান বাংলার পাখিদের দুষ্টুমির সংস্কৃতিকে তুলে ধরে ন্যায়বিচার করেছেন বলে আমার বিশ্বাস।
অপেক্ষারত পাখি
সে যে কেন এলো না
কিছু ভালো লাগে না
এবার আসুক
তারে আমি মজা দেখাবো
মায়াবী এই পাখিটির নাম সেকরা বসন্ত বাউড়ি। সুন্দর রঙ ও চোখের এই চমৎকার পাখিকে দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এই অসাধারণ পাখির ছবি খাজা মইনুদ্দিন বাবলু প্রতিযোগিতার জন্য আপলোড করেছেন ৬ মার্চে। নিকন ডি৩৩০০ ক্যামেরায় তোলা ছবিটি দেখলে যেন মনে হয় এই মায়াবী পাখিটি অপেক্ষা করে আছে কারো জন্য, কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেও যেন তার দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা।
অফিসগামী পেঁচা!
দেখি তো, আজ আবহাওয়ার কি অবস্থা…. দেখে মনে হচ্ছে আজ অনেক বৃষ্টি হবে। আজ অফিসে না যাওয়াই ভালো হবে…. কিন্তু না গেলে আবার বস মাইন্ড করবে। কি যে করি… যাবো নাকি যাবো না?
খুঁড়ুলে পেঁচা, যার নিবাস গাছের কোটরের মধ্যে। ক্যানন ইওএস আর৭ মডেলের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে তোলা এই চিন্তাশীল পাখির অবয়ব ফুটে উঠেছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন পাখিটিকে দ্রুত কোথাও যেতে হবে। ৯ এপ্রিলে ছবিটি আপলোড করেছেন অপু জামান।
যেন একটি জীবন্ত বিমান
দেরি হয়ে গেছে দেরি হয়ে গেছে… তাড়াতাড়ি যেতে হবে নইলে আজ স্কুলে টিচার খুব বকবে!
কালিম পাখিটির ছবি তারিখ হাসান টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে তুলেছিলেন। ক্যানন ইওএস ৮০ডি ক্যামেরায় উড়ে যাওয়ার মুহূর্তে পাখিটির স্থিরচিত্র তুলে তারিখ হাসান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যেন দেখে মনে হচ্ছে পাখিটিকে এখনই কোথাও যেতে হবে। ছবিটি প্রতিযোগিতার জন্য ৬ মার্চে আপলোড করা হয়।
.......
চিত্রের পাখির সাথে কোন সুপরিচিত ব্যক্তির মিল খুঁজে পেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়!
খান মাশুক আহমেদের তোলা এই ছবিতে একটি কাঠময়ূরকে দেখা যাচ্ছে। এই বিরল প্রজাতির পাখির ছবি ক্যানন ইওএস ৭ডি মার্ক ২ মডেলের ক্যামেরায় তুলে ২৭ মার্চে আপলোড করা হয়েছে। এমন একটি বিরল প্রজাতির পাখির ছবি তুলে প্রতিযোগিতায় জমা দেওয়ার জন্য প্রতিযোগীকে ধন্যবাদ।
কপি অ্যান্ড পেস্ট
কম্পিউটার চালানোর সময় একবার ক্লিক করতে গিয়ে ভুল করে যখন অনেকবার ক্লিক পড়ে যায়…
পাখিগুলোর নাম জানিনা। ২০ মার্চে হৃদয় মুন নামক অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়েছে। লেখা আছে ছবিটি সুনামগঞ্জ থেকে তোলা হয়েছে। আমার ধারণা ছবিটি টাঙ্গুয়ার হাওরে তোলা, যদিও ভুল হতে পারে। ক্যানন ইওএস ৬ডি ক্যামেরায় তোলা ছবিটিতে একই জাতের এতগুলো পাখিকে একসাথে দাঁড়াতে দেখে আমার কম্পিউটারে ভুলে অনেক বার ক্লিক করার পর যা ঘটে তার কথা মনে পড়ে যায়।
দুই বন্ধুর আড়ি
– আজ থেকে তুই আমার সাথে কোন কথা বলবি না।
– হুহ, আমার যেন বয়েই গেছে তোর সাথে কথা বলতে। তুইও আমার সাথে কোন বলবি না।
পাখি দুটির নাম বেগুনি কালিম। রাজশাহীতে সাজিদ ফুজিফিল্ম এক্স-টি১৩০ ২ মডেলের ক্যামেরায় তুলে ২০ মার্চে প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেন। পাখিগুলো এমন ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে ঝগড়া হওয়ার পর তারা দুজন দুজনের প্রতি রাগ করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যেন আর কোনদিন তারা একে অপরের চেহারা দেখতে চায় না।
সেলিব্রিটি টিয়া
– এই যে জনাব
– কে, কে আমায় ডাকে?
– আমি।
– এখানে কি চাই?
– ওই.. প্রতিযোগিতার জন্য আপনার ছবি তুলতে এসেছি।
– ও আচ্ছা, আগে বলবেন তো! তুলেন ভাই তুলেন। যেন আমাকে নায়কের মতো লাগে।
টিয়া পাখি চিনেন না এমন মানুষ হয়তো খুব কম পাওয়া যাবে। এই পাখির সবুজ পালক ও লাল ঠোঁট দেখলে ছোটবেলা থেকেই আমার মনে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে যা বুঝিয়ে বলা কঠিন। ছবির এই টিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ তার বাড়ির দরজার কড়া নেড়ে তাকে ঘুম থেকে তুলেছেন আর তাই টিয়া মশাই রেগে গিয়ে সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। এই সুন্দর ছবিটি লিসান খান নিকন ডি৭২০০ ক্যামেরায় তুলে ৯ এপ্রিলে আপলোড করেছেন।
খোঁজ দ্য সার্চ
– খুঁজে দেখ, ভালো করে খুঁজে দেখ, তন্নতন্ন করে খুঁজবি যাতে কোন অংশ বাদ না থাকে।
– ওকে। কিন্তু বস আমরা এখানে আসলে কি খুঁজতে এসেছি সেটা তো বলুন।
– সকালে এখানে শুয়ে শুয়ে আমার মোবাইল টিপছিলাম। তারপর মোবাইল রেখে একটা কাজে গিয়ে এসে কিছুতেই সেটা পাচ্ছিনা। এখানেই থাকার কথা!
পাখিগুলোর নাম ধলাকোমর মুনিয়া। শুকোতে দেওয়া ধান খাওয়ার সময় ক্যানন ইওএস ৮০ডি দিয়ে ছবিটি তুলেছেন রাফাত। দেখে মনে হচ্ছে যেন তোলপাড় করে পাখিগুলো কিছু খুঁজছে। কে জানে, হয়তো পাখিগুলো তাদের হারানো মোবাইল খুঁজছে! ছবিটি ৯ এপ্রিলে আপলোড হয়েছে। বনে-জঙ্গলে না গিয়েও যে পাখির সুন্দর ছবি তোলা সম্ভব তার প্রমাণ এই ছবিটি।
খাবার খেয়ে যা
এই দাঁড়া… খাবার না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস? না খেয়ে স্কুলে গেলে দেখবি পেট ব্যাথা করবে। খাবারটা গিলে তাড়াতাড়ি স্কুলে যা।
পাখি দুটির নাম ছোট পানচিল। রাজশাহী থেকে খান মাশুক আহমেদের এই ছবি প্রতিযোগিতার জন ৩ এপ্রিলে আপলোড না করলে জানতেই পারতাম না যে এমন নামে কোন পাখি আছে। ছবিটির বিবরণে লেখা আছে “প্রজনন মৌসুমে জোড়া তৈরির জন্য স্ত্রী পাখিকে খুশি করতে পুরুষ পাখিরা পানিতে ছোঁ মেরে মাছ শিকার করে নিয়ে আসে এবং ঠোঁটে তুলে খাইয়ে দেয়”। যদিও দেখে মনে হচ্ছে যে মা তার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর আগে জোর করে দ্রুত খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। ক্যানন ইওএস ৭ডি মার্ক ২ ক্যামেরায় তোলা এই দুর্লভ মুহূর্তের ছবিটি আপলোড করে আমাদের দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
সংসারী পাখি
– ওগো, আমি এসেছি। এই নাও খাবার।
– খাবার তো এনেছো, খাবারের সাথে যে বাচ্চার জন্য বই আনতে বলেছিলাম এনেছো?
– ইশ! ওটাই শুধু ভুলে গেছি।
– এই ভুলোমনা জামাইকে নিয়ে আমি কি করবো!
এই দুটি বড় বসন্ত বৌরির ছবি সিলেটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন আবির। নিকন ডি৫০০ ক্যামেরায় তুলে ছবিটি ৩ এপ্রিলে আপলোড করা হয়েছে। ছবিটির পাখিদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের সাথে মানব দম্পতির দৈনন্দিন সংগ্রামের অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়।
শকুনের দোয়ায় গরু মরে না
পাশের বাসার ভাবিদের একটি রূপক চিত্র!
শকুন বর্তমানে খুব একটা দেখা যায়না। তবে এই শকুনদের ছবি খান মাশুক আহমেদ সুন্দরবন থেকে তুলে ৯ এপ্রিলে আপলোড করেছেন। আমার ধারণা, ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো শকুনদের চিনতেই পারবেনা। এই শকুনের প্রসঙ্গ আসলেই মনে পড়ে যায় একটি বাগধারা – শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। এই শকুনদের সাথে আমি মিল পাই বর্তমান সমাজে “পাশের বাসার ভাবি” নামক চরিত্রের সাথে, যারা পাশের বাড়িতে গিয়ে অযথা গল্প করে সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং অন্যের খারাপ চাইবে। তাদেরকে তুলনা করার জন্য এই শকুন ছাড়া অন্য কোন উপযুক্ত পাখি হয়তো পাওয়া যাবেনা।
অতুলনীয়
অসাধারণ ছবির জন্য কোন ক্যাপশনের প্রয়োজন নেই।
পাখিগুলোর নাম বাবুনাই বা উদয়ী ধলা-চোখ। নিকন ডি৫০০ ক্যামেরায় ছবিটি তুলে ৩০ মার্চে আপলোড করেন সুদীপ্তা মল্লিক। এই চমৎকার ছবিটি আপলোড করার জন্য উনাকে অনেক ধন্যবাদ। ছবিটির দিকে যেন সারাজীবন তাকিয়ে থাকা যাবে। আমার কাছে এই ছবিটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশান!
– অ্যাকশান!
– বল।
– কি বলব?
– ডায়লগ বল! ডিরেক্টর অ্যাকশন বলে দিয়েছে!!
– ও হ্যাঁ, ঠিকই তো। কিন্তু ডায়লগ কি বলতে হবে ভুলে গেছি।
– আয় হায়। আমিও তো ভুলে গেছি!
– কাট!!! প্যাকাপ!!!
দুটি দাগি রাজহাঁস একে অপরের দিকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। যেন মনে হচ্ছে সিনেমার পরিচালক শুটিংয়ের জন্য তাদের দাঁড়া করিয়ে রেখেছে, কিন্তু দুটি অভিনেতা সংলাপ ভুলে একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ৯ এপ্রিলে লিসান খান ছবিটি আপলোড করেছে। শীতকালে নিকন ডি৭১০০ ক্যামেরায় তোলা এই পাখিগুলোর নিবাস আমাদের দেশে নয়। শীতের মৌসুমে বেড়াতে আসা এই পাখিগুলো দেখতে সাদামাটা হলেও সুন্দর।
মার্চের শীর্ষ দশ
বাংলা উইকিপিডিয়ার শীর্ষ দশ ধারাবাহিকের এবার নিবেদিত মাস হচ্ছে মার্চ ২০২৫। মার্চ ২০২৫ প্রায় পুরোটাই ছিল রমজান মাস। রমজান মাস উপলক্ষে রমজান এডিটাথন চলায় অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি সম্পাদনা হয়। যার ফলে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ মুক্ত এই জ্ঞানভাণ্ডার তার উন্নয়নের পথে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে তথ্যসমৃদ্ধ ও নির্ভুল নিবন্ধ তৈরি, সম্প্রসারণ এবং সংস্কার করে চলেছেন। এ মাসে প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ সম্পাদনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভিজ্ঞ ও নতুন উভয় সম্পাদকই উইকিপিডিয়ার সমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে বাংলা উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা কার্যক্রম, নতুন নিবন্ধ তৈরি, শীর্ষ সম্পাদকদের অবদান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো।
সর্বাধিক সম্পাদিত শীর্ষ দশ নিবন্ধের তালিকা
মার্চ মাসে বাংলা উইকিপিডিয়ায় কিছু নিবন্ধ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে এবং তুলনামূলক বেশি সম্পাদনা পেয়েছে। নিচে সর্বাধিক সম্পাদিত নিবন্ধগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে।
ক্রম | নিবন্ধের নাম | সম্পাদনার সংখ্যা |
---|---|---|
১ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাস | ৪৫০ |
২ | জাতীয় নাগরিক পার্টি | ৪২৩ |
৩ | ২০২৪–২৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ | ৩২২ |
৪ | কিং লিয়ার | ২৫১ |
৫ | আইন র্যান্ড | ২২৩ |
৬ | ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি | ২২০ |
৭ | খাইবার পাখতুনখোয়ায় বিদ্রোহ | ১৯৪ |
৮ | মুম্বইয়ের ইতিহাস | ১৮৬ |
৯ | জীব | ১৮৪ |
১০ | দ্বিতীয় ইন্তিফাদা | ১৮৩ |
শীর্ষ দশ সর্বাধিক নিবন্ধ প্রণেতার তালিকা
নতুন নিবন্ধ তৈরি উইকিপিডিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। মার্চ মাসে বেশ কিছু অভিজ্ঞ ও নতুন সম্পাদক বাংলা উইকিপিডিয়ায় নতুন নিবন্ধ সংযোজন করেছেন, যা বাংলা ভাষায় মুক্ত জ্ঞানের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এর প্রধান কারণ হয়তো ছিল, রমজান এডিটাথন।
ক্রম | ব্যবহারকারী নাম | মোট নিবন্ধ |
---|---|---|
১ | Md. T Mahtab | ৩৭৭ |
২ | Nettime Sujata | ২১৩ |
৩ | RDasgupta2020 | ১৯৬ |
৪ | কুউ পুলক | ১৩০ |
৫ | Aishik Rehman | ৫৫ |
৬ | মোঃ মালেক ইসলাম | ৫৩ |
৭ | Muhtasim Sinha | ৪১ |
৮ | Jawata Afnan Roza | ৩৭ |
৯ | Waraka Saki | ৩৭ |
১০ | Syrus257 | ৩৬ |
শীর্ষ দশ সর্বাধিক সম্পাদনাকারী ব্যবহারকারী
বাংলা উইকিপিডিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে প্রতিদিনকার সম্পাদনাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। মার্চ মাসে যেসব ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি সম্পাদনা করেছেন, তাদের তালিকা নিচে প্রদান করা হয়েছে।
ক্রম | ব্যবহারকারী | সম্পাদনা সংখ্যা |
---|---|---|
১ | কুউ পুলক | ৬,৫১৭ |
২ | Tuhin | ৪,০৫২ |
৩ | Md. T Mahtab | ২,৯০৭ |
৪ | Mehedi Abedin | ২,৫৭০ |
৫ | MediaWiki message delivery | ১,৯৬৪ |
৬ | Ahmed Reza Khan | ১,৯৩৮ |
৭ | তুষার কান্তি ষন্নিগ্রহী | ১,৬৮২ |
৮ | Nettime Sujata | ১,৪৬৭ |
৯ | Sbb1413 | ১,৪৩৭ |
১০ | RDasgupta2020 | ১,৪১৬ |
১১ | Salil Kumar Mukherjee | ১,২৯১ |
শীর্ষ দশ প্রশাসকদের অ্যাকশনের পরিসংখ্যান
উইকিপিডিয়ার প্রশাসকগণ সম্পাদনা তদারকি, ধ্বংসপ্রবণতা প্রতিরোধ এবং নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। মার্চ মাসেও প্রশাসকরা নিষ্ঠার সঙ্গে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। নিচে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের শীর্ষ দশ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। গত মাসের ন্যায় ছাকিব ভাই এই মাসে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ৮৩৩টি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন, যার মধ্যে অপসারণ, পুনর্বহাল, বাধাদান এবং ব্যবহারকারী অধিকার পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ইয়াহিয়া, শাকিল, রিয়াজ এবং আফতাব ভাইসহ অন্যান্য প্রশাসকরাও বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্রম | নাম | দল | মোট | অপ | স.অ. | ল.অ | পু | বাধা | বা.র | সু | অসু. | অধি. | এক. | আ | অ.ছা. | মডেল |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | MS Sakib | ![]() |
৮৩৩ | ৮১৩ | ০ | ০ | ২ | ১২ | ১ | ২ | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২ | Yahya | ![]() ![]() ![]() ![]() |
২৫৪ | ২২৪ | ২ | ০ | ২ | ২৩ | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৩ | MdsShakil | ![]() ![]() ![]() |
২০৮ | ১৭৫ | ১ | ০ | ০ | ২৪ | ০ | ৭ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৪ | RiazACU | ![]() ![]() |
১১৮ | ৫৬ | ৫০ | ০ | ০ | ১২ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৫ | আফতাবুজ্জামান | ![]() ![]() |
৭৭ | ৫৩ | ৬ | ০ | ১০ | ১ | ০ | ৭ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৬ | Aishik Rehman | ![]() |
৭৫ | ৭৩ | ০ | ০ | ১ | ০ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৭ | Zaheen | ![]() |
৩৯ | ৩৯ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৮ | Moheen | ![]() |
৩৪ | ৩৪ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
৯ | Suvray | ![]() |
৩৪ | ৩১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
১০ | RockyMasum | ![]() |
১১ | ১০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০২৫ সালের মার্চ মাস বিভিন্ন কারণে বাংলা উইকিপিডিয়া বেশ সচল ছিল, এটি একটি কার্যকর মাস ছিল। নতুন নিবন্ধ সংযোজন, বিদ্যমান নিবন্ধের মানোন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতি পরিচালিত হয়েছে। সম্পাদকেরা ধীরগতির মধ্যেও উইকিপিডিয়ার তথ্যসম্ভার সমৃদ্ধ করতে অব্যাহতভাবে কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে আরও কার্যকরী সম্পাদনা ও নতুন সম্পাদকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলা উইকিপিডিয়া আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
ঢাকা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায় গঠিত
ঢাকা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়কে আঞ্চলিক সম্প্রদায় হিসেবে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের অনুমোদন

উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটি ঢাকা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়কে তাদের কাঠামোর অধীনস্থ একটি আঞ্চলিক সম্প্রদায় হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ সদস্যের মধ্যে ৭ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন এবং ২ জন ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায় ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের একটি স্বীকৃত আঞ্চলিক সম্প্রদায় হিসেবে কাজ করবে এবং পরবর্তীতে নবায়নের সম্ভাবনাও রয়েছে। এই সম্প্রদায় ঢাকা অঞ্চলে উইকিমিডিয়া কার্যক্রম, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্প্রদায় সম্পৃক্ততা জোরদারে ভূমিকা রাখবে।
নবগঠিত এই সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া (উইকিমিডিয়া ব্যবহারকারী নাম: Yahya) প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে। তার সঙ্গে উপ-সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন শাকিল হোসেন (MdsShakil), মো. জাহিন ওয়াদুদ হক (Zahinwadud) এবং দেলোয়ার আকরাম (DeloarAkram)। বাংলাদেশে উইকিমিডিয়া আন্দোলনকে বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে। এমন আঞ্চলিক ইউনিট গঠনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের অবদানকারীদের অংশগ্রহণ, সমন্বয় এবং সহায়তা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশিত
দীর্ঘ একমাস যাবত চলমান অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ৯৪জন প্রতিযোগী এর ৫৬২টি নিবন্ধ নিয়ে কাজ করেছেন। যাদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন শোয়াইব আহম্মেদ। তিনি ২,২৪,৭৩৪টি শব্দ অনুবাদ করে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন।
বাংলা উইকিউক্তিতে উক্তি প্রতিযোগিতা ২০২৫ শুরু
বাংলা উইকিউক্তিতে ৭ এপ্রিল ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে বার্ষিক উক্তি প্রতিযোগিতা, যা চলবে ৭ মে ২০২৫ পর্যন্ত। প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো বাংলা উইকিউক্তিতে উক্তির পাতা সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং মানোন্নয়ন করা। বর্তমানে বাংলা উইকিউক্তিতে ১,৪৫৮টি উক্তির পাতা রয়েছে, যা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা যেকোনো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে উক্তির পাতা তৈরি করতে পারেন (নাটক, গান, কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ব্যতীত)। নতুনদের জন্য টিউটোরিয়াল ও নিবন্ধ তালিকা প্রদান করা হয়েছে, যা তাদের অংশগ্রহণে সহায়তা করবে।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় ২০,০০০ ফাইল আপলোড
গত ৭ই এপ্রিল, বাংলা উইকিপিডিয়া ফাইল আপলোডে একটি নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে। উইকিপিডিয়া:আপলোড এর মাধ্যমে ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত ২০ হাজারটির অধিক ফাইল আপলোড হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ বাংলা উইকিপিডিয়ায় কেবলই অ-মুক্ত চিত্র আপলোড করা যায়, যা কপিরাইট আইনের কারণে কমন্সে আপলোড করা সম্ভব নয়।
উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন আয়োজন
- গাজীপুর উইকিপিডিয়া মিটআপ, মার্চ ২০২৫: গত ২৮ মার্চ উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে গাজীপুর অঞ্চলের উইকিপিডিয়ানদের অংশগ্রহণে একটি অনলাইন মিটআপ অনুষ্ঠিত হয়। গুগল মিটে অনুষ্ঠিত এই মিটআপে প্রায় ছয়জন উইকিপিডিয়ান অংশ নেন। আলোচনায় চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সংগঠন কাঠামো নিয়ে মতবিনিময় হয়। নিয়মিত মাসিক মিটআপের পরিকল্পনা, দুই বছর মেয়াদে নেতৃত্ব নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। পাশাপাশি, সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
- সিলেট উইকিমিডিয়া মিটআপ, এপ্রিল ২০২৫: ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে সিলেট উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ের একটি মিটআপ অনুষ্ঠিত হয়। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই আড্ডায় প্রথম ঘণ্টায় চারজন এবং পরবর্তীতে আরও একজন উইকিপিডিয়ান অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বাংলা ও সিলেটি উইকিপিডিয়ার সমৃদ্ধি, নবগঠিত সিলেটি প্রকল্প, এবং অফলাইন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার উপায় নিয়ে মতবিনিময় হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কর্মশালার মাধ্যমে নতুন অবদানকারী তৈরি করার পরিকল্পনাও গৃহীত হয়।
- নিকট ভবিষ্যতের আয়োজনসমূহ: রাজশাহী উইকিমিডিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক ১৪ এপ্রিল ২০২৫ বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বরে আয়োজিত হবে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই আড্ডায় নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়, সম্প্রদায়ের কর্ম-পরিকল্পনা এবং উইকিমিডিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হবে। এটি একটি উন্মুক্ত আয়োজন, যেখানে স্থানীয় উইকিপিডিয়ানদের পাশাপাশি আগ্রহী নতুনরাও অংশ নিতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকা উইকিমিডিয়া সম্প্রদায় বাংলা উইকিপিডিয়া অফলাইন সম্পাদনাসভা, এপ্রিল ২০২৫ নামে আগামী ১৮ এপ্রিল ২০২৫ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ কার্যালয়ে একটি আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। এটি একটি দিনব্যাপী সম্পাদনা আড্ডা, যেখানে উইকিপিডিয়ানরা একত্র হয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার নীতিমালা ও পাতাসমূহের মানোন্নয়নে কাজ করবেন। এতে কোনো প্রশিক্ষণ বা বক্তৃতা থাকবে না, বরং দলবদ্ধভাবে সম্পাদনাই মূল উদ্দেশ্য। অংশগ্রহণকারীদের নিজস্ব ল্যাপটপ ও চার্জার নিয়ে আসতে হবে এবং ইন্টারনেট সংযোগ উপযোগী ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। এই আয়োজনে সর্বজনীন আচরণবিধি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উইকিমিডিয়া সংক্রান্ত প্রতিযোগিতার ভবিষ্যত
এআই ব্যবহার করে আজকাল প্রতিযোগীরা নিবন্ধ “অনুবাদ করে” জমা দিচ্ছে। কিন্তু এআই দ্বারা অনূদিত নিবন্ধ যে নির্ভুল নয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। অনেক প্রতিযোগী এআই দিয়ে অনুবাদ করে পর্যাপ্ত সম্পাদনা না করে এমনকি অনূদিত পাতা না পড়ে জমা করে দিচ্ছে। এতে করে পর্যালোচকদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
চলমান সম্ভাব্য সমস্যা
সময়ের সাথে সাথে উইকিপিডিয়া ক্রমশঃ গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক পরিচিত হয়ে উঠছে। আর তাই অনেক মানুষ উইকিপিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। নতুনদের জন্য উইকিপিডিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক বলা যেতে পারে প্রতিযোগিতাকে। এর কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুরস্কার জেতার সুযোগ থাকে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে টাকা অধিক গুরুত্ব বহন করে বিধায় মানুষ আয়ের যেকোন ক্ষুদ্র সুযোগকেও হাতছাড়া করতে চাইছেনা এবং এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। পুরস্কারের প্রতি মানুষদের এই প্রবণতা যত বৃদ্ধি পাবে, উইকিপিডিয়ার প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে প্রতিযোগিতায় জমাদানকৃত নিবন্ধের সংখ্যা। এতে করে পর্যালোচকদের উপর চাপ বাড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে পর্যালোচকদের চাপ কমানোর ভালো উপায় হচ্ছে প্রতিযোগিতায় নতুন পর্যালোচক যুক্ত করা। কিন্তু এখানে কিছু বিষয় আছে, প্রতিযোগিতার পর্যালোচকদের খুব দক্ষ হতে হয় আর তাই যেকোনো ব্যবহারকারীকে পর্যালোচক হিসেবে গ্রহণ করা যায়না। পর্যালোচক হওয়াও এক কথায় একটি লোভনীয় সুযোগ। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে পর্যালোচনার দায়িত্ব বাস্তব জীবনের উর্ধ্বে নয়। বিভিন্ন সময় নানা কাজের ফলে নিয়মিত পর্যালোচনায় সমান মনযোগ দেওয়া সম্ভব হয়না। এখানে আরেকটি নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আগে অনেক প্রতিযোগী গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করে নিবন্ধ জমা দিত, এসব সমস্যাপূর্ণ প্রাঞ্জলতাগুণ বহির্ভূত নিবন্ধগুলো পর্যালোচনা করতেই আসলে পর্যালোচকদের মূল্যবান সময় ও শ্রম ব্যয় হয়। এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে এআই সমস্যা। এআই ব্যবহার করে আজকাল প্রতিযোগীরা নিবন্ধ “অনুবাদ করে” জমা দিচ্ছে। কিন্তু এআই দ্বারা অনূদিত নিবন্ধ যে নির্ভুল নয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। অনেক প্রতিযোগী এআই দিয়ে অনুবাদ করে পর্যাপ্ত সম্পাদনা না করে এমনকি অনূদিত পাতা না পড়ে জমা করে দিচ্ছে। এতে করে পর্যালোচকদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
আগে অনলাইন সফটওয়্যার বা সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিবন্ধ অনুবাদ করে জমা দিতে যে সময় লাগত, তার চেয়ে কম সময় লাগে এআই ব্যবহার করে অনুবাদ করতে। এআই নিবন্ধ অনুবাদের সমস্যা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারলেও সম্পূর্ণভাবে কমাতে সক্ষম হয়নি। আপনি আগে একটি নিবন্ধ বিষয়বস্তু অনুবাদ সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে সময়ে অনুবাদ করতে পারতেন, এআই সেই সময়ে অন্তত ৩টি নিবন্ধ অনুবাদ করতে পারবে। প্রসঙ্গের খাতিরে কিছু তথ্য দেখানো প্রয়োজন, এই বছরের অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতায় ৯৪ জন প্রতিযোগী ৫৭৯ টি নিবন্ধ অনুবাদ করে জমা দিয়েছেন। আগের বছর ৯৩ জন প্রতিযোগী মোট ৫৫৫ নিবন্ধ জমা দিয়েছিলেন। প্রতিযোগীর সংখ্যা প্রায় এক থাকার পরেও অনূদিত নিবন্ধের সংখ্যা বাড়ছে। সুতরাং প্রতিযোগিতায় চ্যাটজিপিটির প্রভাব বাড়ছে। এবারে ১০ জন পর্যালোচক কাজ করছেন, অর্থাৎ গড়ে প্রায় ৫৭টি নিবন্ধ পর্যালোচনা করার জন্য জনপ্রতি পেয়েছেন। কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়, সব নিবন্ধের শব্দ সংখ্যা এক নয়। কোন নিবন্ধ বড় হতে পারে, আবার কোন নিবন্ধ ছোট হতে পারে। প্রযুক্তিগত কারণে যদি পর্যালোচকদের প্রতি চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে সমাধানও প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে হবে।
প্রস্তাবিত সমাধান
অনেকেই নিবন্ধ গুগল ট্রান্সলেট, বিষয়বস্তু অনুবাদ সরঞ্জাম ও এআই ব্যবহার করে অনুবাদ করছেন। কিন্তু সবাই অনুবাদ করার পর মনযোগ দিয়ে পড়ে সংশোধন করেন না। আর তাই পর্যালোচকদের জন্য এমন কোন পর্যালোচনা টুল বানানো যেতে পারে যা আমাদের দেখাবে নিবন্ধের কতটুকু অংশ প্রতিযোগী পর্যাপ্ত সংশোধন না করে জমা দিয়েছেন। যেমন ধরুন টুলে একজন নিবন্ধের নাম দিলো, এরপর সেই টুল নিবন্ধটি এআই, বিষয়বস্তু অনুবাদ ও গুগল ট্রান্সলেটসহ বিভিন্ন সেবার সাহায্য নিয়ে পৃথকভাবে অনুবাদ করে তারপর সেগুলো প্রতিযোগীর অনূদিত নিবন্ধের সাথে মিলিয়ে দেখবে। এতে করে পর্যালোচনা করার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে হবেনা। এছাড়া টুলটিতে আরও কিছু উপযোগী ফিচার থাকতে পারে, যেমন ইংরেজি নিবন্ধটির বাক্য সংখ্যা গণনা করে টুল অনুবাদ করা পাতার বাক্য সংখ্যার সাথে মিলিয়ে দেখবে। যেসব প্রতিযোগী অনুবাদের সময় ইংরেজি পাতার ন্যায় অনুচ্ছেদের গঠন হুবুহু রেখে অনুবাদ করেন তাদের কথা ভেবে সাথে অনুচ্ছেদ গণনা করে তুলনার ফিচার রাখা যেতে পারে। এছাড়া টুল ইংরেজি পাতার ছবি ও সূত্র সংখ্যা অনূদিত পাতার ছবি ও সূত্রের সংখ্যার সাথে মিলিয়ে দেখবে। এমন সুবিধা পর্যালোকদের জন্য রাখা গেলে পর্যালোচনায় গতি আসবে এবং দ্রুত পর্যালোচনা করা সম্ভব হওয়ায় যেমন প্রতিযোগিতার কাজে গতি ফিরবে তেমনি প্রতিযোগীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে অনুবাদের সময় অনেক লেখা বাদ পড়ে যাচ্ছে। একটু মনযোগী না হলে পর্যালোচক এরকম সমস্যা যুক্ত নিবন্ধ ভুলে গ্রহণ করে নিতে পারেন। বাদ পড়া লেখা শনাক্ত করতে পর্যালোচকদের সময় বেশি লাগছে। এর জন্য আমরা এমন একটি টুল আনতে পারি যেটি ইউনিট বা ব্লক সিস্টেমে বাদ পড়া লেখা শনাক্ত করতে পারবে। এমনকি অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় বাক্য যুক্ত লেখাও এর সাহায্যে শনাক্ত করা যাবে। আমার প্রস্তাব করা এই বিশেষ টুল নিবন্ধের প্রতিটি অনুচ্ছেদকে একটি “ব্লক” বা “ইউনিট” হিসেবে গণ্য করবে। গণ্য করার সময় টুল ব্লকে কতগুলো বাক্য, শব্দ আর সূত্র আছে এবং সূত্রগুলো কত সংখ্যক শব্দ ও বাক্য পরপর অর্ডার হিসেবে সাজানো আছে সেগুলো শনাক্ত করবে। এভাবে টুল এই অর্ডার অনুসারে প্রতিটি ব্লককে শনাক্ত করে ডিফারেনশিয়েট করবে, এতে করে প্রতিটি ব্লককে আলাদা পরিচয় বা আইডেন্টিটি দিবে টুল। এরপর ইংরেজি পাতার ব্লকগুলোর সাথে বাংলায় অনূদিত পাতার ব্লকগুলোকে তুলনা করে টুল সহজেই বলে দিতে পারবে কোন কোন ব্লক অনুবাদ করা পাতায় অনুপস্থিত। এতে করে পর্যালোচকদের মূল্যবান সময় বাঁচবে। এমন একটু টুল শুধুমাত্র অনুচ্ছেদকে ব্লক হিসেবে গণ্য করবেনা, ফলে টেবিল ও অন্যান্য জিনিসগুলো বিবেচিত হবে।
অনুবাদে অনেকগুলো বড় ত্রুটির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাক্যগঠন। ভাষাগত জ্ঞানের অভাবে এবং সংশোধন ব্যতীত অনলাইন সেবার সাহায্যে অনূদিত নিবন্ধের বাক্যগঠনে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এর মূল কারণ – বিভিন্ন অনলাইন অনুবাদক টুল ও এআই অনুবাদের সময় অনেক ক্ষেত্রে বাংলা বাক্যগঠনকে গুরুত্ব দেয় না, ফলে অনুবাদে ইংরেজি বাক্যগঠনের ছাপ দেখা যায়। এই সমস্যা চিহ্নিত করতে অনেক সময় চলে যায়। এই সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে আমরা একটি টুলের কথা ভাবতে পারি। এই টুল ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষার বাক্যগঠনের সাথে পরিচিত হবে এবং ইংরেজি বাক্য সরাসরি বাংলায় অনুবাদের পর যেরকম লাগতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা রাখবে। এর ফলে এই টুলের সাহায্যে সহজে অনূদিত পাতায় দেখা যাবে যে কোন কোন বাক্যগুলো ইংরেজি বাক্যগঠন অনুসরণ করছে। যেহেতু ইংরেজি বাক্যগঠন যুক্ত বাংলা বাক্য অদ্ভুত ও যান্ত্রিক লাগে সেহেতু এরকম একটি টুল প্রচুর সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে দিবে।
পর্যালোচনায় একটি বড় সমস্যা হচ্ছে কিছু প্রতিযোগী তথ্যছক ও টেমপ্লেট ভালো করে অনুবাদ করেনা। বিষয়শ্রেণী যুক্ত করেনা। আমার মনে হয় এগুলোর জন্য টুলের প্রয়োজন নেই, পর্যালোচকরাই এসব ছোটখাটো ব্যাপার দেখতে পারবে। ভুল বানানের জন্য উইকিপিডিয়ার জন্য আলাদা টুল বানানো যেতে পারে। বাকি থাকলো অন্যান্য ইস্যু, যেহেতু বড় বড় সমস্যাগুলো টুলের মাধ্যমে সমাধান করা যাচ্ছে সেহেতু একজন পর্যালোচক আরামে নিবন্ধ পড়ে দেখে নিতে পারবে যে অনুবাদে প্রাঞ্জলতা আছে কিনা, ভুল তথ্য আছে কিনা – এসব বিষয়ে আমাদের অধিক সময় ব্যয় করা উচিত। কিন্তু যেহেতু অন্যান্য বড় সমস্যাগুলোর জন্য পর্যালোচকদের বড় সময় ব্যয় করতে হয় তাই এসব সমস্যাগুলো ভালো করে দেখার সময় হয়ে উঠেনা। টুলগুলো চালু করা গেলে অনূদিত নিবন্ধের এসব ব্যাপারে ভালো করে নজর দেওয়া যাবে।