বিষয়বস্তুতে চলুন

ইরিত্রিয়ায় ইসলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইরিত্রিয়ায় ইসলাম খ্রিস্টধর্মের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। যদিও কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, ইসলাম ইরিত্রিয়ায় বৃহত্তম ধর্ম।[] পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৭% থেকে ৫২% পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন। [] [] [] তবে যে সংখ্যাই হোক না কেন, ২০০৯ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ইরিত্রিয়ার মুসলিমদের ৯৯% এর বেশি সুন্নি এবং ১% এর কম শিয়া ইসলামের অনুসারী। []

আসমারায় অবস্থিত ইরিত্রিয়ার জাতীয় মসজিদ।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ইরিত্রিয়ায় ইসলামের ইতিহাস সপ্তম শতকে ইসলামের সূচনার সময় থেকেই শুরু হয়। ৬১৫ সালে মুহাম্মাদের কিছু সাহাবি মাসাওয়ায় আশ্রয় নিতে এসেছিলেন বলে জানা যায়। এর পরে মুসলিমরা ইরিত্রিয়ার উপকূলে বসতি স্থাপন করেন এবং মসজিদসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেন। তবে অষ্টম শতকের শুরুতে ইসলামের প্রভাব শক্তিশালী হতে শুরু করে। ৭ম ও ৮ম শতকের শেষের দিকে ইরিত্রিয়ার উপকূলে একাধিক ইসলামি রাজ্যের উত্থান ঘটে। ৯ম শতকের মধ্যে ইসলাম পূর্ব ইরিত্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীও ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। []

১৫ শতাব্দীতে মাসাওয়ায় নির্মিত শেখ হানাফি মসজিদ।

১১শ শতকের শেষের দিকে দাহলাক দ্বীপপুঞ্জে একটি মুসলিম সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল, যা ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, ভারত ও মিশরের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। ১৩শ শতকের মধ্যে ইরিত্রিয়ার বিভিন্ন যাযাবর গোষ্ঠী ইসলাম গ্রহণ করে এবং এর ফলে ধর্মটি আরও বিস্তৃত হয়। ১৫শ শতকের মধ্যে ইসলাম ইরিত্রিয়ার অনেক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। [] পরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে ইরিত্রিয়ায় ইসলাম আরও বিস্তৃত হয়। বিশেষত মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী তিগ্রে জনগোষ্ঠীর লোকেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ১৯শ শতকের শেষের দিকে অনেক অন্তর্দেশীয় তিগ্রে ও কিছু বিলেন জনগোষ্ঠীর মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। তবে সম্রাট চতুর্থ ইয়োহান্নি শাসনামলে (যিনি একজন খ্রিস্টান ছিলেন) মুসলিম তিগ্রেদের জোরপূর্বক তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং তারা বর্তমান ইরিত্রিয়ার উত্তরাঞ্চলে আশ্রয় নেয়, যেখানে তৎকালীন ইথিওপিয়ার রাজকীয় ক্ষমতা কার্যকর ছিল না। []

ইরিত্রিয়ায় খ্রিস্টধর্মসুন্নি ইসলামের সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সম্প্রদায়গুলি ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত ধর্ম এবং সম্প্রদায়কে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তাই সেখানে আন্তঃধর্মীয় দলের সংখ্যা খুবই সীমিত। [] [] [] [১০] [১১]

বর্তমান কিছু সরকারি নীতির কারণে মুসলিমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ইরিত্রীয় সরকার মুসলমানদের বিজ্ঞান শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একাধিক ইসলামি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দেশের মসজিদগুলো সর্বদা প্রতিরক্ষা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয় এবং সেনাবাহিনীতে আজান ও নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [১২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. ড. মোঃ ইব্রাহীম খলিল, মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস 
  2. "National Profiles"www.thearda.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৭ 
  3. "Religions in Eritrea | PEW-GRF"। Globalreligiousfutures.org। ৭ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৪ 
  4. "Eritrea"United States Department of State (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৫ 
  5. Miller, Tracy, সম্পাদক (অক্টোবর ২০০৯)। Mapping the Global Muslim Population: A Report on the Size and Distribution of the World's Muslim Population (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। Pew Research Center। পৃষ্ঠা 39। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-৩০ 
  6. G, Mussie Tesfagiorgis (২০১০)। Eritrea। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 139–143। আইএসবিএন 978-1-59884-231-9 
  7. Fisher, Jonah (১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Religious persecution in Eritrea"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ 
  8. "Religious Composition by Country, 2010-2050"Pew Research Center's Religion & Public Life Project (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৪-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১২ 
  9. "United States Commission on International Religious Freedom - Annual Report 2021"United States Commission on International Religious Freedom। ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৮ 
  10. "Eritrea" (পিডিএফ)। ১২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৮ 
  11. Encyclopedia of Global Religion 
  12. আরমান, মুহাম্মদ ইলিয়াছ (২০২১-০৬-০৪)। "যেমন আছে ইরিত্রিয়ার মুসলমানরা"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-১০