বিষয়বস্তুতে চলুন

ই-গভর্নমেন্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ই-গভর্নমেন্ট (ইলেকট্রনিক সরকার নামেও পরিচিত) হলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেমন কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট, নাগরিক এবং দেশের অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছে জনসেবা দ্রুতভাবে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া।[][] ই-গভর্নমেন্ট নাগরিকদের সরকারে সরাসরি ও সুবিধাজনক প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেয় এবং সরকারকে নাগরিকদের কাছে সরাসরি সেবা প্রদানের সুযোগ করে দেয়।[][]

ই-গভর্নমেন্টে বিভিন্ন স্তরের এবং অংশীদারদের মধ্যে ডিজিটাল যোগাযোগ অন্তর্ভুক্ত থাকে: নাগরিক ও সরকার (C2G), সরকারি সংস্থা ও সরকার (G2G), সরকার ও নাগরিক (G2C), সরকার ও কর্মচারী (G2E), এবং সরকার ও বেসরকারি খাত/ব্যবসা (G2B)।[] এই যোগাযোগে নাগরিকরা শহর, প্রদেশ/রাজ্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এটি শাসনে নাগরিক অংশগ্রহণকে সহজ করে, ICT যেমন কম্পিউটার ও ওয়েবসাইট এবং ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন (BPR) ব্যবহার করে।[]

অন্যান্য সংজ্ঞা প্রযুক্তিকে কেবল একটি যন্ত্র হিসেবে দেখে এবং ই-গভর্নমেন্টকে সরকারী প্রশাসনে পরিবর্তনের সুবিধা বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করে। বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ মাউরো ডি. রিয়োস তার গবেষণায় বলেন, "ডিজিটাল সরকার হলো জনসাধারণের কাজকর্মের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার একটি নতুন পদ্ধতি, যা প্রশাসন ও সংগঠন কাঠামোর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রবর্তন করে এবং প্রদত্ত পরিষেবায় মান যোগ করে, সবই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।"[]

পরিভাষা

[সম্পাদনা]

ই-গভর্নমেন্টকে ই-গভ, ইলেকট্রনিক সরকার, ইন্টারনেট গভর্নেন্স, ডিজিটাল সরকার, অনলাইন সরকার, অথবা কানেক্টেড সরকার হিসেবেও অভিহিত করা হয়।[] ২০১৪ সালের মধ্যে, OECD এখনও "ডিজিটাল সরকার" শব্দটি ব্যবহার করে এবং এটি ই-গভর্নমেন্ট থেকে আলাদা বলে সুপারিশ করেছে।[] কিছু সরকার আধুনিক প্রযুক্তি যেমন বিগ ডেটা, স্বয়ংক্রিয়তা বা প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইটিকস ব্যবহার করে পরিষেবার ক্ষেত্রে "ডিজিটাল সরকার" শব্দটি ব্যবহার শুরু করেছে।[১০]

ই-গভ কৌশল (বা ডিজিটাল সরকার) সংজ্ঞা অনুযায়ী হলো "নাগরিকদের কাছে সরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্যবহার।"[১১] "ইলেকট্রনিক সরকার" (ই-গভর্নমেন্ট) হলো তথ্য প্রযুক্তি (IT), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT), এবং অন্যান্য ওয়েবভিত্তিক টেলিকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনসেবা কার্যক্রমের দক্ষতা ও কার্যকারিতা উন্নত করার প্রক্রিয়া।[] ই-গভর্নমেন্ট জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়নে অংশীদারদের অবদান বাড়ায় এবং শাসন প্রক্রিয়াকে গভীরতর করে।

ইলেকট্রনিক সরকার ব্যবস্থায়, সরকারি কার্যক্রম ওয়েব-ভিত্তিক সেবার মাধ্যমে সমর্থিত হয়। এটি বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে নাগরিকদের যোগাযোগ সহজ করে।[১২]

রূপান্তরমূলক সরকার

[সম্পাদনা]

রূপান্তরমূলক সরকার বা রূপান্তরমূলক ই-গভর্নমেন্ট হলো কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারের কাজের ধরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।[১৩] এটি প্রায়ই "ওয়ান-স্টপ-শপ" সুবিধা এবং বিভাগীয় সহযোগিতা উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। রূপান্তরমূলক সরকারের চারটি স্তর:

  1. উপস্থিতি: ICT ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য প্রদান।
  2. যোগাযোগ: সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে অনলাইন ইন্টারঅ্যাকশন।
  3. লেনদেন: অনলাইনে কর, লাইসেন্স ইত্যাদি কার্যক্রম।
  4. রূপান্তর: সরকারি কার্যক্রম ও সংস্থার পুনর্গঠন।

গভর্নমেন্ট ২.০

[সম্পাদনা]

গভর্নমেন্ট ২.০ বা Gov 2.0 হলো এমন নীতি যা সহযোগী প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সরঞ্জাম ব্যবহার করে সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বাড়ায়।[১৪] এটি নাগরিক, সরকার ও উদ্ভাবনী কোম্পানির মধ্যে অংশগ্রহণ বাড়ায় এবং ওপেন-সোর্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও উইজেট তৈরি সম্ভব করে।

ই-গভর্নেন্স

[সম্পাদনা]

ই-গভর্নেন্স হলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকদের জন্য সরকারী সেবা সহজতর করা, যেখানে তারা বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকশন যেমন GUI, IM, অডিও/ভিডিও উপস্থাপনাগুলি ব্যবহার করতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো অংশীদারদের জন্য মূল্য বৃদ্ধি এবং সেবা প্রদানের কার্যক্রমে উন্নতি।[১৫]

নন-ইন্টারনেট ই-গভর্নমেন্ট

[সম্পাদনা]

ই-গভর্নমেন্ট সবসময় অনলাইন সরকার নয়; টেলিফোন, ফ্যাক্স, PDA, SMS, MMS, ব্লুটুথ, সিসিটিভি, RFID, বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন, স্মার্ট কার্ড, ইত্যাদি প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

"ইলেকট্রনিক সরকার" শব্দটি প্রথমবার ব্যবহৃত হয় ১৯৯২ সালে ইলেকট্রনিক ডেমোক্রেসির সঙ্গে।[১৬] পরবর্তী কয়েক দশকে, বিশ্বব্যাপী সরকার ICT-তে বিনিয়োগ করেছে, তবে প্রত্যাশিত সুবিধা সবসময় পুরোপুরি অর্জিত হয়নি।

রূপান্তরমূলক সরকারের ধারণা প্রযুক্তিগত উন্নতির বাইরে সাংস্কৃতিক ও সংস্থাগত বাধাগুলির মোকাবিলার ওপর জোর দেয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Adnan, Mohammed; Ghazali, Masitah; Othman, Nur Zuraifah Syazrah (২০২২)। "E-participation within the context of e-government initiatives: A comprehensive systematic review"Telematics and Informatics Reports 100015। ডিওআই:10.1016/j.teler.2022.100015
  2. Sundberg, Leif (২০১৯)। "Electronic government: Towards e-democracy or democracy at risk?"। Safety Science১১৮: ২২–৩২। ডিওআই:10.1016/j.ssci.2019.04.030
  3. Manoharan, Aroon P.; Melitski, James; Holzer, Marc (২০ জানুয়ারি ২০২২)। "Digital Governance: An Assessment of Performance and Best Practices"Public Organization Review (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ (1): ২৬৫–২৮৩। ডিওআই:10.1007/s11115-021-00584-8আইএসএসএন 1573-7098পিএমসি 8769785
  4. Caves, R. W. (২০০৪)। Encyclopedia of the City। Routledge। পৃ. ১৮০।
  5. 1 2 Jeong Chun Hai @Ibrahim. (2007). Fundamental of Development Administration. Selangor: Scholar Press. আইএসবিএন ৯৭৮-৯৬৭-৫-০৪৫০৮-০
  6. Brabham, Daren C.; Guth, Kristen L. (১ আগস্ট ২০১৭)। "The Deliberative Politics of the Consultative Layer: Participation Hopes and Communication as Design Values of Civic Tech Founders"। Journal of Communication (ইংরেজি ভাষায়)। ৬৭ (4): ৪৪৫–৪৭৫। ডিওআই:10.1111/jcom.12316আইএসএসএন 1460-2466
  7. "En busca de una definición de Gobierno Electrónico"novagob.org (স্পেনীয় ভাষায়)। ২২ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৮
  8. Lynn, Theo; Rosati, Pierangelo; Conway, Edel; Curran, Declan (২০২২), Lynn, Theo (সম্পাদক), "Digital Public Services", Digital Towns: Accelerating and Measuring the Digital Transformation of Rural Societies and Economies (ইংরেজি ভাষায়), Cham: Springer International Publishing, পৃ. ৪৯–৬৮, ডিওআই:10.1007/978-3-030-91247-5_3, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-০৩০-৯১২৪৭-৫
  9. Public Governance; Territorial Development Directorate। "Recommendation of the Council on Digital Government Strategies 2014, page 6"। OECD। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৬
  10. "Tech and data: can 'digital government' be radically smarter?"Apolitical.co (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৮
  11. United Nations Department of Economic and Social Affairs। "United Nations E-Government Survey 2014" (পিডিএফ)। UN। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  12. Jain Palvia, Shailendra। "E-Government and E-Governance: Definitions/Domain" (পিডিএফ)csi-sigegov.org। Computer Society of India। ৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৬
  13. Lips, A. M. B.; Flak, L. S.; Gil-Garcia, J. R. (জানুয়ারি ২০১৬)। "Introduction to the Transformational Government: Governance, Organization, and Management Minitrack"2016 49th Hawaii International Conference on System Sciences (HICSS)। পৃ. ৩০১০। ডিওআই:10.1109/HICSS.2016.377এইচডিএল:10125/41509আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৬৯৫-৫৬৭০-৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
  14. O'Reilly, Tim। "Gov 2.0: It's All About The Platform"TechCrunch। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩
  15. Kaylor, Charles; Deshazo, Randy; Van Eck, David (২০০১)। "Gauging e-government: A report on implementing services among American cities"Government Information Quarterly১৮ (4): ২৯৩–৩০৭। ডিওআই:10.1016/S0740-624X(01)00089-2
  16. Dworetzky, Tom (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)। "Electronic democracy"Omni (English ভাষায়)। ১৪ (5): ২৭–২৮। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০২১{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)