ইসরায়েলে ইসলাম

ইসরাইলে ইসলাম ইহুদি ধর্মের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী মুসলিমরা ইসরায়েলের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮.১%। এই মুসলিমদের অধিকাংশই ইসরায়েলের আরব নাগরিক, যারা দেশটির বৃহত্তম জাতিগত সংখ্যালঘু। তবে ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য কিছু অনারব মুসলিম সম্প্রদায়ও রয়েছে; যেমন চেরকেসরা। ইসরায়েলের ৯৯% এর বেশি মুসলমান সুন্নি এবং বাকি একটি ক্ষুদ্র অংশ আহমদিয়া জামাতের অনুসারী।
যদিও শিয়ারা ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা, তবে ইসরায়েল বা ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে শিয়া মুসলিমদের উপস্থিতির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল সরকার পশ্চিম তীরকে "জুদিয়া ও সামারিয়া এলাকা" নামে পরিচালনা করে। পুরো অধিকৃত ফিলিস্তিনে মাত্র সাতটি শিয়া গ্রাম ছিল, যা বর্তমান ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত বরাবর অবস্থিত ছিল। তবে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় এসব গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে।। [১]
২০১৫ সালে ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট ইসরায়েলি মুসলমানদের ধর্মীয়তার উপর একটি জরিপ পরিচালনা করে, যেখানে ৪৭% ঐতিহ্যবাহী মুসলিম, ৩২% ধার্মিক, ১৭% সাংস্কৃতিক মুসলিম এবং ৩% মোটামুটি ধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। [২] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মুসলিম সমাজে বিবাহের গড় বয়স বেড়েছে এবং মুসলিম মহিলারা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেশি ডিগ্রিধারী। [৩]
পটভূমি
[সম্পাদনা]উসমানীয় সাম্রাজ্য
[সম্পাদনা]
উসমানীয় শাসনামলে ফিলিস্তিনে বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল এবং বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ছিল; প্রধানত খ্রিস্টান ও ইহুদিরা। এই অমুসলিম সম্প্রদায়ের অনেককে মিল্লতের (জাতি/ধর্ম) মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। স্বীকৃত মিল্লত সম্প্রদায়গুলিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের প্রচুর পরিমাণে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল; যার মধ্যে ছিল: তাদের পবিত্র স্থানগুলির পরিচালনা, পুরোহিতদের নিয়োগ ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যক্তিগত মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ। পবিত্র স্থানগুলির মালিকানা নিয়ে বিরোধ একটি স্থিতাবস্থা নীতি দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। উসমানীয় বিজয়ের সময় পূর্বে যে সম্প্রদায়ই পবিত্র স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করত, তাদের এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অধিকার ছিল।ইসলাম ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের সরকারী ধর্ম এবং সুলতান ছিলেন খলিফা ও আমিরুল মুমিনিন। তবে মুসলিম সম্প্রদায় স্বীকৃত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মত কোনো স্বায়ত্তশাসিত অবস্থান ভোগ করত না; বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের জন্য এই ধরনের মর্যাদার কোনও প্রয়োজনও ছিল না। উসমানীয়রা সাধারণত হানাফি ইসলামী আইনশাস্ত্র ( মাযহাব) অনুসরণ করত; কিন্তু সাম্রাজ্যে অন্যান্য মাযহাবও স্বীকৃত ও প্রচলিত ছিল। মুসলিম সংখ্যালঘু; যেমন আলেভি, ইসনা আশারিয়া শিয়া, আলবীয় ও দ্রুজদের কোন সরকারী স্বীকৃতি ছিল না এবং মাঝে মাঝে বিদ্রোহের দায়ে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হত।
ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ (১৯২২-৪৮ খ্রিস্টাব্দ) মিল্লত পদ্ধতি ও স্থিতাবস্থা নীতি উভয়ই বজায় রেখেছিল এবং পূর্বে উসমানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত সকল সম্প্রদায় ব্রিটিশদের দ্বারা স্বীকৃত ছিল। যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অ্যাংলিকীয় খ্রিস্টান ছিল, তাই ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনে ইসলামের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছিল। ইসলাম তখন দেশের প্রধান ধর্ম ছিল না; যদিও তা তখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিমদের মিল্লত সম্প্রদায়ের মর্যাদা দেয়নি; তবে তারা একটি উচ্চতর মুসলিম পরিষদ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা মিল্লত ধর্মের মতই মুসলিমদের জন্য স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করেছিল। ব্রিটিশরা জেরুজালেমের প্রধান মুফতির পদও চালু করেছিল এবং হাজি আমিন আল-হুসেইনিকে (১৮৯৫-১৯৭৪) এই পদে নিযুক্ত করেছিল।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধকালীন ইস্রায়েলে বসবাসকারী আরব ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি তাদের শহর ও গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় অথবা বিতাড়িত হয়, যার মধ্যে মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অভিজাতদের একটি বড় অংশও ছিল। সর্বোচ্চ মুসলিম পরিষদের একমাত্র সদস্য তাহির আত-তাবারি ফিলিস্তিনের ইসরায়েল-অধিকৃত অংশে রয়ে যান। পরে ইসরায়েলি সরকার সর্বোচ্চ মুসলিম পরিষদের অনুরূপ একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান বা প্রধান মুফতির অনুরূপ পদবীর পুনরুত্থান নিষিদ্ধ করে এবং এর ফলে কার্যকরভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা হয়।
১৯৫৬ সালে ইসরায়েল দ্রুজদের একটি স্বাধীন ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তারপর ১৯৬৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২২ প্যালেস্টাইন অর্ডার-ইন-কাউন্সিলের অর্থের অধীনে একটি মিল্লত সম্প্রদায় হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়। একইভাবে ইভানজেলিক্যাল এপিস্কোপাল চার্চ ও বাহাই ধর্ম যথাক্রমে ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালে মিল্লত সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
তবে, ইসরায়েল সরকার ইসলামকে এমন স্বীকৃতি দেয়নি। যদিও শরিয়া আদালতগুলিকে ইসরায়েলি বিচারব্যবস্থায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল; তবুও মুসলিম সম্প্রদায়কে কখনও মিল্লত সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

এর পরিবর্তে মুসলিমদের বিষয়াবলী মূলত ইসরায়েলি সরকার দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত ছিল। তবে ইসরায়েলে মুসলিম শরিয়া আদালতগুলি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে এবং কর্তৃপক্ষ সাধারণত এর দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে না। ১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী কর্তৃক কাজিদের নিযুক্ত করা হত। এর পর ১৯৬১ সালে সরকার অবশেষে কাজী আইন পাস করে, যার ফলে নয় সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়, যার মধ্যে পাঁচ সদস্য ধর্মের দিক থেকে মুসলিম হওয়ার শর্ত ছিল।
১৯৬১ সালের কাজি আইন অনুসারে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি ধর্মমন্ত্রীর (পরবর্তীতে বিচারমন্ত্রী) সুপারিশে কাজিদের নিয়োগ করতেন। প্রার্থীকে কাজী নিয়োগ কমিটি দ্বারা নির্বাচিত করা হয়েছিল। কমিটিতে মোট নয়জন সদস্য ছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন (পরে ছয়জন) মুসলিম হওয়ার শর্ত করা হয়েছিল। কিন্তু স্বীকৃত মিল্লত সম্প্রদায়ের বিপরীতে মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলিম সদস্যদের নিযুক্ত করা হত না। নয়জন সদস্যের মধ্যে সাতজন (ও ছয়জন মুসলিম সদস্যের মধ্যে চারজন) সরকার, নেসেত বা ইসরায়েলী বার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিল, যারা ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদিদের দ্বারা প্রভাবিত। বাকি দুইজন মুসলিম সদস্য ছিলেন শরিয়া আপিল আদালতের সভাপতি এবং ইসরায়েলী কাজিদের সংগঠন কর্তৃক নির্বাচিত দ্বিতীয় একজন ভারপ্রাপ্ত কাজী। [৪] [৫]
১৯৪৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে নিযুক্ত মোট ১৪ জন কাজির মধ্যে এগারো জনই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী অথবা কর্মচারীদের পুত্র ছিলেন। মাত্র দুজন আইনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছিলেন এবং মাত্র দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। [৬]
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০০৯ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে ইসলামকে ( ও প্রধান প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়গুলিকে) একটি স্বীকৃত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মর্যাদা অস্বীকার করার জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করা হয়েছে। [৭]
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]

জাতিসত্তা ও স্থান
[সম্পাদনা]২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি জনসংখ্যার ১৮.১% মুসলিম। ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সুন্নি আরব [৮] এবং আহমদিয়ারা হল সংখ্যালঘু। [৯] ইসরায়েলের বেদুইনরাও আরব মুসলিম; কিছু বেদুইন গোষ্ঠী ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যোগদানও করেছে। ছোট সার্কাসীয় সম্প্রদায়টি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর ককেশাস থেকে উৎখাত সুন্নি মুসলিমদের নিয়ে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও কুর্দি, রোমানীয় ও তুর্কি মুসলমানদের সংখ্যাও কম।
ইসরায়েলের রাহাতে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাসিন্দা ছিল (৭১,৩০০), যেখানে উম্মুল ফাহম ও নাজারেতে যথাক্রমে প্রায় ৫৬,০০০ এবং ৫৫,৬০০ বাসিন্দা ছিল। [১০] সুলাস এলাকার এগারোটি শহরে প্রায় ২,৫০,০০০ আরব মুসলিম বাস করেন।
২০২০ সালে আরব মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৩৫.২% উত্তর জেলায়, ২১.৯% জেরুজালেম জেলায়, ১৭.১% কেন্দ্রীয় জেলায়, ১৩.৭% হাইফা জেলায়, ১০.৯% দক্ষিণ জেলায় এবং ১.২% তেল আবিব জেলায় বাস করত। [১০] ইসরায়েলি মুসলিম জনসংখ্যার তরুণদের প্রায় ৩৩.৪% ১৪ বছর বা তার কম বয়সী, যেখানে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হার ৪.৩% এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তুলনায় ইস্রায়েলি মুসলিমদের প্রজনন হার সর্বোচ্চ (৩.১৬) ছিল। [১০]
২০২১ সালের শেষে ইসরায়েলের মুসলিম জনসংখ্যা দেশটির মোট বাসিন্দার ১৮.১% বলে অনুমান করা হয়েছিল, যা প্রায় ১.৭০৭ মিলিয়ন। [১১] ২০২১ সালে ইসরায়েলে মুসলিমদের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ২.১%, এবং মোট উর্বরতা হার ২০১৯ সালে প্রতিজন মহিলার হার ৩.১৬ জন্ম থেকে কমে ২০২০ সালে প্রতি মহিলার হার ২.৯৯ জন্মে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে ইসরায়েলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় শিক্ষায় ৩,৯৫,৩৪৮ জন মুসলিম শিক্ষার্থী ছিল এবং ইসরায়েলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (২৮%) মুসলিম পরিবারের মধ্যে ছয়জন বা তার থেকে বেশি লোক বাস করে। [১২]
আহমদিয়া
[সম্পাদনা]ইসরায়েলের হাইফা শহর আহমদিয়া আন্দোলনের মধ্যপ্রাচ্যের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। ইহুদি ও আহমদী আরবদের মিশ্র পাড়া কাবাবির দেশের মধ্যে এই ধরণের একমাত্র পাড়া। [১৩] [১৪] কাবাবিরে প্রায় ২,২০০ আহমদী রয়েছে। [১৫]
সুন্নি
[সম্পাদনা]সুন্নি ইসলাম ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ইসলামি দল। বেশিরভাগ ইসরায়েলি মুসলমান শামের অধিকাংশ সুন্নির মত (শাফি'ঈ) একই চিন্তাভাবনা পোষণ করে; যদিও সেখানে হানাফিদের উপস্থিতিও রয়েছে। দেশের বেশ কিছু অংশে সুফিদের শক্তিশালী সম্প্রদায় রয়েছে এবং সুফিবাদ অমুসলিম ইসরায়েলিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
শিয়া
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ ফিলিস্তিনে লেবাননের সীমান্তের কাছে উত্তর ইসরায়েলে সাতটি শিয়া ইমামিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম ছিল। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় এগুলি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল, যেখানে এই সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা শরণার্থী হিসেবে লেবাননে পালিয়ে গিয়েছিল। এই কারণে ইমামিয়া শিয়ারা ইসরায়েলে খুবই ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী।
বৈষম্য
[সম্পাদনা]২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ৭৯% আরব এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মুসলিমদের প্রতি অনেক বৈষম্য রয়েছে। এই জরিপে অংশ নেওয়া মুসলিমদের মধ্যে ৩৮% বলেন যে, তাঁরা গত ১২ মাসে অন্তত একবার বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো: নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ (১৭%), ভ্রমণ থেকে বাধা দেওয়া (১৫%), শারীরিক হুমকি বা হামলার শিকার হওয়া (১৫%) ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সম্পত্তির ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া (১৩%)। তবে জরিপে ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, প্রায় ২৬% আরব মুসলিম বলেন, গত এক বছরে কোনো না কোনো ইহুদি ব্যক্তি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সহানুভূতি বা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।[১৬]
ইসরায়েলের ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা ও একই সঙ্গে আরব সংখ্যালঘুদের স্থান দেওয়া–এই বিষয়ে ইহুদি জনমত বিভক্ত। জরিপে দেখা গেছে যে, প্রায় অর্ধেক (৪৮%) ইস্রায়েলি ইহুদি মনে করেন, আরবদের ইসরায়েল থেকে উৎখাত বা স্থানান্তর করা উচিত। এমনকি প্রায় প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক ইহুদির একজন এই বিষয়ে দৃঢ়ভাবে একমত পোষণ করেছেন।[১৬]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]ইসরায়েলের হাইফা জেলায় উম্মুল ফাহাম নামী শহরে একটি ইসলামি কলেজ (মাদ্রাসা) রয়েছে, যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার সুযোগ দিয়ে থাকে। পিউ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলে মুসলিমদের মধ্যে মাত্র ১৫% ব্যক্তির কলেজ ডিগ্রি আছে, যা ইহুদিদের (৩৩%) তুলনায় অনেক কম; তবে এটি খ্রিস্টান (১৮%) ও দ্রুজদের (২০%) কাছাকাছি। মুসলিমদের মধ্যে ৯৩% মনে করেন, তাঁদের সন্তানদের উন্নতমানের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি ৫৩% মুসলিম মনে করেন, ধর্ম ও বিজ্ঞান একে অপরের সাথে বিরোধপূর্ণ, যা ইহুদিদের মধ্যে ৫৮%। বিবর্তন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়, প্রায় ৩৮% মুসলিম বিশ্বাস করেন, মানুষসহ জীবজগত বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। এ সংখ্যাটি খ্রিস্টান (৩৭%) ও দ্রুজদের (২৪%) তুলনায় বেশি, তবে ইহুদিদের তুলনায় (৫৩%) কম।[১৭]
২০২০ সালের ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের ৬০.৩% মুসলিম ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সনদ (বাগরুত) লাভে সক্ষম হয়, যা খ্রিস্টান (৮৩.৬%), ইহুদি (৮০.২%) ও দ্রুজদের (৭৯.৯%) তুলনায় কম।[১৮] একই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র ১০% মুসলিমের কলেজ ডিগ্রি রয়েছে, যা খ্রিস্টানদের (৭০.৯%)[১৯] তুলনায় অনেক কম; তবে তা দ্রুজদের (১৫.৩%) কাছাকাছি।[২০]
ধর্মীয়তা, বিশ্বাস বা অনুশীলন
[সম্পাদনা]
২০১৬ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ইসরায়েলে বসবাসকারী মুসলিমরা সামগ্রিকভাবে ইস্রায়েলি ইহুদিদের তুলনায় বেশি ধার্মিক হলেও তারা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অনেক দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের তুলনায় কম ধার্মিক। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলি মুসলিম (৬৮%) বলেন যে, ধর্ম তাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা লেবাননের মুসলিমদের সংখ্যার সমান, যারা এই বক্তব্যের সাথে একমত (৫৯%); কিন্তু জর্ডানের (৮৫%) ফিলিস্তিনি (৮৫%) ও ইরাকের (৮২%) মুসলমানদের তুলনায় অনেক কম। ইসরায়েলি মুসলমানরা প্রায় সর্বজনীনভাবে বলে যে, তারা আল্লাহ ও নবি মুহাম্মদে বিশ্বাস করে। বেশিরভাগ মুসলিম বলেছেন যে, তারা প্রতিদিন নামাজ পড়েন (৬১%) এবং প্রায় অর্ধেক জানিয়েছেন যে, তারা সপ্তাহে অন্তত একবার মসজিদে যান (৪৯%)। তবে মুসলিম মহিলারা বলেন যে, তাদের জীবনে ধর্মের গুরুত্ব অনেক বেশি। তরুণ মুসলিমরা সাধারণত তাদের বয়স্কদের তুলনায় কম সচেতন থাকেন। [২১]
২০১৬ সালের একই গবেষণা অনুসারে, ইসরায়েলের ৮৩% মুসলিম রমজানে রোজা রাখেন, [২১] যা মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশের মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে কম। [২২] ৩৩% মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, যীশু তাদের জীবদ্দশায় ফিরে আসবেন, যা এমন বিশ্বাস ধারণকারী খ্রিস্টানদের সংখ্যার (৩৩%) সমান। ২০১৫ সালে যখন জরিপ করা হয়েছিল, তখন ইহুদি, খ্রিস্টান ও দ্রুজের তুলনায় মুসলিমরা তাদের সন্তানদের ধর্মের বাইরে বিয়েতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিল। মুসলিমদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (৯৭%) বিশ্বাস করে যে, শক্তিশালী পারিবারিক সম্পর্ক তাদের কাছে খুবই/কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ (৬৮%) বলে যে, বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়াই খুবই/কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ। ১৮-৪৯ বছর বয়সী মুসলিমদের মধ্যে ৭৩% বলেছেন যে, বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ তাদের কাছে খুবই বা কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ৫২% বয়স্ক মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই হার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। [২৩]
২০১৫ সালে ইস্রায়েলি ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুসারে, প্রায় ৪৭% ইসরায়েলি মুসলমানকে ঐতিহ্যবাহী, ৩২% ধর্মীয়, ১৭% মোটেও ধর্মীয় নয় এবং ৩%কে অত্যন্ত ধর্মীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। [২৪]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Media Release The Muslim Population in Israel 2022"। www.cbs.gov.il। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-২১।
- ↑ "Israel of Citizens Arab of Attitudes: Index Democracy Israeli" (পিডিএফ)। Israel Democracy Institute। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Jeffay, John (২০২৪-০৬-১৮)। "CBS: Israel's Muslim population is trending downward"। ISRAEL21c (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৩।
- ↑ "Qadis Law 5721 - 1961" (পিডিএফ)।
- ↑ "חוק הקאדים תשכ״א–1961"।
- ↑ Peled (2009), p. 253
- ↑ Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor (অক্টোবর ২৬, ২০০৯)। "Israel and the occupied territories"। U.S. State Department। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Israel's Religiously Divided Society" (পিডিএফ)। Pew Research Center। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ Ori Stendel (১৯৯৬)। The Arabs in Israel। Sussex Academic Press। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 1898723249। সংগ্রহের তারিখ মে ৩১, ২০১৪।
- ↑ ক খ গ "The Moslem population of Israel: Data on the Occasion of Eid al-Adha (The Feast of the Sacrifice)" (পিডিএফ)। Central Bureau of Statistics (Israel)। ২৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "The Muslim Population in Israel 2022"। www.cbs.gov.il (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০২।
- ↑ "The Muslim Population in Israel 2022"। www.cbs.gov.il (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০২।
- ↑ "Kababir and Central Carmel – Multiculturalism on the Carmel"। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Visit Haifa"। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Kababir"। Israel and You। ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ক খ "Pew Research" (পিডিএফ)।
- ↑ "Pdf" (পিডিএফ)।
- ↑ "Education in Israel" (পিডিএফ)।
- ↑ "Education in IsraelI Christian" (পিডিএফ)।
- ↑ "IsraelI Muslims" (পিডিএফ)।
- ↑ ক খ গ "Israel's Religiously Divided Society" (পিডিএফ)। Pew Research Center। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Pew" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ "The World's Muslims: Unity and Diversity" (পিডিএফ)। Pew Research Center। ৯ আগস্ট ২০১২। ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Israel's Religiously Divided Society" (পিডিএফ)। Pew Research Center। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Israel of Citizens Arab of Attitudes: Index Democracy Israeli" (পিডিএফ)। Israel Democracy Institute। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।